চোরচক্রের মূলহোতা কমল চন্দ্রসহ ০৯ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব-১০; চোরাইকৃত ০৬ টি ইজিবাইক উদ্ধার 

0
55

রাজধানী ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন আহসানবাগ সিলেটি বাজার এলাকায় বসবাসকারী মোঃ শাহ কামাল (১৮), পিতা-আব্দুর সাত্তার নামক একজন ইজিবাইক চালক সে দীর্ঘদিন যাবৎ কামরাঙ্গীরচর, চকবাজারসহ আশপাশের এলাকায় ইজিবাইক চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে আসছিল। প্রতিদিনের ন্যায় কামাল তার ইজিবাইক নিয়ে যাত্রী পরিবহনকালে গত ১২ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ২৩:১০ ঘটিকায় রাজধানী ঢাকার নিউমার্কেট হতে অজ্ঞাতনামা একজন ব্যক্তি কামালের মিশুকে যাত্রী বেসে উঠে এবং কামালকে বকশি বাজারমোড়ে যেতে বললে কামাল তাকে নিয়ে চকবাজার থানাধীন বকশিবাজার মোড়ের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করে।

অতঃপর বকশিবাজার মোড়ে পৌঁছালে অজ্ঞাত ব্যক্তি কামালকে কার্পেট ক্রয় করে লালবাগ থানাধীন সেকশন এলাকায় যাবে এবং বিনিময়ে সে কামালকে অধিক ভাড়া দেবে বলে আশ্বস্ত করে। তার কিছুক্ষণ পর অজ্ঞাত ব্যক্তি কামালকে তার মিশুকটি মেইন রোডে রেখে বকশিবাজার মোড়ের তেজপাতা গলিতে যেতে বলে। কামাল সরল-বিশ্বাসে তার মিশুকটি মেইনরোডের পাশে রেখে অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে কার্পেট বহন করে নিয়ে আসার জন্য তেজপাতা গলিতে যায়।

অতঃপর অজ্ঞাত ব্যক্তি ভিকটিম কামালের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করবে বলে একটি বাসার গেইটের সামনে অপেক্ষা করতে বলে সেখান থেকে কৌশলে চলে যায়। কামাল বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর অজ্ঞাত ব্যক্তিটির কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে কামাল তার মিশুকের কাছে আসলে সেখানে এসে দেখতে পায় তার মিশুকটি যথাস্থানে নেই। পরবর্তীতে কামাল আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় খোঁজাখুঁজি করে তার মিশুকটির কোন সন্ধান না পেয়ে বুঝতে পারে যে তার মিশুকটি চুরি হয়েছে।

উক্ত ঘটনার পর কামাল তার উপার্জনের একমাত্র সম্বল মিশুকটি হারিয়ে নিরুপায় হয়ে র‌্যাবের দ্বারস্থ হয়। কামাল অধিনায়ক র‌্যাব-১০ বরারব তার মিশুক চুরির ঘটনায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র দায়ের করে এবং তার একমাত্র আয়ের উৎস চুরিকৃত মিশুকটি দ্রæত উদ্ধারের জন্য আবেদন জানায়। উক্ত অভিযোগের ভিত্তিতে র‌্যাব-১০ এর একটি আভিযানিক দল ভিকটিম কামালের ইজিবাইকটি উদ্ধার ও ইজিবাইক চোর চক্রটিকে গ্রেফতারের লক্ষ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। অতঃপর আশপাশের বিভিন্ন সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করে যাচাই-বাছাই করতঃ গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধি ও ছায়া তদন্ত শুরু করে।

এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল ১৬ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ আনুমানিক রাত ১৯:৩০ ঘটিকায় র‌্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ও তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জ থানাধীন বিভিন্ন এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে কুখ্যাত ইজিবাইক চোর চক্রের অন্যতম মূলহোতা ১। কমল চন্দ্র (৩৭), পিতা-মৃত আনন্দ চন্দ্র, সাং-অফিস মহল্লা, থানা-কলাপাড়া, জেলা-পটুয়াখালীসহ ০৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকৃত অপর আসামীদের নাম ২। মোঃ আলমগীর মোল্ল্যা (৫০), পিতা-মৃত বোরহান মোল্লা, সাং-পাঁচ বাড়িয়া, থানা-আড়াই হাজার জেলা-নারায়নগঞ্জ, ৩। নূর মোহাম্মদ (২৪), পিতা-আব্দুল কাইয়ুম, সাং-কারার পাড়া, থানা-শ্রীবর্দী, জেলা-শেরপুর ও ৪। শ্রী চন্দন চন্দ্র সূত্রধর (৩৫), পিতা-মৃত মাখন চন্দ্র সূত্রধর, সাং-লোহারচর, থানা-মুক্তগাছ, জেলা-ময়মনসিংহ বলে জানা যায়। 

