মানুষ কতটুকু নিষ্ঠুর হতে পারে

0
668

মানুষ কতটুকু নিষ্ঠুর হলে বন্ধু,মামাকে নিয়ে ১৫বছর বয়সের আপন চাচাতো ভাইয়ের দুচোখ টেষ্টার দিয়ে তুলে ফেলতে পারে। ঘটনাটি ঘটেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা ১০নং গোড়াই ইউনিয়নের রাজাবাড়ী বানিয়াচালা গ্রামে। ১২ই এপ্রিল মামুন মিলনকে ডিস লাইনের কাজ করানোর জন্য বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে যাই,মিলন তার কাজে মজুরী চাইলে,মামুন তা দিতে অস্বীকার করে।

মামুন মিলনকে নিউটেক্স মিলের গেটের সাথে আনিস মুন্সির তিন তলা বিল্ডিং এর ছাদে নিয়ে যাই,সাথে ছিল আলামিন ও কবির। সেখানে মিলনের সাথে মামুনের কথা কাটাকাটি হয়। মামুন মিলনের উপর ক্ষিপ্ত হয়ে তার পকেটে থাকা টেষ্টার বের করে আলামিন ও কবিরকে মিলনকে ধরতে বলে,মামুনের হাতে থাকা টেষ্টার দিয়ে প্রথমে ডান চোখে আঘাত করে। মিলন জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। পরে তারা মিলনের বাম চোখও টেষ্টার দিয়ে খুচিয়ে নষ্ট করে,নাকে ও মুখে চলা কাঠ দিয়ে আঘাত করে। পরে মির্জাপুর কুমুদিনি হাসপাতালে মামুন আলামিনও কবির ভর্তি করে।মামুন মিলনের বাড়িতে ফোন করে জানাই যে মিলন কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে গেছে।সেখান থেকে উন্নত চিকিৎসার জন্য মিলনকে রাত আটটার দিকে ঢাকা মেডিকেলে পাঠাই,সাথে যায় মামুন,মিলনের বাবা বড় বোন ও মামা।ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয় রাত ১২টার দিকে। ওর চোখের অবস্থা খারাপ থাকাই সেই রাতেই আগারগাও চক্ষু হাসপাতালে পাঠানো হয়,রাত ২টার দিকে। পরের দিন ১৩ই এপ্রিল মিলনের নাক ও মুখের রক্ত পড়া বন্ধ না হওয়াই বেলা ১১টার দিকে চক্ষু হাসপাতাল থেকে আবার ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।সেখানে মিলনকে ভর্তি করা হয় কিন্তু পহেলা বৈশাখ ও শবেবরাতে বন্ধ থাকাই বড় ডাক্তার না থাকাই শুধু স্যলাইন ও ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়। ১৫ই এপ্রিল ডাক্তার এসে মিলন কে দেখে জানতে চাই কি করে এমন হল, মামুন বলে তিন তলা ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছে। ডাক্তার বলেন যে কোন দিনও তিন তলা ছাদ থেকে পড়ে গিয়ে এমন হতে পারে না কারণ ওর শরীরের অন্য কোথাও কোন আঘাতের চিহৃ নেই,তিন তলার ছাদ থেকে পড়ে গেলে মাথা ফাটবে,হাত পা ভাংবে,বুকে আঘাত পাবে। এমন তো কিছুই হয়নি,শুধু চোখে,নাকে আর মুখে কেন।ছয় সাত দিন পর মিলনের জ্ঞান ফিরে কিন্তু সে যা বলে তা বুঝা যাই না কারণ তার মুখের ভেতরে অনেক ক্ষত ছিল।