একাধিক দুর্নীতির অভিযোগের প্রমাণ থাকা সত্বেও ইউএনও আক্তার হোসেন বহাল তবিয়তে

0
925

মোল্লা নাসির উদ্দিন: গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসার পরেই সকল ধরনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেন। কিন্তু কোনো ভাবেই কমছে না স্থানীয় প্রশাসনের দুর্নীতি। তাছাড়া এই সীমাহীন দুর্নীতিতে সাহায্য ও সহযোগিতা করছে সরকারের কিছু এমপি, মন্ত্রী ও স্থানীয় নেতাকর্মী। তেমনই নজিরবিহীন দুর্নীতির প্রমান পাওয়া যায় নরসিংদীর বেলাব উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন শাহিন এর বিরুদ্ধে। স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, তার সকল দুর্নীতিতে সহযোগীতা করছে বর্তমান সরকারের শিল্পমন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এমপি ও স্থানীয় আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ। তাই জনপ্রশাসন, ভূমি মন্ত্রনালয়, দুদক, জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিক অভিযোগ করার পরেও অভিযোগকারীরা পাচ্ছেনা কোনো সুরাহা। বরং উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন শাহিন স্ব-পদে থেকে বিস্তার করছে এই  দুর্নীতির জাল। জানা যায়, বর্তমান নরসিংদী জেলা প্রশাসক আবু নাঈম মোহাম্মদ মারুফ খান যখন গোপালগঞ্জের মাকসুদপুরে ইউএনও হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তখন বর্তমান বেলাব ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিন এসিল্যান্ড ছিলেন। তারা প্রায় ৩ বছর মকসুদপুরে দায়িত্বপালন করেন।

তখন থেকে আক্তার হোসেন শাহিনের সাথে জেলা প্রশাসকের একটি সু-স¤পর্ক গড়ে উঠে। তাই একাধিক অভিযোগের পরেও জেলা প্রশাসক এই ইউএনওর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহন কেেরছন না। এমনকি বদলীও করছেন না। তাছাড়া ভূমি সক্রান্ত বিষয়ে সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী জেলা প্রশাসক হওয়ায় ইউএনওর এই দুর্নীতি আরো সহজতর হয়েছে। তবে ইউএনওর এই অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জেলা প্রশাসক সরাসরি জড়িত কি না সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি।

প্রথমত উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের দুলালকান্দি বাজারের চান্দিনা ভিটি বন্দোবস্তায় ২ কোটি টাকার বাণিজ্যের অভিযোগ করেন বাজারের সুবিধা বঞ্চিত ও বন্দোবস্তা বঞ্চিত ৯ ব্যবসায়ী।

বাজারের ব্যবসায়ী ফিরোজ মিয়া ও মিস্টার মিয়া ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিনের বিরুদ্ধে ভূমি মন্ত্রনালয়, স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়, দুদক, জেলা প্রশাসক বরাবর একাধিক অভিযোগ করেন। তবে ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিন দাবী করেন সেই বন্দোবস্তার সময় তিনি বেলাব উপজেলায় ছিলেন না।

কিন্তু সরেজমিনে তদন্ত করে দেখা যায় ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিন তার উপজেলা কার্যালয়ের নিজ কক্ষে স্বাক্ষর দিয়ে অভিযোগকারী মিস্টার মিয়ার কাছ থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকার মধ্যে নগদ ৪৫ হাজার টাকা ঘুষ নেন।

এসময় নারায়নপুর ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক নাছির উপস্থিত ছিলেন। বাকী টাকা না দেওয়ায় মিস্টার মিয়াকে বাজারের একটি ভিটির অর্ধেক বরাদ্দ দেন। এতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমান পাওয়া যায়।

আর এই ২ কোটি টাকা বাণিজ্যের সাথে আওয়ামীলীগের উপজেলা পর্যায়ের নেতাকর্মী ও শিল্পমন্ত্রীর ছেলে মঞ্জুরুল মজিদ মাহমুদ সাদীর সরাসরি সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে প্রমান পাওয়া যায়। গত ১০-০৮-২০২২ইং তারিখে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) এর কার্যলয়ে তদন্তের জন্য এর সাথে সম্পৃক্ত সবার বক্তব্য নেওয়া হয়। সেখানে বক্তব্য দানকারীরা ইউএনওর বিরুদ্ধে ওএসডি সাপেক্ষে বিচারের দাবী করেন।  তবে এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেই তদন্তের কোন রিপোর্ট জনপ্রশাসনে জমা হয়নি বলে জেলা প্রশাসক সুত্রে জানা যায়।

একই রকম ভাবে উপজেলার বেলাব বাজারে চান্দিনা ভিটি বরাদ্দের নামে প্রায় ৫০ লাখ টাকার ঘুষ বাণিজ্য করেন ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিন, এসিল্যান্ড শাহিনুর আক্তার ও সার্ভেয়ার আরিফুল ইসলাম। সম্পূর্ণ ভূমি আইন পরিপন্থি এ ভিটি বরাদ্দে মানা হয়নি ১৯৯৫ সালের ভূমি আইন।

