স্মার্ট প্রতারক বীরতারা সিটির চেয়ারম্যান সাত্তার

0
325

প্রতারনা এখন আমাদের দেশে এক শ্রেণীর শিক্ষিত মানুষের কাছে একটি পেশায় পরিনত হয়ে গেছে। ক্লিন সেভ, দামী স্যুট-টাই পড়ে গুলশান বনানী মতিঝিলে এসিওয়ালা অফিস নিয়ে, ওসি ডিসি এমপি মন্ত্রীর পাশে দাড়িয়ে ছবি তুলে, সাহেদের মতো রাতের টকশোতে বড় বড় নীতি কথার ফুলজুড়ি ছড়িয়ে, সাধারন মানুষকে বোকা বানিয়ে তাদের অর্থ-সম্পদ হাতিয়ে নেয়াই এসব প্রতারকদের একমাত্র টার্গেট। ধরা খাইলে এদেরকে বলা হয় প্রতারক জাদুকর সাহেদ-পাপিয়া আর ধরা না খাইলে এরাই বনে যায় সমাজের সুপার হিরো, দানবীর হাতেম তাই। এদেরকে নিয়ে আবার মিছিল মিটিংয়ে শ্লোগান দিতে শোনা যায় “গিট্টু ভাইয়ে চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র”।

একারনে শটকার্টে কোটিপতি হওয়ার সহজ ও জনপ্রিয় মাধ্যমে পরিনত হয়ে এই প্রতারনা। টিভিতে যখন লাক্স সাবানের বিজ্ঞাপন চোখের সামনে চলে আসে তখন কালো নারী ঐ সাবান ব্যবহার করে বিশ্বসুন্দরী হওয়ার যথেষ্ট চেষ্টা করে। কিন্তু বাস্তবে লাক্স সাবান ব্যবহার করে কাউকে সুন্দরী হতে দেখা গেছে বলে মনে পড়ে না। তবুও বছরের পর বছর ধরে লাক্স সাবানের বিজ্ঞাপন আরো বেশী আকর্ষনীয়ভাবে প্রচার হয়ে আসছে, যেখানে বাস্তবতার সাথে কাজের কোন মিল নেই। এটাই হচ্ছে প্রতারনা। অর্থাৎ প্রতারকরা কোন কিছু এমন ভাবে চোখের সামনে উপস্থাপন করবে যা দেখে অন্য  কেউ লোভের বশে নিজের মুল্যবান সম্পদ তার হাতে তুলে দিবে। সংবাদ মাধ্যমের কল্যানে আমরা বহু ধরনের প্রতারকের সাথে পরিচিত হয়েছি, নিত্যনতুন কৌশলে এসব প্রতারক চক্র নতুন নতুন প্রতারনা নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হচ্ছে। ডেসটিনির এমডি রফিকুল আমিন, ই-ভ্যালির রাসেল ও রিজেন্টের সাহেদের প্রতারনা এখন সবারই জানা। এরা মানুষকে হাতির পাঁচপা দেখিয়ে সর্বস্ব লুটে নিয়েছে। বাস্তবে ডেসটিনির গাছ প্রকল্পের একটি গাছের সন্ধানও কেউ খুজে পায় নাই, অথচ গাছের নামে শুধুমাত্র কাগজ বিক্রি করে হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে রফিকুল আমিন। সাহেদ তো ছিলো আরো ভয়ংকর। করোনা দুর্যোগকালে সে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকেই বিক্রি করে দিয়েছে। করোনার ভুয়া রিপোর্ট দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা। তবে যে যাই বলুক না কেন? এসব প্রতারক কিন্তু একদিনে সৃষ্টি হয় নাই, দেশের বড় বড় সাইজের ক্ষমতাশালী ব্যক্তিরা এদেরকে পেছন থেকে শেল্টার দিয়ে বৃহৎ স্বার্থ হাসিল করে নেয়ার মতো ঘটনাও অনেক দেখা গেছে। ডেসটিনির ফিতা কাটা অনুষ্ঠানে অনেক সাইজের লিডারকেও কেচি হাতে দেখা গেছে। সাহেদকে প্রতারনা করার সুযোগ দিয়ে কেউ কেউ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এমন কথাও প্রচলিত রয়েছে আমাদের জনসমাজে। সাহেদের মতো এমন হাজারো প্রতারক রয়েছে আমাদের চোখের সামনে। যারা রক্ষক নামের কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে দিনের পর দিন এসব প্রতারনা চালিয়ে আসছে। এই যেমন ই-কমার্স খ্যাত অনলাইন বিজনেস ই-ভ্যালি কোটি কোটি টাকা খরচ করে চটকদার বিজ্ঞাপনের ঢাক-ঢোল পিটিয়ে মানুষকে বোকা বানিয়েছে। এটা দেখেও না দেখার ভান করছে নিয়ন্ত্রনকারী কর্তৃপক্ষ। যখন সাহেদের মতো ধরা পড়ছে তখন তার অপরাধের খোজে অনুবীক্ষণ যন্ত্র নিয়ে মাঠে নেমে পড়েছে। অথচ ই-ভ্যালি যখন দিনের পর দিন এসব কর্তৃপক্ষের সামনেই সাধরন মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে তখন তারাই নিশ্চুপ রয়েছে। আবাসন/প্লট ব্যবসায়ী ভূমিদস্যু প্রতারকদের চিত্র তো আরো ভয়াবহ। এরা জমি মালিকের অজান্তেই তাদের জমির উপর প্লটের ডিজাইন বানিয়ে সেই প্লট অন্যজনের কাছে বিক্রি দিচ্ছে। এদের প্লট আছে-একটা, আর একটা প্লটই বুকিং/ বিক্রি করে দিচ্ছে হাজার জনের কাছে।

