যাত্রাবাড়ী থানার পুলিশের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ নিয়ে সংবাদ সম্মেলন

0
1765

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ!
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে আপনাদের জানাচ্ছি আমাদের ভারাক্লান্ত ও বিধ্বস্ত পরিবারের পক্ষ থেকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা।
আমরা অতি দুঃখের সাথে যাত্রাবাড়ি থানার ওসি মো. আনিছুর রহমার ও এসআই আশীষ কুমার দেব, এসআই মুহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, এসআই নয়ন ও এসআই এনায়েত হোসেন দেশের আইনশৃঙ্খলা পুলিশ বাহিনীর পোশাকের অন্তড়ালে যৌথভাবে রাষ্ট্রবিরোধী ও জনগণের নিরাপত্তার বিপরীতে নানান রকমের হয়রানী, মিথ্যা মামলাসহ স্থানীয় সাধারণ জনগণের উপর এক অমানসিক এবং শারীরিক নির্যাতনের বিষয়াদি জানাতে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে স্বাধীনতা সংগ্রামে যে পরিবারটি সক্রিয় ভূমিকা পালন করে, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলন-সংগ্রামের সাথে যে পরিবারটি জড়িত, যে পরিবারটি সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত, আজ সে পরিবারকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র করছে যাত্রবাড়ীর থানার উল্লেখিত পুলিশ কর্মকর্তাবৃন্দ।
উপরে উল্লেখিত পুলিশ কর্মকর্তাদের একের পর এক ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে আমরা হিমছিম খাচ্ছি। তাঁদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে উল্টো এমন মামলা দিবে যা মৃত্যুর আগে কখনো বাইরের আলো-বাতাস দেখার সুযোগ হবে না হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। সেই সাথে মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতনও মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। শুধু শারীরিক-মানসিক নির্যাতন করেই ক্ষ্যান্ত থাকেনী, মিথ্যা মামলা দিয়ে দিন-রাত বাড়িতে হানা দিয়ে পুরুষের পাশাপাশি মহিলার শরীরেও পুরুষ পুলিশ হাত দিতে কার্পণ্য করে না। বেশি কথা বললে ক্রশফায়ারের কথা বলে, লাশ গুম করার ভয় দেখায় এবং বাসা-বাড়িতে অর্থ-স্বর্ণালঙ্কার হাতিয়ে নিয়ে যায়।
সাংবাদিক বন্ধুগণ।
আমাদের বাড়ির তৃতীয় তলার ভাড়াটিয়া পারভেজ (স্থায়ী ঠিকানা- গ্রাম-পতারি আদার, থানা-কসবা, জেলা-বি.বাড়ীয়া, মোবাইল- ০১৯৩৭-৩২২৩৬১) বাড়ি ভাড়া না দিয়ে তাল-বাহানা করতে থাকলে তাকে বাড়ি ছেড়ে দিতে নোটিশ দিলে তার সাথে আমার স্বামী আমিনুল ইসলাম লিটনের কথা কাটাকাটি হয়। গত ০৮/০২/২০১৭ তারিখে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আশীষ কুমার দেব আমাদের বাড়িতে এসে বাসার দরজা ভেঙ্গে প্রবেশ করে। এ ঘটনার পরে আমার শ্বাশুড়ি যাত্রাবাড়ি এলাকার ৪৮নং ওয়ার্ড কমিশনারকে জানালে তিনি আমাদের বাসায় তার প্রতিনিধি আওয়ামী লীগ অত্র ওয়ার্ডের সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গেসুসহ অন্যান্য নেতাদের পাঠান এবং তাদের উপস্থিতিতে আমাদের বাসা তল্লাশী পরে পুলিশ আমাদের বাসায় কিছু না পেয়ে সভাপতি গিয়াস উদ্দিন গেসু এবং আমার শ্বাশুড়ির নিকট ক্ষমা চেয়ে এসআই আশীষ কুমার দেব তার সহযোগীদের নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।
