পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা

0
419

অপরাধ বিচিত্রা: ১০ এপ্রিল ২০২৩ তারিখ দুপুর ১২.৩০ টায় অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে (১, কারওয়ান বাজার, টিসিবি ভবন-৮ম তলা) পরিবহন মালিকবৃন্দ ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। 

বর্ণিত সভায় সভাপতিত্ব করেন মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) এ.এইচ.এম. সফিকুজ্জামান। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ারসহ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক ও সহকারী পরিচালকগণ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ)-এর প্রতিনিধি, ডিজিএফআইয়ের প্রতিনিধি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির বাংলাদেশ ট্রাক চালক শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক, ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ এর প্রতিনিধি, ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধি, সোহাগ পরিবহন, ন্যাশনাল ট্রাভেলস, গ্রামীণ ট্রাভেলসহ বিভিন্ন পরিবহন প্রতিনিধি এবং প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ।

অধিদপ্তরের পরিচালক জনাব মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার স্বাগত বক্তব্যে পরিবহন সেক্টরে বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন এবং এক্ষেত্রে সকল আইন মেনে ব্যবসা পরিচালনার কথা বলেন। তিনি আলোচনায় ঈদের সময় পরিবহন সংশ্লিষ্ট কর্মচারী যাদের ঈদ কাটে রাস্তায় তাঁদের সুযোগ সুবিধার প্রতি খেয়াল রাখার অনুরোধ করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা পরস্পর পরিপূরক হয়ে কাজ করলে এ বারের ঈদের যাত্রা স্বস্তি দায়ক হবে বলে আশাকরি।

সভায় নির্ধারিত মূল্য অপেক্ষা বেশি মূল্যে টিকেট বিক্রয়, বেশি লাভের আশায় টিকেট সংরক্ষণ (কালবাজারি হাতে টিকেট ছেড়ে দেওয়া) করে রাখা, গাড়ির ভাড়ার মূল্য তালিকা প্রদর্শন/সংরক্ষণ না করা, নিদিষ্ট গন্তব্য পৌঁছার পূর্বে গাড়ি থেকে মাঝপথে যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া, এসি গাড়ির ভাড়া নেওয়ার শর্তে সার্বক্ষণিক এসি সরবরাহ না করা, যাত্রীদের সাথে অসৌজন্যতা/ অসহযোগিতামূলক আচরণ করা, যাত্রীদের মালামাল নিয়ে টানাহিচড়া করা এবং পরবর্তীতে হারিয়ে ফেলা, নির্দিষ্ট কাউন্টার ছাড়া যাত্রী উঠানামা করা, যাত্রার পথে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময়ে যাত্রা বিরতি করা, নির্ধারিত আসন ব্যতীত অতিরিক্ত যাত্রী বহন (লোকাল বাস) করা, নির্ধারিত সময়ে গাড়ি না ছাড়া, গাড়িতে উঠার সময় সিটিং সার্ভিস বলে তুলা হয় কিন্তু পরে সিটিং সার্ভিস ব্যতীত দাঁড়িয়ে গাড়িতে যাত্রী উঠানামা করা হয়, লাইসেন্স বিহীন/অবৈধভাবে অদক্ষ ও অননুমোদিত চালক দ্বারা গাড়ি চালানো যা সাধারণ যাত্রী পরিবহনকারী কোন যানবাহন যথা- মিনিবাস, বাস, লঞ্চ, স্টিমার ও ট্রেন অবৈধভাবে অদক্ষ ও অননুমোদিত চালক দ্বারা চালনা করিয়া যাত্রীদের জীবন ঝুঁকিপূর্ণ করা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

সভায় বিআরটিএ এর প্রতিনিধি জানান, ঈদের ৩ দিন আগে থেকে ঈদের ৩দিন পর পর্যন্ত দেশের ৩টি টার্মিনালে সার্ভিলেন্স টিম থাকবে পরিবহন সংক্রান্ত সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান প্রদান করার জন্য।

