শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হায়রানির অভিযোগ

0
612

নোয়াখালীর সোনাইমুড়িতে এবার এক লম্পট শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের যৌন হয়রানির অভিযোগ উঠেছে।

 

উপজেলার নান্দিয়াপাড়া বীরশ্রেষ্ঠ রুহুল আমিন একাডেমিতে নবম শ্রেণির দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগে অভিযুক্ত বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহিদ উল্যার বিচার দাবী করেছে এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। এ নিয়ে এলাকায় বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তবে একটি মহল অভিযুক্ত শিক্ষকের কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে বিষয়টি ধামাচামা দেওয়ার চেষ্টা করায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, ওই স্কুলের ৯বম শ্রেণীর দুই ছাত্রীকে বিভিন্ন সময় ক্লাসে ও প্রাইভেট পড়ানো কালে যৌন হয়রানি করে আসছে শিক্ষক সহিদ উল্যা। হয়রানিতে অতিষ্ঠ হয়ে অবশেষে তারা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বরাবরে শিক্ষকের বিচার দাবী করে অবেদন করেছে। আবেদনের পর ইতিমধ্যে ম্যানেজিং কমিটি তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে সিনিয়র শিক্ষক তৌহিদ উল্যাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। নবম শ্রেণির ২ ছাত্রী বিদ্যালয়ের সভাপতি বরাবর লিখিত অভিযোগে জানায়, শিক্ষক সহিদ উল্যাহ বিভিন্ন সময় ক্লাসে বিভিন্ন উত্তেজনামূলক কথা বলতো এবং বিভিন্ন অজুহাতে বিভিন্ন সময় তাদেরকে প্রাইভেট পড়াতে স্কুলের পাশের বেডিং এ ডেকে নিয়ে যৌন উত্তেজনাকর কথা বলতো। শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিতো। মেয়েরা আপত্তি করলে তাদের বিভিন্ন ভাবে হুমকি দিতো। অপহরণের চেষ্টাও করতো। তিনি বিভিন্ন সময় নানান উত্তেজনাকর কথা বলে আমাদের তার বিছানায় নিতে চেষ্টা করলে আমরা কোনো ভাবে ইজ্জত বাঁচিয়ে চলে আসতাম। এ ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম জানান, দুই শিক্ষার্থীর আবেদন পাওয়ার পর ৭ই ফেব্রুয়ারি ম্যানেজিং কমিটির সভায় বিষয়টি তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে রিপোর্ট দেয়ার জন্য ম্যানেজিং কমিটির সদস্য মাইন উদ্দিন ভূঁঞাকে সভাপতি করে ৭ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন। একই সঙ্গে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সহিদ উল্যাকে সরিয়ে সিনিয়র শিক্ষক তৌহিদ উল্যাহ ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হচ্ছেন ম্যানেজিং কমিটির সদস্য আবুল খায়ের, নিজাম উদ্দিন ভুট্টো, সিনিয়র শিক্ষক তাসলিমা আক্তার, শিক্ষক সফি উল্যা টিটু, কমিটির সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন নতুন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তৌহিদ উল্যা। তদন্ত কমিটির আহবায়ক মাইন উদ্দিন জানান, এটা অভ্যন্তরিন বিষয়। আমরা তদন্ত করছি। তদন্ত কমিটির সদস্য বিদ্যালয়ের সিনিয়র শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার জানান, দুই ছাত্রী স্কুলে সকল শিক্ষকের সামনে যৌন হয়রানির অভিযোগ করেছেন এবং ছাত্রীদের মোবাইলে যে আপত্তিকর স্ট্যাটাস দিয়েছেন তা সবাইকে দেখিয়েছেন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক তৌহিদ উল্যাহ জানান, স্কুল কমিটির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তাদের রিপোর্টের আলোকে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে অভিযুক্ত শিক্ষক সহিদ উল্যা সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। এলাকাবাসী জানায়, এলাকার একটি কুচক্রিমহল অপরাধীর কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে ভিকটিমদের চাপ দিচ্ছে অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য। ফলে বাদীরা অতঙ্কের মধ্যে রয়েছে। ভিকটিমদের কারো সাথে কথা বলতে দিচ্ছেনা। এ ঘটনায় এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলছে, শিক্ষক নামের কলঙ্ক এই সহিদ উল্যার বিচার না হলে ভবিষ্যতে আরেক পরিমলের জর্ম্ম হবে। সোনাইমুড়ী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তফা হোসাইন জানান, স্কুল কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি করেছে। কেউ অপরাধি হলে ছাড় দেয়া হবেনা। সোনাইমুড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুস সামাদ জানান, আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে আরো অনেক ইভটিজিংয়ের অভিযোগ রয়েছে। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখবো। যারা শিক্ষক হয়ে শিক্ষার্থীর সর্বনাশ করতে দ্বিধাবোধ করেনা তাদের এই পেশার থাকার অধিকার নেই বলে মন্তব্য মত দেন সচেতন মহল। সোমবার দুপুরে এ ব্যাপারে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক(ডিসি) তন্ময় দাসের সাথে আলাপ করলে তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

three × two =