স্বামী পরিত্যাক্তা এক অসহায় নারীকে বিয়ের প্রলোভনে নারীত্বহরণকারী কে এই ফয়সাল?

0
814

স্টাফ রিপোর্টার: স্বামী পরিত্যাক্তা শিউলী আক্তার কনা। স্বাভাবিক বুদ্ধি হতে না হতেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গন্ডি পেরনোর আগেই শিশুবয়সে বিয়ে হয় তারই খালাতো ভাইয়ের সাথে। দাম্পত্য জীবনে অপরিপক্ক বয়সে এক পুত্র সন্তানেরও জননী হয় সে। কিন্তু এক পর্যায়ে ওই বিয়ে টিকেনি। পারিবারিক কলহের জেরে ২০০৮ সালে তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। শিশু সন্তানসহ কনা ফিরে আসে বাবার সংসারে। বাবা সামছুদ্দিন ইসলাম স্থায়ীভাবে বাস করেন রাজধানীর পুরাতন দনিয়ায়। নতুন করে শুরু হয় কনার জীবন।

পড়াশুনাও শুরু করে। তবে মাধ্যমিক অতিক্রম করা সম্ভব হয়নি। এরপর তার জীবনে নেমে আসে আরো একটি অশুভ অধ্যায়। এই অধ্যায়ে তার চিড়ধরা জীবণটাকে ভেঙ্গেচুরে তছনছ করে দেয় শুভাকাঙ্খি রূপে আসা ফয়সাল নামের একজন হায়েনা। কান্নাজড়িত কন্ঠে এই প্রতিবেদককে কথাগুলো জানালেন ভুক্তভোগী শিউলী আক্তার কনা।
শিশু সন্তান নিয়ে বাবার বাড়িতে ভালোই চলছিল কনার জীবন।

ফেসবুকে পরিচয় হয় জনৈক যুবকের সাথে। এভাবে অনেকেরই সাথে তার বন্ধুত্ব হয়, যা ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ ছিলো। তাদেরই অন্যতম কাজী নজমুল হক ফয়সাল। ফেসবুকে তার সাথে কনার পরিচয় হয় ২০১৬ সালে। ইতোমধ্যে কনার জনৈক ফেসবুক ফ্রেন্ড তার সাথে প্রতারণা করলে তিনি শরণাপন্ন হন ফয়সালের। একদিন তাদের সরাসারি দেখাও হয়। তিনি তখন ফয়সালকে প্রতারিত হওয়ার বিষয়টি জানান। বিষয়টি এখানেই শেষ হলে ভালো হতো। কিন্তু চতুর নারীলোভী ফয়সাল কনার অসাহত্বের বিষয়টি অবগত হন।

তিনি জানতে পারেন কনা স্বামী পরিত্যাক্তা নারী। তার এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে প্রেমের প্রস্তাব দেন তিনি। কনাও সম্মত হন। তাদের মধ্যে প্রেম কিছুটা ঘনত্ব পেলে ফয়সাল তাকে বিয়ের প্রস্তাব করেন। কনা রাজি হন। শুরু হয় জঘণ্য কালো অধ্যায়। দূর্বল অসহায় নারী শিউলী আক্তার কনা পরাস্ত হন ফয়সালের কুটিলতার কাছে। বিয়ে না করে কনার দেহভোগ করার আয়োজন করেন ফয়সাল। উভয়ের মধ্যে কোনো আলোচনা না করেই তিনি ২০১৭ সালের ১ সেপ্টেম্বর রাজধানীর দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী জনৈক মাইজুদ্দিনের বাড়ির নিচতলা ভাড়া নেন।

তিনি কনাকে বিয়ে করবেন বলে তার বাবার বাড়ি থেকে চলে আসতে বলেন। কনা ফয়সালের কথা বিশ্বাস করে তার হাত ধরে ঘর ছাড়েন এবং তারই ভাড়া বাড়িতে উঠেন। কিন্তু প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে তিনি বাড়িওয়ালাকে স্ত্রী হিসেবে পরিচয় করে দেন কনাকে। এরপর বহু চাপাচাপির পরও কনা বৈধ স্ত্রী হতে পারেননি ফয়সালের। বাঙালী নারীর স্বভাবজাত প্রবৃত্তির কারণে কনাও সত্য গোপন করতে বাধ্য হন।

এদিকে তার বাবার পরিবারও জেনে যায় কনা বিয়ে করেছে। ফয়সাল প্রতিনিয়ত কনার বাসায় জামাতা হিসেবে আসা-যাওয়া করতে থাকেন স্বাভাবিকভাবেই। এভাবে চলে প্রায় ১৮-২০ মাস। এরই মধ্যে আরো চারটি বাসা বদল করে ফয়সাল। জানা গেছে, যাত্রাবাড়িস্থ ওয়াসা রোডে মোঃ কালুর বাসা, দক্ষিন যাত্রবাড়ির জনৈক শাজাহানের বাড়ি, কদমতলী থানাধীন দনিয়া বাজার রোডের রিমেলের বাড়ি ও একই থানা এলাকায় দনিয়া গোয়াল বাড়ি মোড়ের হামিদ সরকারের বাড়িতে ২২ মাস যাবৎ তাকে স্ত্রীর পরিচয়ে দেহভোগ করতে থাকে লম্পট ফয়সাল।

এদিকে ফয়সালের শিকার ভুক্তভোগী অসহায় নারী কনা প্রতিনিয়ত বিয়ের চাপ দিলে তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। তাকে দূরে সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা চালান তিনি। ফয়সালের উদ্দেশ্য বুঝতে পেরে কনা বিষয়টি ফয়সালের পরিবারকে জানিয়ে দেন। সাথে সাথে বিয়ের জন্য ফয়সালকে অব্যাহত চাপ দিতে থাকেন। এহেনো পরিস্থিতিতে কনার ওপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন বেড়ে যায়।

