শত বাঁধা পেরিয়ে কমস্থলে ফিরতে শুরু করেছে সবাই

0
411

মুজিবুর রহমান : ঢাকা থেকে রংপুরে ঈদ করতে আসা কর্মজীবী মানুষেরা ফিরতি যাত্রা শুরু করেছে । পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে নানা শ্রেণিপেশার মানুষ এখন গ্রাম ছেড়ে ঢাকায় ও নানান জেলায় ফিরছে। কয়েক দিন আগে বিধিনিষেধ অমান্য করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নাড়ির টানে বাড়ি গিয়েছিল।তারা এখন ভোগান্তি নিয়ে ফিরছে কমস্থলে।রোববার (১৬ মে) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত রংপুর নগরের মডার্ন মোড়ে ঢাকাগামী মানুষের ভিড় দেখা যায়। রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের ওপর দূরপাল্লার বাসের জন্য শত শত মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে দেখা গেছে। বাস বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা।অনেকে বাসের অপেক্ষায় না থেকে ট্রাক, মাইক্রোবাস, কার, পিকআপ ও লেগুনাতে করে ঢাকার সহ অন্যনো জেলার পথ ধরেছেন। এসব মানুষের মধ্যে দিনমজুর, চাকরিজীবীসহ বিভিন্ন পেশার কর্মজীবী রয়েছেন। তবে স্থানীয় বাসশ্রমিকরা বিভিন্ন স্হানে মাইক্রোবাস ও পিকআপভ্যান চালকদের যাত্রী পরিবহনে বাধা দিচ্ছেন।বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, শতশত মানুষ মডার্ন মোড়ে ঢাকাগামী বাসের জন্য জমায়েত হয়েছে। ঈদের আগে রাজধানী থেকে অনেকগুলো লোকাল বাস রংপুর অঞ্চলে যাত্রী পরিবহন করেছে।

এসব বাস এখন রংপুর থেকে ঢাকার দিকে ছুটছে। নিম্নআয়ের মানুষ বাসের দ্বিগুণ ভাড়া সামলাতে না পেরে ট্রাক ও মাইক্রোবাসসহ অন্যান্য পরিবহনে ঢাকায় যাচ্ছে। বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষ মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত গাড়িতে গন্তব্যে ফিরছে।রংপুর, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারীসহ আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ছেড়ে আসা প্রতিটি বাসে ছিল যাত্রীদের ভিড়।

তবে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মডার্ন মোড় এলাকায় পুলিশ চেকপোস্টে অনেক বাস থামাতে দেখা গেছে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে রাজধানীগামী মানুষের ভিড় বেড়ে যায়।মডার্ন মোড়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন মাহাতাব আলী (৩৫)। তিনি ঢাকার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চুক্তিভিত্তিক চাকরি করেন।

ঈদের আগের দিন রাতে রংপুর সদরের মমিন পুর গ্রামের বাড়ি আসেন। ঈদ শেষ করে আজ আবার ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন। তিনি বলেন, ঢাকা থেকে অনেক লোকাল বাস রংপুরে এসেছে। কিন্তু দূরপাল্লার বাসগুলো বন্ধ থাকায় আমি ভাড়ায় চালিত মাইক্রোবাসে করে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম।

ঈদের ছুটি শেষ ঢাকায় ফিরে যাচ্ছি। ভালো গাড়ি না পেলে যেভাবেই হোক মাইক্রোবাসে রওনা হব। ফিরতে ভোগান্তি হবে জেনেই তো ঈদ করতে বাসায় এসেছি। দেখা যাক; কতক্ষণ লাগে ঢাকায় যেতে।দিনমজুর ররিফুল ইসলাম (৪০) ও নির্মাণশ্রমিক মফিজুল ইসলাম (৪২)। সম্পর্কে তারা মামাতো ভাই।

একসঙ্গে ঢাকা থেকে ট্রাকে করে পরে পিকাপে গ্রামের বাড়ি এসেছিলেন। ঈদের আগের দিন যাত্রাপথে অনেক কষ্ট আর ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তবে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে পেরে সব কষ্ট ভুলে গেছেন। এখন ঈদ শেষে ঢাকায় ফেরার পথে ভোগান্তি আরও বাড়ছে। জেনে বুঝেই তারা ঢাকায় ফেরার জন্য বাস টামিনালে গাড়ির অপেক্ষা করছেন।

এই দুই ভাই জানান, কষ্ট করে হলেও আয় রোজগারের জন্য ঢাকায় যেতে হবে। রংপুরে কাজের মজুরি খুবই কম, সংসার চালানো কষ্টকর হয়। এজন্য ঢাকায় থাকেন। শ্রম বিক্রি করে প্রতি মাসে ২৮-৩১হাজারেরও বেশি টাকা উপার্জন করেন। এখন ঢাকায় ফিরতে না পারলে পরে কাজ পেতে সমস্যা হবে।

এজন্য ট্রাকে করে ঢাকায় যাওয়ার জন্য পরিকল্পনা করেই বাড়ি থেকে বের হয়েছেন তারা।রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের মেডিকেল মোড় এলাকায় কথা হয় মাইক্রোবাসচালক জহুরুল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, সড়কে ঝামেলা নেই। আবার ঝামেলাও আছেও। বাসশ্রমিকরা একটু সমস্যা করছেন। পুলিশও মাঝেমধ্যে হয়রানি করে। এখন কর্মজীবী মানুষের ঢাকায় তো যেতেই হবে।

এজন্য বাধ্য হয়ে বেশি ভাড়া দিয়ে হলেও মাইক্রোবাসে যাচ্ছেন তারা। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় অভ্যন্তরীণ গণপরিবহন, প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস ও ট্রাক, পিকআপভ্যান ও মোটরসাইকেলে ভেঙে ভেঙে অনেকেই অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ঢাকার পথে রওনা হয়েছেন বলে জানান রংপুর মেট্রোপলিটন পুুলিশের তাজহাট থানার এক উপপরিদর্শক (এসআই)।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কর্মকর্তা বলেন, এখন বেশির ভাগ যাত্রী ভিড় করছে ঢাকাাগামী গাড়ির জন্য। স্বাস্থ্যবিধি মানেছেনা অনেকেই। ঈদে লাখ লাখ মানুষ গ্রামে এসেছে। এখন ঈদ শেষে তারাই ফিরতে শুরু করেছেন।প্রসঙ্গত, করোনার সংক্রমণ রোধে চলমান বিধিনিষেধ ১৬ মে মধ্যরাত থেকে ২৩ মে মধ্যরাত পর্যন্ত বেড়েছে।

রোববার (১৬ মে) এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। ঈদের পর দূরপাল্লার বাস ছাড়ার অনুমোদন দেয়নি সরকার। ফলে আগের মতোই বন্ধ থাকছে দূরপাল্লার বাস। তবে আগের মতোই জেলার মধ্যে গণপরিবহন চলাচল করবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

19 − 5 =