পরবর্তীতে গ্রেফতারকৃত আসামীদের স্বীকারোক্তি ও তাদের দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল একই তারিখ আনুমানিক রাত ২০:৩০ ঘটিকায় রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন মেরাদিয়া এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে চোরাইকৃত ইজিবাইক/মিশুক ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িত পনির হোসেন শান্ত (২৫), পিতা-মোঃ খলিল, সাং-ছয়গাঁ, থানা-বেদরগঞ্জ, জেলা-শরিয়তপুর বর্তমান ঠিকানা-নয়াপাড়া, থানা-খিঁলগাঁও, ঢাকা’কে গ্রেফতার করে। এসময় গ্রেফতারকৃত শান্তর গ্যারেজ হতে ভিকটিম কামালের চুরিকৃত মিশুকটি উদ্ধার করা হয়।

অতঃপর গ্রেফতারকৃত পনির হোসেন শান্তর দেওয়া তথ্যমতে র‌্যাব-১০ উক্ত আভিযানিক দল আনুমানিক রাত ২১:৫০ ঘটিকায় রাজধানী ঢাকার খিলগাঁও থানাধীন একই এলাকায় অপর একটি অভিযান পরিচালনা করে ইজিবাইক/মিশুক ক্রয়-বিক্রয়কারী চক্রের আরো ০৪ জনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারকতৃ আসামীদের নাম ১। মোঃ হাফিজুল ইসলাম (৩৫), পিতা-আবুল হোসেন, সাং-কাঁঠালবাড়ি, থানা-নাগেরশ্বরী জেলা-কুড়িগ্রাম, ২। মোঃ আবু সাইদ (৩২), পিতা-মৃত মখলেছুর রহমান, সাং-দরিচর, থানা-মুলাধী জেলা-বরিশাল, ৩। মোঃ রানা মিয়া (৩০), পিতা-মোঃ সাইদুল মিয়া, সাং-বড়ইতলা, থানা-বরগুনা সদর, জেলা-বরগুনা ও ৪। মোঃ মোতালেব (৪২), পিতা-মৃত কদম আলী সিকদার, সাং-বিলাসপুর, থানা-জাজিরা, জেলা-শরীয়তপুর বলে জানা যায়। এসময় গ্রেফতারকৃত আবু সাইদ এর গ্যারেজ হতে চেরাইকৃত আরো ০২টি মিশুক, ০২টি ইজিবাইক ও ০১টি অটোরিক্সা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, গ্রেফতারকৃত কমল চন্দ্র ইজিবাইক/মিশুক চোর চক্রটির মূলহোতা। সে পেশায় একজন কাঁচামালের ব্যবসায়ী। এছাড়া তার একটি মিশুক রয়েছে যা তার অন্যতম সহযোগী নূর মোহাম্মদ ভাড়ায় চালায়। উক্ত ব্যবসার আড়ালে সে অন্যান্য সহযোগী আলমগীর, নূর মোহাম্মদ ও চন্দনদেরকে নিয়ে একটি ইজিবাইক/মিশুক চোরচক্র গড়ে তোলে। গত ১২ মার্চ ২০২৪ খ্রিঃ তারিখ রাতে কমল, আলমগীর, নূর মোহাম্মদ ও চন্দন ইজিবাইক/মিশুক চুরির উদ্দেশ্যে বের হয়। আনুমানিক রাত ২৩:৩০ ঘটিকায় রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় অবস্থান করাকালে তারা কামালের ইজিবাইকটি তাদের দিকে আসতে দেখে।

