পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ করা অভিযোগ আলোর মুখ দেখেনি

0
613

আইজপির কমপ্লেইন সেলে পুলিশের বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযোগ করা অভিযোগ আলোর মুখ দেখেনি গত চার মাসেও। পুলিশ সদর দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় মুখ থুবড়ে পড়ে আছে অভিযোগের ফাইল। এ অবস্থায় উল্টো বিপাকে পড়েছেন অভিযোগকারী পুলিশের এসআই বশির। এ ব্যাপারে এডিশনাল ডিআইজি ডিসিপ্লিন রেজাউল করিম সাংবাদিকদের বলেন, অভিযোগটি পর্যালোচনা পর্যায়ে রয়েছে।

পর্যালোচনা শেষে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। তবে আলোচিত এই ইয়াবা পুলিশ কর্তৃক বিক্রির অভিযোগের সত্যতা এখনও পাচ্ছে তদন্ত কমিটি। আর ঘটনার সবই জানতেন কক্সবাজারের পুলিশ সুপার ড. একেএম ইকবাল হোসেন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে তিনি নীরব ছিলেন। তৎকালীন ডিবি পুলিশের এক কর্মকর্তার জবানবন্দিতে এ তথ্য উঠে এসেছে। এ ঘটনায় গঠিত পুলিশ সদর দফতরের তদন্ত কমিটির কাছে জবানবন্দিও দিয়েছেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) ইকবাল হোসেন টেলিফোনে এ প্রতিবেদককে জানান, এই বিষয়টি আমি কিছুই জানতাম না। ঘটনাটি ভুয়া উল্লেখ করে বলেন বিষয়টি আইজিপি অফিস থেকে তদন্ত করছে। এখানে আমাদের কিছু করনীয় নেই। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭ সালের ২৭ অক্টোবর রাতে কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে ৭ লাখ ৩০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করে ডিবি পুলিশ। পরদিন ৮ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে একটি মামলা দায়ের করা হয়। বাকী ইয়াবা পেশাদার মাদক ব্যবসায়ী উখিয়ার জয়নাল মেম্বারের মাধ্যমে কয়েক চালানে ইয়াবাগুলো বিক্রি করা হয়। কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি মনিরুল ইসলাম, এসআই কামাল হোসেন ও এসআই মাসুদ রানার বিরুদ্ধে ইয়াবা বিক্রির অভিযোগ আনা হয়েছে। সর্বশেষ গত বছর ১৩ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় একটি মামলার সাক্ষী দিতে যান এসআই বশির আহম্মাদ। সেখান থেকে রাজধানীর রামপুরায় নিজের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে আসেন তিনি। খবর পেয়ে তাকে ম্যানেজ করতে ফের ঢাকায় আসেন এসআই মাসুদ রানা। কিন্তু বশির আহম্মাদ দেখা করতে না চাওয়ায় মাসুদ রানা তাকে বলেন, ‘ভাই এতদূর থেকে আসলাম। শুধু আপনার সঙ্গে দুপুরে খেয়েই চলে যাব।’ এর পর তিনি বশির আহম্মাদের রামপুরার বাসায় যান। সেখানে গিয়ে একটি ব্যাগ থেকে এক লাখ টাকা বের করে বশির আহম্মাদকে দেন। এ সময় মাসুদ রানা বলেন, স্যাররা আপনাকে টাকা দেওয়ার জন্য আমাকে বিমানে করে পাঠিয়েছেন। এরপরই শুরু হয় দুই কর্মকর্তার মধ্যে তর্কাতর্কি। একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয় রামপুরা থানার একটি টহল টিম। স্থানীয় ফাঁড়ি হয়ে তাদের থানায় নেওয়া হয়। সেখানে থানার ওসিও তাদের নিবৃত করতে ব্যর্থ হন। পরে তাদের নেওয়া হয় ঢাকা মহানগর পুলিশের মতিঝিল বিভাগের ডিসির কার্যালয়ে। এ ঘটনায় রামপুরা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করে পুলিশ। সেটির তদন্ত শেষে গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর প্রতিবেদন মতিঝিল বিভাগের ডিসির কাছে পাঠান রামপুরা থানার ওসি প্রলয় কুমার সাহা। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, এসআই মাসুদ রানা এসআই বশির আহম্মাদের রামপুরার বনশ্রীর বাসায় গিয়ে তাকে কিছু টাকা দেন। কিন্তু টাকার পরিমাণ কম হওয়ায় গোলমাল শুরু হয়। দুজনেই সাবেক সহকর্মী এবং তারা একই সঙ্গে কাজ করতেন কক্সবাজার জেলা গোয়েন্দা পুলিশে। সেখানকার একটি লেনদেকে কেন্দ্র করে এই অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এ ব্যাপারে গত বছরের ২৭ ডিসেম্বর এস আই বশির পুলিশ সদর দফতরে আইজিপির কমপ্লেইন সেলে লিখিত অভিযোগ দেন। ৩১ ডিসেম্বর সেটি ১৩৯১ নং স্বারক মূলে এডিশনাল ডিআইজি ডিসিপ্লিন-এর কাছে পাঠানো হয়। গত চার মাস ধরে ওই ফাইল একই অবস্থায় আছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 + 5 =