শাহিন আল মামুনের পর পরিচালক হাফিজুরের নামে প্রতারনার মামলা

0
1889

মো: আহসানউল্লাহ হাসান:
লাইসেন্সবিহীন সিএনএন বাংলা টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহিন আল মামুন, নির্বাহী পরিচালক সাখাওয়াত হোসেন মাসুদের দুর্ধর্ষ প্রতারনার পর এবার তাদের আরেক পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমানের প্রতারনাও ফাঁস হয়ে গেছে। লোভনীয় অফার দিয়ে ৩ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কারনে কাজী হাফিজুর রহমানের আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করেছে ভুক্তভোগি চাঁন মিয়া। তবে মামলা করে করায় প্রাননাশের হুমকি মাথায় নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে চাঁন মিয়ার পরিবার। চাঁন মিয়াকে টাকা তো ফেরত দিচ্ছেই না বরং মামলা তুলে নেয়ার জন্য বারবার হুমকি দিয়ে আসছে হাফিজুর রহমান।


জানা গেছে, পূর্ব পরিচয়ের সুত্রধরে চাঁন মিয়া লাইসেন্সবিহীন সিএনএন বাংলা টিভির পরিচালক কাজী হাফিজুর রহমানের প্রতারনার জালে পা দেয়। তবে যখন বুঝতে পারে তখন আর কিছুই করার থাকেনা তার। চাঁন মিয়াকে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে সিএনএন বাংলা টিভির শেয়ার হোল্ডার হিসেবে যুক্ত করে। শেয়ার হোল্ডার হওয়ার কারনে চাঁন মিয়া মাঝে মধ্যে অফিসে আসতে থাকে। চাঁন মিয়ার সাথে হাফিজুর রহমান আরো গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। একসময় চাঁন মিয়ার ছেলেকে বিআইডব্লিউটিয়ের অফিসে বড় পদে চাকুরী পাইয়ে দেয়ার লোভনীয় অফার করে। এর জন্য ৫ লাখ টাকা ঘুষ লাগবে। চাঁন মিয়া প্রতারক হাফিজুরের কথামতো ছেলের চাকুরীর জন্য ৩ লাখ টাকা তার হাতে তুলে দেয়। কিন্তু কে দিবে কাকে চাকুরী, টাকা নেয়ার পর থেকে হাফিজুরের ব্যবহার অনেকটাই পাল্টে যায়। চাঁন মিয়াকে চিনতে তার কষ্ঠ হয়। চাকুরী হবে, হবে করে ৭/৮ মাস কেটে যায়। কিন্তু চাকুরীর খবর নেই। এতে চাঁন মিয়া বুঝতে পারে সে প্রতারনার শিকার হয়েছে। পরবর্তীতে অনেক জামেলার শিকার হয়ে চাঁন মিয়া প্রতারক হাফিজুরের নিকট থেকে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকার একটি চেক পায়। তবে হাফিজুর রহমান চাঁনমিয়াকে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের নারায়নগঞ্জের শিমরাইল শাখার অধীনে যেই চেকটি প্রদান করে তা ছিল ব্যালেন্স শূন্য। অর্থাৎ হাফিজুরের একাউন্টে কোন টাকা না থাকায় চেকটি ডিজঅনার হয়ে ফেরত আসে। পরবর্তীতে চাঁনমিয়া প্রতারক হাফিজুরের নামে আদালতে চেক ডিজঅনারের মামলা করে। মামলাটি এখনো বিচারাধীন রয়েছে। মামলা নং-সিআর-১৭৭/১৯।


