জাহান্নামীদের শীরে একের পর এক নতুন নতুন চামড়া পালটে দেবেন, যাতে বিরতিহীন ভাবে তাতে শাস্তি ভোগ করতে থাকে

0
317

বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম আলহামদুলিল্লাহ ওয়াসসালাতু ওয়াসসালামু আলা রসুলিল্লাহ আম্মাবাদ; إِنَّ الَّذِينَ كَفَرُوا بِآيَاتِنَا سَوْفَ نُصْلِيهِمْ نَارًا كُلَّمَا نَضِجَتْ جُلُودُهُمْ بَدَّلْنَاهُمْ جُلُودًا غَيْرَهَا لِيَذُوقُوا الْعَذَابَ ۗ إِنَّ اللَّهَ كَانَ عَزِيزًا حَكِيمًا “এতে সন্দেহ নেই যে, আমার নিদর্শন সমুহের প্রতি যেসব লোক অস্বীকৃতি জ্ঞাপন করবে, আমি তাদেরকে আগুনে নিক্ষেপ করব[১]। তাদের চামড়াগুলো যখন জ্বলে-পুড়ে যাবে, তখন আবার আমি তা পালটে দেব অন্য চামড়া দিয়ে, যাতে তারা আযাব আস্বাদন করতে থাকে[২]। নিশ্চয়ই আল্লাহ মহাপরাক্রমশালী, হেকমতের অধিকারী।” (সূরাঃ নিসা, আয়াতঃ ৫৬) 📗[১] অর্থাৎ, জাহান্নামে কেবল কিতাবধারীদের অস্বীকারকারীরাই যাবে না, বরং অন্য সমস্ত কাফেরদের ঠিকানাও হবে জাহান্নাম। [২] এখানে রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি ও আযাবের ভয়াবহতা, তাঁর বিরতিহীনতা এবং তার একাধারে অব্যাহত থাকার বর্ণনা। কোন কোন সাহাবী থেকে বর্ণিত উক্তিতে এসেছে যে, চামড়ার এই পরিবর্তনের কাজ দিনে কয়েক শতবার হবে। (যেহেতু উষ্ণতা ও দগ্ধের জ্বালা ত্বকেই বেশী অনূভূত হয়, তাই মহান আল্লাহর এই ব্যবস্থা।) বিভিন্ন হাদীসের বর্ণনায় এসেছে যে, জাহান্নামীরা জাহান্নামে এত মোটা হয়ে যাবে যে, তাদের এক কাঁধ হতে অন্য কাঁধের দূরত্ব হবে দ্রুতগামী সওয়ারীর তিন দিনের পথ। তাদের চামড়ার স্থূলতা হবে সত্তর হাত এবং চোয়ালের দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের মত। [তাফসীরে আহসানুল বায়ান] 📘সুরার ৫৬-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর: অত্র আয়াতে যারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতের সাথে কুফরী করে, তাদের শাস্তির কথা উল্লেখ করেছেন। জাহান্নামের আগুনে পুড়তে পুড়তে যখন তাদের চামড়া দগ্ধ হয়ে যাবে তখনই নতুন চামড়া পরিবর্তন করে দেয়া হবে শাস্তির স্বাদ পাবার জন্য। হাদীসে এসেছে, জাহান্নামীরা জাহান্নামে এত মোটা হবে যে, তাদের এক কাঁধ হতে অন্য কাঁধের দূরত্ব হবে দ্রুতগামী সওয়ারীর তিন দিনের পথ। তাদের চামড়ার স্থুলতা হবে সত্তর হাত এবং চোয়ালের দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের মত। (মুসনাদ আহমাদ: ২/২৬,) পক্ষান্তরে যারা ঈমানদার তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার পাদদেশ দিয়ে নহরসমূহ প্রবাহিত। সেখানে তারা চিরকাল থাকবে এবং মাসিক, নেফাক, খারাপ চরিত্র ও ময়লা আর দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত চিরপূত-পবিত্র স্ত্রী পাবে। আর চিরস্নিগ্ধ ঘন ছায়ায় স্থান পাবে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: إِنَّ فِي الجَنَّةِ لَشَجَرَةً، يَسِيرُ الرَّاكِبُ فِي ظِلِّهَا مِائَةَ عَامٍ لَا يَقْطَعُهَا জান্নাতে একটি গাছ থাকবে যার ছায়ায় একজন আরোহী একশত বছর পর্যন্ত চলতে থাকবে তবুও তার ছায়া শেষ হবে না। তার নাম শাজারাতুল খুলদ (চিরস্থায়ী গাছ)। (সহীহ বুখারী হা: ৩২৫২)। [তাফসীরে ফাতহুল মাজীদ] 📙সুরার ৫৬-৫৭ নং আয়াতের তাফসীর: যারা আল্লাহর নির্দেশাবলী অস্বীকার করে, রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর বিরুদ্ধে জনগণকে বিদ্রোহী