প্রতারনার নতুন সাহেদ পুষ্পধারার এমডি আলীনুর

0
989

স্টাফ রিপোর্টার: সরকারী অনুমোদনহীন পুষ্পধারা আবাসনের প্লট বুকিং দিয়ে সাধারণ জনগনের নিকট থেকে শতশত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে তা বিদেশে পাচার করে দিচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে কোম্পানীর এমডির বিরুদ্ধে। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগরে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে বিশালাকারের সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে পুষ্পধারা আবাসনের প্লট দেখিয়ে তা কিস্তিতে বুকিং বা বিক্রি কতরছে ও মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। প্লট বিক্রি বা বুকিংয়ের টাকা কোথায় যাচ্ছে তার হদিস কেউ জানছে না। বিষয়টি জেলা প্রশাসক দেখভাল করার কথা থাকলেও তিনি কেন এসব প্রতারনার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা তা বুঝা যাচ্ছে না। তবে পুষ্পধারা একজন পরিচালক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তাদের কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। সংবাদ মাধ্যমে পুষ্পধারার প্রতারনার বিষয়টি প্রকাশিত হলেও জেলা প্রশাসক যেন চোখ বন্ধ করে রেখেছে। প্রশাসনের চোখের সামনে পুষ্পধারা এমন অবৈধ কার্যক্রম কিভাবে চালিয়ে আসছে তা নিয়ে জনসাধারনের জিজ্ঞাসা।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া রোডে পদ্মা সেতু সংলগ্ন এলাকায় গ্রাহকদের নিয়ে সমাবেশ, মতিঝিলে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে বর্নাঢ্য অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উপস্থিত রাখেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফা, বাংলাদেশ ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক ইউনুস আলী, মহাব্যবস্থাপক আবদুল কাইয়ুম, বাংলাদেশ ব্যাংকের জিএম ইসহাক আলী। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডিজিএম রফিকুল ইসলাম, ডিজিএম বিষ্ণুপদ বিশ্বাস, ডিজিএম সিরাজুল ইসলাম, ডিজিএম আবদুল হালিম, ডিজিএম নেসার আহমেদ ভূঁইয়া, ডিজিএম শিকদার সিদ্দিকুর রহমানের মতো ব্যক্তিবর্গকে।

যাদের উপস্থিতি দেখে সাধারন গ্রাহকরা খুব সহজেই পুষ্পধারাকে বিশ^াস করে।
আর বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক নির্বাহী পরিচালক গোলাম মোস্তফার উক্তি “নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণাধীন পদ্মা সেতু ঘিরে আমাদের এ আবাসন প্রকল্প”। ব্যস, কেল্লাফতে। সাধারণ গ্রাহকদের বিশ^াস অর্জন করাতে এমন কয়েকটি কথাই যথেষ্ট। এই সুযোগে সহজ কিস্তির নামে পুষ্পধারা গ্রাহকদের নিকট থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। নামি দামী লোকজন দিয়ে অনুষ্ঠানে কথা বলিয়ে সাধারন মানুষের চোখে ধুলো দেয়া প্রধান উদ্দেশ্য মাত্র। কারন নিজের বিবেকের চিন্তা যতটা না করে তার চাইতে ক্ষমতাবান অন্যদের কথায় বেশী আসক্ত হয়। আর এই সুযোগটিই পুষ্পধারা এমডি আলী নুর গ্রহন করেছে প্রতারনার মাধ্যম হিসেবে।


অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ঢাকা-মাওয়া মহাসড়কের পাশে পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড প্লট ব্যবসার নামে অন্যের জমি ভাড়া নিয়ে চটকদার সাইনবোর্ড লাগিয়ে জনগনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হরদম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারনা। পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড এযাবৎ নিজেদের কোম্পানীর নামে শ্রীনগর ভূমি অফিসের মৌজাধীন এলাকায় জমি কিনেছে প্রায় ৭০ শতাংশ। সরকারী নিয়ম মেনে প্লট বানালে সর্বোচ্চ প্লট হতে পারে ৫টির মতো। কিন্তু প্রতারক কোম্পানী প্রতিষ্ঠালগ্ন সময় হতে রাজধানী ঢাকা শহরের নামিদামী হোটেল ও ভিআইপি লাউঞ্জ ভাড়া নিয়ে জমকালো মেলার আয়োজন করে সহজ কিস্তিতে এপর্যন্ত ১৫শর উপরে প্লট বুকিংয়ে বিক্রি করেছে।


