দস্যুদের নির্মূল করে টাংকির ঘাটে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প দাবী এলাকাবাসীর

0
512


ইয়াকুব নবী ইমন, টাংকির ঘাট থেকে ফিরে: নোয়াখালীর হাতিয়া উপজেলার হরনী ইউনিয়নের বয়ারচর টাংকির ঘাট এলাকাটি দীর্ঘ দিন জলদস্যুদের আধিপত্য ছিল। বর্তমানে কিছুটা কমলেও রামগতির তেলি রব বাহিনীর কিছু সদস্য এখনো সক্রিয় রয়েছে। দস্যুদের নির্মূল করে সেখানে স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপনের দাবী জানিয়েছে এলাকাবাসী।  সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, দীর্ঘ ৩০ বছর এ এলাকায় কোন নির্বাচন না হওয়ায় এবং দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করায় হাজার হাজর মানুষ ছিল অবেহলা আর বঞ্চনার শিকার। যার ফলশ্রুতিতে এবারের নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেও ঐ দুর্নীতিবাজ ব্যক্তি বিপুল ভোটের ব্যবধানে হেরে যান। এদিকে এলাকাটি নোয়াখালী – লক্ষীপুর জেলার সীমানা সংলগ্ন  হওয়ায় এবং হাতিয়া, সুবর্নচর ও রামগতি  উপজেলার সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সন্ত্রাসীদের নৈরাজ্যিক কর্মকান্ড ছিল বিরাজমান। যার অনেক খবর স্থানীয় প্রশাসন কিংবা সাংবাদিকদের নজরে আসেনি কখনো । অথচ দিনের পর দিন  জলদস্যু বাহিনীর দখলে ছিল পুরো এলাকা। নদীতে জেলেদের বন্ধি করে মুক্তি পন আদায়, শালিস বিচারের নামে প্রহসন। জোর পুর্বক অন্যের জমি দখল করা।  আর এসব অপকর্মের প্রধান নেতৃত্ব দিলেন রামগতির উপজেলার আবদুর রব বেপারী ওরপে তেলি রব। যার বিরুদ্ধে অস্র, ডাকাতির মামলা সহ অসংখ্য মামলা আছে। গত বছর র‌্যাব বিপুল পরিমান দেশিয় রামদা, শটগান, বন্দুক সহ তার ঘর থেকে তাকে ও তার ছেলেকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। কিন্তু জামিনে বেরিয়ে এসে তিনি তার অপরাধ কার্দেযক্রম দেরদারছে চালিযে যান। তিনি নিজেকে মাছ ঘাটের সভাপতি দাবী করে দীর্ঘ দিন  যাবৎ জোর পুর্বক টাংকির ঘাট দখল করে এলাকায়  রাম রাজত্ব কাযেম করেছিলেন । তার পিছনে শক্তির যোগান ছিল লক্ষীপুরের রামগতি উপজেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতা ও রামগতি থানার পুলিশ। রাজনৈতিক নেতা ও পুলিশ প্রশাসনের সেল্টারে তেলি রব জেলেদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা আদায় করে ঐ নেতা আর প্রশাসনকে খুশি করতেন। ্যবসায়ী ফরিদ উদ্দিনসহ একাধিক ব্যক্তি জানান, এ তেলি রব ছিলেন একজন শুটকি মাছ ব্যবসায়ী। টাংকির ঘাটে টার্মিনাল সহ  দেড় কিলোমিটারের রাস্তার ৫০ লাখ ইট সে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তুলে নিয়ে যায়। একসময় তার কিছুই ছিল না। একটা লুঙ্গি আর ১ টা শাট নিয়ে সে এ চরে আসে বর্তমানে সে শতশত কোটি টাকার মালিক। বিগত ২০১০  সালে সে এ এলাকায় আসে এবং ঘাট জোর পুর্বক জলদস্যু বাহিনী ও রামগতির সন্ত্রাসী নিয়ে এসে দখলে নেয়। তারপর একে একে শুরু হয় তার বেপরোয়া কর্মকান্ড। ঘাটে সরকারী জায়গা দখল করে ১ কোটি ৬২ লাখ টাকা খরচ করে ৬২ টি দোকান ঘর নির্প্রামান করে। হঠাৎ কোন কারন বা ঘটনা ছাড়ায় তার রাজত্বের পরিসমাপ্তি ঘটে।
