আশুলিয়ায় টাকার বিনিময়ে পদ পেতে মরিয়া ইয়াবা তৌহিদ

0
838

বিশেষ প্রতিনিধিঃ সাভারের আশুলিয়ায় থানা ছাত্রলীগের সভাপতির পদ টাকার বিনিময়ে কিনে নিতে মরিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক তৌহিদুল ইসলাম তৌহিদ ওরফে ইয়াবা তৌহিদ। ঢাকা জেলা উত্তরের ছাত্রলীগের একশীর্ষ নেতাকে পাঁচ লাখ টাকায় ম্যানেজ করে তৌহিদ থানা ছাত্রলীগের সভাপতির কিনে নিবেন বলে এলাকায় চলছে জোড় গুঞ্জণ। ছাত্রলীগের সভাপতি পদ পেলে তৌহিদের অপরাধ জগতে কোন প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবে না। তাই টাকা যতই লাগুক সভাপতি পদ তার চাই। একজন নামধারী ছাত্র কিভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত থাকে এই নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে চলছে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা। তৌহিদের বাড়ীতে একাধিকবার ডিবি-পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযানের কারনে এলাকাবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে আতংক।

 

এলাকাবাসী জানায়, তৌহিদ আশুলিয়ায় একটি মুর্তিমান আতংকের নাম। তার বিরুদ্ধে যুবসমাজ ধ্বংসের মরন নেশা মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাদাঁবাজি, মিথ্যা মামলায় মানুষকে ফাসানো, জুয়ার বোর্ড পরিচালনা, চোরাই মটরসাইকেলের ব্যবসা, ডিস ব্যবসা নিয়ন্ত্রন সহ বিভিন্ন অপরাধ জগতের সিন্ডিকেটকে নিয়ন্ত্রন করে টাকা হাতিয়ে নেয়ার অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। তার ভয়ে এলাকায় কেউ প্রতিবাদ তো পরের বিষয়, হা-করে কথা বলারই সাহস পায় না। কেউ তার কাজে বাধা দিলে মিথ্যা মামলার আসমী হয়ে তাকে জেল খাটতে হয়। অথবা তার বুলডুজার বাহিনীর হাতে মাইর খেয়ে পঙ্গু জীবন বরন করতে হয়। পাথালিয়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক হওয়ার সুবাদে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে অবৈধ ইনকামে জোরে তৌহিদ এখন কোটিপতি। তাই তার সাথে কেউ টক্কর দিয়ে সুবিধা করতে পারে না। এখন থানা ছাত্রলীগের পদ পেতে মরিয়া। তৌহিদ বড় ওয়ালিয়া এলাকার আঃ জব্বারের পুত্র। সে কোন প্রকৃত স্কুল কলেজের ছাত্র না হলেও ছাত্রলীগের রাজনীতি ধরে রাখার জন্য নামসর্বস্ব কোন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র পরিচয়ে দিয়ে যাচ্ছে। যা সাধারন ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে হাসির খোরাক মাত্র। তবে এমন ছাত্র কিভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতি করে এটাই রহস্যজনক।

জানা গেছে, জব্বারের অভাবের সংসারে বেড়ে উঠা তৌহিদ ছোট বেলা থেকেই উগ্রপন্থি। মারামারি আর ছেচড়া চুরি ছিল তার নিয়মিত পেশা। একারনে মাধ্যমিক শিক্ষা জীবনটিও আরো দশজনে মতো ভালোভাবে শেষ করতে পারেননি। তারপরেও সে নিজের ইউনিয়নের ছাত্রলীগের কর্মী। ২০১০সালের পরে সে ছাত্রলীগের খাতায় নাম লিখিয়ে হয়ে উঠে বেপরোয়া। এলাকার গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথে বেয়াদবী, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঢুকে শিক্ষার্থী মেয়েদেরকে উত্যক্ত করা ও সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে ওপেন মাদক সেবন করতে করতে হয়ে উঠে মাদকের বেপারী। গড়ে তোলেন মাদক বিক্রির বিশাল সিন্ডিকেট। রবিউল, ইয়াসিন, আলামিন, আকরাম ও তরিকুল তার সিন্ডিকেটের অন্যতম সহযোগি।

জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন হল সহ পাশ্ববতী এলাকা গুলোতে ২/৩ বছর বিয়ার ও গাজা সাপ্লাই দিয়ে বেশ টাকা পয়সার মালিক হয় তৌহিদ এবং নিজস্ব এলাকায় খুব আধিপত্য বিস্তার করেন। বিয়ার নিয়ে একাধিক বার পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও রহস্যজনক কারনে বার বারই ছাড়া পেয়ে যায়। এতে তার প্রভাব অনেক বেড়ে যায়। জোড় করে তুলে নিয়ে ধর্ষনের ভয় দেখিয়ে বিয়ে করে পাশ্ববতী ইসলাম নগরের কালাম মেম্বারের মেয়ে কনাকে। বিয়ে ছয় মাস কনার সংসার ঠিকঠাক চলে। তবে তৌহিদের ইয়াবা ব্যবসার রহস্য কনা জানার পর স্ত্রী হিসেবে তাকে নিয়মিত বাধা দেয়। ফলে কনার উপর চলে তৌহিদের পাশবিক নির্যাতন। তৌহিদের মারধরের আঘাত সইতে না পেরে কনা ডিভোর্স নিয়ে অল্প দিনের মধ্যে বাপের বাড়ি চলে যায়।
এ ব্যাপারে কালাম মেম্বার জানায়, তৌহিদ তার মেয়ের জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে। বিয়ের পর থেকে তৌহিদ তার মেয়ের উপর পাশবিক নির্যাতন করতো। একদিন রাত ১২ টার দিকে কনাকে ব্যাপক মারধর করে ঘর থেকে তাড়িয়ে দিলে মেয়েটা আমার বন্ধুর বাড়ীতে আশ্রয় নেয়। পরে তাকে বাড়ী এনে ডিভোর্স দেয়ার ব্যবস্থ’া করি। কিন্তু তৌহিদ খুব জঘন্য প্রকৃতির খারাপ ছেলে হওয়া তার সাথে কোন মামলা মোকদ্দমায় যাইনি।

ডিস ব্যবসায়ী মামুন বলেন, আমার ডিস ব্যবসা জোড়পূর্বক নিয়ন্ত্রনে নেয়ার জন্য তৌহিদ আমাকে মিথ্যা মাদক মামলায় জেল খাটিয়েছে। আমি জেলে থাকলে ব্যবসার মধ্যে সময় দিতে পারবো না। একারনে সে পুলিশের সোর্স হয়ে আমাকে বিনা দোষে মাদক মামলায় ফাসিয়েছে। পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে মাদক মামলায় চালান দিয়েছে। যেই মামলায় বাদী হওয়ার জন্য তৌহিদ অনেক চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ দিয়ে আমাকে কিভাবে মাদক মামলায় ফাসিয়েছে তা তৌহিদের কল রেকর্ড চেক করলেই বেরিয়ে আসবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একটি সুত্র জানায়, আশুলিয়ায় ফেন্সীডিলের পুরো ব্যবসাটাই নিয়ন্ত্রণ করে তৌহিদ। তার কাজে কেউ বাধা দিলে তাকে রাতে আধারে বাড়ী তুলে নিয়ে মাদক মামলায় ফাসানো হয়। তৌহিদ কিভাবে নিরহী লোকজনকে মিথ্যা মাদক মামলা ফাসিয়ে টাকা পয়সা হাতিয়ে নেয় এবং কোন কোন চিহিৃত মাদক ব্যবসায়ীদের তার ব্যবসা বানিজ্য তা তার মোবাইল নাম্বার গুলোর কল রেকর্ড যাচাই করলেই খুব সহজেই বেড়িয়ে আসবে।