তবে পাঠকের সুবিধার্থে লাইসেন্সবিহীন সিএনএন বাংলা টিভির প্রধান পরিচালক শাহিন আল মামুনের প্রতারনার কিছু চিত্র আবরো তুলে ধরা হলোঃ- “সিএনএন বাংলাটিভি” আন্তর্জাতিক চ্যানেল সিএনএন এর সাথে বাংলাটিভি শব্দটি যুক্ত করেই হয়ে গেল সিএনএন বাংলাটিভি। এটা করতে গেলেও দেশের সংবিধান অনুযায়ী একটা লাইসেন্সের প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু শাহিন আল মামুন রেজিষ্টার অব জয়েন্ট স্টোক কোম্পানিজ এন্ড ফার্মস বাংলাদেশ এর নিকট থেকে “সেন্টাল ন্যাশনাল নেটওয়ার্ক বাংলা লি:” নামে একটি রেজিষ্ট্রিশন সনদ গ্রহন করেছে। পাঠক এবার ভেবে দেখুন এটা কিভাবে সিএনএন বাংলা টিভি হয়। তবে অনেক পাঠকই বলেছে এটা প্রতারনার প্রথম ধাপ। আর একারনেই এটা লাইসেন্সবিহীন সিএনএন বাংলাটিভি। সিএনএন একটি আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল। যা বিশে^র প্রতিটি দেশের গণমানুষের সংবাদ প্রচারের মাধ্যম। চ্যানেলটি নামের দিক থেকে বর্তমান বিশে^ সবচেয়ে বেশী জনপ্রিয়। সিএনএন শব্দটি বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর কাছে খুব সহজেই পরিচিত। আর তাই সিএনএন শব্দটি নিয়ে এবার প্রতারনা। শুধু আন্তর্জাতিক টিভি চ্যানেল সিএনএন এর নামই নয়, আমাদের মহামান্য রাষ্ট্রপতি অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ এর ছেলে কিশোরগঞ্জ-৪ আসনের এমপি রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক এর নামেও প্রতারনা হাট খুলে বসেছে দুর্ধর্ষ প্রতারক শাহিন আল মামুন। মামুন সিএনএন চ্যানেলের নামের সাথে সিএনএন বাংলা টিভি যোগ করে কোন প্রকার সম্প্রচার লাইসেন্স না নিয়ে রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক এমপিকে তার চ্যানেলের মালিক আর নিজেকে রাষ্ট্রপতির ভাতিজা সাজিয়ে বিভিন্ন জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া সহ সাধারন মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।


জানা গেছে, শাহিন আল মামুনের প্রতিষ্ঠিত ডিস লাইন ভিত্তিক টিভি চ্যানেল সিএনএন বাংলা। চ্যানেলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শাহিন আল মামুন বিভিন্ন জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দেয়া শুরু করেছে। আর প্রতিনিধিদের নিকট থেকে ৫০ হজার টাকা জামানত হিসেবে হাতিয়ে নিচ্ছে। যদিও প্রতিনিধিকে একটি করে ভিডিও ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন দেয়া সহ বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা প্রদান করার কথা। কিন্তু নিয়োগে পর থেকে তাদের সাথে রুক্ষ আচরন করা সহ কোন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে না। সেই সাথে প্রতিনিধিদের সংগ্রহ করা সংবাদও তাদের চ্যানেলে প্রকাশ করা হচ্ছে না। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে রাষ্ট্রপতি ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক এমপি এর কথা বলে হুমকি প্রদান করা হচ্ছে। কোন প্রতিনিধি টাকা ফেরত চাইলে তাকে রাষ্ট্রপতির ছেলের সাথে যোগাযোগ করার কথাও বলা হচ্ছে।
লাইসেন্সবিহীন সিএনএন বাংলা টিভি নিয়োগ বিধিমালা লঙ্গন করে সারা জেলা উপজেলা পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ দিয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে ৫০ হাজার টাকা করে জামানত বাবদ হাতিয়ে নিয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে প্রমোশনের কথা বলে আরো ১ লাখ টাকা করে হাতিয়ে নিয়েছে। অনেক প্রতিনিধিকে প্রমোশন দেয়নি বরং দিনের পর দিন ঘুরিয়ে ফিরিয়ে তালবাহানা করে যাচ্ছে।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছু এক জেলা প্রতিনিধি জানায়, প্রতিনিধি হিসেবে যোগদান করার সময় তার কাছ থেকে কোন প্রকার রশিদ ছাড়াই ৫০ হাজার টাকা নেয়া হয়। শর্ত থাকে ক্যামেরা দেয়া হবে এবং যে কোন নিউজ দেয়া হলে তা প্রকাশ করা হবে। নিউজের জন্য অফিসে কোন টাকা দেয়া লাগবে না। পরবর্তীতে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা সহ প্রমোশনের কথা বলে আরো ১ লাখ টাকা দাবী করলে ওই টাকা প্রদান করি। কিন্তু টাকা দেয়ার পর আমাকে আর চিনে না। প্রয়োজনে অফিসে ফোন দিলে রিসিভ করে না। বিভিন্ন টালবাহানা করে। নিউজ দিলে বলে কত টাকা দিবেন। টাকা না দিলে নিউজ যাবেনা। তাছাড়া প্রথম আইডি কার্ড জমা দেয়ার পর এখন আর নতুন আইডি কার্ড নবায়ন করে দেয় না।
শাহিন আল মামুনের প্রতারনার ফাদে পড়ে ৪ লাখ টাকা শেয়ার হোল্ডার মানি হিসেবে খোয়ায় এক ব্যবসায়ী। টিভির ডিরেক্টরশীপের নাম করে ওই টাকা নেয়া হয়। ওই ব্যক্তিকে অফিসে চেয়ার টেবিলও দেয়া হয়। কিছু দিন ওই ব্যক্তি অফিসে যাতায়ত করে শাহিন আল মামুনের প্রতারনার চিত্র স্বচক্ষে দেখতে পায়। অপরাধ নিজের কাধে চলে আসবে ভেবে ওই ব্যক্তি টাকা পয়সা ফেরত নিয়ে চলে আসার দাবী জানালে ঘটে বিপত্তি। মামুন টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। বলা হয় মিডিয়াতে একবার টাকা ইনভেষ্ট করলে তা আর ফিরত পাওয়া যায় না।