এরা কোন একটা এলাকাকে টার্গেট করে ঢাকা শহরের গুলশান মতিঝিল বনানীতে এসিওয়ালা অফিস রুমে বসে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশী আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ডিজাইনে প্লটের লে-আউট প্ল্যান বানিয়ে  ফেসবুক, ইউটিউব, টিভি ও পত্রিকায় চটকদার বিজ্ঞাপন প্রচারের মাধ্যমে সাধারন জনগনকে বোকা বানিয়ে একজনের জমি আরেক জনের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছে। অথচ খোজখবর নিলে দেখা যায় জমির প্রকৃত মালিকরা এর কিছুই জানেনা। আবার কোম্পানীর নামের বড় বড় সাইনবোর্ড বসানোর জন্য বছর চুক্তিতে কৃষকের কাছ থেকে ভাড়া নেয়া হয় দু-চার-পাঁচটা জমি।

টাঙ্গানো হয় বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড ও চটকদার বিজ্ঞাপন। একপর্যায়ে জোড়পূর্বক বালু ভরাট করা হয় এসব জমিতে। পাশাপাশি দখল করে নেয়া হয় সরকারী খাল বিল ও নদী নালা সহ সরকারী খাস জমি। এদেরই একজন ভাইয়া গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান ভাইয়া হাউজিং লিমিটেড ওরফে বীরতারা সিটির চেয়ারম্যান স্মার্ট প্রতারক মারুফ সাত্তার আলী। সুদর্শন এই প্রতারক ঢাকা শহরের ভিআইপ এলাকায় এসিওয়ালা অফিসে বসে গ্রামের সহজ সরল মানুষের কৃষি জমিতে হাজার হাজার প্লটের লে-আউট প্ল্যান বানিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে বুকিংয়ের দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা অথচ জমির মালিক এর কিছুই জানতে পারছে না। মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বীরতারা ইউনিয়ন পরিষদের অনাপত্তি ছাড়পত্র নিয়ে গড়ে তুলেছেন বীরতারা সিটি।