টাকার বিনিময়ে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীদের। বেলাব বাজারে ১৯ টি ভিটির মধ্যে প্রতিটি ভিটির জন্য ২.৫ লাখ টাকা নেওয়ার প্রমান পাওয়া গেছে। বরাদ্দপ্রাপ্ত সোহেল নামে এক ব্যবসায়ী সত্যতা স্বীকার করে বলেন, তারা প্রতি ভিটির জন্য সর্বনিন্ম ২.৫ লাখ টাকা করে দিয়েছে।

টাকা উত্তোলন করেছে সার্ভেয়ার আরিফুল ইসলাম। টাকার জন্য চাপ প্রয়োগ করেছে ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিন ও এসিল্যান্ড শাহিনুর আক্তার।

তবে টাকা নেওয়ার পরও ইউএনও সবার কাছ থেকে কোনো রকম লেনদেন করেন নাই মর্মে স্ট্যাম্পে লিখিত নেন। তাই বরাদ্দ পাওয়ার পরই বরাদ্দপ্রাপ্তরা ইট, বালি. রড ও সিমেন্ট দিয়ে নির্মাণ করেছে স্থায়ী স্থাপনা। যা ১৯৯৫ সালের হাট বাজার চান্দিানা ভিটি বন্দোবস্ত আইন বহির্ভূত।

নেওয়া হয়নি জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে কোনো অনুমতি। ১৯ টি ভিটির মধ্যে টাকার বিনিময়ে ১৮ভিটি বরাদ্দ দেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন উপজেলা আওয়ামীলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি, মহিলা আওয়ামীলীগের সভাপতি, বেলাব সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো: গোলাপ মিয়াসহ আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ও ছাত্রলীগ।

এই অবৈধ বরাদ্দ দেবার পরই বোরহান মিয়া নামে বাজারের এক বঞ্চিত ব্যবসায়ী জনপ্রশাসন, ভূমি মন্ত্রনালয় ও দুদকে অভিযোগ করার পর ইউএনও শিল্পমন্ত্রীর মাধ্যমে এই অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য বোরহানকে চাপ প্রয়োগ করেন। বাধ্য হয়ে বোরহান তার অভিযোগ প্রত্যাহার করেন। কিন্তু সেই নিয়ম বহির্ভূত স্থাপনা এখনো স্থির দাড়িয়ে আছে। তবে এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে সংবাদ প্রকাশের পরপরই এসিল্যান্ড শাহিনুর আক্তার বদলী হয়ে যায়।

এছাড়াও বেলাব বাজার কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো: গোলাপ মিয়ার মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আক্তার হোসেন শাহিন আশ্রায়ন প্রকল্পের জন্য নদী থেকে উত্তোলিত বালি বিক্রি করার প্রমান পাওয়া যায়। বাজারের একাধিক সুত্র থেকে এর সত্যতা পাওয়া যায়। মাহিন্দ্র টাক্টর (ইছার মাথা) র মালিক সোহেল বলেন তার গাড়িসহ আরো কয়েকটি গাড়ি ব্যবহার করে প্রায় ১ হাজার গাড়ি বালি বিক্রি করেন।

যার প্রতি গাড়ি ১ হাজার টাকা করে বিক্রি করেন গোলাপ মিয়া ও ইউএনও। এ প্রসঙ্গে বেলাব পাইলট মডার্ণ সরকারী স্কুলের প্রধানশিক্ষকের কক্ষে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো: গোলাপ মিয়া, ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমানের উপস্থিতিতে ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিন বলেন, তিনি বালি উত্তোলনের খরচ মেটানোর জন্য আশ্রায়ণ প্রকল্পের জন্য উত্তোলিত বালি বিক্রি করেছেন।

তাছাড়া উপজেলার সল্লাবাদ ইউনিয়নে নতুন আশ্রায়ন প্রকল্পের জমি অধিগ্রহনের জন্য জমির মালিকদের জমির মূল্যবাবদ ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা করে দেওয়ার কথা থাকলেও জমির মালিকদের দেওয়া হয়েছে মাত্র ৯০ হাজার টাকা করে। বাকী ৭০ হাজার টাকা ইউএনও আত্মসাৎ করেছেন বলে দাবী জমি মালিকদের। জমির মালিকরা বলেন এ বিষয়ে সল্লাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মো: জাকির হোসেন স্বপন অবগত আছেন।

এছাড়াও গত ০৫-০৭-২০২১ইং তারিখে ইউএনও আক্তার হোসেন শাহিন নিজে দাড়িয়ে থেকে বনবিভাগের অনুমতি ছাড়াই উপজেলা চত্বর থেকে ১১টি গাছ কর্তন করে বিক্রি করার সত্যতা পাওয়া যায়। আনিস মিয়া নামে এক ব্যক্তি বনবিভাগে অভিযোগ করার পরও নেওয়া হয়নি কোনো পদক্ষেপ।

ভূক্তভোগীসহ সুশীল সমাজের ধারণা শিল্পমন্ত্রী ও জেলা প্রশাসকরে সাথে অধিক সু-সম্পর্কের কারনে ইউএনওর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জনপ্রশাসন, দুদক, ভূমি মন্ত্রনালয়, বনবিভাগসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে একাধিক অভিযোগ করার পরও পাওয়া যায়নি কোনো সমাধান। এতে প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে সরকার, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো-টলারেন্স ঘোষণা।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

17 − seven =