তারা ফেসবুকে বন্ধুত্ব করছে, আবার ফেসবুককেই চাঁদাবাজির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে

0
584

নগরের মধ্যম হালিশহরের বাসিন্দা আকবর আলী (ছদ্মনাম) ধনাঢ্য ব্যবসায়ী। একাধিক বাড়ি-গাড়ির মালিক। চট্টগ্রাম বন্দরকেন্দ্রিক তাঁর ব্যবসা-বাণিজ্য। তাঁর স্ত্রী রোজিনা রহমান (ছদ্মনাম) এবং কলেজপড়ুয়া সন্তান নিয়ে সুখের সংসার। কিন্তু হঠাৎ করে এ ধনাঢ্য ব্যবসায়ীর সংসারে লেগে যায় আগুন!

কারণ, ফেসবুকের ইনবক্সে তাঁরই গাড়িচালক আবু তাহের (ছদ্মনাম) কিছু স্পর্শকাতর ছবি পাঠিয়েছেন, যেগুলো ব্যবসায়ীর স্ত্রীর। আগস্ট মাসের এ ঘটনায় গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বেশ গলদঘর্ম হতে হয়েছে। কিন্তু এখনো সেই গাড়িচালককে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তবে গোয়েন্দারা ওই চালককে খুঁজছেন। ঘটনার বিষয়ে নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (বন্দর) আসিফ মহিউদ্দীন  বলেন, ‘আকবর আলী ব্যবসায়িক কারণে প্রায়ই চট্টগ্রামের বাইরে থাকেন। এ সুযোগে স্ত্রী রোজিনা রহমানের সঙ্গে গাড়িচালক আবু তাহেরের সম্পর্ক হয়ে যায়। তাঁরা নগরের মোটেল-গেস্টহাউসে গিয়ে ঘনিষ্ঠ সময় কাটাতে থাকেন। একপর্যায়ে ওই ব্যবসায়ী বিষয়টি আঁচ করতে পারেন। পরে তিনি গোয়েন্দা কার্যালয়ে এসে স্ত্রী ও গাড়িচালক তাহেরের মোবাইল নম্বর দেন গোয়েন্দাদের। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা দুটো ফোনের তথ্য যাচাইবাছাই করে দুজনের মধ্যে দীর্ঘক্ষণ আলাপসহ কিছু সন্দেহজনক বিষয় চিহ্নিত করেন। গোয়েন্দাদের কাছ থেকে এমন তথ্য পেয়ে ব্যবসায়ী তাঁর স্ত্রীর কাছে বিষয়টি জানতে চান, চালক তাহেরের সঙ্গে তাঁর কোনো যোগাযোগ আছে কিনা? এমন প্রশ্ন স্বামীর মুখে শুনে তেলেবেগুনে জ্বলে উঠেন স্ত্রী। তিনি সরাসরি অস্বীকার করলেনই, একই সঙ্গে হুমকি দেন আকবর আলীকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যাওয়ার। রোজিনা রহমানের বয়স প্রায় ৪০ বছর। সংসারে কলেজপড়ুয়া সন্তান আছে। এ বয়সে ডিভোর্স হলে সামাজিক মর্যাদাহানি হবে ভেবে চুপসে যান আকবর আলী। মধ্যবয়সী দম্পতির সংসারে চলে স্বামী-স্ত্রীর মানসিক টানাপড়েন। এরই মধ্যে একদিন গাড়িচালক আবু তাহের চলে যান। তাহের চলে যাওয়ার পর স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন আকবর আলী। ভাবেন, এবার ঝামেলা শেষ হলো। কিন্তু ব্যবসায়ীর ভাবনা তখনো শেষ হয়নি, বরং নতুন করে সমস্যা শুরু হলো। একদিন আবু তাহের ফোন দেন আকবর আলীকে। চট্টগ্রাম ছেড়ে ভোলা জেলায় গিয়ে তাহের চাঁদা দাবি করলেন। না হলে তাঁর স্ত্রী রোজিনা রহমানের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্কের সময় তোলা ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেন। এতে বিপাকে পড়েন ব্যবসায়ী। নিজের সামাজিক ও ব্যবসায়িক মর্যাদার সঙ্গে স্ত্রীর মর্যাদা ক্ষুণ্ন হবে ভেবে আকবর আলী বাধ্য হয়ে আবু তাহেরকে টাকা দেন। প্রথম দফা টাকা পেয়ে পরে আবারও একই হুমকি দিয়ে টাকা দাবি করেন তাহের। এবার আকবর আলী পুনরায় গোয়েন্দা কার্যালয়ে গিয়ে সমস্যার কথা জানান। গোয়েন্দারা আবু তাহেরের সঙ্গে কথা বলেন ফোনে। গ্রেপ্তারের হুমকি দেন। গোয়েন্দাদের অভিযান শুরুর হুমকি পেয়ে তাহের কিছু সময়ের জন্য চুপসে যান। তবে সেই তাহের এখনো গ্রেপ্তার হননি। তাঁর কাছ থেকে এখনো উদ্ধার করা যায়নি রোজিনা রহমানের স্পর্শকাতর ছবিগুলো। ফলে ব্যবসায়ীর আতঙ্ক এখনো কাটেনি। এ প্রসঙ্গে গোয়েন্দা কর্মকর্তা আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এখন বড় ধরনের ফাঁদে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে নৈতিকস্খলন হওয়া মানুষের জন্য। তারা ফেসবুকে বন্ধুত্ব করছে, আবার ফেসবুককেই চাঁদাবাজির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। এ কারণে ব্যবসায়ী আকবর আলীর পরিবারের মতো অনেক পরিবারে অশান্তি-তিক্ততা চলছে।’

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × 1 =