এর মধ্যে একদিন এক ডাক্তার এসে বিল্লাল নামের এক রোগীকে খুঁজে, যার চোখ নাক আর মুখে সমস্যা,ডাক্তার কে মিলনের বড় বোন নাসরীন বলে যে ওটাতো আমার ভাই কিন্তু ওর নাম তো মিলন,বিল্লাল না। ডাক্তার এর হাতে থাকা ফাইল এ লেখা রোগির নাম বিল্লাল,পিতা গিয়াস আর ঘটনা হল সড়ক দূরঘটনা। তখন নাসরিন মামুনকে ফোন করে বলে কাগজ পত্রেতো মিলনের নাম ও ঘটনা ভুল, উত্তরে মামুন বলে ওটা কোন সমস্যা না,নাম ভুল হলে কি হবে চিকিৎসা ঠিক মতনই হচ্ছে নাম দিয়ে কি হবে। নাসরিনের কাছে কুমুদিনি হাসপাতালের, প্রথম বার ঢাকা মেডিকেলের ও আগারগা চক্ষু হাসপাতালের কাগজ ছিল তা দেখে যে তিন জায়গাই নাম ও ঘটনা ঠিক। শুধু পরের বার ঢাকা মেডিকেলে ভর্তির সময় নাম ও ঘটনা ভুল,পরের বার মামুন ভর্তি করে ছিল। এগুলি দেখে নাসরিনের সন্ধেহ হয়। মে মাসের ১তারিখ থেকে মিলন মোটা মুটি ভাল করে কথা বলতে পারে। মিলনকে তখন জিজ্ঞাস করা হয় কি করে ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছ,তখন সে বলে আমি তো ছাদ থেকে পড়ে যাইনি,আমাকে মামুন ভাই,আলামিন ও কবির মামা মেরেছে।(মিলনের এই জবানবন্ধির ভিডিও আমাদের কাছে আছে) নাসরিন তখন এলাকার মেম্বার দেওয়ান আবুল কাসেম সাহেব কে ফোন করে পুরো ঘটনা জানাই। মেম্বার সাহেব ফোনে মিলনের সাথেও কথা বলে। ফোনে নাসরিন মামুনের বাবা মজিবর কেও ঘটনা জানাই।ঘটনা শুনে মামুনের বাবা মজিবর নাসরিনকে কেস মামলা না করার জন্য ভয় ভৃতি দেখাই,বলে যে কাজ তোরা ১০ লক্ষ টাকা দিয়ে করতে পারবিনা সে কাজ আমি একটা ফোন কল করেই করতে পারি,চোখ তো এক জনের তুলছি বাড়াবাড়ি করলে বাকিদেরও তুলবো,আমরা সরকারী দলের লোক আমার বৌ এই ওয়াডের মহিলা আওয়ামীলীগের সভানেত্রী আমাকে সাহায্য করার জন্য অনেক নেতা আছে,তরে সাহায্য করবে কে। যা হইছে চুপচাপ থাক না হলে বিপদ আছে। আসামি পক্ষ ক্ষমতাশালী হওয়াই কেস মির্জাপুর থানায় করা হয়নি। ৯ই মে ২০১৯ইং তারিখে টাংগাইল জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট কোটে মিলনের মা জাহানারা বেগম বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলা নাম্বার জি আর ১৩২/১৯। ধারাঃ ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩২৬-ক/১০৯ পেনালকোড। আসামি করা হয়,১। মামুন,পিতাঃ মজিবর (((মজিবর মিলনের আপন ছোট চাচা,তার ছেলে মামুন))) ২। আলামিন,পিতাঃ মাজেদ দেওয়ান((( আলামিন কাসিম মেম্বারের দূর সম্পর্কের ভাতিজা))) দুজনেরই বাড়ি গ্রামঃ রাজাবাড়ি,পোঃ গোড়াই,থানাঃ মির্জাপুর, উপজেলা মির্জাপুর জেলাঃ টাংগাইল। ৩। হুমায়ুন কবির,পিতা মৃত লুলু মিয়া(((হুমায়ুন কবির,মামুনের আপন মামা,ডিস লাইন ব্যবসায়ি)))। মামলার তদন্ত করেন,রফিকুল ইসলাম এস আই দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ি, মির্জাপুর, টাঙ্গাইল। ২৮ই মে মামুন ও আলামিন গ্রেপ্তার হয়। ২৯ই মে তাদের আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাওয়া হলে আদালত তাদের রিমান্ড না দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেন। এদিকে মামুনের মা আফরোজা বেগম, আলামিনের মা কুলসুম বেগম ও মামুনের বড় চাচা নাজিম উদ্দিন বাদী হয়ে তিনটি ১০৭ ধারার মামলা করে। আসামি করে মিলনের বাবা,মা দুই বোন,এক মামা, ও উকিল বোন জামাইকে। ৬ই আগষ্ট ৩নং আসামি হুমায়ুন কবির আদালতে হাজির হয়ে জামিন চাইলে,আদালত জামিন না দিয়ে জেল হাজতে পাঠিয়ে দেয়। ২৮ই