জামুকা’র ভূত অমুক্তিযোদ্ধা জামায়াত প্রিয়

0
788

নওগাঁ-২ আসনের এমপি শহিদুজ্জামান সরকারের অনিয়ম দুর্নীতি ও অপরাজনীতির আমলনামা

বাংলাদেশ সরকারের উন্নয়নের বাধা স্বাধীনতা বিরোধী চক্ররা গোপনে আজও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বিনষ্ট করার চক্রান্ত চালিয়ে যাচ্ছে। মুক্তিযোদ্ধা না হয়েও সে জামুকার সদস্য হয় কিভাবে? মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনার আওয়ামীলীগ পন্থী ভোটারদের আস্থা হারিয়েছে!

এজাজ রহমান:

বর্তমান পরিচয় ও কর্মকান্ড: (শহিদুজ্জামান সরকারের ঠিকুজি):

শহীদুজ্জামান সরকার এমপি ৪৭, নওগাঁ-২ (পত্নীতলা-ধামইরহাট), পিতা: সুদখোর ও মুসলিম লীগের নেতা, ১৯৭১ এ পিচ কমিটির মেম্বার, ১৫ই আগষ্ট নাজাৎ দিবস পালন পূর্বক মিষ্টি বিতরণকারী। শহীদুজ্জামান সরকারের ভাই রাজাকার বদিউজ্জামান মুক্তিযোদ্ধার হাতে ১৯৭১ এ নিহত হন। তার ভগ্নিপতি আব্দুল লতিফ রাজশাহী ভার্সিটিতে শিবিরের পদধারী ক্যাডার ও বিএনপি জামাতপন্থী। গত ২০২১ ইউনিয়ন নির্বাচনে বিএনপির এক গ্রুপের প্রার্থী হয়ে আগ্রাদ্বিগুন ইউনিয়নে আওয়ামীলীগকে পরাজিত করেন। মেঝো ভগ্নিপতির পরিবারও বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত।

অ-মুক্তিযোদ্ধা/মুক্তিযোদ্ধা শহীদুজ্জামান সরকারের সাতকাহন:

এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে জানা যায় মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেট জমা দিয়ে মুন্সেফ হন। অপকর্মের তদন্ত শুরু হলে ১৯৮৬ সালে চাকুরী থেকে ইস্তফা দেন। শহীদুজ্জামান সরকার একজন অমুক্তিযোদ্ধা তাহলে তিনি জামুকার সদস্য হন কিভাবে?

শহীদুজ্জামান সরকার এখন জামুকার সদস্য। জামুকার সদস্য হতে হলে মুক্তিযোদ্ধা হতে হয় যা জামুকার নীতিমালাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখিত। বর্তমান সকল সদস্যই ডাকসাইটে মুক্তিযোদ্ধা কিন্তু সে তো মুক্তিযোদ্ধা নয়, তাহলে সে কোন কারিশ্মায় জামুকার সদস্য? তাহলে কি তিনি মুক্তিযোদ্ধা সেজেছেন ? সেজেছেন বলেই মনে হয়, কারন সম্প্রতী ঢাকায় মুক্তিযোদ্ধাদের একটি সম্মিলনী অনুষ্ঠানের চিঠিতে তার নামের আগে মুক্তিযোদ্ধা দেখা যায়, তিনি অনুষ্ঠানে উপস্তিত থাকলেও এ বিষয়ে কোন সংশোধনী দেন নাই। নিজ ধামইরহাট উপজেলা ও তার নির্বাচনী এলাকার আরেক উপজেলা পত্নিতলার মুক্তিযোদ্ধারাও এ নিয়ে ফুঁসছেন।

 বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য:

