এসপি বিধান ত্রিপুরার দুর্নীতির চক্রে এসআই মাইনুল ইসলামের সততা

0
1144

স্টাফ রিপোর্টাঃ পুলিশ জনগনের বন্ধু। জনগন বিপদে পড়লে নিরাপত্তার জন্য ছুটে যায় পুলিশের কাছে। আর এই সুযোগে পুুলিশের কতিপয় কর্মকর্তা নিরাপত্তা সেবা দেয়ার অন্তরালে শুধু মাত্র টাকার জন্য জনতাকে কতটা অমানবিক হয়রানী করে তার কোন শেষ নেই। মামলা করতে গেলে লাগবে টাকা, আসামী গ্রেপ্তার করতে টাকা, তদন্তের জন্য টাকা, চুড়ান্ত রিপোর্ট দিতে টাকা, টাকা দিলে আসামী গ্রেপ্তার হয় না, আবার টাকা দিলে নিরপরাধ লোককে আসামী বানিয়ে কারাগারে প্রেরন করা, টাকা দিলে মামলা থেকে অভিযুক্ত আসামীকে বাদ দেয়া, আবার মামলার বাদীকে আসামী বানিয়ে আদালতে পাঠানো যেন কিছু পুলিশ কর্মকর্তার রুটিন মাফিক কাজ। বাদী বিবাদী যেই পক্ষ পুলিশকে বেশী টাকা দেয় তদন্তকারী পুলিশ তার পক্ষেই চুড়ান্ত রিপোট আদালতে প্রদান করে। যেখানে সত্যে চাপা পড়ে মিথ্যার আড়ালে। ন্যায় বিচার থেকে বঞ্জিত হয় কোন এক পক্ষ। এমনই এক হৃদয়বিদারক ঘটনার যন্ত্রনা বুকে নিয়ে গত দুই বছর চোখের জলে মানবেতর জীবন কাটিয়েছে হবিগঞ্জের একটি দারিদ্র পরিবার। যে ঘটনায় পেছনে থেকে খল নায়কের ভুমিকায় কাজ করে ঐ জেলার এসপি বিধান ত্রিপুরা। ১৬ এপ্রিল ২০১৭ হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার চরবাজার এলাকার আজমান মিয়ার পুত্র নাজমুল হাসানকে তাদের জমি দখলে নেয়ার জন্য অপহরন করে ভূমিদস্যু গডফাদার মনোয়ার আলীর ক্যাডার বাহিনী আলমাছ গং।

 

এঘটনায় আজমিরিগঞ্জ থানা পুলিশ প্রথমে কোন মামলাই গ্রহন করে নাই। কিন্তু নাজমুলের মা আর্জিনা বেগম অপরাধ বিচিত্রা পত্রিকার সহযোগিতায় কোর্টে গিয়ে মামলা করলেও থানা পুলিশ তাকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়নি। উল্টা মামলা বাদীকে আসামী বানিয়ে চুড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করে পুলিশ ও সিআইডির কর্মকর্তা আবু কুদ্দুস। আর এসব কিছুর জন্য আসামী পক্ষের নিকট থেকে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়ে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ে স্থানীয় পুলিশ সুপার বিধান ত্রিপুরা। ভুমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী ও কালোবাজারীদের নিয়ন্ত্রনে রেখে কালো টাকার পাহাড় বানানোই তার নেশা। নাজমুল অপহরন মামলার দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে এসপি বিধান ত্রিপুরা মামলার বাদী অসহায় পরিবারটিকে এক আনার সহযোগিতা করেনি। বরং নাজমুলের পরিবারকে প্রাননাশের হুমকি দিয়ে গ্রাম ছাড়া করে এসপি বিধান ত্রিপুরার ক্যাডার বাহিনী ভুমিদস্যু মনোয়ার আলী বাহিনী। এসপি, ওসি ও মনোয়ার আলীরা এক টেবিলে করে ভুরিভোজ আর পুত্র শোকে কাতর হয়ে গত দুই বছরের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় অসহায় মহিলা আর্জিনা বেগম।