করে তোলে, এখানে তাদেরই শাস্তি ও মন্দ পরিণামের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে। তাদেরকে জাহান্নামের মধ্যে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়া হবে এবং সেই আগুন তাদেরকে চতুর্দিক থেকে ঘিরে নেবে এবং তাদের শরীরের সূক্ষ্ম ললাম পর্যন্ত জ্বালিয়ে দেবে। শুধু এটাই নয়, বরং এ শাস্তি হবে তাদের জন্যে চিরস্থায়ী। একটি চামড়া পুড়ে গেলে আবার নতুন চামড়া লাগিয়ে দেয়া হবে, যা হবে সাদা কাগজের মত। এক একজন কাফিরের শত শত চামড়া হবে এবং প্রত্যেক চামড়ার উপর নানা প্রকার পৃথক পৃথক শাস্তি হবে। এক এক দিনে সত্তর হাজারবার চামড়া পরিবর্তন করা হবে। অর্থাৎ ঐ লোকগুলোকে বলা হবে‘পুনরায় তোমরা ফিরে এসো’ তখন এগুলো পুনরায় ফিরে আসবে। হযরত উমার (রাঃ)-এর সামনে এ আয়াতটি পাঠ করা হলে তিনি পাঠককে দ্বিতীয়বার পাঠ করে শুনাতে বলেন। পাঠক দ্বিতীয়বার পাঠ করেন। হযরত মু’আয ইবনে জাবাল (রাঃ) তাঁকে বলেনঃ আমি আপনাকে এর তাফসীর শুনাচ্ছি। এক এক ঘন্টায় একশবার করে পরিবর্তন করা হবে।’ হযরত উমার (রাঃ) তখন বলেনঃ “আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর নিকট হতে এরূপই শুনেছি। (তাফসীর-ই-ইবনে মিরদুওয়াই প্রভৃতি)। অন্য বর্ণনায় রয়েছে যে, সে সময় হযরত কা’ব (রাঃ) বলেছিলেনঃ ‘এ আয়াতের তাফসীর আমার মনে আছে। আমি এটা আমার ইসলাম গ্রহণের পূর্বে পাঠ করেছিলাম। তখন হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ “আচ্ছা বলতো। যদি এটা ঐরূপই হয় যেরূপ আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে শুনেছি তবে তো আমি তা মেনে নেবো, নচেৎ ওর প্রতি কোন ভ্রুক্ষেপ করবো না। তখন হযরত কা’ব (রাঃ) বলেনঃ ‘এক ঘন্টায় একশ বিশ বার। এটা শুনে হযরত উমার (রাঃ) বলেনঃ ‘আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে এ রকমই শুনেছি। হযরত রাবী ইবনে আনাস (রাঃ) বলেনঃ “পূর্ববর্তী গ্রন্থে লিখা রয়েছে যে, তাদের চামড়া হবে চল্লিশ হাত ও পঁচাত্তর হাত। আর তাদের পেট এত বড় হবে যে, তাতে পর্বত রাখলেও ধরে যাবে। যখন ঐ চামড়াগুলো আগুনে পুড়ে যাবে তখন অন্য চামড়া এসে যাবে। অন্য হাদীসে এর চেয়েও বেশী রয়েছে। মুসনাদ-ই-আহমাদে রয়েছে, হযরত ইবনে উমার (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সঃ) হতে বর্ণনা করেন যে, তিনি বলেনঃ জাহান্নামে জাহান্নামবাসীকে এত বড় করা হবে যে, তার কানের লতি ও স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানের দূরত্ব হবে সাতশ বছরের পথ। তার চামড়া হবে সত্তরগজ পুরু এবং দাত হতে উহুদ পাহাড়ের মত। এরপর সৎ লোকদের পরিণামের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে যে, তারা আদন। জান্নাতে অবস্থান করবে যার নিম্নদেশে স্রোতস্বিনীসমূহ প্রবাহিত হতে থাকবে। তাদের ইচ্ছেমত নদীগুলো প্রবাহিত হবে। স্বীয় অট্টালিকায়, বাগানে, পথে মোটকথা যেখানেই তার মন চাইবে সেখানেই নদীগুলো বইতে থাকবে। সবচেয়ে বড় মজার কথা এই যে, এসব নিয়ামত হবে চিরস্থায়ী। এগুলো না নষ্ট হবে, না কিছু হ্রাস পাবে, না ধ্বংস হবে না শেষ হবে এবং না ফিরিয়ে নেয়া হবে। আরও থাকবে তাদের জন্যে সুন্দরী হুরগণ, যারা হবে হায়েয-নেফাস, ময়লা, দুর্গন্ধ এবং অন্যান্য জঘন্য বিশেষণ হতে সম্পূর্ণ পবিত্র। আর তাদের জন্যে হবে সুদূর প্রসারিত গাছের ছায়া, যা হবে অত্যন্ত আরা

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + seven =