ইসলামিক ফাউন্ডেশনে  তেত্রিশ কোটি টাকা গায়েবের অভিযোগ

0
373

মোল্লা নাসির উদ্দিন: ইসলামিক ফাউন্ডেশন বিশাল দুর্নীতির মাধ্যমে প্রায় তেত্রিশ কোটি গায়েব করে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। তথ্যমতে, মসজিদ ভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষা প্রকল্পের ২০০৯-২০১০ ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে ডিপিপি মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে পাঠ্যপুস্তক ও কুরআনুল কারীম মুদ্রণে সাশ্রয় বা অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা প্রদান না করায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি ৩৩,৩৩, ৯৭, ৯০১ (তেত্রিশ কোটি তেত্রিশ লক্ষ সাতানব্বই হাজার নয়শত এক) টাকা যা দফতরটি গায়েব করে ফেলেছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানের হিসাব নিরীক্ষাকালে পাঠ্যপুস্তক ও কুরআনুল কারীম মুদ্রণ ও বাধাঁইয়েরকার্যাদেশ, দরপত্র, ডিপিপি, বিল/ভাউচার পর্যালোচনায় করা হয় । এতে দেখা যায় যে, ডিপিপিতে প্রাক্কলিত মূল্য হিসেবে প্রতিটি কুরআনুল কারীমের মুদ্রণ ও বাঁধাই ব্যয় ১৯৫ (একশত পঁচানব্বই) টাকা। সে হিসেবে ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসকে কুরআনুল কারীম সরবরাহের জন্য ১৯৫ (একশত পঁচানব্বই) টাকা হারে ক্রয়াদেশ দেয়া হয় কিন্তু ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেস কর্তৃক উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে বহিরাগত ঠিকাদারের নিকট হতে কার্যাদেশ মূল্য/ডিপিপি মূল্যের চেয়ে কম মূল্যে অর্থাৎ ১২৭, ১৪০, ১৪৭ ও ১৬৩ টাকা ধরে কুরআনুল কারীম সরবরাহ নিয়ে প্রকল্পে সরবরাহ করেন।

পরিশিষ্টে বর্ণিত পাঠ্যপুস্তকসমূহ মুদ্রণে কমমূল্যে বহিরাগত ঠিকাদারের নিকট হতে সংগ্রহ পূর্বক প্রকল্পে সরবরাহ করেন। ফলে প্রকল্পের (১২, ৩৫, ৮১, ৪১৮+২০, ৯৮, ১৬, ৪৮৪) টাকা = ৩৩, ৩৩, ৯৭, ৯০১ টাকা সাশ্রয়/অব্যয়িত রয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ-১ অধিশাখা-২৩ এর স্মারক নং ০৭. ১২৩. ০২০. ০৫.৩৫০.১১-২০১৪ (অংশ-১)/১২৯ তারিখ: ৩১/০৫/২০১৭ খ্রি: মোতাবেক অব্যয়িত অর্থ ৩০ শে জুন এর মধ্যে সরকারি কোষাগারে জমা যোগ্য।

কিন্তু আলোচ্য ক্ষেত্রে প্রকল্পের মুদ্রণে সাশ্রয়/ অব্যয়িত টাকা সরকারি কোষাগারে জমা করা হয়নি (বিস্তারিত পরিশিষ্ট (০১-০২))। অনিয়মের কারণ হলো অর্থ মন্ত্রণালয়ের বাজেট অনুবিভাগ-১ অধিশাখা-২৩ এর স্মারক নং ০৭. ১২৩. ০২০. ০৫. ৩৫০. ১১-২০১৪ (অংশ-১)/১২৯ তারিখ:-৩১/০৫/২০১৭ খ্রি: এর লঙ্ঘন।

অডিটি প্রতিষ্ঠানের জবাবে বলা হয় ডিপিপির উল্লিখিত রেট অনুযায়ী কার্যাদেশের আলোকে মুদ্রণ করা হয়েছে। ডিপিপির নির্ধারিত দরের চেয়ে অতিরিক্ত দরে কার্যাদেশ প্রদান করা হয়নি। ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রেসের মুদ্রণ কাজের লোড বেশি থাকায় বাহিরের প্রতিষ্ঠান থেকে কম মূল্যে ছাপিয়ে লাভ করে থাকলে তা ইসলামিক ফাউন্ডেশন তথা সরকারেরই লাভ।

গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসাবে চিহ্নিত করে ৩০ (ত্রিশ) দিন সময় দিয়ে নিষ্পত্তিমূলক জবাব প্রেরণের লক্ষ্যে মহাপরিচালক, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, আগাঁরগাও, ঢাকা বরাবর ২৩/১১/২০১৯ খ্রি: তারিখে পত্র প্রেরণ করা হলে সর্বশেষ ০১/০৩/২০২০ খ্রি: তারিখে জবাব পাওয়া যায়। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় গুরুতর আর্থিক অনিয়ম হিসাবে চিহ্নিত করে ১৫ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তিমূলক জবাব প্রেরণের জন্য ৩০/০৯/ ২০২০ খ্রি: তারিখে সচিব, ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় বরাবর তাগিদপত্র ইস্যু করা হলেও অদ্যাবধি কোন জবাব পাওয়া যায়নি।

নিরীক্ষা মন্তব্যে বলা হয়েছে, জবাব আপত্তি নিষ্পত্তির জন্য সহায়ক নয়। অব্যয়িত অর্থ যথাসময়ে সরকারি কোষাগারে জমা না করায় সরকারকে তারল্য ব্যবস্থাপনা বজায় রাখার জন্য অধিক সুদে ঋণ গ্রহণ করতে হয়। যথাসময়ে অব্যয়িত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা হলে সংযুক্ত তহবিলে চাপ কম পড়ত এবং সরকারকে কম ঋণ গ্রহণ করতে হতো। নিরীক্ষার সুপারিশে বলা হয়েছে বিষয়টি তদন্তপূর্বক দায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং সাশ্রয়কৃত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা করা আবশ্যক।

বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ বশিরুল আলমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

twenty − 19 =