মুঠো ফোনে এ বিষয়ে ধামইরহাট উপজেলার সাবেক বীর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুর রউফের কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান যে সে কোনোভাবেই মুক্তিযোদ্ধা তো নয়ই বরং তার পরিবার স্বাধীনতার বিরুদ্ধে ভূমিকা রাখে। বীর মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হক  বলেন সে মুক্তিযুদ্ধে যায়নি, তার ভাই বদিউজ্জামান আরিফ বিহারীর সহিত মুক্তিযোদ্ধদের হাতে নিহত হন। তিনি বলেন  কিভাবে একজন অমুক্তিযোদ্ধা জামুকার নীতিমালার ব্যতয় ঘটিয়ে জামুকার সদস্য  হয়, ও মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই করে! নওগাঁ ২ আসনের এমপি শহিদুজ্জমানের বিষয়ে জানতে চাইলে পত্মীতলা উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা সাইদুর রহমান বলেন, এমপি মহোদয় কখনো মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তার কোনো আত্মীয় স্বজন কখনো আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে ছিল না। তার পরিবারের সকলে জামায়াতের সাথে স্পষ্ট সম্পর্ক রেখে চলেছে। তার ভাই বদিউজ্জামান রাজাকার থাকায় মুক্তিযোদ্ধারা তাকে রাজাকার আরীফসহ হত্যা করেছে। 

পত্নীতলার সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার তারা কাজি বলেন রাজাকার পরিবারের সন্তান আওয়ামীলীগের এমপি হয়েছে, আবার জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের সদস্য হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই বাছাই করে, একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আমি লজ্জিত।

তার মুন্সেফ চাকুরী থেকে ইস্থফাদেয়ার প্রশ্নে প্রায় সকল বীর মুক্তিযোদ্ধাগন প্রায় একই সুরে বলেন শুনেছি মুক্তিযোদ্ধার ভুয়া সার্টিফিকেটের কারনে উনি চাকুরিচ্যুত হন।

এ উপজেলার অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধারাও একইভাবে উষ্মা প্রকাশ করেন। তারা জানান কিভাবে খালেক চৌধুরীকে প্রভাব খাটিযে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন এলাকার সাধারণ মানুষ ও মুক্তিযোদ্ধাদের ভাষ্য আরও জানা যায় তার পিতা আমজাদ সরকারের মুসলিম লীগ ও পিচ কমিটি সম্পৃক্ততা। আর সব ছাঁপিয়ে ওঠে আসে আমজাদ সরকারের ১৫ আগস্টে নাজাত দিবস পালন পূর্বক মিষ্টি বিতরনের কথা।

জামায়াত সংশ্লিষ্টতা:

এমপির আওয়ামীলীগ এবং জামাত এখন ভাই ভাই। রাজাকার ভাই  বদিউজ্জামান মুক্তিযোদ্ধাদের হাতে নিহত হয়েছেন এই ক্ষোভে রাষ্ট্রীয় দু-একটি মুক্তিযোদ্ধাদের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকলেও তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের কোন প্রোগ্রামে উপস্থিত হন না। তিনি জামুকার সদস্য হিসেবে উনার প্রাক্তন প্রয়াত পিএস আমিনুল ইসলামের প্রয়াত স্বাধীনতা বিরোধী জামাতের কর্মী পিতা আব্দুস ছোবহানকে মুক্তিযোদ্ধা বানালেও প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনি সুপারিশ করেন নাই। শুধু ধামইরহাটেই প্রায় পঞ্চাষোর্ধ প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভাতাহীন অবস্থায় মানবেতর জীবন যাপন করছেন। অথচ উনি তাদের দিকে ভ্রুক্ষেপ করেননি। জামায়াতের সদ্য প্রয়াত জেলা আমির ধামইরহাট উপজেলা চেয়ারম্যানের সঙ্গে সকল রাষ্ট্রীয় এবং স্থানীয় অনুষ্ঠানে তিনি সরব সহাবস্থান করতেন। শিবিরের সংগঠন আলোর দিশারীতে প্রধান অতিথি হিসেবে আসন গ্রহন করেন (জনকণ্ঠের রিপোর্ট)। জামায়াতের প্রাক্তন ইউনিয়নের নেতার সন্তানের চাকুরীর জন্য আওয়ামীলীগের কর্মী হিসেবে প্রত্যয়ন করেছেন। হুইপ থাকাকালীন তার পি.এস আমিনুল ইসলামের বাবা যিনি একজন স্বাধীনতাবিরোধী এবং জামাতের সক্রিয় কর্মী ছিলেন তাকে মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ স্বত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেট করিয়েছেন। শিবিরের প্রাক্তন থানা সভাপতি ফারুখ হোসেনকে হেডমাস্টার পদ দিয়ে পুনর্বাসন করা হয়েছে নজীপুর প্রতিবন্ধী স্কুলে।

