সৎ মায়ের নিষ্ঠুর নির্যাতন, খুন্তির ছেঁকার শিকার সেতু

0
415

সেতুর বয়স ১৩। তার সৎ মা সাবিনার হাতে নিত্যদিন ছলছুতায় নির্যাতনের শিকার হতো। বাবা রিয়াজ শিকদার এসবের খেয়াল রাখতেন না। তিনি ঘুম থেকে উঠে সকালে পান্থাপাড়া বাজারে ভাঙ্গারির দোকানে চলে যেতেন। ফিরতেন রাতে।

রাজৈর উপজেলা সীমান্ত পার্শ্ববর্তী ভাঙ্গা উপজেলার কালামৃধা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সেতু জানায়, ‘প্রায় ৯বছর পুর্বে আমার মা রেহানা বেগম মারা যায়। মা জীবিত থাকতেই বাবা পুনরায় সৎ মা সাবিনা বেগমকে বিবাহ করে। এরপরেই আমাদের ওপর নেমে আসে নির্যাতনের খড়গ। এ ঘরে ১ভাই ও এক বোন রয়েছে।

সৎ ভাই ছাব্বির (১৭) ও সৎ নানীর প্ররোচনায় সৎ মা সাবিনা গরম খুন্তি দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছেঁকা দেয়। আমি যন্ত্রণায় চিৎকার করলেও তাদের মায়া হয়নি। নির্যাতনের সময় সৎভাই আমার হাত চেপে ধরে। আমাকে চিকিৎসা পর্যন্ত দেয়নি। আমি কারো কাছে অভিযোগ করলে আমাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিলে কে আমাকে আশ্রয় দিবে? এ ভয়ে কাউকেই জানাইনি।’

২৪ মার্চ সামান্য কারণে ছোট এ শিশুটির কোমল শরীরের ঘাড়, কনুই, হাতসহ ১৩টি স্থানে গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিয়ে দগ্ধ করেছে তার সৎ মা। ভবিষ্যৎ চিন্তা করে এবং মাথার উপরে ছাদ হারাবার ভয়ে এ নির্যাতনের কথা সেতু কাউকেই জানায়নি। এমনকি বাবাকেও না। দগদগে ঘা নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে।

কিন্তু বিধিবাম! চোখ এড়ায়নি এলাকাবাসীর। শিশুটির সারা শরীরের খুন্তির ছেঁকা দেখে আঁতকে উঠেছে সকলে। প্রতিবাদ জানিয়েছে এলাকার নারী পুরুষ, শিশু ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীরা। এলাকার মানবাধিকার কর্মী মমতা খাতুন আজ রবিবার (৩১-৩-১৯) সকালে মেয়েটিকে উদ্ধার করে কালামৃধা বাজারে নিয়ে ডাক্তার দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন।

এ মর্মস্পর্শী ঘটনাটি ঘটেছে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার উত্তর সীমান্তে কবিরাজপুর ইউনিয়নের পান্থাপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় পুলিশ আজ রবিবার শিশুটির সৎ মা সাবিনা বেগম ও ভাই ছাব্বিরকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে এসেছে।

রাজৈর থানার এসআই খান মোঃ জোবায়ের বলেন, ‘খবর পেয়ে রবিবার ঘটনাস্থলে গিয়ে মেয়েটিকে উদ্ধার করে রাজৈর হাসপাতালে ভর্তি করি এবং সৎ ভাই ছাব্বির ও সৎ মা সাবিনাকে আটক করে থানা নিযে আসি।’ এ সময় রাজৈর মহিলা অধিদপ্তরের প্রতিনিধি মোমেনা বেগম, মানবাধিকার কর্মী মমতা খাতুন ও সাংবাদিকগণ উপস্থিত ছিল।

এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহানা নাসরিন জানান, মেয়েটিকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য রাজৈর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শিশুটি পুনর্বাসনের যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 + twelve =