আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের অবৈধ জমি অবমুক্ত: অন্যের জমি দখল করে প্লট বিক্রির মহোৎসব

0
1446

মো: আহসানউল্লাহ হাসান: বিআইডব্লিউটিয়ের উচ্ছেদ অভিযানে তুরাগের বিরুলিয়া এলাকায় আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের অবৈধভাবে দখলকৃত শতশত একর জমি অবমুক্ত করা হয়েছে। তুরাগ নদীর জায়গায় দখল করে শতশত গাছ লাগিয়ে আমিন মোহাম্মদ আবাসন গড়ে তোলা হয়। বিআইডব্লিউটিয়ের উচ্ছেদ অভিযানের কারনে ভূমিদস্যু আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের জমি জবর দখলের চিত্রটি আরো বেশী পরিষ্কার হয়ে উঠেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোন অনুমোদন না নিয়েই সরকারী ও বেসরকারী জমি জবর দখল করে প্লট বানিয়ে ধুমধামাকা বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ভূমিদস্যু আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ। এই কোম্পানীটি যেন আইনে উর্ধ্বে।

শতশত একর খাস জমি ও নিরহী লোকজনের জমি অবৈধভাবে জবর দখল করে নিচ্ছে আমিন মোহাম্মদ। অথচ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন কোন কিছুই করেতে পারছে না। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আবাসন প্রকল্পের নামে আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের জবর-দখল থেমে নেই। সাভারের হেমায়েতপুরের যাদুরচরেও মিলেছে গ্রাহক ঠকানোর জাদুকরী প্রতারণার ভয়াবহ তথ্য। এখানে ‘আমিন মোহাম্মদ টাউন’ নামে আবাসন কোম্পানিটি প্রকল্পের অনুমোদন ছাড়াই সাইনবোর্ড টানিয়ে প্লট বিক্রি শুরু করেছে। লে-আউট নকশায় বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে প্রকল্পের সীমানা দেখালেও চিহ্নিত প্রকল্পের ৯৫ ভাগ জমিই এখন পর্যন্ত কিনতে পারেনি।

অথচ অন্যের বসতভিটা, কৃষিজমি ও বিস্তীর্ণ জলাধারকে নিজেদের প্রকল্পের জমি বলে প্রচারণা চালাচ্ছে। একই কায়দায় ঢাকার পূর্বাঞ্চলের মান্ডার গ্রীন মডেল টাউন, মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখানে আমিন মোহাম্মদ সিটি এবং একই এলাকায় ঢাকা-মাওয়া সড়কের মুন্সীগঞ্জের ‘ঢাকা সাউথ ডুপ্লেক্স সিটি’ প্রকল্প গড়ে তুলে প্লট গ্রহীতাদের সঙ্গে প্রতারণামূলক কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ভুক্তভোগীরা জানায়, প্রকাশ্যে এসব জালজালিয়াতি করে আবাসন প্রকল্প গড়ে তুললেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শক্ত কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এটি রহস্যজনক। অনেকে মনে করেন, সরকারের সংশ্লিষ্ট পর্যায়ের প্রভাবশালী মহলের সমর্থন না থাকলে এভাবে আইন লঙ্ঘন করে প্রকল্প গড়ে তোলার সুযোগ নেই।


সরেজমিন জানা যায়, ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক সংলগ্ন হেমায়েতপুরের যাদুরচর মৌজায় জাদুকরী প্রতারণার মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে আমিন মোহাম্মদ টাউন নামের আবাসন প্রকল্প। থোক থোক সামান্য কিছু জমি কিনে ভূমি ব্যবহার ছাড়পত্র, পরিবেশ ছাড়পত্র এবং প্রকল্প অনুমোদন ছাড়াই আইন লঙ্ঘন করে প্রকল্পের জন্য ৮০ ফুট সড়ক, বিশাল আকৃতির গেট ও সাইনবোর্ড টানানো হয়েছে। সীমানার ভেতর নির্মাণ করা হয়েছে প্রকল্প অফিস। আগ্রহী কোনো ক্রেতা এলে প্রকল্পের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে রঙিন লে-আউট প্ল্যান, ডিজিটাল ডিসপ্লেসহ চটকদার প্রচারপত্র দেখিয়ে বশ করার চেষ্টা করা হয়। এ ফাঁদে পড়ে অনেকে এখানে প্লট কিনতে শুরু করেছে।

