আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ডে চাঁদাবাজ নুরুর থাবায় বছরে ৫০ কোটি টাকা চাঁদা আদায়

0
698

স্টাফ রিপোর্টার: রাজধানীর উত্তরা-আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ডটি দীর্ঘ একযুগেরও বেশী সময় ধরে গিলে খাচ্ছে চাঁদাবাজ নুরু বাহিনী। চা বিক্রেতা থেকে শ্রমিক নেতার সাইনবোর্ডে বাস মালিকদের নিকট থেকে বছরে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা চাঁদা আদায় করে এই বাহিনী। এতো টাকা কার কার পকেটে যায় তারই ফিরিস্তি নিয়ে এবারের প্রতিবেদন। তবে স্থানীয় প্রশাসন ও সরকারদলীয় বড়নেতা থেকে পাতিনেতা পর্যন্ত অনেকের পকেটে যায় ভাগের টাকা। অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানী থেকে উত্তরার আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে যাত্রী উঠানামা করিয়ে সাভার হয়ে বিভিন্ন পরিবহনের অন্তত ৮ শতাধিক বাস উত্তরবঙ্গমুখী যাতায়ত করে। দৈনিক বা মাসিক ভিত্তিতে এসব গাড়ী প্রতি ১শ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করেন নুরুল ইসলাম নুরু। আর চাঁদা আদায় করার জন্য নুরুর রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী।

তবে এই চাঁদা আদায় করতে তেমন একটা কষ্ট পেতে হয় না নুরুকে। কারন চাঁদার ভাগ রাত হলে উত্তরা পশ্চিম থানা, উত্তরা ট্রাফিক জোন সহ উত্তরা আওয়ামীলীগের বড়সাইজের অনেক নেতার পকেটেই জমা পড়ে। সবাইকে ভাগ ভাটোয়ারা দিয়েই চা বিক্রেতা নুরু এখন কোটিপতি নুরুল ইসলাম। চলাফেরা করেন কালো গ্লাসওয়ালা প্রাইভেট গাড়ীতে। আগামী নির্বাচনে কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
সুত্র জানায়, রাজধানী থেকে আশুলিয়া ক্ল্যাসিক, শতাব্দী, বিনিময়, গোপালপুর, ধলেশ^রী, হাইচয়েজ, মহানগর, জয়ন্তী, সাগরদীঘি, মাদারগঞ্জ ও ঝটিকা পরিবহনের অন্তত ৫ শতাধিক গাড়ীকে আব্দুল্লাহপুর স্ট্যান্ডকে ব্যবহার করে সাভার হয়ে উত্তরাঞ্চলে আসা যাওয়া করতে হয়। এজন্য আব্দুল্লাহপুরে নুরুকে প্রতিদিন গাড়ী প্রতি ১শ টাকা হারে চাঁদা দিতে হয়। এসব পরিবহন থেকে প্রতিদিন ৫০ হাজার, মাসে দেড় কোটি, বছরে ১৮ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হয়।

আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ডে-সোনারবাংলা, শাহজালাল, ইসলাম, বৈশাখী,আজিজ, স্বপ্না-শান্তা, সৈকত সহ অন্তত ২০টি পরিবহনের ছাতা কাউন্টার রয়েছে। প্রতিটি ছাতা কাউন্টারের জন্য প্রতিদিন ৬শ টাকা হারে মাসে ১৮ হাজার, বছরে ২লাখ ১৬ হাজার হারে ২০টি কাউন্টার থেকে বছরে ৪৩ লাখ ২০ হাজার টাকা চাঁদা আদায় করা হয়। আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ড থেকে লোড করে এসএস পরিবহন, জিকে, এমআর, ডিকে, স্বপ্না-শান্তা সহ অন্তত ২০টি পরিবহনের ডে-নাইট গাড়ী যাত্রী নিয়ে উত্তরবঙ্গে চলে যায়। এই টার্মিনাল থেকে প্রতিদিন ৭০/৭৫টি গাড়ী ছাড়া হয়। আর প্রতি গাড়ী থেকে দৈনিক ৫শ থেকে ১৫শ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। অর্থাৎ এভারেজ ১ হাজার টাকা। দিনে অন্তত ৭০ হাজার টাকা। মাসে ২ কোটি ১০ লাখ, বছরে ২৫ কোটি ২০ লাখ টাকার উপরে চাঁদা আদায় হয়।

