তরুণীর মাথাকাটা দেহ উদ্ধার

0
384

সিলেটের ওসমানীনগরে গত ২ ডিসেম্বর তরুণীর মাথাকাটা দেহ উদ্ধারের সাতদিন পর ছিন্ন মস্তক উদ্ধারকৃত ওই তরুণীর নাম সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজ। বিয়ের আগে তরুণী খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী ছিলেন। ভালোবেসে বিয়ে করে গ্রহণ করেন স্বামীর ধর্ম ইসলাম। অবশেষে সেই স্বামীর হাতেই নির্মমভাবে খুন হতে হলো তাকে। অবশেষে হত্যাকারী স্বামীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

বুধবার ১৬৪ ধারায় নিজের স্ত্রী শাহনাজ হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয় খুন হওয়া শাহনাজের স্বামী মোজাম্মেল মিয়া (২৪)। মোজাম্মেল মিয়া ওসমানীনগরের দক্ষিণ কলারাই গ্রামের মৃত জিলু মিয়ার ছেলে। সে পেশায় রাজমিস্ত্রি। গত ১৬ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

আদালতে দেওয়া মোজ্জামেলের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির সূত্রে পুলিশ জানায়, সন্ধ্যা ওরফে শাহনাজের বাড়ি বরিশালে।‘পরকীয়ার কারণে’ স্বামী মোজাম্মেল মিয়া ওরফে মুজাম্মিলের হাতে খুন হন শাহনাজ। স্থানীয় মোহন নামের এক যুবকের সঙ্গে শাহনাজের ‘পরকীয়া’ ছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ক্ষিপ্ত হয়ে তাকে প্রথমে শ্বাসরোধ করে খুন করে মোজাম্মেল। পরে গলা, নাক, কান ও স্তন কেটে ফেলেন। তবে পরকীয়ার ব্যাপারে বিস্তারিত জানাতে চায়নি পুলিশ।

পুলিশ সূত্রে আরও জানা গেছে, শাহনাজের ব্যবহারে সন্তুষ্ট হয়ে মোজাম্মেলের মা ও আত্মীয়স্বজন শাহনাজকে মোজাম্মেলের স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করতে চান। বিয়ের পর তাদের সংসার শান্তিতেই চলছিল। কিছুদিন পর থেকে শাহনাজের আচরণে পরিবর্তন দেখতে পান মোজাম্মেল। বাড়িতে তার মা, ভাই ও আত্মীয় স্বজনের সঙ্গে শাহনাজের কলহ দেখা দেয়। এ প্রেক্ষিতে শাহনাজকে বিভিন্ন আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে রেখে নিজের কাজ করতে থাকেন মোজাম্মেল। দুজনের মধ্যে প্রায়ই ঝগড়া হতো। এরই মধ্যে শাহনাজের পরকীয়ার বিষয়টি জানতে পারেন মোজাম্মেল। গত ৩০ নভেম্বর বেলা ১টার দিকে সিএনজি অটোরিকশাযোগে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার চন্ডীপুল থেকে গোয়ালাবাজার যান মোজাম্মেল ও শাহনাজ। সেখান থেকে ওসমানীনগরের উনিশ মাইল এলাকার আগে নাটকিলা নামক স্থানে অটোরিকশা থেকে নেমে পড়েন তারা। ধানী জমির মধ্য দিয়ে তারা উনিশ মাইলে মোজাম্মেলের বড় খালা ফুলমতির বাড়িতে রওয়ানা দেন। এর মধ্যে রাত হয়ে গিয়েছিল। মোজাম্মেল ও শাহনাজ হাওরের (বিল) মধ্য দিয়ে পশ্চিম দিকে যেতে থাকেন। মোজাম্মেলের হাতে ছোট গ্যাস লাইটার ছিলো। হাওর দিয়ে যাওয়ার পথে শাহনাজ দৈহিক মিলন করতে চাইলে মোজাম্মেল ধমক দেন। তখন শাহনাজ মোজাম্মেলকে গালিগালাজ করে বলেন, তিনি মোহন নামের এক যুবককে বিয়ে করবেন। রাগে শাহনাজ তাকে ‘আম্মা’ ডাকতে বলেন মোজাম্মেলকে। এতে ক্ষিপ্ত হন মোজাম্মেল। পরে শাহনাজের গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ লুকানোর চিন্তা করেন মোজাম্মেল। শাহনাজের বোরকা, জামাকাপড় সব খুলে ফেলেন এবং তার হাতব্যাগ, মোবাইল সবকিছু একত্র করেন। এরপর নিজেও উলঙ্গ হয়ে হাওরের কাদাপানি গায়ে মেখে উনিশ মাইল বাজারে যায়। সেখানে ওয়ার্কশপের দোকানের বাইরে পড়ে থাকা চিকন স্টিলের পাত ও সিমেন্টের দুটি প্লাস্টারের টুকরো তুলে নেয়। প্লাস্টারের টুকরো দিয়ে স্টিলের পাত ঘষে ধারালো করতে থাকেন মোজাম্মেল। ফের হাওরে শাহনাজের লাশের কাছে ফিরে যায়। স্টিলের পাতটিকে চাকুর মতো ব্যবহার করে তার গলা কেটে মাথা বিচ্ছিন্ন করে। নাক, কান, স্তন কেটে ছুড়ে ফেলেন ফেলে। দেহ থেকে ২শ গজ দূরে পুতে রাখে ছিন্ন মাতা। এছাড়া স্টিলের পাত দিয়ে শাহনাজের উরু ও পেটে একাধিক কোপ দেয়। এছাড়া তার ছিন্ন মাথা একটু দূরে কাদার মধ্যে চাপা দেয়। পরে সেখান থেকে সরে এসে পশ্চিম কালারাই গ্রামের দক্ষিণে নাটকিলা নদীতে ওই স্টিলের পাত ছুড়ে ফেলে। শাহনাজের কাপড়চোপড়, মোবাইল সব পার্শ্বস্থ একটি ইটভাটার জ্বলন্ত চুলায় ফেলে দেয়। পরবর্তীতে ভাগলপুরে নির্জন রাস্তায় ৪০ মিনিট অপেক্ষা করে ফজরের আজানের পর বাস যোগে সিলেটে তার খালার বাসায় চলে যায় মোজাম্মেল।

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ তদন্ত এস এম মাঈন উদ্দিন জানান, ঘাতক মোজাম্মেলকে গ্রেফতারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অজ্ঞাতনামা লাশটি তার বিবাহিত স্ত্রী। পারিবারিক কলহের জের ধরে সে নিজেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মস্তকসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ ছিন্ন করে লাশটি হাওরে ফেলে দেয়। গ্রেফতারকৃত মোজাম্মেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে স্ত্রী শাহনাজকে হত্যার বর্ননা দিয়েছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five + 4 =