রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফাঁকা বৃহত্তর বাণিজ্যক শহর চৌমুহনী সর্বত্র আতঙ্ক

0
717

ইয়াকুব নবী ইমন:
রাজনৈতিক অস্থিরতায় ফাঁকা হয়ে পড়েছে বৃহত্তর নোয়াখালীর প্রধান বাণিজ্যিক শহর চৌমুহনী। সর্বত্র আতঙ্ক বিরাজ করছে। ধস নেমেছে ব্যবসা বাণিজ্যে। কবে নাগাদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তারও নিশ্চয়তা নেই। তবে স্থানীয় এলাকাবাসী ও ব্যবসায়ীরা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থিতিশীল পরিবেশ বজায় রাখতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বিভিন্ন ইস্যুতে বেগমগঞ্জে ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগের এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ ও চৌমুহনী পৌর মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সল গ্রুপের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিগত ১ সপ্তাহ থেকে উত্তেজনা চলছে।

ঘটনার সূত্রপাত গত ১৫ সেপ্টেম্বর রসুলপুর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল খালেককে পুলিশ একটি অপহরণ ও প্রতারনার মামলায় গ্রেফতারকে কেন্দ্র করে। এর পর সড়ক অবরোধ, জেলায় উন্নয়ন কনসার্টে আসা শিল্পি মমতাজের গাড়ি বহর আটকা পড়া, অতপর উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আক্তারুজ্জামান আনছারীকে গণপিটুনি দিয়ে আহত করা মধ্য দিয়ে। সেই উত্তেজনা প্রশমিত হওয়ার আগেই গত ১৭ সেপ্টেম্বর উপজেলা আওয়ামী লীগের পক্ষে চৌমুহনীর পাবলিক হলে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সমাবেশের আয়োজন করে। অতপর সেখানে এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ ও পৌর মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সলের সমর্থকদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনায় পুরো চৌমুহনী শহর ও আশপাশের এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এমন সংঘর্ষের খবর বিভিন্ন টিভি চ্যানেল ও পত্র-পত্রিকায় ফলাও করে প্রচার হলে বিষয়টি দলের হাই কমান্ডের নজরে আসে। এর পর ১৮ সেপ্টেম্বর দুপুরে হাই কমান্ডের নির্দেশে জেলা আওয়ামীলীগ অফিসে জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের উপস্থিতিতে এমপি মামুনুর রশিদ কিরণ ও মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সলকে সংঘাত এড়ানোর নির্দেশনা দিয়ে মিলিয়ে দেওয়া হয়। এ সময় দু’নেই হাসি মুখে কোলাকুলি করেন। যার ছবি ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। নেতাকর্মীরা বিষয়টিকে ইতিবাচক হিসেবে নিলেও তা বেশিক্ষণ টিকেনি। সেই দিন বিকালেই চৌমুহনীর করিমপুরে কয়েক রাউন্ড গোলাগুলির শব্দ শুনতে পায় স্থানীয়রা। এর পর সন্ধায় চৌমুহনী পৌর আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রিয়াজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বাড়িতে হামলার অভিযোগ উঠে। অপরদিকে হামলা-সংঘর্ষের সময় চৌমুহনীতে মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সলের সমর্থকদেরও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাংচুর হয়েছে বলে দাবী করা হচ্ছে। চৌমুহনী শহরে এখনো থেমে থেকে ককটেল বিষ্ফোরণের শব্দ শুনা যায়। ফলে চরম আতঙ্ক আর উৎকন্ঠার মধ্যে দিনাতিপাত করছে স্থানীয়রা। তাছাড়া রাজনৈতিক অস্থিতরাকে কেন্দ্র করে অনেক চিহিৃত সন্ত্রাসী এখন প্রকাশ্যে মহড়া দিচ্ছে।
এদিকে গত এক সপ্তাহ থেকে চলা এ রাজনৈতিক অস্থিরতা চৌমুহনী শহরে বিপুল পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। আতঙ্ক বিরাজ করছে এখনো শহরে। বেশি প্রয়োজন ছাড়া সাধারণ বাসিন্দারা বাড়ি-ঘর থেকে বের হচ্ছেননা। ব্যবসায়ীরা দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতা নেই। হোটেল ব্যবসায় ধস নেমেছে। ক্রেতার অভাবে গোলাবাড়িয়া বাজারে কাচা মাল পচে যাচ্ছে। ব্যবসায়ীরা মারাত্মক ভাবে ক্ষতির সম্মুক্ষিন হচ্ছেন।
এ ব্যাপারে চৌমুহনী সাধারণ ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল খায়ের জানান, দাঙ্গা-হাঙ্গামায় সব চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা। সংঘর্ষের সময় দোকান-পাটে হামলা হয়, দোকান লুট হয়, ভাংচুর করা হয়। কারণ এখানে ব্যবসায়ীরা সবাই স্থানীয় নয়, আবার ক্রেতারাও স্থানীয় নয়। ফলে বাজারে অস্থিতরা থাকলে ক্রেতারা আসবেনা তারা নিরাপদ অন্য শহরে চলে যাবে। এতে আমরা চমর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবো। তিনি রাজনৈতিক পরিবেশ স্থিতিশীল রাখতে সকলের প্রতি আহবান জানান।
যে কোন হামল ও সংঘর্ষের কথা আস্বীকার করে চৌমুহনী পৌর মেয়র আক্তার হোসেন ফয়সল জানান, একটি মহল আমার রাজনৈতিক ইমেজ ক্ষুন্ন করতে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে। তবে চৌমুহনী শহরের ব্যবসা বাণিজ্যের যেন কোন ক্ষতি না হয় পৌর মেয়র হিসেবে তিনি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলে জানান।
এদিকে নোয়াখলী-৩(বেগমগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মামুনুর রশিদ কিরণ বলেন, আমার কোন কর্মী-সমর্থক সন্ত্রাসের সাথে জড়িত নয়। কেউ যদি সন্ত্রাসের সাথে জড়িত হয় তাকেও চাড় দেয়া হবেনা। আমি সন্ত্রাসকে পচন্দ করি না। কে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করছে তা এই এলাকার সবাই জানে। বেগমগঞ্জ আমাদের, এই এলাকাকে আমারাই শান্তিপূর্ন রাখতে হবে। তিনি দলেন সব পর্যায়ের নেতাকর্মীদের শান্ত থাকার আহবান জানান।
শুক্রবার বিকাল ৫ টায় চৌমুহনী শহরের সর্বশেষ পরিস্থিতি জানতে নোয়াখালীর পুলিশ সুপার ইলিয়াছ শরীফের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ দাবী হয়ে একটি মামলা করেছে। সেই মামলায় ইতিমধ্যে ৭ জনকে আটক করা হয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে চৌমুহনী ও আশপাশের এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েনসহ গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

seventeen − nine =