আল্লাহর পছন্দের ৮টি বৈশিষ্ট্য

0
1269

কুরআনের বহু আয়াতে মহান আল্লাহ কিছু বিশেষ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন মানুষের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছেন, তাদের তিনি ভালোবাসেন। এ নিবন্ধে আল্লাহর প্রিয় সে সকল পুণ্যাত্মাদের মধ্য থেকে আট প্রকার মানুষ সম্পর্কে কুরআনের বিবরণসহ আলোচনা করা হল।

 

 

১. তওবাকারী ,আল্লাহ সে সকল লোকদের ভালোবাসেন যারা বারবার আল্লাহর কাছে তওবা করে। কুরআনের সূরা বাকারার ২২২ নং আয়াতে বলা হয়েছে,“নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে ভালোবাসেন।”

২. পবিত্রতা রক্ষাকারী ,যারা নিজেদেরকে বিভিন্ন অপবিত্রতার হাত থেকে রক্ষা করে চলে, আল্লাহ তাদেরকেও ভালোবাসেন। কুরআনে বলা হয়েছে “নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারী এবং অপবিত্রতা থেকে যারা বেঁচে থাকে তাদেরকে ভালোবাসেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ২২২) “তুমি কখনো সেখানে দাড়াবে না, তবে যে মসজিদের ভিত্তি রাখা হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে, সেটিই তোমার দাঁড়াবার যোগ্য স্থান। সেখানে রয়েছে এমন লোক, যারা পবিত্রতাকে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্র লোকদের ভালবাসেন।” (সূরা তাওবা, আয়াত: ১০৮)

৩. সৎকর্ম সম্পাদনকারী , সৎকর্ম সম্পাদনকারী এবং সকল কাজে এহসান বা কল্যাণ অবলম্বনকারী ব্যক্তিদের আল্লাহ ভালোবাসেন। কুরআনের ভাষায়,“আর ব্যয় করো আল্লাহর পথে, তবে নিজের জীবনকে ধ্বংসের সম্মুখীন করো না। আর অনুগ্রহ করো। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৯৫) “অতএব, তাদের অঙ্গীকার ভঙ্গের দরুন আমি তাদের উপর অভিসম্পাত করেছি এবং তাদের অন্তরকে কঠোর করে দিয়েছি। তারা কালামকে তার স্থান থেকে বিচ্যুত করে দেয় এবং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল, তারা তা থেকে উপকার লাভ করার বিষয়টি বিস্মৃত হয়েছে। আপনি সর্বদা তাদের কোন না কোন প্রতারণা সম্পর্কে অবগত হতে থাকেন, তাদের অল্প কয়েকজন ছাড়া। অতএব, আপনি তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মার্জনা করুন। আল্লাহ অনুগ্রহকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ১৩) “যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম করেছে, তারা পূর্বে যা ভক্ষণ করেছে, সে জন্য তাদের কোন গোনাহ নেই যখন ভবিষ্যতের জন্যে সংযত হয়েছে, বিশ্বাস স্থাপন করেছে এবং সৎকর্ম সম্পাদন করেছে। এরপর সংযত থাকে এবং বিশ্বাস স্থাপন করে। এরপর সংযত থাকে এবং সৎকর্ম করে। আল্লাহ সৎকর্মীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আল-মায়েদা, আয়াত: ৯৩)

৪. আল্লাহকে ভয়কারী ,নিজেদের কাজের ক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করে চলা ব্যক্তিদের আল্লাহ ভালোবাসেন। কুরআনে আল্লাহ বলেন,“যে লোক নিজ প্রতিজ্ঞা পূর্ন করোবে এবং আল্লাহকে ভয় করোবে, অবশ্যই আল্লাহ পরহেজগারদেরকে (তার প্রতি ভয়কারী) ভালবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ৭৬)“অতএব, যে পর্যন্ত তারা তোমাদের জন্যে সরল থাকে, তোমরাও তাদের জন্য সরল থাক। নিঃসন্দেহের আল্লাহ মুত্তাকীদের পছন্দ করেন।” (সূরা তাওবা, আয়াত: ৭)

৫. আল্লাহর উপর ভরসা স্থাপনকারী ,যারা নিজেদের সকল কাজের জন্য আল্লাহর উপর নির্ভর করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন।“আল্লাহর রহমতেই আপনি তাদের জন্য কোমল হৃদয় হয়েছেন পক্ষান্তরে আপনি যদি রাগ ও কঠিন হৃদয় হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেতো। কাজেই আপনি তাদের ক্ষমা করে দিন এবং তাদের জন্য মাগফেরাত কামনা করুন এবং কাজে কর্মে তাদের পরামর্শ করুন। অতপর যখন কোন কাজের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেন, তখন আল্লাহ তাআলার উপর ভরসা করুন, আল্লাহ তাওয়াক্কুল কারীদের ভালবাসেন।” (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত: ১৫৯)

৬. ন্যায়পরায়ণ ,ন্যায়পরায়ণ ব্যক্তিদের আল্লাহ ভালোবাসেন। কুরআনে বলা হয়েছে,“এরা মিথ্যা বলার জন্যে গুপ্তচরবৃত্তি করে, হারাম ভক্ষণ করে। অতএব, তারা যদি আপনার কাছে আসে, তবে হয় তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিন, না হয় তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকুন। যদি তাদের থেকে নির্লিপ্ত থাকেন, তবে তাদের সাধ্য নেই যে, আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করোতে পারে। যদি ফয়সালা করেন, তবে ন্যায় ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মায়েদা, আয়াত: ৪২) “যদি মুমিনদের দুই দল যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়ে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দিবে। অতপর যদি তাদের একদল অপর দলের উপর চড়াও হয়, তবে তোমরা আক্রমণকারী দলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করোবে; যে পর্যন্ত না তারা আল্লাহর নির্দেশের দিকে ফিরে আসে। যদি ফিরে আসে, তবে তোমরা তাদের মধ্যে ন্যায়ানুগ পন্থায় মীমাংসা করে দিবে এবং ন্যায়বিচার করোবে। নিশ্চয় আল্লাহ ন্যায়বিচারকারীদেরকে পছন্দ করেন।” (সূরা হুজরাত, আয়াত: ৯)

৭. ধৈর্যধারণকারী ,আল্লাহ ধৈর্যধারণকারীদের ভালোবাসেন। কুরআনে তিনি বলেন, “আর বহু নবী ছিলেন, যাঁদের সঙ্গী-সাথীরা তাঁদের অনুবর্তী হয়ে জিহাদ করেছে; আল্লাহর পথে তাদের কিছু কষ্ট হয়েছে বটে, কিন্তু আল্লাহর পথে তারা হেরেও যায়নি, ক্লান্তও হয়নি এবং দমেও যায়নি। আর যারা ধৈর্যধারন করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত: ১৪৬)

৮. আল্লাহর পথে জিহাদকারী, আল্লাহর পথে যারা আল্লাহর দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য নিজেদের সবর্স্ব নিয়ে জিহাদ বা চেষ্টা করে, আল্লাহ তাদেরকে ভালোবাসেন। কুরআনে বলা হয়েছে,“আল্লাহ তাদেরকে ভালবাসেন, যারা তাঁর পথে সারিবদ্ধভাবে লড়াই করে, যেন তারা সীসাগালানো প্রাচীর।” (সূরা সফ, আয়াত: ৪)আল্লাহ আমাদের এসকল বৈশিষ্ট্য অর্জনের মাধ্যমে তার ভালোবাসা লাভের জন্য যোগ্য করে নিজের জীবনকে গড়ে তোলার তাওফিক দান করুন। আমীন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 × one =