অপরাধ বিচিত্রার ধারাবহিক সংবাদের জের ধরে এই মামলায় এসপি বিধান ত্রিপুরা, ওসি অহিদুল ইসলাম, এসআই ও সিআইডির এসআই কর্মকর্তাদের দেয়া তদন্তের চুড়ান্ত রিপোর্টকে মিথ্যা প্রমান করে ভিকটিম নাজমুলকে আসামীদের নিকট থেকে উদ্ধার করে পিবিআই এসআই মাইনুল ইসলাম। অথচ মামলাটিতে তদন্তকারী ৫ জন কর্মকর্তা চুড়ান্ত রিপোর্টে প্রকাশ করেছিল ভিকটিমকে বাদী নিজেই অন্যত্র লুকিয়ে রেখে আসামীদের নামে হয়রানী মুলক মামলা দায়ের করেছে। স্থানীয় জনমুখে শোনা গেছে এসপি বিধান ত্রিপুরার শেল্টারে মামলায় সিআইডির তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মুন্সী আবু কুদ্দুস আসামীদের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে বাদির বিপক্ষে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে ছিলেন।

ঘটনাসুত্রে জানা গেছে, হবিগঞ্জের নাজমুল অপহরনের দুই বছর পেরিয়ে গেলেও তাকে উদ্ধার করতে পারেনি স্থানীয় প্রশাসন। নাজমুল অপহরন মামলার তদন্ত কাজে শুরু থেকে প্রশাসনের ৫ জন কর্মকর্তার পরিবর্তন হয়েছে। তবে আসামী পক্ষ বিত্তশালী হওয়া যেই কর্মকর্তাই তদন্তে গিয়েছে প্রত্যেকেই পকেট ভর্তি টাকা নিয়ে ফিরে এসেছে। আর মামলার বাদী পেয়েছে শুধুই বৎসনা। মামলার বাদী নিতান্তই গরীব হওয়ার কারনে কোন তদন্ত কর্মকর্তাই ন্যায় বিচারে স্বাথে মামলাটি পরিচালনা না করে আসামী পক্ষের নিকট থেকে মোটা অংকে টাকা হাতিয়ে নিয়ে তদন্তের মাঝ পথে পোষ্টিং নিয়ে অন্যত্র চলে গেছে। আর এভাবেই এই মামলাটিতে গত দুই বছরে ৫ জন পুলিশ কর্মকর্তা তদন্তের নামে আসামী পক্ষ থেকে টাকা হাতিয়েছে। সর্বশেষে এ মামলায় তদন্তে কাজ করেছে সিআইডির এসআই মুন্সী আবু কুদ্দুস। অভিযোগ উঠেছে মুন্সী আবু কুদ্দুস মামলার আসামী আলমাছ গংয়ের নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ নিয়ে সে তার মনগড়া চুড়ান্ত রিপোর্ট পেশ করেছে। রিপোর্টে সে আসামীদের অপরাধকে আড়াল করে অপহৃত ভিকটিম বাদীর কাছেই আছে বলে উল্লেখ করে। ভিকটিম যদি মামলার বাদীর কাছে লুকানো থেকে থাকে তাহলে সিআইডি হিসাবে সে কেন ভিকটিমকে উদ্ধার করে নাই। এমন প্রশ্নের উত্তর খুজতে গত ১৯/৮/১৮ ইং তারিখে আদালত বাদীর আবেদনের প্রেক্ষিতে মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে ভিকটিমকে উদ্ধার সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই, হবিগঞ্জ জোনকে নির্দেশ দিয়েছে।
জানা গেছে, হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ উপজেলার চরবাজার এলাকার আজমান মিয়ার স্ত্রী আর্জিনা বেগম ভূমিদস্যু আলমাছ গংয়ের নামে মামলা করে। আলমাছ গংয়ের মাধ্যমে জমি দখল করে তা কিনে নেয় সরিফনগরের গডফাদার মনোয়ার আলী। মনোয়ার আলী টাকা পয়সা দিয়ে পুলিশ প্রশাসন সহ ভুমিদস্যূ আলমাছ গংকে পেছন থেকে ম্যানেজ করে। আর্জিনা বেগমের জমি দখল নেয়ার চেষ্টা চালায় আলমাছ গং। এঘনায় আর্জিনা বেগম আজমিরিগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতা না পেয়ে কোর্ট থেকে