পুনরায় গত ২ মার্চ ২০১৭ এসআই নয়ন (মোবাইলঃ ০১৭৩৩১১৯৮০৪) তার সহযোগিদের নিয়ে আমাদের ৩ তলার বাসার দরজায় এসে নক করলে আমরা দরজা খুলতে অস্বীকৃতি জানালে এসআই নয়ন আমার পশ্চিম পাশের ভাড়াটিয়া বর্ণিত পারভেজ কথিত পুলিশের সোর্সের ফ্ল্যাটের ভিতর দিয়ে রান্নাঘরের প্লাস্টিক দরজা ভেঙ্গে আমার বাসায় আবারও জোর করে প্রবেশ করে তখন আমার স্বামীকে টেনেহিছরে থানায় নিয়ে গিয়ে মারধর করে এসআই নয়নের নিজ কক্ষে আটক রাখেন যা থানার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ চেক করলে পাওয়া যেতে পারে। এইভাবে আটকের কথা, কোন মামলায় গ্রেফতার বা গ্রেফতারের নির্দেশের কাগজপত্র ইত্যাদির ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে এসআই নয়ন বলেন, বেশি কথা বলবি না। আমাদের সাথে চল। নয়তো এমন মামলা দিবো যা ১৪ বৎসরেও বের হতে পারবি না।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।
দেশের একটা নাগরিককে পুলিশ যখন-তখন ধরে নিয়ে যাবে! কেন ধরে নিয়ে যাচ্ছে তা জিজ্ঞেস করলে শারীরিক আঘাত করাসহ লাশ গুম করার ভয় দেখানোর সাথে-সাথে আমরা ভাবছি, এই জন্যই কী স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের ৩০ লাখ মানুষ শহীদ হয়েছিল। এই জন্যেই কী ২ লাখ মা-বোন তাদের সম্ভ্রম বিনাশ করেছিল!
কোনও ধরনে মামলা ছাড়াই পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে আটকে রেখে শারীরি নির্যাতন করে টাকার জন্য চাপ দিতে থাকে আর না দিলে রাতের অন্ধকারে ক্রশফায়ার দিয়ে মেরে লাশ গুম করে ফেলার ভয় দেখালে পরে এসআই নয়ন ১০ লক্ষ টাকা দাবিতে জীবন বাঁচানোর জন্যে এক পর্যায়ে আমরা নিরুপায় হয়ে আমার স্বামীকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনতে সক্ষম হই।
আবার গত ২৭/০৪/২০১৭ তারিখে আমার স্বামী যাত্রাবাড়ী থানায় আমার বাসার অবৈধ ভাড়াটিয়া কতিথ পুলিশের সোর্স পারভেজকে উচ্ছেদের জন্য সাধারণ ডাইরী নথিভুক্ত করে ফেরার পথে থানার গেট হতে এসআই আশীষ কুমার দেব আমার স্বামীকে পুনরায় নাটকীয় কায়দায় আটক করেন। এসআই আশীষ কুমার দেব এবং একই থানার এএসআই এনায়েত হোসেন (মোবাইল ঃ ০১৭১৮-১৬৬১৪০) এর মাধ্যমে আবারও জীবন-মরণের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য বিনা কারণে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছাড়িয়ে আনি।

প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।
০১/০৫/২০১৭ তারিখে আমাদের করা জিডির তদন্তে আসার কথা থাকলেও এএসআই এনায়েত হোসেন তাল বাহানা করতে থাকে। বিভিন্ন সময় অভিযান, গ্রেফতার, টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার কারণ আমরাও আজও জানতে পারিনি। যদি মামলাই থাকে তাহলে আমাদের বাদি কে বা কারা এবং কোন অভিযোগের ভিত্তিতে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে তা আমাদের অজানা রেখেই গত ২৮/০২/২০১৭ তারিখে এসআই আশীষ কুমার দেব কোন মামলায় চার্জশীট দাখিল করেন এ ব্যাপারে আমাদের কিছুই অবগত করা হয়নি।
এমতাবস্থায় আমি এবং আমার শ্বাশুড়ি ০২/০৫/২০১৭ তারিখে অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহ ইফতেখার আহমেদ এর স্মরণাপন্ন হলে তিনি ওসি, মামলার বাদী এসআই আশীষ কুমার দেব, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মুহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, মামলার মূল পরিকল্পনাকারী এসআই নয়ন এবং এএসআই এনায়েত হোসেনকে অবৈধ ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের (জিডি নং-২৯০৩) ব্যাপারে কতটুকু তদন্ত করেছেন জিজ্ঞাসাবাদ করিলে এএসআই এনায়েত হোসেন কোন জবাব দিতে পারেননি। এরপর থেকেই আস্তে আস্তে মুল ষড়যন্ত্রের থলের বিড়াল বেরিয়ে আসতে থাকে।