শহীদুজ্জামান সরকারের

অনুপ্রবেশ কাল:

শহীদুজ্জামান সরকারের শ্বশুর জয়পুরহাটের সাবেক এমপি.আব্বাস আলী মন্ডলের সুবাদে হঠাৎ আওয়ামীলীগ অন্ত:প্রান হয়ে উঠলেন ও আওয়ামীলীগে অনুপ্রবেশ করেই প্রথমে ধামইরহাট উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থিতা বাগালেন এরপর ৯১ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নওগাঁ-২ এমপি নমিনেশনও উড়ে এসে বাগিয়েছেন।  এলাকায় আওয়ামীলীগের দুর্দিনে কাজ করা সকল মুক্তিযোদ্ধা আওয়ামীলীগ নেতাদের ফেও বানিয়ে দূরে সরিয়ে ধীরে ধীরে হয়েছেন এমপি, হুইপ ও জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউঞ্চিল (জামুকা)’র সদস্য।  এমপি বা হুইপ হিসেবে তার জামায়াত সংশ্লিষ্টতা, হুইপ থাকা কালীন সরকারি তেল ব্যাবহারের দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়নের খবর, এমপি কোঠায় দু-দুবার সরকারি প্লট নেওয়া এই সব ঘটনাগুলি অঘটন হলেও নতুন অঘটন যখন ঘটনা হয়ে উঠেছে তা হল জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউঞ্চিল (জামুকা) য় তাকে পুন: নিয়োগ করা হয়েছে।

দুর্নীতি:

হুইপ নিজস্ব সুবিধা লাভের জন্য এলাকার কিছু আওয়ামীলীগ হাইব্রিড ঠিকাদারকে হাতে রেখেছেন। যারা সকল প্রকার সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কাজের ঠিকাদারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ে থাকে। এতে করে সাধারণ ঠিকাদাররা টেন্ডার ড্রপ পর্যন্ত করতে পারে না। এমনি দুজন ঠিকাদার হলো সদ্য প্রয়াত শিবনাথ ও আব্দুল মজিদ। এরা বিগত সময়ে বিএনপি ক্ষমতায় থাকা কালীন সাবেক বিএনপির এমপি শামসুজ্জোহা খানেরও খুব ঘনিষ্ঠ ছিল। এছাড়াও হুইপ সাবেক বিএনপির এমপি সামসুজ্জোহা খানের ডান হাত নামে পরিচিত নবাব আলীর ছোট ভাই সাবেক জাতীয় পার্টির ক্যাডার শহীদুল আলম বেন্টুকেও দলে ভিড়িয়েছে। আব্দুল মজিদকে  প্রথমে পত্নীতলা উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক  ও বর্তমান আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এবং শহীদুল আলম বেন্টুকে পৌর আওয়ামীলীগের সভাপতি বানিয়েছেন। ধামইরহাট আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অভিযোগ হুইপের কাছের লোক হিসেবে পরিচিত ধামইরহাট থানা আওয়ামীলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক সরকার, থানা যুবলীগ সভাপতি জাবিদ হোসেন মৃদু, স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা মাসুদুর রহমান, ৩ নং আলমপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ফজলুর রহমান, থানা আওয়ামীলীগ সভাপতি দিলদার হোসেন, উপজেলা চেয়ারম্যান আজাহার হোসেন  ও নুরুজ্জামানসহ একদল স্থানীয় নেতাদের মাধ্যমে হুইপ একটি চক্র তৈরি করেছেন এই চক্রই পুরো উপজেলায় তৈরি করেছে এক ত্রাসের রাজত্ব। যার কাছে একেবারেই অসহায়  সাধারণ কর্মী ও ভোটাররা। এই চক্র উপজেলার সকল ব্যবসা-বাণিজ্য, স্কুল-মাদ্রাসা ও কলেজে নিয়োগ, বালুমহাল, সরকারি বনভূমি ও খাসজমি দখল, সরকারি চাকরির নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