জানা গেছে, লে-আউট প্ল্যান অনুসারে এই সিটিতে প্লটের সংখ্যা প্রায় ৬ হাজার। তবে এতোগুলো প্লটের জন্য কয়েকহাজার একর জমির প্রয়োজন হলেও এই পরিমান জমি তাদের কোম্পানীর নামে আছে কিনা এমন করলেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠে কোম্পানির লিগ্যাল এডভাইজার। আবার লে-আউট প্ল্যানে দেখানো সেই প্লট গুলো মাসিক কিস্তিতে বুকিং দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেয়ার কোন আইন বাংলাদেশে বলবৎ আছে কিনা তাও কেউ বলতে পারে না।

কোম্পানীর চেয়ারম্যান মারুফ সাত্তার আলী দেখতে অনেকটাই স্মার্ট, কথাবার্তায় আচরনে পরিমার্জিত, তবে একজন ক্ল্যাসিক্যাল প্রতারক। সন্দ্বীপ ভবন (৬ষ্ঠ তলা), ২৮/এ-৩ টয়েনবি সার্কুলার রোড, মতিঝিল বা/এ, ঢাকা-১০০০ ঠিকানায় রয়েছে ভাইয়া হাউজিংয়ের চোখ ধাঁধানো কর্পোরেট অফিস। তার কর্মচারীরা মুখের মিষ্টি কথায় প্রচার করেন তাঁদের কোম্পানী ৬ হাজার প্লট নিয়ে বিজনেস শুরু করেছে, কিন্তু কোন কাগজপত্র দেখাতে পারেন না, এমনকি শ্রীনগরের ভুমি অফিস গুলোতেও খোজ খবর নিয়ে এসবের কোন অস্তিত্ব খুজে যাওয়া যায় নাই।  যেই কোম্পানীর নিজস্ব কোন প্লট নেই তারা কিভাবে অন্যের কাছে প্লট বিক্রি করে এমন প্রশ্নের উত্তর অনেকটাই রহস্যে ঘেরা। দেখা গেছে, কোম্পানীর লে-আউট প্ল্যানের ভেতর ব্যাক্তি মালিকানাধীন জমির উপর প্লট আছে দু-চারটা।

অথচ এই দু-চারটা প্লটই হাজার জনের কাছে আলাদা আলাদাভাবে (কেউ কারোরটা জানে না) কিস্তিতে বুকিং দেয়া হচ্ছে। জমির কাঠা প্রতি আড়াই থেকে ৩ হাজার টাকা মাসিক কিস্তিতে প্লট বুকিং। প্লট বুকিংয়ের জন্য ডেসটিনির আদলে এজেন্টকে মোটা অংকের কমিশন দিয়ে চাকুরীজিবি ও বিদেশে কর্মরত প্রবাসীদের টার্গেট করা হয়। এজন্য টিভিতে, পত্রিকায় বাহারি বিজ্ঞাপণ আর দেশ বিদেশের বিভিন্ন ভিআইপি স্থানে প্লট বুকিংয়ের জন্য আবাসন মেলার আয়োজন করে থাকে প্রতারক মারুফ সাত্তার আলী। 

সুত্র জানায়, যদিও বীরতারা সিটির বৈধ কোন সরকারী অনুমোদন নেই। অন্যের জমিতে বিশাল বিশাল সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে লে-আউট প্ল্যানের বিজ্ঞাপন প্রচার করে যাচ্ছে হরদম। জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে গেলে একটি আবাসন কোম্পানির লে-আউট প্ল্যানে উল্লেখিত প্লটের সমপরিমান জমি কোম্পানির নামে থাকতে হয়। অথচ বাস্তবে বীরতারা সিটির লে-আউট প্ল্যানে উল্লেখিত জমির একশো ভাগের একভাগ জমির অস্তিত্বও খুজে পাওয়া যায় নাই। একারনে বীরতারা সিটির কপালে জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এখনো জুটে নাই। অনুমোদন ছাড়াই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করেই চলছে এই স্মার্ট প্রতারনা