পরবর্তীতে গত ১১/০৫/২০১৭ তারিখে এসআই নয়ন যাত্রাবাড়ির থানার ৪৮নং ওয়ার্ড কমিশনার জনাব আবুল কালাম অনুর স্মরণাপন্ন হন। কমিশনার সাহেব আমার শ্বাশুড়িকে ফোন করে তার নিজ কার্যালয়ে আসতে বলেন। আমার শ্বাশুড়ি তার কার্যালয়ে আসার পরে এসআই নয়ন উল্লেখিত ১ লাখ ১০ হাজার টাকার পরিপ্রেক্ষিতে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিতে চাইলে আমার শ্বাশুড়ি টাকা না নিয়ে স্থান ত্যাগ করেন। উক্ত টাকা ফেরত দেওয়ার ব্যাপাওে যেসকল আলোচনা হয়েছে তাহা আমাদের কাছে সাউন্ড রেকডিং-এ সংরক্ষিত আছে।
প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ।
বড়ই দুর্ভাগ্য যে, একজন পুলিশ সোর্সের মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ও বর্ণিত পুলিশগণের পারস্পরিক যোগসাজসে আমার স্বামীকে যাত্রাবাড়ী থানার এসআই আশীষ কুমার দেব (বিপি-৮৩১০১২৪০৫৫) ও যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আনিছুর রহমান (বিপি-৬৯৯১০৮২৩৯৩) যোগসাজসে একটি মিথ্যা, বানোয়াট ও হয়রানিমূলক মামলার আসামী (মামলনা নং-২৯, তারিখ ঃ ০৮/০২/২০১৭ইং, ধারা-১৯৯০ সনের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯(১)-এর টেবিল-৯(ক)/২৫) করে। যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আনিছুর রহমান ও এসআই আশীষ কুমার দেব এবং মামলার মূল পরিকল্পনাকারী এসআই নয়ন (মোবাইল ঃ ০১৭৩৩১১৯৮০৪) এর যোগসাজসে আমাদেরকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য মিথ্যা মামলাটি দায়ের করেছেন।
জাতির বিবেক আমাদের সাংবাদিক বন্ধুদের বলছি, যে পুলিশ কর্মকর্তা দেশের সাধারণ নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কথা সে পুলিশ কর্মকর্তা পরিকল্পিতভাবে সেই নাগরিককে টাকার লোভে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে অনেক অর্থকরী হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকা না দিলে হত্যা করে লাশ গুম করার হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। টাকা দিতে দেরি হলে শারীরিক ভাবে আঘাত করছে। আর এই নির্যাতন, অত্যাচার নিত্যদিনের মতই চলছে যাত্রাবাড়ি থানায়।
এখানে উপস্থিত সাংবাদিক ভাই-বোন, বন্ধুসহ বিভিন্ন স্তরের বিভিন্ন কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলছি, যাত্রাবাড়ী থানার উল্লেখিত পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ আপনারা স্ব-স্ব উদ্যোগে একটু তদন্ত করলে আরও বিস্তর অপরাধমুলক কর্মকান্ড খুজে পাবেন বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।
পরিশেষে আপনাদের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পুলিশের আইজিসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি- দেশের অসহায় সাধারণ জনগণকে পুলিশি নির্যাতনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আমরা ভিক্ষা প্রার্থনা করছি।
এতক্ষন ধরে সংবাদ সম্মেলনে আমার লিখিত বক্তব্য পাঠক্রমে শুনার জন্য আপনাদের সকলের কাছে কৃতজ্ঞ ও বিনীতি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − eight =