ভোটের মাঠে সরেজমিন:

সরেজমিন জানা যায় ভোটের রাজনীতির খোঁজে মাঠে আমাইতারা মোড়ে চায়ের টং দোকানের আড্ডায় সাধারণ আওয়ামীলীগ সমর্থকের ভাষ্য শহীদুজ্জামান সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোঠায়, জনৈক আলিম মণ্ডল বলেই বসলেন উনি নমিনেশন পেলে আর ভোট হলে তার বিপরীতের যে কোন প্রার্থী জিতে যাবে, বললেন আমরা আওয়ামীলীগরাই এখানে প্রার্থী পরিবর্তন চাই। সব্দুল ইসলাম চায়ে চুমুক দিতে দিতে বলে চললো রাজাকার বংশের মানুষকে শেখ হাসিনা কেন বারবার এখানে নৌকা দেয়, এলাকায় কি আর কেউ আওয়ামী লীগ করে না? এটা কি মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, আওয়ামীলীগ সরায়া সব হাইব্রিড দিয়া কমিটিগুলা ভরায়া দিছে, শেখ হাসিনা কি তারে এলাকা ইজারা দিয়ে দিছে, তারে হুইপ দিসিলো আবার ওনারে প্রেসিডেন্ট বানাইত ইত্যাদি ইত্যাদি। কথা হচ্ছিলো পত্নীতলা উপজেলার মধইল বাজারে। সেখানেও একই সুরে কথা পাওয়া গেল যে শেখ হাসিনা সরকারের বিকল্প নাই কিন্তু এ আসন পেতে গেলে প্রার্থী পরিবর্তন ছাড়া কোনোভাবেই সম্ভব নয়। জনৈক চৌধুরী বলেই ফেললেন যে একজন ভণ্ডকে আমরা আর দেখতে চাই না। ওনি আল্লাহকে হাজির নাজির করে কারও কাছ থেকে ঘুষ নেন না, দুর্নীতি করেন না, বলেন। তাহলে এলাকার যত নিয়োগ স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসায় এবং অন্যান্য নিয়োগ কোথাও কেউ টাকা ছাড়া নিয়োগ পায়নি তাহলে এই লাখ লাখ টাকা কে নিল? কার কাছে গেলো? পাশে থাকা ব্যাক্তি বলে উঠল, “ওনি তো নেয় না, ঠিকই আছে, ওনার মিসেস নেয়”।

সম্পদলোভী:

৯১ এর এমপি থাকাকালীন এমপি কোঠায় নিকুঞ্জতে প্লট নিয়েছেন, এ তথ্য গোপন করে ২০০৮ এমপি হওয়ার পরে আবারও উত্তরায় এমপি কোঠায় রাজউকের প্লট নিয়েছেন। হুইপ হিসেবে সরকারী তেল ব্যবহারের সর্বোচ্চ রেকর্ড (কালের কণ্ঠ ও যুগান্তরের রিপোর্ট)। কাবিখার প্রজেক্টে নিজের দিঘি সংস্কার। আমাইর ইউনিয়নের সিধাতল মৌজার সংখ্যালঘুদের নামে স্বশানঘাটের পুকুর প্রভাবশালীদের নামে পত্তন প্রদান। এলাকার প্রতিটি নিয়োগে উনার মিসেস লায়লা আরজুমান্দের কমিশন ছাড়া কেউ চাকুরী পাননি। আড়ানগর কলেজে তার নিজের ইউনিয়নের পছন্দের স্বাধীনতা ও আওয়ামীলীগের বিরোধী পরিবারের সন্তান নুরুজ্জামানকে এনে সভাপতি করেন  শুধুমাত্র ১৫টি নিয়োগের কোটি টাকা স্বচ্ছন্দে নিজের পকেটে ঢোকানোর  জন্য। নজীপুর প্রতিবন্ধী স্কুলের প্রতিটি শিক্ষকদের কাছ থেকে ১০-১৫ লক্ষ টাকা চেয়ারম্যান বক্করের মাধ্যমে গ্রহন করেন। এম. বায়তুল্লাহ কারিগরী স্কুল এবং কলেজের নিয়োগ বানিজ্যিও বক্কর চেয়ারম্যানের মাধ্যমে হয়েছে। দৃশ্যমান দুর্নীতির পরেও দেশে তার কোন দৃশ্যমান অস্তিত্ব নেই। এমনকি নিজের পৈত্রিক বাড়ীর অংশও ভাইকে দিয়ে দিয়েছেন কারণ তার ছেলেরা অষ্ট্রেলিয়ার নাগরিক এবং তিনি সমস্ত দুর্নীতির টাকা ইতোমধ্যে অষ্ট্রেলিয়ায় পাচার করেছেন এবং কুইন্সল্যান্ড ও সিডনীতে বিলাস বহুল ভিলা কিনেছেন। ২০১৮ নির্বাচনের হলফনামায় দেওয়া তথ্যানুযায়ী তার স্ত্রীর নামে ৫০ লক্ষ টাকা মূল্যের ঢাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে। ওনার আয় অবশ্যই দুর্নীতিলদ্ধ, কারণ উনি একজন গৃহিনী।

ইউপি নির্বাচনী ফিরিস্তি:

গত ইউপি নির্বাচনে ঘোষনগর ইউপিতে তার পছন্দের হাইব্রিড প্রার্থী ও সকল দুর্নীতির একান্ত সহযোগী এমপি পরিবার  খাস ব্যাক্তি আবু বক্করকে জেতাতে তার সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পুলিশের দুটি ভ্যান পুড়িয়ে ও পুলিশের উপর আক্রমন করে বিদ্রোহী আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী ফারজানা আফরোজ সহ ২০০০ এর বেশি আওয়ামীলীগ নেতাকর্মীর উপর মামলা দিয়ে তাদেরকে এলাকা ছাড়া ও জেলবন্দি করেছেন এবং সেই কেন্দ্রের ভোট বাতিল করে ঐ অবস্থায় সেই কেন্দ্রে পুন: ভোট দিয়ে তার মনোনিত আবু বক্করকে জিতিয়ে এনেছেন এবং তখনও সেই কেন্দ্রে বিদ্রোহী প্রার্থী তার চেয়ে অধিক ভোটে এগিয়ে ছিল। তার প্রাথী ২০০৮ থেকে আওয়ামীলীগ আর বিদ্রোহী প্রার্থী একজন শহিদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য।

পত্নীতলা উপজেলার ঘোষনগর ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যান আবু বক্কর বর্তমানে ইউনিয়ন আওয়ামীলীগ সেক্রেটারী। সে দলে অনুপ্রবেশ করে ২০০৮ সালে। এর আগে তার অর্থনৈতিক অবস্থা এতটাই শোচনীয় ছিলো যে, এলাকার মানুষের কাছ থেকে বিড়ি ধার চেয়ে খেতো ও সম্বল বলতে একখানা সাইকেল ও ১ বিঘা জমি ছিলো। অথচ বর্তমানে সে শত শত কোটি টাকা ও ৫টি কোম্পানির মালিক, ২টি ব্রিক ফিল্ড ও সাথে চড়েন বিলাশবহুল পাজেরো গাড়িতে। শহীদুজ্জামান সরকার ইউপি নির্বাচনে টাকার বিনিময়ে অগ্রহণযোগ্য নিজস্ব বলয়ের ব্যক্তিদের আওয়ামীলীগের প্রার্থী মনোনয়নের জন্য সুপারিশ করেন। আর এ কারণে দুই উপজেলার বেশিরভাগ ইউনিয়নে এমপি লীগের প্রার্থীর বদলে আওয়ামীলীগের স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জয় লাভ করেন এবং যেগুলোতে এমপি লীগের প্রার্থী জিতেছে; সেখানেও তারা আসলে নির্বাচিত হয়নি, বরং নির্বাচিত করে আনা হয়েছে।

