বন্যাদুর্গতদের পুনর্বাসন সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে

0
786

দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যার পানি কমার সংবাদ স্বস্তিদায়ক। তবে উদ্বেগের বিষয় হল, পানি কমলেও বন্যাদুর্গতদের দুর্ভোগ হ্রাস পাচ্ছে না। বন্যা-উপদ্রুত এলাকায় বিশুদ্ধ পানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও গোখাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। পাশাপাশি রেলপথসহ অনেক সড়ক-মহাসড়কের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া অনেক সেতু-কালভার্ট বিধ্বস্ত হয়েছে। এর ফলে যানবাহনের চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বন্যার সময় বিভিন্ন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হয়। তবে এ ধরনের সাহায্য-সহযোগিতা বন্যাকবলিত মানুষের জীবনে স্থায়ী কোনো প্রভাব ফেলে না। বন্যাকে স্থায়ীভাবে জয় করার উদ্যোগ নেয়া জরুরি। এজন্য নদ-নদীগুলোর নাব্য বাড়াতে হবে সর্বাগ্রে। আমাদের অবিবেচনা প্রসূত কর্মকান্ড ও অদূরদর্শিতায় এক সময়ের খরস্রোতা নদীগুলো আজ জীর্ণ-শীর্ণ অথবা মরণাপন্ন অবস্থায় উপনীত হয়েছে।

 

নদীগুলোকে অবশ্যই মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক নদীগুলোর ব্যাপারে আমাদের অবস্থান ও দাবি আরও জোরালো করার লক্ষ্যে শক্ত কূটনৈতিক ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। বাংলাদেশ ভাটির দেশ। বেশিরভাগ নদীর উৎস দেশের ভূ-সীমানার বাইরে। অভিন্ন নদীগুলোর গতি প্রবাহ স্বাভাবিক রাখার ব্যাপারে প্রতিবেশী দেশ, বিশেষ করে ভারত ও নেপালের সঙ্গে এমন গঠনমূলক উদ্যোগ নেয়া উচিত, যাতে তা কার্যকর ও ফলপ্রসূ হয়। আন্তর্জাতিক নদ-নদীর গতিধারায় বিঘ্ন সৃষ্টি, নদীর ওপর বাঁধ তৈরি কিংবা নদীর প্রবাহকে ভিন্নদিকে প্রবাহিত করার কাজগুলো একতরফাভাবে হতে পারে না। এটি আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। যে কোনো দুর্যোগে সবার আগে মানবিক বিপর্যয় মোকাবেলার প্রতি গুরুত্ব দিতে হয়। বন্যাকবলিত অসহায় মানুষ যাতে পর্যাপ্ত পরিমাণে খাদ্য ও পানীয় পায়, সেদিকে বিশেষ যতœবান হওয়ার পাশাপাশি তাদের স্বাস্থ্যঝুঁকির বিষয়েও আমাদের পূর্ণ প্রস্তুতি থাকা উচিত। বন্যার সময় বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব ও পচা-বাসি খাবার গ্রহণের ফলে দুর্যোগকবলিত মানুষের মধ্যে ডায়রিয়া ও আমাশয়সহ বিভিন্ন ধরনের পেটের পীড়ার প্রাদুর্ভাব ঘটে। এজন্য পর্যাপ্ত ওষুধ সরবরাহের পাশাপাশি বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনের ব্যাপারে এখন থেকেই কাজ শুরু করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্ত সড়ক-মহাসড়ক, বেড়িবাঁধ, সুইসগেট ইত্যাদির দ্রুত সংস্কার ও মেরামতসহ ক্ষেতের ফসল, গবাদিপশু ও ঘরবাড়ি হারানো মানুষের কাছে যতটা সম্ভব আর্থিক সহায়তার হাত প্রসারিত করতে হবে। বন্যা-উপদ্রুত এলাকার মানুষ যাতে দ্রুত এ ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারে সেজন্য তাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করতে হবে। এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানেরও উচিত বিশেষ কর্মসূচি গ্রহণ করে উপদ্রুত এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়ানো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 2 =