জনতা ব্যাংক লি: এ ঋনখেলাপি ও সুদ মওকুফের খেলা দুর্নীতিবাজ এমডি আবদুস সালাম এখনও বহাল তবিয়তে

0
1094

মো: আবদুল আলীম: অনিয়ম দুর্নীতে নিমজ্জিত ব্যাংকগুলোকে বাঁচানোর সকল চেষ্টা যেন ব্যর্থ হচ্ছে। সোনালী, রুপালী, অগ্রণী, জনতা সহ বেসরকারী ব্যাংকগুলোর অবস্থা ক্রমেই অবনতির দিকে যাচ্ছে। খেলাপী ঋনের পরিমান আতংকজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় ব্যাংকগুলোর উর্ধ্বতন বিভাগ, অর্থ মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হয়। সরকারের পক্ষ থেকে এই নিয়ে বেশ কয়েকবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কিন্তু খেলাপী ঋনের উর্দ্ধগতির লাগাম যেন কিছুতেই ধরা যাচ্ছে না। ঋনগ্রহীতার ঋন পরিশোধের স্বক্ষমতা যাচাই না করে ও রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋন দেওয়ার কারণে খেলাপীর পরিমান মাত্রা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। হলমার্ক ও বিসমিল্লা গ্রুপের মাধ্যমে টাকা পাচারের পর জনতা ব্যাংকের শোচনীয় অবস্থা এখনও কাটিয়ে ওঠতে পারছে না।

জোষ্ঠ্য ব্যাংকাররা বলছেন জনতা ব্যাংকের অদূরদর্শিতা, রাজনৈতিক বিবেচনায় অনাদায়ী ক্ষেত্রে ঋন প্রদান এবং ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সাথে যোগসাজসে ঋনের নামে এ পর্যন্ত হাজার হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে। চামড়া শিল্পে ঋন দিয়ে খুব কমই আদায় করতে পারছে রাষ্ট্রায়ত্ব জনতা ব্যাংক। অসৎ গ্রাহকরা ঋন নিয়ে তা আর ফেরত দিচ্ছে না। জনতা ব্যাংকের সিনিয়র এক্সিকিউটিভদের সাথে যোগসাজসে অনাদায়ী ও খেলাপী ঋন পুণ: তপশিল করা হচ্ছে। মোটা অংকের ঋন পুণ: তাপশীল করার ক্ষেত্রেও অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে। খেলাপী গ্রাহকরা পুণরায় ঋন চাচ্ছে এবং ব্যাংক খেলাপীদের পুণরায় ঋন দেওয়ার বিষয়টি বিবেচনায় নিচ্ছে।

এতে ব্যাংকটিকে আরও ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেওয়া হচ্ছে। জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ কর্পোরেট শাখা, ঢাকা এর গ্রাহক প্রতিষ্ঠান ক্রিসেন্ট গ্রুপের অনুকুলে নিয়ম নীতির অনুসরন না করে বিশালাকরের ঋন দেওয়া হয়। ভুয়া রপ্তানী সংক্রান্ত কাগজপত্র তৈরি করে গ্রুপটি জনতা ব্যাংক থেকে টাকা বের করেন নেয়। গ্রুপটির পাঁচটি প্রতিষ্টানের অনুকুলে ঋন প্রদান ও এলসি খোলার সময় জনতা ব্যাংক যেসব অনিয়ম করেছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে এলসি খোলার সময় সংশ্লিষ্ট বিদেশী ব্যাংক আন্তর্জাতিক মানের কি না তা যাচাই করা হয় নাই। মালামাল রপ্তানির ক্ষেত্রে রপ্তানি সংক্রান্ত চুক্তিতে কোন স্বাক্ষী ছিল না। এফডিবিপি ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিদেশী প্রতিষ্ঠানের স্বাক্ষর যাচাই করা হয় নাই।

বিল ক্রয়ের ব্যপারে আমদানিকারকের সন্মতি বাধ্যতামুলক থাকলেও জনতা ব্যাংক তা লঙ্ঘন করেছে। ক্রিসেন্ট গ্রুপের পাঁচটি প্রতিষ্ঠনের অনুকুলে বিতরনকৃত টাকা আদায়ের জন্য জনতা ব্যাংক তড়িঘড়ি করে অর্থঋন আদালতে মামলা দায়ের করে অনেকটা নিজেদের দায়িত্ব এড়িয়ে যাবার জন্য। মেসার্স ক্রিসেন্ট লেদার প্রোডাক্ট লি: এর বিরুদ্ধে মামলা নং ১৩/১৯ দায়ের করা হয়। মামলার দাবিকৃত টাকা ৮৯৪, ৯২, ১৭, ১৫৫.৯৫ টাকা। রুপালী কম্পোজিট লেদারওয়্যার লি: এর বিরুদ্ধে মামলা নং ১৪/১৯ এবং দাবিকৃত টাকা ৯২৩,৫৯,৯৯,৩১৩.০৪। ক্রিসেন্ট ট্যানারিজ লি: এর নামে মামলা নং ১৫/১৯ এবং দাবিকৃত টাকার পরিমান ১৭৩, ৫১, ৫০, ৪০৬.৯০। মেসার্স রেক্সকো লি: এর নামে মামলা নং ১৬/১৯ এবং দাবিকৃত টাকার পরিমান ৪৪৬, ২৬, ২৮, ৯১৫. ৯৮ টাকা।