আজিম নামের এক ব্যক্তিকে ব্যাংক ঋণ পাইয়ে দেয়ার কথা বলে ৮ লাখ ৫০ হাজার অগ্রিম হাতিয়ে নেয় মামুন। টাকা নেয়া পর ৭/৮ মাস বিভিন্ন টালবাহানায় তাকে ঘুরাতে থাকে। তারপরে বলে আপনার মর্টগেজ কাজগপত্রে সমস্যা আছে ঋণ হবে না। তাহলে টাকা ফেরত দেন। শুরু হয় আবার টালবাহানা। দেই দিচ্ছি ইত্যাদি। এখনো টাকা দিচ্ছে না। টাকা চাইলে বিভিন্ন ভয়ভীতি দেখায়। রাষ্ট্রপতির পোলার কথা বলে। সে নাকি তার টিভি চ্যানেলের মালিক। টাকা পয়সা তার কাছে আছে। সে না দিলে কিভাবে দিবে। বেশী বাড়াবাড়ী করলে টাকা দিবে না আর বড় ঝামেলায় পড়তে হবে। আমি কোন লিখিত ডকুমেন্ট ছাড়াই টাকা দিয়েছি তাই মামলা করতে পারছি না।


ভবিষ্যৎ বিপদের আশংকায় সিএনএন বাংলা টিভির বেশী ভাগ কর্মকর্তা কর্মচারী ও জেলা উপজেলা প্রতিনিধি নাম প্রকাশ না করার শর্তে শাহিন আল মামুনের প্রতারনার কথা অকপটে স্বীকার করে এবং বিভিন্ন জায়গায় বলে বেড়ায়। তারা জানায় ক্রাইমের খোজে বিভিন্ন জনের নোয়া গাড়ি ভারা নিয়ে তাতে সিএনএন বাংলা টিভির সাইবোর্ড লাগিয়ে বিভিন্ন কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানে অভিযান করে বিজ্ঞাপনের নাম করে শুধুমাত্র টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু নিউজ প্রকাশ করা হয় না। আর নিউজ প্রকাশ করবেই বা কি করে, তাদের তো সম্প্রচার লাইসেন্সই নেই। শুধুমাত্র ডিস লাইন ভারা করে সেটের মাধ্যমে প্রচার করে। সারাদিন শুধু ছায়াছবি দেখানো আর ধজ ভঙ্গ রোগের চিকিৎসায় হারবালের বিজ্ঞাপন দেখানো হয়। প্রতিনিধিরা যেখানেই কাজ করতে যায় সেখানেই রাষ্ট্রপতির ছেলে নাম ব্যবহার করে। এতে জনমনে ভয়ভীতি তৈরি হয়।


এব্যাপারে রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক এমপি এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি সিএনএন বাংলা টিভি নামের কোন টিভি চ্যানেলের মালিক বা উপদেষ্টা এমনকি সদস্যও নই। তাদের সাথে আমার কোন যোগসুত্র নেই। কেউ যদি আমার নাম ভাঙ্গিয়ে কারো সাথে প্রতারনা করে থাকে তাহলে আমি তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এদিকে অপরাধ বিচিত্রা ডটকম অনলাইন শাহিনের প্রতারনার সংবাদ প্রকাশ করা হলে শাহিন আল মামুন মতিঝিল থানায় অপরাধ বিচিত্রার নামে জিডি করে।

তাতেও সে উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতির ছেলে রেজওয়ান আহম্মেদ তৌফিক এমপি তার সিএনএন বাংলা টিভির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করে। আর শাহিন আল মামুন হলেন রাষ্ট্রপতির ভাতিজা। কিন্তু অপরাধ বিচিত্রার পক্ষ থেতে তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করেন। তাহলে কোনটি সঠিক রাষ্ট্রপতির ছেলে নাকি শাহিন আল মামুন। এদিকে সিএনএন বাংলা টিভির পরিচালক শাহিন আল মামুনের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করা হলেও তিনি এই প্রতিবেদকের সাথে কথা বলতে রাজি হননি। সিএনএন বাংলা টিভির প্রতারনা নিয়ে অপরাধ বিচিত্রায় আসা অভিযোগের ভিত্তিতে আরো অনুসন্ধান চলছে…. বিস্তারিত আসছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − 5 =