গত ১৪ মার্চ সংশ্লিষ্ট থানায় ফয়সালে বিরুদ্ধে সাধারণ ডায়েরী করেন কনা, যার নং-৭১১। বিষয়টি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছালে বাধ্য হয়ে কনা আইনের আশ্রয় নেন। ফয়সাল তার ভাড়া করা বাসা থেকে চাতুরতার আশ্রয় নিয়ে গত ২৫ জুলাই পালিয়ে যান। বাধ্য হয়েই অসহায় কনা কদমতলী থানায় ঘটণার বিষয়াদী উল্লেখ করে একটি নিয়মিত মামলা দায়ের করেন, যার নং- ২৪, তারিখে-০৯/০৮/২০১৯।


মামলাটি দায়ের করার পর লম্পট ফয়সাল বিভিন্ন মাধ্যমে কনাকে হত্যার হুমকীসহ বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করছেন। তিনি পুলিশ-র‌্যাব-ডিবি দিয়ে তাকে মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে নির্যাতন করবে বলে অব্যাহত হুমকী প্রদান করছেন। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সূত্রের। সূত্রে প্রকাশ, ফয়সালের বিরুদ্ধে থানায় মামলা হওয়ার পর তিনি নিম্ন আদালতে আত্মসমার্পন না করে উচ্চ আদালত থেকে ৬ সপ্তাহের জামিন নেন।

জামিন পাওয়ার পর বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে মামলাটি নিস্ক্রিয় করার অপচেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে। প্রভাব বিস্তার করে থানা থেকে মামলটি ডিবিতে হস্তান্তর করতে সক্ষম হন ফয়সাল। কারণ হিসেবে জানা যায়, ডিবির উচ্চ পদে আসিন আছেন তারই কিছু ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি। যাতে করে দ্রুত মামলাটির চুড়ান্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করা যায়। সে আলোকে কাজও ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।

অভিযোগ ভুক্তভোগীর। বর্তমানে মামলটি ডিবিতে তদন্তাধীন রয়েছে।
সূত্রে জানা গেছে, আলোচিত কাজী নাজমুল হক ফয়সাল চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার চরপোড়ামুখী গ্রামের কাজী সানাউল্লাহর ছেলে। বর্তমানে তিনি বাবা-মায়ের সাথে কেরাণীগঞ্জের শাক্তা ইউনিয়নের উত্তর বালুরচরে বাস করছেন। জানা যায়, কাজী সানাউল্লাহ স্থানীয় কোনো একটি মসজিদের খাদেম। যদিও ফয়সাল ইতোপূর্বে কনাকে জানান তার বাবা একটি মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল।

তারই পুত্র ফয়সাল প্রথমদিকে মাদ্রাসায় পড়াশুনা করেন। পরবর্তিতে সাধারণ শিক্ষা গ্রহণ করেন। বাবা মসজিদের খাদেম ও নিজে মাদ্রাসা পড়ুয়া হওয়ায় পরিবারটি জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছে। অপর একটি সূত্র জানায়, তারই আপন মামা টঙ্গী জামায়াতের আমির। তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, আলোচিত কাজী নাজমুল হক ফয়সাল একজন সংবাদকর্মী।

তিনি ‘আজকের পত্রিকা’য় কর্মরত। তিনি ক্রাইম রিপোর্টারস এসোসিয়েশন (ক্র্যাব)-এর সদস্য বলে জানা গেছে। এই সুবাধে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তাদের সাথে তার সখ্যতা রয়েছে। একারণেই মামলাটি তিনি প্রভাব বিস্তার করে ডিবিতে হস্তান্তরের ব্যবস্থা করেন। এদিকে ক্র্যাবের বেশকিছু সাংবাদিককেও ভুল বুঝিয়ে তিনি অনৈতিকভাবে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।


আলোচিত কাজী নাজমুল হক ফয়সাল একজন নারীভোগী লম্পট চরিত্রের মানুষ। তিনি মহান পেশা সাংবাদিকতাকে হীনস্বার্থে অপব্যবহার করছেন। তার অনৈতিক কর্মকান্ড ও লাম্পট্য সাংবাদিক সমাজকে বিতর্কের মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। এদিকে স্বামী পরিত্যাক্তা শিউলী আক্তার কনা একজন অসহায় নারী। তারই অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন ফয়সাল। বিষয়টা অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত।


এক অসহায় নারীর বিয়ের প্রলোভনে শিকারে পরিণত করে একটানা দীর্ঘ ২২ মাস দেহভোগ করেছেন ফয়সাল। ফয়সালের লালসার শিকার শিউলী আক্তার কনা গত ২৭ আগষ্ট ডিএমপির কমিশনার বরাবর একটি অভিযোগ দায়ের করেন, যার অনুলিপি তিনি ডিবি, স্পেশাল ব্রাঞ্চ, পিআইবি, সিআইডি, র‌্যাব-এর ঊর্ধতন কর্মকর্তাসহ ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার, জাতীয় প্রেসকাব, ক্রাইম রিপোর্টারস এসোসিয়েশন, রিপোর্টারস ইউনিটি ও মহিল্ াসমিতির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক,

মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান, নারী ও শিশু নির্যাতন সেলসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দিয়েছেন। সাংবাদিক পেশায় থাকার সুবাদে আলোচিত ফয়সাল বিভিন্ন পদস্থ পুলিশ-র‌্যাব কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলে তা অসৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেন। এমনও অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। নারীলোভী লম্পট ফয়সালের বিষয়ে তথ্যনুসন্ধান অব্যাহত রাখা হয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

sixteen − eight =