মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত ৭১’র রাজাকার পুত্র আইপিএইচ’র সেলস্ এন্ড প্রকিউরমেন্ট অফিসার মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ দু’হাতে লুটেছেন সরকারের কোটি কোটি টাকা

0
537

নিজস্ব প্রতিবেদক: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর দুর্নীতিতে ডুবে আছে বহুদিন ধরেই। অধিদপ্তরটি কয়েক যুগে অগণিত ‘আফজাল’ সৃষ্টি করেছে। দুর্নীতি দমন কমিশনেও রয়েছে এই অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজদের বিশাল তালিকা। তবে তদন্ত চলছে কচ্ছপ গতিতে। ফলে ড্যাম কেয়ার ভাব নিয়ে দেদারছে দুনীতি করে যাচ্ছেন অনেকেই। তাদেরই অন্যতম আলোচিত দুর্নীতিবাজ মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ। তিনি জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সেলস্ এন্ড প্রকিউরমেন্ট অফিসার পদে দায়িত্বরত ছিলেন। কিন্তু তার লাগামহীন দুর্নীতি প্রকাশ পেলে এবং বিষয়টি ঊর্ধতনদের নজরে আসলে তাকে বদলী করা হয় দিনাজপুরে। কিন্তু সেখানে সুবিধা করতে পারবেন না জেনে তিনি যোগদান করা থেকে বিরত রয়েছেন। প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে রিট করে অনৈতিক অর্থ লেনদেনের মাধ্যমে তা দীর্ঘায়িতও করছেন। স্বীয় দায়িত্ব পালন থেকে দূরে থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরেই ব্যবসা-বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি এই ব্যবসা করছেন তার স্ত্রী চৌধুরী শামীমা ইয়াসমিনের নামে করা লাইসেন্সে। স্ত্রীর প্রতিষ্ঠানের নাম ‘মেসার্স হিমি এন্টারপ্রাইজ। অনৈতিক পথে বিপুল পরিমাণ অর্থ উপার্জন করায় সব সময় তার মধ্যে ড্যাম কেয়ার ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তিনি প্রায়শঃই বলে থাকেন, ‘পয়সা থাকলে কিসের আইন?’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারই একজন নিকটাত্মীয় সূত্রে জানা যায়, আলোচিত জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সেলস্ এন্ড প্রকিউরমেন্ট অফিসার দুর্নীতিবাজ মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ ধোনাই চৌধুরী নামের এক কুখ্যাত রাজাকারের সন্তান। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় আগষ্ট মাসে উক্ত রাজাকারকে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা স্বীয় গ্রামের ধানক্ষেতে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেন। গুলিতে নিহত হওয়ার পর তাদের পরিবারের কেউই লাশ নিতে সাহস পায়নি সেই সময়। সূত্র জানায়, ওই লাশ শিয়াল-কুকুর উদরপুর্তি করে। তথা শিয়াল-কুকুর খেয়ে ফেলে।

কিন্তু পরিতাপের বিষয়, কুখ্যাত নিহত রাজাকার ধোনাই চৌধুরীকে অর্থের জোরে ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা’ বানাবার অপচেষ্টা করছেন দুর্নীতিবাজ পুত্র মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ। তিনি প্রকাশ্যেই বলে থাকেন, ‘আমি আওয়ামীলীগের একজন বোনাফাইড কর্মী, আমার বাবা একজন শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। যদিও এখনো তার স্বীকৃতি মেলেনি। তবে পয়সায় বাঘের দুধ মেলে। একদিন আমার বাবাকে ঠিকই শহীদ মুক্তিযোদ্ধা বানাবোই।’ সূত্র আরো জানায়, মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের অপরাপর সকলেই মুসলিমলীগ করতো। সেই সুবাদে তাদের সকলেই শান্তি কমিটির সদস্য ও রাজাকার ছিলো। জানা গেছে, মনিরুজ্জামান চৌধুরীর গোষ্ঠির বাদশা চৌধুরী, রপতু চৌধুরী, নুরুজ্জামান চৌধুরী, ধোনাই চৌধুরীসহ তখনকার যুবক বয়সী সকলেই রাজাকার ও শান্তি কমিটির সদস্য ছিলো।