তার বর্তমান সাংগঠনিক চিত্র:

দুটি উপজেলার ইউনিয়ন নির্বাচনে, ১১ টিতে হেরেছেন বিদ্রোহী আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কাছে। ৪ টিতে জিতিয়েছেন দাঙ্গা করে। জাতীয়পার্টির আমলে সাবেক থানা সভাপতি এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এখন পত্মিতলা উপজেলার আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদক। ধামইরহাট উপজেলায় জাতীয় পার্টির সাবেক নেতা বর্তমান আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং সাবেক জাসদ নেতা আওয়ামীলীগ সেক্রেটারি। এই উপজেলায় যুবলীগের সভাপতি এবং সেক্রেটারীও জাতীয়পার্টি ও বিএনপির প্রাক্তন নেতা। ১৯ টি ইউনিয়নের মধ্যে, ১৭টি ইউনিয়নের কমিটিতে এলাকার অগ্রহনযোগ্য হাইব্রিড অনুপ্রবেশকারী নেতাদের সভাপতি ও সেক্রেটারীসহ অন্যান্য পদে বহাল করা হয়েছে। এমনকি তার স্ত্রী লায়লা আরজুমান্দকে ধামইরহাট উপজেলার আওয়ামীলীগের ১নং সহ-সভাপতি পদ দিয়েছেন। মুক্তিযোদ্ধা এবং ত্যাগী ও বর্ষিয়ান নেতা কর্মীদের কৌশলে কমিটি থেকে দুরে রাখা হয়েছে।

অনুপ্রবেশকারীদের পৃষ্ঠপোষক:

নজীপুর গার্লস স্কুলের শিক্ষিকা কাজী মর্জিনা বেগম ও তারা স্বামী সাবেক জাতীয় পার্টির নেতা খালেক চৌধুরীর সঙ্গে অন্তরালের সম্পর্কের কারণে হেডমাষ্টার হওয়ার যোগ্যতা না থাকার পরেও ৩ জনকে ওভারটেক করে হেডমাষ্টার বানিয়ে দিয়েছেন ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সভানেত্রী এবং তার স্বামী আব্দুল খালেক চৌধুরীকে সুপারিশ করে মুক্তিযোদ্ধা বানিয়েছেন এবং এই জাতীয় পার্টির ডাকসাইটে নেতাকে পত্নীতলা আওয়ামীলীগের সভাপতির পদও বাগিয়ে দিয়েছেন। মেয়র বালুবাবু, যার চৌদ্দগুষ্ঠি বিএনপির রাজনীতিতে, তার চাটুকারী তার মুল্য চুকিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা আমিনুল হকের মত প্রার্থীকে সরিয়ে বারবার মেয়রের মনোনয়ন দিয়ে। একই কারণে ধামইরহাট উপজেলায় চেয়ারম্যান হয়েছেন হাইব্রিড আজাহার হোসেন।

