ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে ইইউ’সহ ১০টি দেশের আপত্তি ও উদ্বেগ

0
896

নাজনীন: ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ১০টি দেশ। রবিবার (২৫ মার্চ) ইইউসহ  বাংলাদেশে নিযুক্ত এসব দেশের প্রতিনিধিরা সচিবালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।

 

এই সময়ে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের ৪টি ধারা নিয়ে তারা তাদের আপত্তি ও উদ্বেগ বাংলাদেশ সরকারের কাছে প্রকাশ করেন এবং আইনটির এসব ধারা সংশোধনের বিষয়ে আইনমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

রাষ্ট্রদূতদের এই প্রতিনিধি দলটির নেতৃত্ব দেন জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিন্স। প্রতিনিধি দলে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), সুইডেন, যুক্তরাষ্ট্র, ডেনমার্ক, ফ্রান্স, কানাডা, ইউকে, স্পেন, নরওয়ে এবং সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূতের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

সাক্ষাৎ শেষে বের হয়ে এই সময়ে জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিন্স সাংবাদিকদের জানান, আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে  ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর ধারা ২১, ধারা ২৫, ধারা ২৮ এবং ধারা ৩৫ নিয়ে তারা কথা বলেছেন।

তিনি বলেন, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর এই ধারাগুলো জনগণের মুক্ত বাক স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করবে। এই আইনের শাস্তি, জামিন অযোগ্য ধারা এবং এই আইনের অপব্যবহার – এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা সকলেই চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। এরপর আইনমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন যে উনারা বেশ কয়েকদিন আগে থেকেই এই বিষয়ে কথা বলার জন্য সময় চেয়েছিলেন। সেই কারণে আজকে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এখন আমরা নিজেরা বসে পরবর্তী করণীয় ঠিক করবো।

উল্লেখ্য, সমালোচনার মুখে তথ্যপ্রযুক্তি আইনের বিতর্কিত ৫৭ ধারা বিলুপ্ত করে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া চূড়ান্ত করেছে সরকার। তবে নতুন আইনের খসড়া নিয়েও বিতর্ক দেখা দেয়। বিশেষ করে গণমাধ্যম স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না বলে শঙ্কা প্রকাশ করেন সংশ্লিষ্টরা।

আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছে- ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেক্ট্রনিক বিন্যাসে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যাহা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেহ পড়িলে, দেখিলে বা শুনিলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হইতে উদ্বুদ্ধ হইতে পারেন অথবা যাহার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করিতে পারে বা এ ধরনের তথ্যাদির মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি প্রদান করা হয়, তাহা হইলে তাহার এই কার্য হইবে একটি অপরাধ।’

এর শাস্তি সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা জরিমানা। এ ধারার অপরাধ জামিনঅযোগ্য। এ বিধান হয়রানিমূলক এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতা তথা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী হওয়ায় ধারাটি বাতিলের দাবি করেন গণমাধ্যম কর্মীরা।

পরে ৫৭ ধারা বাদ দিয়ে নতুন আইন ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা। খসড়ার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এতেও আইসিটি অ্যাক্টের ৫৭ ধারার অনুরূপ বেশকিছু বিষয় ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রাখা হয়েছে। ৫৭ ধারায় অপরাধের ধরনগুলো উল্লেখ ছিল একসঙ্গে, কিন্তু নতুন আইনে সেগুলো বিভিন্ন ধারায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রাখা হয়েছে।

ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট এর ধারা নিয়ে আলোচনা ছাড়া অন্য কোনও বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়নি বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং জার্মান রাষ্ট্রদূত ড. থমাস প্রিন্স।

 

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nineteen + 14 =