যশোরের মনিরামপুরে সেতুর আত্মহত্যা প্ররোচিত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার পায়তারা

0
685

স্টাফ রিপোর্টার ঃ যশোরের মনিরামপুর থানার স্মরণপুর গ্রামে স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় প্রথম স্ত্রী মহিমা খাতুন সেতু (১৮)‘র আত্মহত্যা প্ররোচিত ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার প্রধান আসামী স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান অপুকে জামিন দেননি বিজ্ঞ আদালত। জানা গেছে, গত ৬ আগষ্ট আত্মহত্যা প্ররোচিত মামলার প্রধান আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু ও তার বাবা আব্দুল মমিন এবং মা রোকেয়া বেগম নিম্ন আদালতে জামিনের আবেদন করেন।

বিজ্ঞ আদালত আব্দুল মমিন ও রোকেয়া বেগমকে জামিন মঞ্জুর করেন। কিন্তু মামলার প্রধান আসামী মোস্তাফিজুর রহমান অপুর জামিন না মঞ্জুর করেন। এদিকে অগ্রিম জামিনে অপুর বাবা ও চাচা আব্দুল বাশার প্রকৃত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে মিশনে নেমেছে বলে এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে। অন্যদিকে অভাগী সেতুর অসহায় পরিবার বিচারের আশায় দিন গুনছে। এসেই প্রকাশ, স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় গত ৩০ জুলাই সকালে প্রথম স্ত্রী মহিমা খাতুন সেতু স্বামীর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে আত্মহননের পথ বেঁছে নেয়। চিঠিতে লেখা ছিলো, ভাল থাকো ভালবাসার অপু। সবার কাছে প্রেম ভালবাসা অভিনয় বা খেলা নয়। কেউ কেউ ভাবে প্রেম ভালবাসা বিয়ে পবিত্র একটা জিনিস। আরে তুমিতো কোরআন মসজিদকে অবিশ্বাস করলে, তো আমাকে কি বিশ্বাস করবে। সুখি হও। তোমার কাছে অনুরোধ আমাকে দেখতে এসো কিন্তু চোখ ঢেকে এসো। ভাল থেকো। ইতি-সেতু। মনের মধ্যে চাপা কষ্ট পুষে রাখা কথাগুলো স্বামী অপুর উদ্দেশ্যে চিঠি লিখে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহনন করেন মহিমা খাতুন সেতু নামের এক কলেজ ছাত্রী। জানা গেছে, যশোর জেলার মনিরামপুর থানার স্মরণপুর গ্রামের আব্দুল মমিনের পুত্র মোস্তাফিজুর রহমান অপুর সাথে একই এলাকার মুক্তার আলীর কন্যা মহিমা খাতুন সেতুর হাইস্কুলে পড়াকালীন সময় থেকে প্রেমজ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেতু ঝিকরগাছা উপজেলার হাজিরালী মহিলা কলেজের দ্বাদশ বর্ষের ছাত্রী। স্থানীয় একাধিক সূত্র জানায়, সেতু একাদশ শ্রেণিতে পড়াকালীন সময়ে পরিবারের অমতে গোপনে অপুকে ২০১৭ ইং সালে বিয়ে করে। বিষয়টি প্রথমে গোপন থাকলেও পরে জানাজানি হয়ে পড়ে উভয়ের পরিবারে। তখন বাঁধ সাজে অপুর বাবা ও মা। এক পর্যায়ে অপুকে তার বাবা আব্দুল মমিন দেশের বাইরে পাঠাইয়ে দেয়। ওই সময় অপু তার স্ত্রী সেতুর সাথে ফোনে যোগাযোগ রাখে বলে সেতুর পরিবার ও একাধিক সূত্র জানায়। কয়েক মাস যেতে না যেতেই অপু বাড়ি ফিরে আসে। একই সাথে সেতুর বাড়িতে আসা-যাওয়া করতো অপু। বিষয়টি অপুর বাবা-মা জানতে পেরে অপুকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার জন্য উঠেপড়ে লাগে। সম্প্রতি ঝিকরগাছা উপজেলার বোদখানা এলাকার শাপলাকে বিয়ে করে ঘরে তোলে অপু। স্বামী অপু দ্বিতীয় বিয়ের পিঁড়িতে বসায় মেনে নিতে পারেনি সেতু। ভালবাসার মানুষটির বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে না পেরেই গত ৩০ জুলাই সকালে নিজ শোবার ঘরের সিলিং ফ্যানে ওড়না পেঁচিয়ে সেতু আত্মহত্যা করে। এ ঘটনায় আত্মহত্যার প্ররোচনার দায়ে ৩ জনকে আসামী করে মনিরামপুর থানায় ৩০৬ ধারায় মামলা দায়ের হয়েছে। যার মামলা নং-৪১, তাং-৩০/৭/২০১৮ ইং। মামলার আসামীরা হলো, সেতুর স্বামী মোস্তাফিজুর রহমান অপু, শ্বশুর আব্দুল মমিন ও শ্বাশুড়ী রোকেয়া বেগম। এদিকে একমাত্র কন্যাকে অকালে হারিয়ে পাগলপ্রায় সেতুর বাবা-মা। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন সকালে বাবা মুক্তার আলী সেতুর কবরের পাশে বসে কবরের মাটি বুকে মাখে আর বলতে থাকে, ওমা-মাগো তোর কবরের মাটি মাখছি তারপরও বুকটা কেনো ঠান্ডা হচ্ছে না। বুকের মধ্যে কেনো এতো জ্বলছে? দৃশ্যটি কোনো চলচ্চিত্রের না। অকালে না ফেরার দেশে চলে যাওয়া সেতু বাবার। দৃশ্যটি দেখলে পাষন্ড ব্যক্তিরও চোখে পানি চলে আসবে। মৃত্যুর পূর্বে সেতুর লিখে যাওয়া চিঠিটি থানা হেফাজতে আছে। এ ব্যাপারে থানা অফিসার ইনচার্জ মোকারম হোসেন জানায়, থানা পুলিশ অসহায় সেতুর পরিবারের পাশে থাকবে। তবে সেতুর বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একটি চক্র তৎপর রয়েছে। এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, অপুর বাবা আব্দুল মমিনের বর্তমানে ৩টি স্ত্রী রয়েছে। আর বিশ্বাসঘাতক অপুর মা রোকেয়া বেগম আব্দুল মমিনের প্রথম স্ত্রী। সেতুর আত্মহত্যা প্ররোচিত ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একটি স্বার্থান্বেশী মহল তদবীর চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সেই সাথে স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় মিথ্যা তথ্য দিয়ে জণসাধারণকে বিভ্রান্ত করছে বলে এলাকাবাসীর অভিমত। এ বিষয়ে সেতুর অসহায় পরিবার প্রশাসন ও আইন সহায়তা সংস্থার হস্তক্ষেপ কামনা করছেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × 5 =