সভায় সোহাগ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ অন্যান্য পরিবহন মালিক সমিতি ও শ্রমিক সমিতির প্রতিনিধিগণ বলেন পরিবহন সেক্টরের সমস্যাগুলো আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান করা সম্ভব। এতে পরিবহন সেক্টরের মাঠ পর্যায়ের প্রকৃত চিত্র উঠে আসে। ঈদে গাড়ী ভাড়া বেশি নেওয়ার কারণ হিসেবে যাওয়ার সময় গাড়ী যাত্রীপূর্ণ থাকলেও আশার সময় যাত্রীশূন্য থাকাকে দায়ি করেন। এছাড়াও তাঁরা যাত্রী ভোগান্তির অন্যতম কারণ হিসেবে ঈদে গাজীপুরের প্রায় ২৫ লক্ষ গার্মেন্টস শ্রমিকদের একসাথে ছুটি দেয়াকে দায়ী করেন। কেননা এতে পরিবহন সেক্টর নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না।

সভায় বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব শুরুতেই এই ধরনের সভা আয়োজনের জন্য ভোক্তা-অধিদপ্তরকে ধন্যবাদ জানান এবং এ ধরনের সভা নিয়মিত আয়োজন করার জন্য মহাপরিচালক মহোদয়কে অনুরোধ করেন। এছাড়াও নিয়মিত অভিযানসহ অধিদপ্তরের সামগ্রিক কার্যক্রম বেগবান করার জন্য অধিদপ্তরের জনবল বৃদ্ধির ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেন। তিনি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির পক্ষ থেকে ঈদে বাস ভাড়া বৃদ্ধি না করার নিদের্শ প্রদান করেন। এর ব্যতয় হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি সমিতির পক্ষ থেকেও তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে মর্মে সকলকে অবহিত করেন। তিনি আরো বলেন যারা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করবে তাঁদের বিরুদ্ধে অধিদপ্তরের অভিযান যেন চলমান থাকে এবং আমরা সেক্ষেত্রে অধিদপ্তরকে সহযোগিতা করবো।

সভায় মহাপরিচালক বলেন বিভিন্ন সেক্টরে অধিদপ্তরের অভিযান নিয়মিত পরিচালনা করা হয়। কিন্তু ঈদে বিশেষ কিছু সেক্টর যথা কসমেটিকস ও পোষাকের ক্রয়-বিক্রয় এবং পরিবহনে যাত্রীদের যাতায়াত বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সকল সেক্টর যেন নিয়ন্ত্রণের বাহিরে না যায় সে লক্ষ্যে এই ধরনের সভা আয়োজন এবং অভিযান পরিচালনা করা হয়। তিনি আরো বলেন পরিবহন মালিক কতৃপক্ষকে যেন হয়রানি না করা হয় সে লক্ষ্যে এই সেক্টরের কোন অভিযোগ পাওয়া গেলে তা প্রথমে সমাধানের জন্য সংশ্লিষ্ট পরিবহন প্রতিষ্ঠানকে জানানো হবে এবং সে ক্ষেত্রে প্রতিকার পাওয়া না গেলে অধিদপ্তর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

তিনি সভায় প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দকে সহযোগিতার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ জানান এবং তা অব্যাহত রাখার অনুরোধ জানান।

আলোচনা শেষে মহাপরিচালক সরকারী সকল সংশ্লিষ্ট দপ্তর, পরিবহন মালিক সমিতি ও পরিবহন শ্রমিক সমিতিসহ সংশ্লিষ্ট সকলে সমন্বিত ভাবে কাজ করলে ঈদে ঘরমূখো যাত্রীদের যাতায়াত নির্বিঘ্ন হবে এবং তাঁদের যাতাযাত সহজ হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন এবং উপস্থিত সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে সভার সমাপ্তি ঘোষণা করেন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

18 + 9 =