পোঁ পোঁ শব্দ আর হুল ফোটানো থেকে এক মুহূর্তের নিস্তার নেই

0
651

সম্প্রতি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর, চিকুনগুনিয়া ও ডেঙ্গু জ্বরের বিস্তারের জন্য এলাকাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু এ সম্পর্কে কিছুই জানেন না স্থানীয় বাসিন্দা, টার্মিনাল শ্রমিক, এমনকি গাবতলী বাস টার্মিনালের ভেতরে থাকা ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের আঞ্চলিক দপ্তরের কর্তাব্যক্তিরা। সরেজমিনে দেখা যায়, টেকনিক্যাল থেকে গাবতলী পর্যন্ত সড়কের দুপাশেই বর্জ্য। স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ, সিটি করপোরেশন নিয়মিত আবর্জনা সরায় না।

ফলে পুরো এলাকা মশার বংশবিস্তারের জন্য উপযোগী। টার্মিনালের ভেতরও যত্রতত্র পড়ে আছে ময়লা-পানি। তাতে উড়ছে মশামাছি। যাত্রী বিশ্রামাগারে কথা হয় বাসচালক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি মজা করে বললেন, ‘এখানে ২৪ ঘণ্টা মশারা বিনা মূল্যে গান শোনায়।’ টার্মিনালের পেছনের অংশে গিয়ে দেখা যায়, বাস ধোয়ামোছার কাজ চলছে। সেই নোংরা পানি জমে থাকছে নালায়। পাশেই বেড়িবাঁধে ওঠার সড়ক। সড়কটির বাঁ পাশজুড়ে ময়লার ভাগাড়। মোটরশ্রমিকেরা জানান, এটিই গাবতলী এলাকার মশার প্রধান প্রজননক্ষেত্র। ২০ বছর ধরে টার্মিনাল এলাকায় ভ্যান চালান আবদুল মজিদ। তিনি বলেন, ‘মশা মারার লোক সপ্তাহে এক-আধদিন আইস্যা বড় রাস্তায় ধোঁয়া মাইরা চইল্যা যায়। এই দিকে তো ভুল কইরাও আসে না।’ পুরো টার্মিনালজুড়েই ফেলে রাখা হয়েছে পরিত্যক্ত টায়ার। তা দেখে রাজশাহীগামী গাড়ির যাত্রী রেজাউল করিম বলেন, ‘শুনেছি টায়ারের পানিতেই ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার মশা ডিম পাড়ে। এখানে তো দেখছি বেশ আয়োজন করেই মশার প্রজননক্ষেত্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে।’ পতঙ্গবিশারদদের মতে খোলা নালা, ময়লা-আবর্জনা ও বদ্ধ জলাশয়ে কিউলেক্স কুইনকুইফেসিয়াস প্রজাতির মশা বংশবিস্তার করে। বসন্তকাল এ ধরনের মশার প্রজনন সময়। এ মশার কামড়ে শরীর লালচে হয়ে ফুলে উঠলেও কোনো ধরনের রোগ ছড়ায় না। আর স্বচ্ছ, জমে থাকা পানিতে এডিস ইজিপ্টাই ও অ্যানোফিলিস স্টিফেনসাই প্রজাতির মশা ডিম ছাড়ে। এরা ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া রোগ ছড়ায়। গত বছরের চিকুনগুনিয়া মহামারি আকারে রাজধানীজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ বছরও আতঙ্কিত বাসচালক মিলন শেখ। তিনি বলেন, ‘গত বছর চিকুনগুনিয়া জ্বরে ভুগেছি। সেই ব্যথা এখনো সারে নাই।’ টার্মিনাল লাগোয়া গাবতলী পুলিশ ফাঁড়ি। এর আশপাশেও ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। ফাঁড়িতে কর্মরত পুলিশ সদস্য শফিকুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের মশক নিধন কার্যক্রমওয়ালাদের চোখ এদিকে পড়েনি। দিনের বেলাও মশারি খাটিয়ে বিশ্রাম নিতে হয়। পাশ থেকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক পুলিশ সদস্য বলেন, ‘সন্ধ্যার দিকে এলে দেখবেন মৌমাছির মতো মশার ঝাঁক। পারে তো উড়াইয়া নিয়া যায়।’ দুই পুলিশ সদস্যই জানান, এই এলাকা যে ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়ার জন্য ঝুঁকিপ্রবণ তা তাঁরা জানেন না। এদিকে গাবতলীর আবাসিক এলাকা কোটবাড়ী ও বাগবাড়ীর মানুষ মশা রুখতে হিমশিম খাচ্ছে। মশার তাণ্ডবে বিকেলের পর থেকেই দরজা-জানালা বন্ধ করে ঘরে বন্দী থাকছে তারা। তাদের অভিযোগ, সিটি করপোরেশনের ধোঁয়ায় মশার কিছু হয় না। বরং ধোঁয়ার তাড়ায় রাস্তার মশা বাসাবাড়িতে ঢুকে পড়ে। কোটবাড়ীর বাসিন্দা রাজেশ পাল বলেন, এই এলাকাটি ঘনবসতিপূর্ণ, গলিগুলো সরু। ঠিকমতো পয়োনালা পরিষ্কার করা হয় না। সিটি করপোরেশন একদমই দায়িত্ব পালন করছে না। বিশেষজ্ঞদের মতে, মশা নিধনে প্রথমে মশার উৎস চিহ্নিত করে এর লার্ভা ধ্বংস করতে হয়। ধোঁয়াতে মশার লার্ভা মরে না। লার্ভা ধ্বংসে বিশেষ ওষুধ ছিটাতে হয়। ডিএনসিসির গাবতলী বাস টার্মিনাল শাখার সহকারী ব্যবস্থাপক জোসন আলী বলেন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তর যে এলাকাটিকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে নির্দেশনা দিয়েছে, তা তাঁর জানা নেই। করপোরেশনের গুলশান কার্যালয় থেকেও এ বিষয়ে তাঁকে কিছু জানানো হয়নি। প্রসঙ্গত, গাবতলী থেকে শত শত বাস দেশের উত্তর ও দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করে। ফলে এই এলাকা থেকে সহজেই এডিস মশা দেশের এই দুই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

3 × two =