আমিন মোহাম্মদের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকেও বলা হয়, অনুমোদনহীন ওই প্রকল্পে তারা ইতিমধ্যে বেশকিছু প্লট বিক্রি করেছে। এ প্রসঙ্গে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) উপ-নগর পরিকল্পনাবিদ ও হাউজিং প্রকল্পের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিকল্পনাবিদ আশরাফুল ইসলাম বলেন, হেমায়েতপুরের যাদুরচরের আমিন মোহাম্মদ টাউন প্রকল্পের কোনো ধরনের অনুমোদন দেয়নি রাজউক। এরপরও সাইনবোর্ড টানানো ও প্লট বিক্রি করছে বলে শুনেছি। এ ব্যাপারে খোঁজখবর করে দেখবেন বলে জানান রাজউকের এ কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন প্রচারণাপত্রে বলা হয়েছে, সংসদ ভবন থেকে যাদুরচর প্রকল্পের দূরত্ব মাত্র ১০ মিনিটের। এ প্রকল্পে ৩টি সেক্টর, পাঁচটি অ্যাভিনিউ রোড থাকবে। আর অলিগলি সড়কগুলোও ২৫ ফুট প্রশস্ত করা হচ্ছে। এ ছাড়া বলা হচ্ছে, এ প্রকল্পের সড়কের দু’পাশে রয়েছে ট্রি-প্ল্যানটেশন ব্যবস্থা, আধুনিক বাণিজ্যিক ও ডুপ্লেক্স জোন, নিরাপত্তার জন্য পুলিশ ফাঁড়ি, ডিজিটাল লক সিস্টেমে ২৪ ঘণ্টার নিরাপত্তা এবং সিসি ক্যামেরার আওতাভুক্ত করা হবে, বিদ্যুতের সাবস্টেশন, স্বতন্ত্র পাম্প হাউস ও স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করা হবে।

একই সঙ্গে মসজিদ, খেলার মাঠ, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতাল, কবরস্থান ও কাঁচাবাজার ব্যবস্থাপনার আধুনিক সেবাও থাকবে। জাতীয় গৃহায়ন বা রাজউকের থেকে লে-আউট প্ল্যান পাশ করাতে হলে এসব সুধিবা প্রকল্পে থাকতে হবে। কিন্তু প্রকল্পে নিদিষ্ট পরিমান জমি না থাকলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন লেআউট প্ল্যান পাশ করে না। আমিন মোহাম্মদ গ্রুপের এসব প্রকল্পে কোন ধরনের লে-আউট প্ল্যানের অনুমোদন নেই। তারা যেসব লে-আউট প্ল্যান দেখায় তা কম্পিউটার দোকান থেকে বানানো মাত্র। এসব দেখে যারা প্লট কিনবে তারা অদুর ভবিষ্যতে বড়ধরনের ক্ষতির মধ্যে পড়বে।


সংশ্লিষ্ট সচেতন মহর বলছে, ঢাকাসহ সারা দেশের সরকারি বা বেসরকারি কোনো আবাসন প্রকল্পে একত্রে এত্তসব সেবার কোনো আয়োজন নেই। উল্টো নূন্যতম উন্মুক্ত জায়গাটুকুও রাখছে না আবাসন কোম্পানিগুলো। আর আমিন মোহাম্মদ টাউন প্রকল্পে জায়গা না কিনে গ্রাহকদের যেসব নাগরিক সুবিধা দেয়া হবে বলে প্রচার করা হচ্ছে তা অনেকের কাছে হাস্যকর আর বড় ধরনের প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়।

এ ছাড়া সংসদ ভবন থেকে ১০ মিনিটের যে দূরত্বের কথা বলা হচ্ছে তার সঙ্গে বাস্তবের কোনো মিল নেই। বাস্তবে প্রকল্প এলাকা যেতে সময় লাগে কমপক্ষে এক ঘণ্টা। এ ছাড়া হেমায়েতপুরের যাদুরচর থেকে ভবিষ্যতে এমআরটি (মাস্ট র‌্যাপিড ট্রানজিট) প্রকল্প শুরু হলে প্রকল্প এলাকার জমি অধিগ্রহণের আওতায় পড়বে। ফলে সে সময় প্লট গ্রহীতাদের বিপাকে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।


প্রকল্প সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দা সামসুল আলম বলেন, আমিন মোহাম্মদ গ্রুপ যাদুরচর এলাকায় কয়েক টুকরা জমি কিনেছে মাত্র। অথচ বিশাল এলাকাজুড়ে লে-আউট নকশা করে ইতিমধ্যে প্লট বিক্রিও শুরু করে দিয়েছে। এটা স্রেফ প্রতারণা। তাই আমিন মোহাম্মদের এসব প্রতারণার ফাঁদে গ্রাহকরা পা দিলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য প্লট বুকিং দেয়ার আগে গ্রাহকদের জমির মালিকানা সম্পর্কিত কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই করে নেয়া উচিত।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fourteen − two =