আগষ্ট এস আই রফিকুল ইসলাম আবার আসামিদের রিমান্ড চাই,আদালত তা না মঞ্জুর করে। বাদীর আবেদনের প্ররিপেক্ষিতে তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তন করা হয়। তদন্তের দায়িত্ব নেন মোঃ আবু সাদেক এস,আই মির্জাপুর থানা, টাঙ্গাইল। তিনি আবার আসামিদের সাত দিনের রিমান্ড চান,আদালত দুই দিনের রিমান্ড দেন। গত ২৯ সেপ্টেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আবু সাদেক মির্জাপুর থানায় অভিযোগপত্র নং-২৫০ মামলায় আসামীদের বিরুদ্ধে চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছেন।মামলাটি তদন্ত ও স্বাক্ষী প্রমানে আসামীদের বিরুদ্ধে পেনালকোড আইনের ৩২৩/৩২৪/৩০৭/৩২৬-ক/১০৯ ধারার অপরাধ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত তিন আসামীর নাম চুড়ান্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। আসামীরা হলেন মামুন(২৫), আলামিন(১৯), হুমায়ুন কবির(৪০)। এই মামলায় স্বাক্ষী করা হয়েছে ঃ মিলন,মিলনের মা,বড় বোন,ছোট বোন।গ্রামের মেম্বার দেওয়ান আবুল কাসেম। হারুনুর রশিদ,পিতা-মৃত ইসমাইল শেখ, সাং- রাজাবাড়ী নিশ্চিন্তপুর,গোড়াই মির্জাপুর টাঙ্গাইল। ডাক্তার নাসিমা খাতুন সহকারী রেজিষ্টার চক্ষু বিভাগ,ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। মোঃ মোশারফ হোসেন পুলিশ পরিদর্শন(তদন্ত) (আরও) মির্জাপুর থানা। মোঃ রফিকুল ইসলাম এস আই (আই ও) দেওহাটা পুলিশ ফাঁড়ি,মির্জাপুর। মোঃ আবু সাদেক এস আই (আই ও) মির্জাপুর থানা, সহ মোট ১৩ জন স্বাক্ষী। এজাহারে উল্লেখিত তিন জন স্বাক্ষী বাদ দেওয়াই আদালতে আবেদন করা হয়েছে যেন বাদ দেওয়া তিন জন স্বাক্ষী অভিযোগ পত্রে অন্তর ভুক্ত করা হয়। আসামী পক্ষ প্রভাবশালী হওয়াই ন্যায় বিচার পাওয়া থেকে বঞ্চিত হওয়ার অশংক্ষা আছে বিধায়। ন্যায় বিচার নিশ্চিত করার জন্য মাননীয় প্রধান মন্ত্রীর কার্যালয়,স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশ হেডকোয়ার্টার,মন্ত্রীপরিষদ সচিব,আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়,জননিরাপত্তা বিভাগ,পুলিশ সুপার টাঙ্গাইল,মাননীয় সংসদ সদস্য মির্জাপুর টাঙ্গাইল০৭,বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা টাঙ্গাইল,উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জাপুর টাঙ্গাইল,উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মির্জাপুর টাঙ্গাইল বরাবর আবেদন করা হয়েছে। বর্তমানে আসামী পক্ষ মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ভাবে মিলনের পরিবারকে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে,মামুনের বাবা মজিবুর বলে যদি ছেলেদের একবার জামিনে বের করতে পারি তখন তোদের মজা দেখাবো। অন্ধ মিলনের বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও রাষ্ট্রপ্রতি মহোদয়ে নিকট অাবেদন এই যে আসামীদের যেন সর্ব্বোচ সাজা মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twelve + 14 =