ওসমানী বিমানবন্দরকে স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা

0
446

ঢাকা ও চট্টগ্রামে কড়াকড়ির কারণে সিলেট ওসমানী বিমানবন্দরকে স্বর্ণ চোরাচালানের নিরাপদ রুট হিসেবে ব্যবহার করছে চোরাকারবারিরা। গতকালও এই বিমানবন্দরে ওমানের মাস্কাট থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার স্বর্ণের চালান উদ্ধার করা হয়েছে। ওসমানীতে স্বর্ণের চালান উদ্ধার করা নিয়মিত ঘটনায় পরিণত হয়েছে। অভিযোগ আছে- অনেক চালানই নিরাপত্তার ফাঁক গলিয়ে বেরিয়ে যায়।

আবার যাদের চালান ধরা পড়ে তাদেরও কৌশলে ছাড় দেয়া হয়। বাইরের দেশ থেকে যেকোনো উড়োজাহাজ ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে অবতরণ করলেই তাতে তল্লাশি চালানো হয়। যাত্রী এবং তাদের লাগেজের দিকে কড়া নজরদারি করা হয় বলে জানিয়েছেন- সিলেট কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার নিয়াজুর রহমান। তিনি জানিয়েছেন- ‘কাস্টমসের কাজ হচ্ছে আটক করে মামলা দেয়া। অনুসন্ধানের কাজ আমাদের না। সুতরাং স্বর্ণ চোরাকারবারি কারা তা অনুসন্ধানের মাধ্যমেই সংশ্লিষ্ট সংস্থা খুঁজে বের করবে।’ ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সূত্র জানিয়েছে, গতকাল সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২২২ ফ্লাইটটি। মাস্কাট থেকে আসা ওই ফ্লাইটটি সকালে আসার পর একেক করে সব যাত্রী নেমে যান। কিন্তু মোহাম্মদ ইকবাল নামের এক ব্যক্তি বিমান থেকে নামছিলেন না। তার আগেই মোতালেব নামের এক যাত্রী বিমানবালাদের কাছে স্বর্ণের চালানের ব্যাপারে জানান। পরে বিমানবালারা সেটি সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কর্মকর্তাদের অবগত করেন। ওই ফ্লাইটের যাত্রী ইকবাল হোসেনের পাশের সিট-৩৭ জে এর নিচে স্বর্ণের বারগুলো রাখা ছিল। যাত্রীরা বিমান থেকে নামার পর ওই সিটের নিচ থেকে স্বর্ণের বার রাখা ব্যাগ নিয়ে বের হওয়ার সময় শুল্ক গোয়েন্দা ব্যাগটিতে তল্লাশি চালিয়ে তাকে আটক করেন। ইকবাল বিমানে তার সিট নং ৩১ এইচ’এ নিচে স্বর্ণের বারের ব্যাগ না রেখে পাশের সিট ৩৭ জে এর নিচে স্বর্ণের বারগুলো লুকিয়ে রাখেন। শুল্ক গোয়েন্দা বলেন- এ কাজ করার কারণ হচ্ছে যাতে ধরা পড়লে তার জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ না পায়। বিমানের সব যাত্রী নেমে পড়লেও ওই সময় নামেননি ইকবাল। পরে তার পাশের সিটের নিচে রাখা স্বর্ণের বারের ব্যাগ নিতে গেলে তাকে আটক করা হয়। এদিকে- দুপুরে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এ নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন সিলেট কাস্টমসের অতিরিক্ত কমিশনার নিয়াজুর রহমান। এ সময় নিয়াজুর রহমান বলেন, মোতালেব নামের এক যাত্রীর তথ্যের ভিত্তিতে ওই চালান আটক করা হয়। তবে আটককৃত ইকবাল এ চালানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কি না সেটি এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তিনি বলেন, কাস্টমস কর্মকর্তারা এ ব্যাপারে সিলেটের এয়ারপোর্ট থানায় মামলা করছে। ইকবালকে পুলিশে সোপর্দ করা হবে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে নিয়াজুর রহমান বলেন, ‘শুল্ক গোয়েন্দারা তথ্য পায়, আটক করে। এরপর পুলিশ কিংবা সংশ্লিষ্টদের কাছে আসামি ও মালামাল দেয়া হয়। তদন্ত কাস্টমস করে না। সুতরাং স্বর্ণের চালানের সঙ্গে ইকবালের সম্পৃক্ততা রয়েছে কি না সেটি কাস্টমস কর্মকর্তারা বলতে পারবেন না। সেটি বলতে হবে তদন্ত সংস্থাকে।’ সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ক্রমেই ব্যস্ত বন্দরে পরিণত হচ্ছে। এখন প্রতিদিনই এই বিমানবন্দরে ৩ থেকে ৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট অবতরণ করে। এরমধ্যে লন্ডন, সৌদি আরব ও দুবাইয়ের ফ্লাইট বেশি। কারণ ওই সব দেশে সিলেটের মানুষ সবচেয়ে বেশি বসবাস করেন। সম্প্রতি সময়ে ফ্লাই দুবাই কোম্পানির উড়োজাহাজ দুবাই থেকে তারা ফ্লাইট অপারেট করছে। প্রায় দুই মাস আগে দুবাই থেকে সরাসরি ফ্লাইট চালু করেছে বাংলাদেশ বিমানও। পাশাপাশি ওমানসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ থেকেও আরো কয়েকটি ফ্লাইট অপারেটর করছে। কিন্তু দুবাই, ওমান থেকে ফ্লাইট এলেই সর্তক হয়ে উঠে সবাই। এসব ফ্লাইটেই আসে স্বর্ণের চালান। যাত্রীরা জানিয়েছেন, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফের ঘাঁটি গেঁড়েছে স্বর্ণ চোরাকারবারিরা। ঢাকা চট্টগ্রামের সিন্ডিকেটের শেল্টার দিচ্ছে স্থানীয় একটি চক্র। যে চক্রটির গতিবিধি ইতিমধ্যে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। এ কারণে গেল ছয় মাসে বেশ কয়েকটি চালান আটক হলেও একটিরও কোনো সুরাহা হয়নি। বরং চোরাকারবারিরা রয়েছে বহাল-তবিয়তে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen − nine =