তারা প্রকাশ্যে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর দালালী করেছে গোটা মুক্তিযুদ্ধের সময়টা। দেশ স্বাধীনতা লাভ করলে তারা সকলেই পালিয়ে যান। দীর্ঘ সময় পালিয়ে থাকার পর জেনারেল জিয়া ক্ষমতায় আসলে তারা একে একে সকলেই ইঁদুরের গর্ত থেকে বেরিয়ে আসা শুরু করে। পরবর্তিতে এলাকায় দাপটের সাথে বসবাস করতে থাকে। আলোচিত এই রাজাকার গোষ্ঠিটি মাদারীপুর জেলার ডাসার থানাধীন পূর্ব মাইজপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। উক্ত এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ও বয়স্ক মানুষদের সাথে কথা বললে এর সত্যতা শতভাগ মিলবে বলে সূত্রের দাবী।

সেই রাজাকার পরিবারের সন্তান মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ এখন বড় মাপের আওয়ামীলীগার (হাইব্রিট)। অপর একটি সূত্রে জানা গেছে, এখন তিনি বিশাল অংকের কালো টাকার মালিক। এই কালো টাকা তাকে নারী লিপ্সু করে তোলে। নারীকে ভোগের সামগ্রী মনে করে একে একে চারটি বিয়ে করেন বলে জানা গেছে। সূত্র বলছে, চৌধুরী শামীমা ইয়াসমিন তার চতুর্থ স্ত্রী। বর্তমানে এই স্ত্রীকে নিয়েই ঘর সংসার করছেন।
দুর্নীতিবাজ মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে ২০০৭ সালে যোগদান করেন।

রাজাকার পরিবারের সন্তান হওয়ায় তার মধ্যে দেশপ্রেম কখনোই জাগ্রত হয়নি। স্বাধীন সার্বভৌম এই দেশটাকে নিজের দেশ হিসেবে মেনে নিতে পারেননি তিনি, তার পরিবারের লোকজন ও জ্ঞাতি-গোষ্ঠি, তথা তার এলাকায় ব্যাপক প্রচারিত খোরোল্লা চৌধুরীরা। প্রকাশ থাকে যে, ডাসার থানা এলাকায় মনিরুজ্জামানদের গোষ্ঠিকে খোরোল্লা চৌধুরী হিসেবেই মানুষ চিনে। ফলে আলোচিত মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ দেশের উন্নতীর বিপরীতে কাজ করেছেন এবং এখনো অব্যাহত রেখেছেন। জানা গেছে, রাজধানী ও এর আশপাশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে তার বেশ প্রভাব রয়েছে। আর এই প্রভাবের পিছনে রয়েছে অনৈতিক আর্থিক লেনদেন।

হাসপাতালগুলোর কতিপয় অসাধু কর্মকর্তাদের মাধ্যমে সম্পূর্ণ অনৈতিক উপায়ে তাকে ঠিকাদারী ও সরবরাহের কাজ দেয়া হয় অধিকাংশ সময় কোটেশনের মাধ্যমে। এর আগে তিনি অন্যের ঠিকাদারী লাইসেন্সে সাপ্লাইয়ের কাজ নিতেন। জানা গেছে, জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউট থেকে শুধুমাত্র কোটেশন করেই কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি। রাজধানীর কুর্মিটোলা হাসপাতালের এও দেলওয়ার হোসেনের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার ভুয়া বিল-ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন বলে জানা গেছে। এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে সংশ্লিষ্ট সূত্রের মাধ্যমে।


সরকারী অর্থ আত্মসাৎ করে মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ বিশাল কালো টাকার মালিক। এর ফলে তিনি ধরাকে সরা জ্ঞান করে চলেন। সম্প্রতি নিজের ব্যবহৃত গাড়ীটি নিজেই চালিয়ে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে এক পথচারিকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেন। তাকে পুলিশ আটক করলে বিশাল অংকের টাকার বিনিময়ে দফারফা হয়। নিহতের পরিবারকে কিছু নগদ অর্থ দিয়ে এবং তার একজন সন্তানকে লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করার দায়িত্ব তিনি কাঁধে নেন। কিন্তু কিছুদিন পরই তার সাথে বেঈমানী করেন তিনি। নিহতের সন্তানকে কিছুদিন ঢাকাতে রেখে তাড়িয়ে দিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন আলোচিত মনিরুজ্জামান চৌধুরী সোহাগ।