যার পুরো পরিকল্পনাটাই ঠকবাজি আর প্রতারনায় ভরপুর। কারন এই মুহুর্তে পুষ্পধারা সহজ কিস্তির মাধ্যমে গ্রাহকে কাছে প্লট বুকিং দিয়ে যেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সেই টাকা বা প্লট অদুর ভবিষ্যতে কখনোই গ্রাহক ফেরত পাবেনা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। আর আসল ঘটনা হলো এই মুহুর্তে যারা প্রষ্পধারা নিকট জমি ভাড়া দিয়েছে সাইনবোর্ড লাগানোর জন্য তাদের জমিও একদিন এই হায় হায় কোম্পানী গ্রাস করবে। যা ইতিপূর্বে দেশের নামিদামী আবাসন কোম্পানীগুলো জনগনের জমি জোড়পূর্বক দখল করে নিয়েছে। জনগনের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ঐ টাকা দিয়ে আবার জনগনের উপরই নির্যাতন করার বহু রেকর্ড ভূমিদস্যু কোম্পানীগুলো বিরুদ্ধে পাওয়া গেছে। জনগনকে নিঃস্ব করার এক ডিজিটাল ফাঁদ হচ্ছে পুষ্পধারা প্রপার্টিজ লিমিটেড।


এই কোম্পানীর চেয়ারম্যান, এমডি সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশের বড় বড় দুর্নীতিবাজ গডফাদারদের নিকট আত্মীয়। পুষ্পধারা প্লট বুকিংয়ের মাধ্যমে জনগনের নিকট থেকে যেই টাকাটা নিচ্ছে তার বিপরীতে জনগনকে দিচ্ছে কোম্পানীর নামের উপরে একটুকরো রশিদ ভাউচার। আর এই ভাউচার হবে ঐ সমস্ত জনগনের গলার তাবিজ মাত্র। কোম্পানী টাকা বা জমি বুঝিয়ে না দিলে এই তাবিজ ব্যবহার করে জনগন হাজার বছরেও তার সমস্যার সমাধান পাবে না। কারন ডেসটিনিতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এমন তাবিজ অন্তত ২০ লাখ গ্রাহক পেয়েছে। ডেসটিনির তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে ২০ লাখ গ্রাহক শুকিয়ে শুটকি মাছ হলেও ডেসটিনির কর্মকর্তারা কিন্তু খুবই আরাম আয়েশে দিন পার করছে।


এদের নামে মামলা হয়েছে ঠিকই তবে এরা জনগনের থেকে হাতিয়ে নেয়া ঐ টাকা খরচ করে জামিনে বেরিয়ে এসে এখন তারা আছে মহা সুখে। পুষ্পধারার ঠিক একইভাবে জনগনকে নিঃস্ব বানাবে এতে কোন সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছে ঐ প্রতিষ্ঠানের কর্মরত প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সহ পত্রপত্রিকায় বা টিভিতে পুষ্পধারা চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনের ফাঁেদ পড়ে যারা তাদের তিল তিল করে জমানো টাকা পুষ্পধারার হাতে তুলে দিচ্ছে ভবিষ্যতে তাদের চোখে কান্না করার মতো পানিটুকু থাকবেনা বলে মনে করছে ক্ষতিগ্রস্তরা। কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ আলীনূর ইসলাম বলেন, পুষ্পধারা প্রতিষ্ঠার পর থেকে অল্প সময়ে গ্রাহকের আস্থা অর্জন করতে পেরেছে।

আমরা বিশ্বস্ততার সঙ্গে গ্রাহকদের সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গ্রাহকের নিকট থেকে টাকা নিচ্ছেন কিস্তি আকারে আর প্লট বুঝিয়ে দিবেন ১০/১৫ বছর পরে। নির্ধারিত সময় পরে প্লট বা টাকা ফেরত না দেন তাহলে কি হবে এমন প্রশ্নের উত্তরে আলীনুর কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে পারেনি। তিনি প্রশ্নটির জবাব কৌশলে এড়িয়ে যান। প্রশাসনকে ফাঁকি দিয়ে কিভাবে দিনের পর দিন একটি আবাসিক প্রকল্প গ্রাহকদের সাথে প্রতারণা করে যাচ্ছে তার সুষ্ঠু তদন্ত করা দরকার বলে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten + sixteen =