গায়ের উপর দিয়ে অটোরিকশাটি যাওয়ায় বন্ধুর সঙ্গে তর্ক, সমাধান করতে এসে খুন 

0
287

আটক- ৭।। নিজস্ব প্রতিবেদক : পাঁচজন বন্ধু মিলে নগরের খুলশীর আমবাগান এলাকায় অটোরিকশাযোগে যাচ্ছিল। এসময় গায়ের উপর দিয়ে অটোরিকশাটি যাওয়ায় তাদের থামায় রাস্তার পাশ দিয়ে হাঁটা এক যুবক। পরে ওই যুবকের সঙ্গে অটোরিকশায় থাকা যাত্রীদের সঙ্গে কথাকাটাকাটি হয়।

তাকে মারধরও করে তারা। পরে তাদের কাছ থেকে পালিয়ে বন্ধুদের কল দেয় ওই যুবক। বন্ধুরা সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছায়। তখন তাদের মধ্যে কথাকাটাটির একপর্যায়ে ছুরিকাঘাতে দুজন গুরুতর আহত হন। এদের মধ্যে কলেজছাত্র সুজন মারা যান। শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া এ ঘটনার বর্ণনা করেছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) পংকজ দত্ত। ঘটনার পরপর ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ঘটনার সঙ্গে জড়িত সাতজনকে গ্রেপ্তারের কথাও জানিয়েছেন তিনি।

 শনিবার খুলশী থানায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা জানান গ্রেপ্তার সাতজনের মধ্যে চারজন হলেন— মো. হাবীব হোসেন মুন্না (১৯), মো. রাকিব হাসান (১৯), মো. সজিব (২৫) এবং মো. হৃদয় (২১)। বাকি তিনজন ১৬ বছর বয়সী অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু। তাই তাদের নাম ঠিকানা প্রকাশ করেনি সিএমপি। ঘটনার বিবরণ জানিয়ে পংকজ দত্ত বলেন, ‘চার-পাঁচজন বন্ধু মিলে অটোরিকশাযোগে খুলশীর আমবাগান এলাকা থেকে যাচ্ছিল।

এসময় অটোরিকশার গতি বেশি হওয়ার কারণে রাস্তায় হাঁটা এক যুবকের (ইমন) গায়ের উপর দিয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়। ওই যুবক সঙ্গে সঙ্গে তাদের থামতে বললে উভয় পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি হয়। এসময় ওই যুবক একা থাকায় আসামিরা তার সঙ্গে বেপরোয়া আচরণ করে এবং মারধর করে। একইসঙ্গে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায়। তখন সে সেখান থেকে কৌশলে সরে গিয়ে কয়েকজন বন্ধুকে আসতে বলে। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে এলে দুই গ্রুপের মধ্যে একে অপরের সঙ্গে হাতাহাতি হয়। তিনি আরও বলেন, ‘হাতাহাতির এক পর্যায়ে আসামি মুন্না ছুরি দিয়ে ওই যুবকের বন্ধু আব্দুর রহমান সুজনকে বুকের নিচে ডান পাশে আঘাত করে।

 এবং অপর এক আসামি সাগর আকেরটি ছুরি দিয়ে মো. ফরহাদ আলী জিসানকে পেটে আঘাত করে। সঙ্গে সঙ্গে আসামিরা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। এসময় ছুরিকাহত দুইজনকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানের কর্তব্যরত চিকিৎসক সুজনকে মৃত ঘোষণা করেন এবং আহত জিসানকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।’ ছোট্ট একটি ঘটনা; তবে উত্তেজনাবশত দুই পক্ষের হাতাহাতিতে এরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে বলে জানান অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) পংকজ দত্ত।

আসামিরা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত কিনা— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আমরা সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছি। তবে গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে ৪ জনের আঠারো বয়সের বেশি হলেও বাকি তিনজন আঠারোর নিচে। যাদেরকে আমরা অপরাধী না বলে অপরাধে জড়িয়ে পড়া শিশু হিসেবে রেখেছি। তবে এলাকা সূত্রে জানা গেছে, তারা সবাই এলাকাভিত্তিক গ্রুপিং করে; মানে এলাকাভিত্তিক চলাফেরা করে, আড্ডা দেয়। তবে আবার কেউ কেউ বিভিন্ন কার্যক্রমেও যোগদান করে। তারা কেউই কোনো ধরনের নির্ধারিত পেশায় জড়িত নয়। তবে দুই-একজন বলছে লেখাপড়া করে। প্রাথমিকভাবে আসামিরা স্বীকার করেছে, গ্রেপ্তার মুন্নার ছুরিকাঘাতে সুজন নিহত হয়েছে এবং সাগরের ছুরিকাঘাতে জিসান আহত হয়। খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রুবেল হাওলাদার বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পরপরই অভিযান চালিয়ে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

একইসঙ্গে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃতি একটি ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আরও কয়েকজন আসামি পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। এর আগে, শুক্রবার (১৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা ৬টার দিকে খুলশীর সেগুনবাগান ক্যান্টিন গেট এলাকায় ছুরিকাঘাতে খুন হন আব্দুর রহমান সুজন (২০) নামে এক যুবক। এ ঘটনায়  মো. ফরহাদ আলী জিসান নামে আরও এক যুবক আহত রয়েছেন। তিনি বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

fifteen − three =