প্রথম পর্বে দুর্নীতিবাজ মনিরুজ্জামন চৌধুরীর তথ্য-উপাত্ত চেয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে অপরাধ বিচিত্রা। উক্ত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর অনেকেই সরাসরি এসে আবার অনেকেই টেলিফোনে অপরাধ বিচিত্রাকে বেশ কিছু তথ্য-উপাত্ত সরবরাহ করেন। প্রাপ্ত বিষয়গুলো যাচাই-বাছাই চলছে। সেই আলোকে আগামীতে থাকবে আরো একটি প্রতিবেদন। এছাড়াও তথ্যানুসন্ধান অব্যাহত রাখা হয়েছে।
গত সংখ্যায় প্রবাশিত প্রতিবেদনে “জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিইটে স্বীয় পদে থাকাকালীন সময়ে আজিমপুরস্থ মেটারনাল এন্ড চাইল্ড হেলথ্ ট্রেনিং ইন্সটিটিউটে এক বিশাল জালিয়াতির ঘটনা ঘটান তিনি।

ঘটনাটি ঘটান ২০১৭ সালের ৮ জুন তারিখে। একটি ভূয়া চাহিদাপত্রের মাধ্যমে তিনি তার স্বীয় স্ত্রীর নামের সরবরাহকারী লাইসেন্সে একটি জাল ওয়ার্ক অর্ডার তৈরী করেন, যার নং- গঈঐঞও/অুরস/ গবফরপরহব/ চৎড়প/৬৭৮/২০১৭/৭৮০। জানা গেছে, তার স্ত্রীর নামের প্রতিষ্ঠানটি মেসার্স হিমি এন্টারপ্রাইজের ট্রেড লাইসেন্সটি ২০১৮ সালের ৮ আগস্ট সিটি কর্পোরেশন থেকে ইস্যু করা, যার ইস্যুর ক্রমিক নং- ৩২৯। জনমনে প্রশ্ন, ২০১৮ সালের ট্রেড লাইসেন্সে ২০১৭ সালে কাজ পায় কি করে? ওয়ার্ক অর্ডারে সুপারেনটেনডেন্ট ডাঃ মোঃ সিরাজুল ইসলামের স্বাক্ষর রয়েছে। সূত্র জানায়, তিনি ২০১৪ সালে অবসরকালীন ছুটিতে ছিলেন।

পরবর্তিতে অবসরে চলে গেছেন। এখন স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে যিনি ২০১৪ সালে এলপিআরে গেছেন ওয়ার্ক অর্ডারে তার স্বাক্ষর থাকে কি করে? এখানে স্পষ্ট যে, জনস্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সাবেক সেলস্ এন্ড প্রকিউরমেন্ট অফিসার মহা-দুর্নীতিবাজ মনিরুজ্জামান চৌধুরী তার স্বাক্ষরটি জাল করেছেন। সুত্র আরো জানায়, উক্ত ভূয়া ওয়ার্ক অর্ডারে যে সকল পণ্য সরবারাহ করার বিষয়গুলো উল্লেখ করা আছে তা সরবরাহের প্রশ্নই আসে না। এক্ষেত্রে ভূয়া বিল-ভাউচার করে ১ কোটি ২০ লক্ষ ৩২ হাজার ৫শ’ টাকা আত্মসাৎ করেছেন মনিরুজ্জামান চৌধুরী।” বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমুহ আমলে নিয়ে উক্ত দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে আইনী ব্যাবস্থা নিবে প্রত্যাশা ছিলো সচেতন সমাজের। কিন্তু অদ্যাবোধী তার বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। ফলে ভাবিয়ে তুলেছে সচেতন সমাজকে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − four =