সুত্র জানায়, ২শ পিস ইয়াবা গাজীপুরে চালান দিতে গিয়ে আলামিন পালসার মোটর সাইকেল রাস্তায় হাইওয়ে পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। আলামিন সাথে সাথে বিষয়টি তৌহিদকে জানায়। তৌহিদ তিন লাখ টাকার বিনিময়ে আধ ঘন্টার মধ্যে আলামিনকে ছাড়িয়ে আনে। একইভাবে ইয়াবা পাচারকালে বসিরউদ্দিনের ছেলে আমির হোসেন ৩শ পিস ইয়াবাসহ ডিবি পুলিশে হাতে ধরা পড়ে এখন জেল খাটছে। তৌহিদের খুচরা বিক্রেতা ইসলামনগর এলাকার আঃ কাদেরের ছেলে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সিকিউরিটি গার্ড পলাশ হোসেন ফারুক ইয়াবা বিক্রি করার সময় মিক্ষার্থীরা হাতেনাতে ধরে প্রশাসনকে খবর দিলে ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে তার এক বছরের কারাদন্ড হয়। ৩ মাস জেল খাটার পর তৌহিদ অনেক টাকা খরচ করে তাকে জামিনে বের করে আনে। তৌহিদের আশীর্বাদে এখন সে ৪ লাখ টাকা মুল্যের পালসার মোটর সাইকেলে চরাফেরা করে। তৌহিদের আরেক বিশ্বস্ত সহযোগি সামসুল নিজের ঘরে বসে ইয়াবা বিক্রি করে। কিছু দিন আগে ইয়াবা নিতে এক খদ্দের তার বাড়ীতে আসে। এসময় সামসুলের স্ত্রী ময়না বেগম স্বামীর ইয়াবা ব্যবসায় বাধা সৃষ্টি করে। এতে সামসুল উত্তেজিত হয়ে ময়নার ডান হাতে অবৈধ অস্ত্র দিয়ে গুলিবিদ্ধ করে। ময়নার পরিবারের লোকজনেরা যাতে থানা পুলিশ না করে সেই জন্য তৌহিদ ময়নার পরিবারের লোকজনকে হুমকি দমকি দিয়ে ঘটনা ধামাচাপা দেয়। খোরশেদ আলম খসরুর ছেলে ওয়ার্ড যুবলীগ নেতা ইকবাল হোসেন তৌহিদের মাদক ব্যবসার ক্যাশিয়ার। সমস্ত ব্যবসার হিসাব নিকাশ তার কাছে। সে সম্পর্কে তৌহিদের মামাতো ভাই। অবৈধ অস্ত্র নিয়ে বেশীর ভাগ সময় চলাফেরা করে। বটতলা বাজারে মেলার মধ্যে সে গোলাগোলি করে জনমনে আতংক সৃষ্টি করে। জাচান আলীর ছেলে কসাই রাজু হত্যা সহ ৫ মামলার আসামী। ইয়াবা মামলায় ৬ মাস জেল খেটে এখন সে জামিনে। সে তৌহিদের নির্দেশে কোপাকোপির কাজে অংশগ্রহন করে। তৌহিদের মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করায় পাশের বাড়ীর নয়ন ইসলামকে মিথ্যা ফেন্সীডিল ফাসানো হয়। এব্যাপারে তৌহিদ ইসলামের বক্তব্য নেয়ার জন্য একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।

স্থানীয় এলাকাবাসীর দাবী প্রশাসন আন্তরিক হলে যে কোন সময় তৌহিদ সহ তার সিন্ডিকেটের লোকজনকে মাদক সহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করতে পারবে। চলবে, চোখ রাখুন পরবর্তী সংখায়।

বিশেষ ঘোষনাঃ প্রিয় পাঠক মাদক সম্রাট তৌহিদের অপকর্মের কোন তথ্য প্রমান আপনাদের নিকট থাকলে আমাদেরকে জানাতে পারেন। প্রয়োজনে আপনাদের নাম ঠিকানা গোপন রাখা হবে। অপরাধ বিচিত্রা, মর্ডাণ ম্যানশন (১৫ তলা), মতিঝিল, ঢাকা-১০০০। ফোন-০১৯১১-৩৮৫৯৭০

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + thirteen =