এছাড়া শ্যামলী, ঈগল, শাহফতে আলী পরিবহন সহ অন্তত ১৫টি ভিআইপি পরিবহনের কাউন্টার রয়েছে আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ডে। এই পরিবহন গুলো থেকে মাসিক হারে কাউন্টার প্রতি কমপক্ষে ১৫ হাজার টাকা পর্যন্ত চাদা আদায় করা হয়। মাসে ২ লাখ ২৫ হাজার, বছরে ২৭ লাখ টাকা।
সব মিলিয়ে নুরু হাতে বছরে অর্ধশত কোটি টাকার উপরেহজগ৯৯০ চাঁদা আদায় হয়ে থাকে। তবে এই টাকা নুরু একা হজম করতে পারে না। স্থানীয় থানা পুলিশ, ট্রাফিক জোনের কর্মকর্তা, উপর লেভেলের নেতা থেকে শুরু করে পাতিনেতা, চাঁদা আদায়কারী শ্রমিকদেরকে নিদিষ্ট হারে ভাগ বাটোয়ারা দিয়ে নুরু বছরে কয়েক কোটি টাকা ঘরে তুলতে পারেন। আর এভাবেই নুরু বিগত কয়েক বছরে হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। এখন আর চা বিক্রি করতে হয় না।

মহাখালী থেকে ছেড়ে আসা আশুলিয়া ক্ল্যাসিক পরিবহনের ড্রাইভার ওবায়েদুল কাদের বলেন, আশুলিয়া ক্ল্যাসিক পরিবহনের প্রায় শতাধিক গাড়ী রয়েছে। প্রতিটি গাড়ী হতে আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ডে নুরু বাহিনীকে ১শ টাকা করে প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে হামলার শিকার হওয়ার পাশাপাশি এই রুটে গাড়ী চালানো বন্ধ রাখতে হবে। তাছাড়া চাঁদা দেয়ার ব্যাপারে পরিবহনের চেয়ারম্যানের নির্দেশ রয়েছে। কারন এখানে নুরু বাহিনীর হাতে চাঁদা দিলে সার্জেন্ট, থানা পুলিশ ও দলীয় লোকজন কেউ আর বিরক্ত করে না।
দিনাজপুরগামী ডিকে পরিবহনের ড্রাইভার বলেন, আমাদের ডে-নাইট গাড়ী। আব্দুল্লাহপুর থেকে প্রতি দুইদিনে একটি ট্রিপ পাই। এজন্য আব্দুল্লাহপুর ষ্ট্যান্ডে প্রতি ট্রিপে ১৫শ টাকা চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে ট্রিপ হবে না। কারন এই ষ্ট্যান্ডটি নুরু বাহিনী নিয়ন্ত্রন করে। চাঁদা না দিয়ে কোন কোম্পানীর গাড়ীই এই ষ্ট্যান্ডটি ব্যবহার করতে পারেনা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে নুরু বাহিনী এক নেতা বলেন, বাংলাদেশের এমন কোন জায়গা আছে যেখানে চাঁদা ছাড়া গাড়ী চলে, প্রতিটি ষ্ট্যান্ডেই চাঁদাবাজী হচ্ছে। রাস্তা নিয়ন্ত্রনকারী ট্র্যাফিক পুলিশ, স্থানীয় থানা পুলিশ ও সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জোটবদ্ধ সিন্ডিকেট করেই এই পরিবহন খাতে চাঁদা আদায় করে। ট্র্যাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের খুশি রাখতে না পারলে রাস্তায় গাড়ী চালনো যাবে না। চাঁদা আদায়ের স্থান যেই থানা অধীনে থাকবে ঐ থানার ওসি সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করতে হয়, তা না হলে প্রতিদিনই গ্রেপ্তারের যন্ত্রনা ভোগ করতে হবে। আবার বড় লেভেলের নেতা থেকে শুরু করে পাতিনেতা পর্যন্ত ভাগ বাটোয়ারা দিয়ে ম্যানেজ করতে হয়। কেউ ভাগের টাকা না পেলে সর্বোচ্চ দপ্তরে নালিশ করে চাঁদা আদায়ে বাঁধার সৃষ্টি করবে । এব্যাপারে নুরুল ইসলাম নুরু বলেন, আব্দুল্লাহপুর বাসষ্ট্যান্ডে আমি কোন ধরনের চাঁদা উঠাই না, এটা সম্পূর্ন মিথ্যা বানোয়াট ও ভিত্তিহীন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 + 15 =