মামলা করলে আলমাছ গ্রুপ আরো বেশী ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। মামলার বাদীকে পরাস্ত করতে আসামীরা গত ১৬/০৪/১৭ তারিখে তার ছেলে নাজমুল হাসানকে অপহরন করে এবং জমির মালিকানা ছেড়ে দিলে নাজমুলকে ফিরিয়ে দেয়া হবে বলে জানিয়ে দেয়া। কিন্তু ঘটনাটি নিয়ে গত দুই বছর যাবৎ পুলিশ, সিআইডি ও আলমাছ গ্রুপের মুল হোতা মনোয়ার আলী মধ্যে চলছে শুধু টাকা লেনদেনের দৃশ্যমান নাটক। গরীব আর্জিনা বেগমের কোটি টাকার মুল্যের জমি দখলে নিতে মনোয়ার আলী লাখ লাখ টাকা খরচ করছে প্রশাসন থেকে শুরু করে আলমাছ গ্রুপের পেছনে। কোর্টের নির্দেশে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় আজমিরিগঞ্জ থানার এসআই মোঃ হুমায়ন কবির। এই কর্মকর্তা মামলাটি তদন্তকালে আসামীদের নিকট থেকে ৪ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহন মামলার বাদীকে বিভিন্ন ভাবে নাজেহাল করে থানা থেকে পোষ্টিং নিয়ে অন্যত্র চলে যায় বলে শোনা গেছে। একই ভাবে মামলাটিতে তদন্তকাজের দায়িত্ব গ্রহন করে পুলিশ পরিদর্শক কামরুল হাসান, আব্দুর রহিম সহ সিআইডির কর্মকর্তা জসিমউদ্দিন। হুমায়ন কবিরের মতো এই তিন কর্মকর্তাও আসামী পক্ষের নিকট থেকে মোটা অংকের টাকা উৎকোচ গ্রহন করে মামলা সঠিকভাবে তদন্ত না করে এবং ভিকটিমকে উদ্ধার না করে বা প্রকৃত সত্য উদঘাটন না করে পোষ্টিং নিয়ে অন্যত্র চলে যায়। কিন্তু এই ৪ কর্মকর্তার অসমাপ্ত তদন্তকাজ সমাপ্ত করতে দায়িত্ব পায় সিআইডির পুলিশ পরিদর্শক মুন্সী আবু কুদ্দুস। বিশ্বস্ত সুত্রে জানা জায়, মুন্সী আবু কুদ্দুস আসামী আলমাছ গ্রুপের মুল হোতা মনোয়ার আলীর নিকট থেকে ১০ লাখ টাকা উৎকোচ গ্রহন করে মামলার প্রকৃত ঘটনা থেকে আসামী আলমাছ গ্রুপের সম্পৃক্ততাকে বাদ দিয়ে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করে। চুড়ান্ত রিপোর্টে মুন্সী আবু কুদ্দুস উল্লেখ করে ভিকটিম নাজমুলকে বাদী নিজেই কোথাও লুকাইয়া রেখেছে। এখন বাদী যদি ভিকটিমকে লুকিয়ে রাখে তাহলে সিআইডি হিসাবে তিনি ভিকটিমকে উদ্ধার করছেন না কেন। তাই মাননীয় আদালত মামলাটি পুনরায় তদন্ত করে প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে ভিকটিম নাজমুলকে উদ্ধার সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, পিবিআই, হবিগঞ্জ জোনকে নির্দেশ দেয়। পিবিআই কর্মকর্তা মাইনুল ইসলামের অক্লান্ত পরিশ্রমে তদন্তের দেড় মাসের মাথায় গত ১৯ ডিসেম্বর-২০১৮ ইং তারিখে মামলার আসামীদের দেয়া তথ্যানুসারে নাজমুলকে উদ্ধার করে। এসপি বিধান ত্রিপুরা তার দায়িত্বে সৎ হলে নাজমুলকে খুব সহজেই উদ্ধার করতে পারতো থানা পুলিশ। দায়িত্বে অবহেলার কারনে ওসি অহিদুর ইসলামের বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা গ্রহন করলেন না। নাজমুল অপহরণ হওয়ার পরে আজমেরিগঞ্জ থানায় কেন মামলা গ্রহন করা হলো না। গরীব বলে আর্জিনা বেগমকে কেন দুই বছর হয়রানী করা হলো।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 + 6 =