‘ব্ল্যাক-আউটে’ থাকবে পুরো বাংলাদেশ

0
475

একাত্তরের পঁচিশে মার্চে পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যায় নিহতদের স্মরণে আজ রোববার রাতে এক মিনিট অন্ধকারে ‘ব্ল্যাক-আউটে’ থাকবে পুরো বাংলাদেশ।  এবারই প্রথম এ ধরনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সরকার। ২৫ মার্চ রাত ৯টা থেকে ৯টা ১ মিনিট পর্যন্ত জরুরি স্থাপনা ছাড়া সব জায়গা অন্ধকার রাখা হবে। একাত্তরের ওই রাতে নিহতদের স্মরণে নেওয়া হয়েছে আরও নানা কর্মসূচি। রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক সংগঠনও কর্মসূচি হাতে নিয়েছে।

‘ব্ল্যাক-আউটে’ থাকবে পুরো বাংলাদেশ – বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের শ্বাসরোধ করতে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে এ দেশের নিরস্ত্র মানুষের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামের সেই অভিযানে কালরাতের প্রথম প্রহরে ঢাকায় চালানো হয় গণহত্যা। ২৬ মার্চ প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান। অবশ্য তার আগেই ৭ মার্চ ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভায় বাঙালির অবিসংবাদিত এই নেতা বলেন, “এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম- এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।” কার্যত সেটাই ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা, যার পথ ধরে কালরাতের পর শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ পর্ব। নয় মাসের যুদ্ধে ত্রিশ লাখ শহীদের আত্মদান, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমহানি এবং জাতির অসাধারণ ত্যাগের বিনিময়ে ১৬ ডিসেম্বর অর্জিত হয় চূড়ান্ত বিজয়। বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ নামের একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি বাণীতে বলেন, “১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বাংলার মাটিতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল, তা ছিল বিংশ শতাব্দীর নৃশংসতম গণহত্যা। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে অভিযানটি পরিচালনার মাধ্যমে তারা বাঙালি পুলিশ, ইপিআর এবং ছাত্রজনতার প্রতিরোধকে স্তব্ধ করে দিতে চেয়েছিল। “মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞ ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অধ্যায়। মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারের মাধ্যমে আমরা কিছুটা হলেও সে কলঙ্কমোচন করতে সক্ষম হয়েছি। আমি মনে করি জাতীয় গণহত্যা দিবস পালনের মধ্য দিয়ে কালরাতের গণহত্যা ও আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি হবে। আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম জানতে পারবে স্বাধীনতার প্রকৃত ইতিহাস।” রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও চেতনাকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে একটি অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার অভিযাত্রায় অংশ নিতে দল-মত-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার প্রতি আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির উপর আধুনিক মারণাস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান শহর ও বন্দরে হত্যা করা হয় হাজার হাজার নিরীহ মানুষ। সেই রাত থেকে পরবর্তী নয় মাস পাকিস্তানি বাহিনী এবং তাদের এদেশীয় দোসর-রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্যরা-সারাদেশে নিষ্ঠুর হত্যাযজ্ঞ চালায়। হত্যা করে প্রায় ৩০ লাখ মানুষকে। এত কম সময় ও স¦ল্প পরিসরে এত বিপুলসংখ্যক মানুষ হত্যার নজির বিশ্বে আর নেই।” তিনি বলেন, “১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যা বিশ্বের জঘন্যতম গণহত্যাগুলোর অন্যতম। বিদেশি পত্রিকায় প্রকাশিত অসংখ্য প্রতিবেদন, দূতাবাসগুলোর বার্তা এবং পরবর্তীকালে দেশি-বিদেশি লেখক-ইতিহাসবিদদের রচনায় গণহত্যার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে এসেছে।” যুদ্ধাপরাদের বিচার অব্যাহত রাখার প্রত্যয় জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের ব্যাপারেও সর্বাত্মক নেওয়া হয়েছে। জাতীয় সংসদের স্বীকৃতির পর একাত্তরের ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বর হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে ‘গণহত্যা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। গত বছরের ২০ মার্চ মন্ত্রিসভা জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে পালনের জন্য ২৫ মার্চকে ‘ক’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে গণহত্যা দিবস হিসেবে অন্তর্ভুক্তের প্রস্তাব অনুমোদন দেয়। এরপর সম্প্রতি মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সভাপতিত্বে এক আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় ২৫ মার্চ এক মিনিট সারা দেশে প্রতীকী ‘ব্ল্যাক আউট’ পালনের সিদ্ধান্ত হয়। এরপর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রাখাসহ দিবস পালনে সরকারের বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগে চিঠি পাঠানো হয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে। গণহত্যা দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে রোববার একটি আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ওই সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে সন্ধ্যা ৭টায় স্মৃতি চিরন্তনে মোমবাতি প্রজ্জ্বালন, ডকুমেন্টারি প্রদর্শন ও আলোচনা সভা হবে। জগন্নাথ ও রোকেয়া হলের উদ্যোগেও কর্মসূচি পালন করা হবে। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে স্বাধীনতা ও গণহত্যার ৪৭তম বার্ষিকী উপলক্ষে শহীদ মিনারে ৪৭টি মশাল প্রজ্জ্বালন ও আলোর মিছিল করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × one =