জঙ্গিরা নারী সদস্য সংগ্রহে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে

0
506

নতুন এই প্রক্রিয়ায় প্রেমিক হিসেবে একজন সুদর্শন পুরুষ সামনে থাকলেও এর পেছনে জড়িত থাকেন একাধিক নারী।জঙ্গিরা নারী সদস্য সংগ্রহে নতুন কৌশল অবলম্বন করছে। এক্ষেত্রে মেয়েদের ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করে তাদের সঙ্গে প্রেম ও বিয়ের মাধ্যমে নিজেদের দলে ভেড়ানোর চেষ্টা করছে। নতুন এই প্রক্রিয়ায় প্রেমিক হিসেবে একজন সুদর্শন পুরুষ সামনে থাকলেও এর পেছনে জড়িত থাকেন একাধিক নারী।

৯ জুলাই, মঙ্গলবার র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক লে. কর্নেল মো. এমরানুল হাসান এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

তিনি বলেন, কৌশলগত কারণে জঙ্গিরা নারী সদস্য বৃদ্ধি করতে চাচ্ছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে ধর্মভীরু নারীদের টার্গেট করতো তারা। এরপর বিয়ের ফাঁদে ফেলে জঙ্গিবাদে জড়াতো সেই নারীকে। সম্প্রতি নাঈমা ও ফারুক নামের দুজনকে গ্রেফতারের পর এসব তথ্য জানা গেছে।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, দুই মাস আগে চট্টগ্রামের তরুণী সাফিয়া আক্তার তানজী’র সঙ্গে ফেসবুকের একটি গ্রুপে কয়েকজন মেয়ের পরিচয় হয়, যাদের একজন নাঈমা। এই নাঈমার মাধ্যমে তানজীকে পরিচয় হয় বরিশালের একটি স্কুলের শিক্ষকের সঙ্গে। তার নাম সহিফুল ওরফে সাইফ। এই সাইফের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপনের জন্য বিভিন্নভাবে তানজীকে উৎসাহিত করেন নাঈমা। তানজীও সেই ফাঁদে পা দেন। একপর্যায়ে ২৬ জুন সাইফকে বিয়ে করার জন্য নাঈমার সঙ্গে বাড়ি ছাড়েন তানজী।

বাড়ি ছেড়ে বরিশালে পৌঁছানোর পর তানজীকে নাম পরিচয় গোপন করে নাঈমার বোন হিসেবে একটি মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেন সাইফ। তানজীর বাবা-মায়ের নামের জায়গায় বসানো হয় নাঈমার বাবা-মায়ের নাম। এরইমধ্যে তানজীর সঙ্গে সাইফের বিয়েও হয়। এই সময়ের মধ্যে তানজীকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ করতে বিভিন্নভাবে প্ররোচণা চালান সাইফ ও নাঈমা।

এদিকে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন এলাকা থেকে সাফিয়া আক্তার তানজী (২২) নামে এই তরুণী নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় ছায়া তদন্ত শুরু করে র‌্যাব। এরই ধারাবাহিকতায় র‌্যাব-২-এর একটি টিম ৮ জুলাই দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বরিশালের একটি মাদ্রাসায় অভিযান চালিয়ে তানজীকে উদ্ধার করে এবং গ্রেফতার করা হয় জান্নাতুল নাঈমাকে। তবে পালিয়ে যান সাইফ। পরবর্তীতে নাঈমার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে মঙ্গলবার (৯ জুলাই) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মো. আফজাল হোসেনকে (২৩) গ্রেফতার করা হয়েছে। নাঈমা ও আফজাল জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের সদস্য। তারা সদস্য সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত ছিল।

র‌্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (ক্রাইম প্রিভেনশন কোম্পানি-৩) অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী জানান, নাঈমা ও আফজাল ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নারীকে আনসার আল ইসলামের সদস্য করেছে। তাদের শনাক্ত করা ও পলাতক সাইফকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।

নাঈমাকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে মুহাম্মদ মহিউদ্দিন ফারুকী বলেন, “জান্নাতুল নাঈমা চট্টগ্রামের একটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। ২০১৬ সাল থেকে সে নিয়মিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে আসছে। ফেসবুকের একটি গ্রুপে বিভিন্ন নারী সদস্যদের মাধ্যমে প্ররোচিত হয়ে সে আনসার আল ইসলাম জঙ্গি সংগঠনের অন্তর্ভুক্ত হয়। সে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মহিলা সদস্য বৃদ্ধিতে দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করছে।”

গ্রেফতার মো. আফজাল হোসেন সম্পর্কে র‌্যাব জানায়, সে দীর্ঘদিন ধরে আনসার আল ইসলাম-এর সঙ্গে জড়িত। বর্তমানে রাজধানী ঢাকার নিকটস্থ একটি এলাকার স্থানীয় সংগঠক। জিজ্ঞাসাবাদে সে সংগঠনের নির্দেশনা অনুসারে মহিলা সদস্যদের দলে অন্তর্ভুক্তিসহ নারী সদস্যদের দ্বারা নাশকতা পরিকল্পনার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

4 × 5 =