মেসার্স রিমেক্স ফুটওয়্যার লি: এর মামলা নং ১৭/১৯ এবং দাবিকৃত টাকার পরিমান ১১৩৪, ০৯, ৭০, ১২৬. ৩৩ টাকা। বিশালাকারের এই টাকার অধিকাংশই বিদেশে পাচার হয় বলে প্রকাশ। জনতা ব্যাংকের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এতবড় অনিয়ম হয়েছে এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং সিইও আবদুস সালাম আজাদের নির্দেশ ছাড়া তা হয় নাই বলে একটি সূত্রে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্ণর ফজলে কবির জনতার ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুস সালাম আজাদের সমালোচনা করে বলেন যে, একটি খোলাপি প্রতিষ্টানের অনুকুলে নতুন করে ঋন দিয়ে ব্যাংককে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়ছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক এর হিউম্যান রিসোর্সেস ডিপার্টম্যান্ট-১ এর স্মারক নং এইচআরডি-১ (আরআর)/৪৪০/২০১৯-২০৫৯ তারিখ ১৫ মে, ২০১৯ হতে জানা যায় জনতা ব্যাংক ইমামগঞ্জ কর্পোরেট শাখার অনুকুলে বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃত এডি লাইসেন্স ২৪ জুন ২০১৮ তারিখে স্থগিত হয় যা এখনও বহাল আছে। উক্ত শাখার প্রায় দশজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয় ও তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বরখাস্তকৃতদের অনেকে অপরাধের সাথে জড়িত ছিল না এবং প্রকৃত অপরাধীদেরকে আড়াল করার জন্য অনেক নির্দোষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। অর্থাৎ ওপর মহল থেকে অপরাধ করে অপরাধের দ্বায় অধ:স্তনদের কাঁধে চাপানো হয়েছে।

আননটেক্স গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্টানের ১, ৯৭৩. ৬৩ কোটি টাকা ঋন পুন: তফশিল করায় বাংলাদেশ ব্যাংক জনতা ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ব্যখ্যা তলব করেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে বাংলাদেশ ব্যাংক অধ্যাদেশকে পাশ কাটিয়ে এই বিশাল টাকা পুন: তফশিল করা হয়। এ কারণে জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সি ই ওকে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে সাত কর্ম দিবসের মধ্যে ব্যখ্যা দেওয়ার জন্য পত্র জারি করা হয়। জনতা ব্যাংকের ৫৯১ তম বোর্ড সভায় আননটেক্স গ্রুপের সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ১,৭৪৩.৮৫ কোটি টাকা ঋন পুণর্গঠন করে। খেলাপি ও অর্থ পাচারের অভিযোগ থাকা সত্যেও এই ঋন পুনর্গঠন হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

এননটেক্স এর সাতটি গ্রুপ ছাড়াও আরও ১৫ টি কোম্পানিকে জনতা ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নেওয়ার সহযোগিতা করা হয়েছে বলে বাংলাদেশ ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে। ড্রাগন সোয়েটার কোম্পানিজ বাংলাদেশ লি: নামক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে জনতা ব্যাংক ২২৯.৭৬ কোটি টাকা পুণর্গঠন করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ম লঙ্ঘন করে। মেসার্স ট্রাস্ট নিটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লি: কে ১১ কোটি ৪ লাখ টাকা সুদ মৌকুফ করেন জেনারেল ম্যানেজার ফখরুল আলম। এর ফলে জনতা ব্যাংক লি: ৫ কোটি টাকার বেশি আর্থিক ক্ষতি হয়।

এ ব্যপারে ব্যাংক একটি অডিট করে। অডিট রিপোর্টে উল্লেখ করা হয় জেনারেল ম্যানেজার ফখরুল আলম মেসার্স ট্রাস্ট নিটওয়্যার ইন্ডাস্ট্রিজ লি: এর নিকট থেকে আর্থিক সুবিধা নিয়ে উক্ত সুদ মৌকুফ করেন। এছাড়া উক্ত কর্মকর্তা রাজধানীর বনানীতে এবং গুলশান শূটিং ক্লাবের পাশে বিলাশবহুল ফ্ল্যাট কিনেছেন। উল্লেখ থাকে যে, হলমার্ক গ্রুপ জনতা ব্যাংক থেকে ১২ মিলিয়ন ডলার বের করে নেয়। ভুয়া কাগজপত্র দাখিল করে এবং কোন নিয়ম না মেনে ব্যাংকের অসৎ কর্মকর্তাদের যোগসাজসে জনতা ব্যাংক কর্পোরেট শাখা থেকে এই টাকা বের করে নেয়। বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সি ই ও আবদুস সালাম আজাদ সেই সময়ে উক্ত শাখার ব্যবস্থাপক ছিলেন।

কিভাবে এতবড় অনিয়ম দুর্নীতি করে তিনি জনতা ব্যাংকের এমডি হিসেবে বহাল তবিয়তে আছেন তা প্রশ্নবিদ্ধ। এ ব্যপারে তার বক্তব্য নেওয়ার জন্য একাধিকবার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি। রেজিস্টার্ড ডাকযোগে পত্র প্রেরন করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। জনতা ব্যাংক লি: ও এমডি আবদুস সালাম আজাদের অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়ে অপরাধ বিচিত্রার তদন্ত অব্যহত আছে। আগামি সংখ্যায় বিস্তারিত থাকছে। (চলবে)

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

11 + 15 =