পত্নীতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সাবেক জাতীয় পার্টি নেতা আব্দুল গাফফারের জামাতা ও শহীদুজ্জামান সরকারের নারী বান্ধবী ফেন্সির ভাই মোফাখখারুল ইসলাম জাদুকে থানার দালালী দিয়েছেন। এই জাদুর পুরো পরিবার বিএনপি ও জামায়াতের সাথে জড়িত হলেও তাহারা এমপিকে ব্যবহার করে এলাকায় ত্রাসের সৃষ্ঠি করেছে ও বিভিন্ন নিয়োগ বাণিজ্যের একাংশ নিয়ন্ত্রণ করেন। হুইপের হাত ধরে এলাকার ত্রাস হিসাবে পরিচিত বিএনপির কাজী ছবেদুল, সাবেক বিএনপির এমপি শামসুজ্জোহা খানের ঘনিষ্ট নজরুল, লিপ্টন সহ বেশকয়েক জন ক্যাডার আওয়ামী লীগে নাম লিখিয়েছে।

কমিটিগুলোতে অনুপ্রবেশের তালিকা:

ধামইরহাট উপজেলা আওয়ামীলীগ কমিটি: সভাপতি: দেলদার হোসেন (জাতীয় পার্টির নেতা), সেক্রেটারি: শহিদুল ইসলাম  (জাসদ নেতা), উপ প্রচার সম্পাদক: তমা আক্তার (শ্বশুর রাজাকার), উপ দপ্তর সম্পাদক: শামসুজ্জহা (বাবা পিচ কমিটির সদস্য), কোষাধক্ষ্য:  শামসুজ্জোহা বাবা রাজাকার।

পত্নীতলা উপজেলা আওয়ামী লীগ কমিটি: সভাপতি আব্দুল গফফার (জাতীয় পার্টির নেতা), সেক্রেটারি: খালেক চৌধুরী (জাতীয় পার্টির নেতা)।

নওগাঁ-২ আসনের এমপি শহিদুজ্জামান সরকার বক্তব্য না দেয়া রহস্য জনক:

অভিযুক্ত এমপি শহিদুজ্জামানকে একাধিক বার তার ব্যবহৃত মুঠো ফোনে কল করার পরও ফোন রিসিভ করেননি। পরবর্তীতে তার নাম্বারে তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ গুলো বস্তু নিষ্ঠ সংবাদ প্রচারের স্বার্থ ক্ষুদে বার্তার মাধ্যমে জানানো হয়। তার সঠিক উত্তরের অপেক্ষায় আছি। মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের ব্যবহৃত মুঠো ফোনে এমপি শহিদুজ্জামানকে কেন মুক্তিযোদ্ধা না হয়ে জামুকার সদস্য হয়েছেন ? জানার জন্য একাধিক বার ফোন করে সংযোগ পাওয়া যায় নি। সকল অন্যায়, অনিয়ম ও অপকর্মেও মহানায়ক এমপি শহিদুজ্জামান বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনীতিকে ধুলায় মিশিয়ে দিয়েছেন। আগামীতে তাকে পুনরায় নমিনেশন দিলে বিএনপি ও জামায়াতকে গতিশীল করতে আর কাউকে প্রয়োজন হবে না।

এখন যৌবন যার যুদ্ধে যাবার শ্রেষ্ঠ সময় তার। ৭১-এর উত্তাল দিনগুলোতে যুদ্ধে যান নি; থেকেছেন নিরাপদে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে স্বাধীন হওয়া দেশটির মুক্তিযোদ্ধাদের ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস, যে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হল, সেই দলের এমপি হুইপ ও জামুকার সদস্য হয় একটি রাজাকারের পরিবারের সদস্য। মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের তিনিই করেন মুক্তিযোদ্ধাদের ইন্টারভিউ। সেলুকস্! রাষ্ট্রের একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে এরকম একজনের উপস্থিতি তাও সে প্রতিষ্ঠানের নীতিমালার স্পষ্ট লঙ্ঘন করে; মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে ভুলুন্ঠিত ও কলুষিত করে আগামী প্রজন্মের নিকট একটি কলংকিত অধ্যায় রেখে যায়। উক্ত বিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন নওগাঁ জেলার মুক্তিযুদ্ধ চেতনায় উজ্জীবিত এলাকাবাসী।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

15 − 12 =