সেলফোন অপারেটররা প্রযুক্তি বিড়ম্বনায়

0
620

ফোরজি নেটওয়ার্ক সেবায় যাচ্ছে দেশের সেলফোন অপারেটররা। সেবাটি চালু করতে টুজি তরঙ্গকে ফোরজিতে রূপান্তরের সুযোগও দিয়েছে সরকার। যদিও অপারেটরগুলো তা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারছে না। টুজি চালু রাখতে গিয়ে খুব কম তরঙ্গই তারা ফোরজিতে রূপান্তরের সুযোগ পাচ্ছে। আবার ফোরজির ক্ষেত্র পুরোপুরি প্রস্তুত না হওয়ায় থ্রিজি থেকেও বেরোতে পারছে না। একসঙ্গে টুজি, থ্রিজি ও ফোরজি সেবা দিতে গিয়ে দেশের সেলফোন অপারেটরগুলো এক ধরনের প্রযুক্তি বিড়ম্বনায় পড়তে যাচ্ছে বলে মনে করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা।

যদিও অনেক দেশেই সেলফোন অপারেটররা সর্বোচ্চ গ্রাহকসেবা দিতে পুরনো প্রযুক্তি থেকে সরে আসছে। নরওয়েতে এরই মধ্যে ফোরজি সেবা চালু করেছে টেলিনর। এর অংশ হিসেবে টুজি ও থ্রিজি প্রযুক্তির সেবা থেকে বেরিয়ে আসছে তারা। এজন্য একটি রোডম্যাপও তৈরি করেছে অপারেটরটি। ফোরজি সেবা পুরোপুরি চালু হলে থ্রিজি সেবা বন্ধ করার কথা বলছে ভারতের সেলফোন অপারেটররাও। দেশের সেলফোন অপারেটরদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের (অ্যামটব) টিআইএম নুরুল কবীর বণিক বার্তাকে বলেন, এমনিতেই বাংলাদেশে তরঙ্গের অপ্রতুলতা রয়েছে। একদিকে তরঙ্গের উচ্চমূল্য, অন্যদিকে স্বল্পমূল্যে গ্রাহককে সেবা দিতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে এ খাতের প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রযুক্তিনিরপেক্ষতা চালু হলে সেবার মান কিছুটা হলেও উন্নত হবে। তবে ফোরজি চালু হলে নিরবচ্ছিন্ন ও মানসম্পন্ন সেবা দেয়ার জন্য আরো বেশি তরঙ্গের প্রয়োজন। দেশে ডাটাভিত্তিক সেবা হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে থ্রিজি প্রযুক্তি চালু হয় ২০১৩ সালের অক্টোবরে। অথচ ওই সময়ের আগেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে থ্রিজি-পরবর্তী প্রযুক্তি হিসেবে লং টার্ম ইভল্যুশন (এলটিই) বা ফোরজি প্রযুক্তি চালু করা হয়। যদিও থ্রিজি থেকে অপারেটরদের ব্যবসায়িক সাফল্য আসেনি। অ্যামটবের হিসাবে, ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ করে অপারেটররা তুলতে পেরেছে ৬ হাজার কোটি টাকার মতো। এখন ফোরজি চালুর প্রস্তুতি শুরু হলেও থ্রিজি সেবাও অব্যাহত রাখতে হবে অপারেটরদের। থ্রিজিতে না পেলেও টুজি প্রযুক্তির সেলফোন সেবায় ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে দেশের সেলফোন অপারেটরগুলো। ১৯৯৭ সালে জিএসএম প্রযুক্তির সেলফোন সেবা চালু হয়। এর পরের দুই দশকে সেবাটিতে বিপুল গ্রাহক যুক্ত করেছে অপারেটররা। এখন চতুর্থ প্রজন্মের নেটওয়ার্ক সেবা চালুর স্বার্থে টুজি তরঙ্গকে ফোরজিতে রূপান্তরের সুযোগ পাচ্ছে তারা। এ-সংক্রান্ত নির্দেশনাও চূড়ান্ত করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। সার্বিক তরঙ্গ কম হওয়ায় যেটুকু তরঙ্গ তারা ফোরজিতে রূপান্তর করবে, চতুর্থ প্রজন্মের সেবাটি দেয়ার জন্য তা যথেষ্ট নয়। তরঙ্গকে প্রযুক্তিনিরপেক্ষ হিসেবে রূপান্তরে আবার নির্ধারিত হারে ফি পরিশোধ করতে হবে অপারেটরদের। নিয়ন্ত্রণে থাকা সব টুজি তরঙ্গ ফোরজিতে নিতে মেগাহার্টজপ্রতি ব্যয় হবে ৪০ লাখ ডলার। আংশিকভাবে রূপান্তরে মেগাহার্টজপ্রতি ৭৫ লাখ ডলার পরিশোধ করতে হবে। টুজি চালু রাখার স্বার্থে অপারেটররা সব তরঙ্গ ফোরজিতে রূপান্তর করছে না বলেই জানা গেছে। ফলে ফোরজি চালুতে আলাদাভাবে তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে হবে তাদের। ৯০০, ১৮০০ ও ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের তরঙ্গের জন্য নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। সংশোধিত নীতিমালায় ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ কোটি ডলার। আর ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডের প্রতি মেগাহার্টজ তরঙ্গের ভিত্তিমূল্য ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। দেশের শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের চিফ করপোরেট অ্যাফেয়ার্স অফিসার মাহমুদ হোসেন বলেন, ভিন্ন ভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে গ্রাহকসেবা দিতে গেলে অপারেটরদের কাজের ব্যাপ্তি অনেক বেড়ে যায়। যদিও অনেক দেশেই অপারেটররা এভাবে সেবা দিচ্ছে। দেশে মানসম্পন্ন সেবা নিশ্চিত করতে সুলভে আরো বেশি তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি তরঙ্গের রোডম্যাপও থাকা উচিত। এতে আগামীতে কোন কোন তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে, সে সম্পর্কে অপারেটররা ধারণা পেতে পারে, যা তাদের বিনিয়োগ পরিকল্পনায়ও সহায়তা করবে। তরঙ্গ সহজলভ্য করার মাধ্যমেই গ্রাহকের কাছে উন্নত সেবা পৌঁছে দেয়া সম্ভব। সম্প্রতি ফোরজি সেবা চালুর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে সেবাটির লাইসেন্স নিতে আবেদন করেছে সব সেলফোন অপারেটর। এর মধ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান টেলিটক ছাড়াও রয়েছে গ্রামীণফোন, রবি আজিয়াটা, বাংলালিংক ও সিটিসেল। আর তরঙ্গ নিলামে অংশ নিতে আবেদন করেছে বেসরকারি চার অপারেটর। রাষ্ট্রায়ত্ত সেলফোন অপারেটর টেলিটক আগামী মে মাসে ফোরজি চালুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। উল্লেখ্য, বর্তমানে টুজি সেবার জন্য জিএসএম প্রযুক্তিভিত্তিক সেলফোন অপারেটরদের ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে তরঙ্গ বরাদ্দ রয়েছে। আর ৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে একমাত্র সিডিএমএ প্রযুক্তিভিত্তিক সেলফোন অপারেটর সিটিসেলকে তরঙ্গ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। শীর্ষ সেলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের ৯০০ ও ১৮০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে মোট তরঙ্গ রয়েছে ২২ মেগাহার্টজ। রবির এ দুই ব্যান্ডে মোট ২৪ দশমিক ৮ মেগাহার্টজ তরঙ্গ রয়েছে। এর মধ্যে এয়ারটেলের কাছ থেকে পাওয়া ১০ মেগাহার্টজ তরঙ্গ রয়েছে। শীর্ষ অপারেটরদের মধ্যে এ দুই ব্যান্ডে সবচেয়ে কম তরঙ্গ রয়েছে বাংলালিংকের কাছে। অপারেটরটির বরাদ্দ নেয়া তরঙ্গের পরিমাণ ১৫ মেগাহার্টজ। থ্রিজির জন্য বরাদ্দ দেয়া ২১০০ মেগাহার্টজ ব্যান্ডে গ্রামীণফোনের ১০ মেগাহার্টজ, রবির ১০ মেগাহার্টজ (এয়ারটেলের ৫ মেগাহার্টজসহ) ও বাংলালিংকের ৫ মেগাহার্টজ তরঙ্গ রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 + nine =