মোঃ আবু তাহের পাটোয়ারী ঃ
স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনালগ্ন ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নোয়াখালীর সেনবাগের অনন্য বৈশিষ্ট্য মন্ডিত শিক্ষায়তন লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়। এলাকার বিশিষ্ট বিদ্যুৎসাহী ব্যক্তিত্ব মরহুম খোরশেদ আলম সুপরিচিত এই বিদ্যালয়টির প্রতিষ্ঠাতা। পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ উল্লাহ আটিয়া এর সার্বিক বিকাশে পালন করে যাচ্ছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অন্যদিকে ২০১২ সালের ২৬ জুলাই থেকে প্রবীণ সকলের শ্রদ্ধাভাজন শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিন মাধ্যমিক এই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে এর শিক্ষার মানও বহুলাংশে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের সুযোগ্য তত্ত্বাবধানে বিদ্যালয়টি নোয়াখালী তথা সেনবাগের অবহেলিত এই অঞ্চলের অন্যতম মানসমৃদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। পাঁচ জন আইসিটি বিষয়ক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ শিক্ষক সহ ১১ জন অভিজ্ঞ শিক্ষকের মানসম্মত শিক্ষাদানের ফলে লেমুয়া উচ্চ
বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান ও পরিবেশ অত্যন্ত মনোরম বলে মনে হয়েছে এবং বিভিন্ন পর্যবেক্ষনে ও সরজমিনে গিয়ে তাই দেখাগেল। বিদ্যালয়টির বিভিন্ন সমস্যা, সম্ভাবনা ও শিক্ষাদান সম্পর্কিত অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয়ে শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তাঁরা সবাই অপরাধ বিচিত্রা এই প্রতিনিধিকে জানালেন, নিতান্তই জীবন-জীবিকার তাগিদে শুধুমাত্র ডাল-ভাতের সংস্থানের জন্যই তারা শিক্ষকতার পেশায় যোগদান করেননি। শিক্ষার আলো গ্রামীণ জনপদে ছড়িয়ে দিতে তাঁরা এ পেশায় এসেছেন। শিক্ষকতাকে সেবা মূলক ব্রত হিসেবেই তারা মনেপ্রাণে বিশ^াস করেন। এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক মোঃ রুহুল আমিন অত্যন্ত সুস্পষ্টভাবেই বলেন, সেবাও কল্যাণকামী চেতনা বাস্তবায়নের বলিষ্ঠ অঙ্গিকার নিয়েই শুরু হয় আমার শিক্ষকতা জীবন। শত বাধা বিপত্তি ও প্রতিকুলতার মূখেও শিক্ষকতার মহান আদর্শ ও নীতি-নৈতিকতা সমুজ্জ্বল রাখতে পেরেছি এটাই বড় কথা। শিক্ষকতার দীর্ঘ জীবনের শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত সেবা ও কল্যাণধর্মী চেতনার বাস্তবায়নে অনড় অবস্থানে থাকার ব্যাপারে অবশ্যই অঙ্গিকারাবদ্ধ রয়েছি। সুযোগ্য শিক্ষকমন্ডলী, পরিচালনা কমিটি, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের আন্তরিক প্রচেষ্টার ফলে বিদ্যালয়টির সুনাম দিন-দিনই বাড়ছে। লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫৩ জন। তারমধ্যে দুই তৃতীয়াংশই ছাত্রী। স্কুলটিতে ছাত্রীর মোট সংখ্যা ২৮৭ জন। সহশিক্ষা চালুরত একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রীর সংখ্যার এরকম আধিক্য সচরাচর পরিলক্ষিত হয়না। এটা নিঃসন্দেহে সেনবাগ বিশেষ করে ছাতারপাইয়া ইউনিয়নের জনগণের নারী শিক্ষার প্রতি ব্যাপকভাবে ঝুঁকে পড়ারই সুস্পষ্ট প্রমাণ বা অগ্রগতি। নারী শিক্ষার প্রসারে এলাকার বিদ্যুৎসাহী মহল ও শিক্ষক মন্ডলীর নিরলস ভূমিকা পালনের বিষয়টি অবশ্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যোগাযোগ ব্যবস্থার এই বৈপ্লবিক উন্নতির যুগেও বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়ার পথে সীমাহীন দূর্ভোগ পোহাতে হয়। এ অবস্থার নিরসন কল্পে লেমুয়া, কান্দাল, বামবাতাবাড়িয়া এই রাস্তাগুলি জরুরি ভিত্তিতে পাকা করা একান্তই অপরিহার্য। বর্ষাকালে এসব এলাকার শিক্ষার্থী ও জনসাধারণের চলাফেরা একেবারেই অসম্বব হয়ে পড়ে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে বৃদ্ধ, শিশু ও রোগীসহ সব ক্যাটাগরীর মানুষই দারুনভাবে উপকৃত হবে। লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী শিক্ষার্থী দশম শ্রেণীর রোল-১ সানজিদা আক্তার ও রোল-৩ মোঃ ইউনুছ এবং নবম শ্রেণীর রোল-২ বিবি হাওয়া সুইটি, জানায় তাদের স্কুলে ক্যান্টিন, বিজ্ঞানাগার, কম্পিউটার ও মাল্টিমিডিয়া এবং ছাত্রাবাস, তৈরি করার দাবি জানায় এসব শিক্ষার্থীরা। উল্লেখ্য যে, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলা ও কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলার সিমান্তবর্তি অঞ্চল হওয়ার কারণে উন্নয়ন থেকে অনেক পিছিয়ে পড়া নানা প্রকার জনদূর্ভোগ এসব এলাকার বাসিন্দাদের নিত্যসঙ্গী। স্কুলটির সার্বিক বিকাশের পথে এখনো বেশকিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তারমধ্যে প্রয়োজনের তুলনায় অবকাঠামো সম্প্রসারণ না হওয়ার বিষয়টিও রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয় ভবনের নীচতলার কাজ শেষ হয়েছে অনেক আগেই। কিন্তু প্রয়োজনীয় অর্থের সংস্থান না হওয়ায় এখন পর্যন্ত ৪র্থ তলার র্নিমাণ কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। পুরাতন ভবন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে এবং ছাঁদভেঙ্গে দূর্ঘটনাও ঘটে দুজন শিক্ষার্থী আহত হয়। তবুও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা এ পর্যন্ত নেয়নি। এরফলে শিক্ষার্থীদের অতি প্রয়োজনীয় শ্রেণীকক্ষ, বিজ্ঞান গবেষনাগার, লাইব্রেরী ও মিলনায়তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো সম্প্রসারণের উদ্যোগও দীর্ঘদিন ধরে বাস্তবায়ন হচ্ছেনা। এছাড়া বিদ্যালয় সংলগ্ন কিছু জায়গা সীমাহীন প্রতিকূলতার কারণে এখন পর্যন্ত উদ্ধার করা সম্ভব হচ্ছেনা। এসব অসুবিধা কাটিয়ে বিদ্যালয়টির অবকাঠামো উন্নয়নের পদক্ষেপ অতি দ্রুতই বাস্তবায়ন করতে হবে। শিক্ষার প্রসার নিশ্চিত করতেই লেমুয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সার্বিক সমস্যা-সংকট দূর করার বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন অবশ্যই অপরিহার্য।