অতঃপর কমল তাদের মিশুক থেকে নেমে যায় এবং অন্যান্যরা তাদের মিশুকটি নিয়ে উক্ত স্থান হতে কিছুটা দূরে অবস্থান করে। কমল কামালকে সিগনাল দিয়ে থামায় এবং বকশি বাজারমোড়ে যাওয়ার কথা বলে কামালের ইজিবাইকটি ভাড়া করে রওনা করে। অপর দিকে আলমগীর, নূর মোহাম্মদ ও চন্দন তাদের টার্গেটকে পিছনে পিছনে ফলো করতে থাকে। এর কিছুক্ষণ পর কামালকে তাদের পূর্বপরিকল্পিত স্থান চকবাজার থানাধীন বকশিবাজার মোড়ের তেজপাতা গলিতে হতে কার্পেট ক্রয় করে লালবাগ থানাধীন সেকশন এলাকায় যাবে এবং বিনিময়ে সে কামালকে অধিক ভাড়া দেবে বলে প্রলোভন দেখায়। কমল ভিকটিম কামালকে তার মিশুকটি মেইন রোডে রেখে তেজপাতা গলিতে যেতে বলে। কামাল সরল-বিশ্বাসে তার মিশুকটি মেইনরোডের পাশে রেখে অজ্ঞাত ব্যক্তির সাথে কার্পেট বহন করে নিয়ে আসার জন্য তেজপাতা গলিতে যায়। অতঃপর অজ্ঞাত ব্যক্তি ভিকটিম কামালের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ফোন করবে বলে একটি বাসার গেইটের সামনে অপেক্ষা করতে বলে সেখান থেকে কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যায়। অন্যদিকে চন্দন ভিকটিম কামালের ইজিবাইকটি চালিয়ে দ্রæত ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়। 

পরবর্তীতে চক্রটি উক্ত চোরাইকৃত কামালের মিশুক শান্তর কাছে ৩০,০০০/- টাকায় বিক্রি করে দেয়। বিক্রয়লব্ধ অর্থ কমল, আলমগীর, নূর মোহাম্মদ ও চন্দন সবাই মিলে ভাগ করে নেয়। পনির হোসেন শান্ত ক্রয়কৃত মিশুকটির রং ও কাঠামো পরিবর্তন করে অধিক মূলে অন্যত্র বিক্রি করার উদ্দেশ্যে তার গ্যারেজে রাখে।

জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায়, তারা কমলের নেতৃত্বে প্রায় ০১ বছর যাবৎ ঢাকার বিভিন্ন এলাকা হতে ইজিবাইক/মিশুক চুরি করে আসছিল। এক্ষেত্রে তারা তাদের নির্ধারিত টার্গেটকে ফাঁদে ফেলার জন্য নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অধিক ভাড়া দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে রাজি করতো। পরবর্তীতে তাদের পরিকল্পিত স্থানে পৌঁছামাত্র কখনও মালামাল নিয়ে আসার কথা বলে বর্ণিত কৌশল অবলম্বন করে আবার কখনও বিভিন্ন চেতনানাশক ঔষধ ব্যবহার করে ইজিবাইক/মিশুক চুরি করতো।

পরবর্তীতে চুরিকৃত ইজিবাইক/মিশুকগুলো হাফিজুল, রানা ও মোতালেবের মাধ্যমে শান্ত ও আবু সাইদ এর নিকট ২০,০০০-৩০,০০০ টাকার বিনিময়ে বিক্রি করতো। শান্ত ও আবু সাইদ উক্ত চোরাইকৃত ইজিবাইক/মিশুক স্বল্পমূল্যে ক্রয় করে তাদের গ্যারেজে রেখে সেগুলোর রং ও কাঠামো পরিবর্তন করে হাফিজুল, রানা ও মোতালেবের মাধ্যমে পুনরায় অধিক মূল্যে অনত্র বিক্রি করতো বলে জানা যায়। 

 গ্রেফতারকৃত কমল চন্দ্র এর বিরুদ্ধে কুমিল্লার কোতয়ালীসহ রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ৬টি চুরির মামলা, নূর মোহাম্মদ এর বিরুদ্ধে ০১টি চুরির মামলা এবং মোতালেব এর বিরুদ্ধে মারামারি ও মাদকের ০২টি মামলা রয়েছে বলে জানা যায়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

one × five =