গত কয়েকমাস পুর্বে ১ নং চর হরনী ইউনিয়নের নির্বাচন সম্পন্ন করেন নির্বাচন কমিশনার। তখনি নোয়াখালী জেলা পুলিশের নজরে আসে বিষয়টি। নির্বাচন কালীন নোয়াখালী পুলিশ সুপার মোঃ শহিদুল ইসলাম পিপিএম আইনশৃংখলা বজায় রাখতে স্থানীয় বাসিন্দাদের নিয়ে গনসমাবেশ করেন। তার কঠোর প্রশাসনিক দক্ষতায় নির্বাচন অবাধ ও সহিংসতা মুক্ত নিরবচ্ছিন্ন ভাবে সম্পন্ন হয়।  ঐ নির্আবাচনে ৪ জন প্রার্থী প্রতিদন্ধীতা করেন আওয়ামী  লীগ থেকে নৌকার প্রতিক নিয়ে  চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন আখতার হোসেন। চলে আসে জনগনের প্রতিনিধি। অন্যদিকে পুলিশ সুপার শহিদুল ইসলাম সন্ত্রাস দমনে কড়াকড়ি আরোপ করেন। আর এর পর পরই রব বাহিনী পরিস্থিতি  বুজতে পেরে রাতের অন্ধকারে দলবলসহ নদী পথ দিয়ে চলে যায়। টাংকির বাজার ও মাছ ঘাট এলাকায় নেমে আসে শান্তি। সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে জনগনের মাঝে স্বস্তি বিরাজ করতে দেখা যায়। তবে  সাধারন জেলে ও ব্যবসায়ীদের মাঝে আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যবসায়ী ও জেলে জানান,  আমরা শুনতেছি তেলি রব আবার ঘাট দখল করবে সে তার শক্তি তৈরি করছে। তার সন্ত্রাসী জলদস্যু বাহিনী আছে। আমাদের এ এলাকাটি সীমানা এলাকা হওয়ায় এখানে রামগতির পুলিশ আইনশৃংখলা  অনেকটা নিয়ন্ত্রণ করে। এবং রামগতি পুলিশের সাথে তেলী রবে উঠাবসা অন্যদিকে প্রভাবশালী রামগতির আওয়ামী লীগ নেতা তার পৃষ্ঠ পোষাক। তাই অনেকের মাঝেই আতংক রয়ে গেছে। আমরা আর নির্যাতিত হতে চাই না। আমরা শান্তিতে থাকতে চাই। ভবিষ্যতে রব বাহিনী যাতে এই এলাকায় না আসতে পারে, আমরা ডাকাতমুক্ত থাকতে চাই। স্থানীয় বাসিন্দা, মাছ ব্যবসায়ী এবং সাধারন জেলরা টাংকির ঘাটে নোয়াখালী পুলিশ কর্তৃক স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প স্থাপন এবং নিয়ন্ত্রণের জোর দাবী জানায়। হরনী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আখতার হোসেন জানান, নোয়াখালী জেলা পুলিশের নিয়ন্ত্রনে আসায় এলাকায় শাস্তিপূর্ন পরিবেশ বিরাজ করছে। আমরা চাই ভবিষ্যতে যাতে কোন বাহিনী এখানে গড়ে উঠতে না পারে। এ জন্য স্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প প্রয়োজন। একই কথা জানান অন্যান্য প্রতিনিধিরাও। এ বিষয়ে নোয়াখালী পুলিশ সুপার আলহাজ্ব শহিদুল ইসলাম পিপিএম  জানান, এ এলাকাটি ১ নং হরনী ইউনিয়নে যা হাতিয়া উপজেলা তথা নোয়াখালীর এলাকা। এখানে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন। যেহেতু এটা সম্পুর্ন নোয়াখালীর এলাকা। এখানে অন্যকোন জেলা বা অন্য কোন এডমিনিস্ট্রেশন এর কোন ভুমিকা নেই। এখানে আলাদা ফোর্স যেহেতু আছে তারা থাকবে তারা হাতিয়া থানা পুলিশের নিযন্ত্রণে কাজ করবে। তারা একট্রা ফোস হিসেবে হাতিয়া থানার পুলিশের সাথে সমন্বয় করে  কাজ করবে। এখানকার আইনশৃঙ্খলার সকল দায়িত্ব নোয়াখালী জেলা পুলিশ তথা হাতিয়া থানা পুলিশের।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

1 + 8 =