অনুসন্ধানে জানা গেছে, মুন্সীগঞ্জের শ্রীনগর উপজেলার বীরতারা ইউনিয়নে সরকারী অনুমোদনহীন বীরতারা সিটি নামক কোম্পানীটি প্লট ব্যবসার নামে নিরহী মানুষের ফসলি জমির ফাঁকে ফাঁকে দু-একটি জমিতে চটকদার সাইনবোর্ড টাঙ্গিয়ে জনগনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে হরদম চালিয়ে যাচ্ছে প্রতারনা। বীরতারা সিটি এযাবৎ নিজেদের কোম্পানীর নামে ৫বিঘা জমি কিনতে পারে নাই। অথচ কোম্পানীর লে-আউট প্ল্যানে প্রচার করা হচ্ছে তাদের জমি পরিমান ৩ হাজার বিঘার অধিক। কিন্তু প্রতারক এই কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠালগ্ন সময় হতে রাজধানী ঢাকা শহরের নামিদামী হোটেল ও ভিআইপি লাউঞ্জ ভাড়া নিয়ে জমকালো মেলার আয়োজন করে সহজ কিস্তিতে এপর্যন্ত কয়েক হাজারের উপরে গ্রাহকের কাছে তাদের প্লট বুকিং দিয়েছে।

২০৩০ সালের মধ্যে আবাসন ব্যবসার লাইসেন্সবিহীন এই কোম্পানীটি ৬হাজার প্লট বিক্রি করার টার্গেট নিয়ে মাঠে কাজ করছে। যার পুরো পরিকল্পনাটাই ঠকবাজি আর প্রতারনায় ভরপুর। কারন এই মুহুর্তে বীরতারা সিটি সহজ কিস্তির মাধ্যমে গ্রাহকের কাছে প্লট বুকিং দিয়ে যে পরিমান টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, সেই টাকা বা প্লট অদুর ভবিষ্যতে কখনোই তারা গ্রাহককে ফেরত পাবেনা বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেছে। আর আসল ঘটনা হলো এই মুহুর্তে যারা বীরতারা সিটির নিকট জমি ভাড়া দিয়েছে সাইনবোর্ড টাঙ্গানোর জন্য তাদের জমিও একদিন গ্রাস করবে এই হায় হায় কোম্পানী। যা ইতিপূর্বে দেশের নামিদামী আবাসন কোম্পানীগুলো এই কৌশলেই জনগনের জমি জোড়পূর্বক দখল করে নিয়েছে।

আর এই কোম্পানীর চেয়ারম্যান, এমডি সহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দেশের বড় বড় দুর্নীতিবাজ গডফাদারদের নিকট আত্মীয়। তাদের ক্ষমতার জোড় অনেক উপরে। তাদের অন্যায়ের প্রতিবাদ করে কেউ সুবিধা করতে পারেনা। তারা একবার টাকা হাতিয়ে নিজেদের পকেটে নিতে পারলে ঐ টাকা আর কখনোই আর কেউ ফেরত আনতে পারবে না। কারন তারা খুব সুক্ষ্ম কৌশলে জনগনের নিকট থেকে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। বীরতারা সিটি প্লট বুকিংয়ের মাধ্যমে জনগনের নিকট থেকে যেই টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে, সেই টাকার বিপরীতে জনগনকে দিচ্ছে কোম্পানীর নামের উপরে এক টুকরো রশিদ বা ভাউচার। আর এই ভাউচার হবে ঐ সমস্ত জনগনের গলার তাবিজ মাত্র।

কারন কোম্পানী অদুর ভবিষ্যতে সেই টাকা বা জমি বুঝিয়ে না দিলে এই তাবিজ ব্যবহার করে জনগন হাজার বছরেও তার সমস্যার সমাধান পাবে না। কারন ডেসটিনিতে লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে এমন তাবিজ অন্তত কয়েক কোটি গ্রাহক পেয়ে ছিলো। আর ডেসটিনির তাবিজ গলায় ঝুলিয়ে এসব গ্রাহকরা এখন শুকিয়ে শুটকি মাছ হলেও ডেসটিনির কর্মকর্তারা কিন্তু খুবই আরাম আয়েশে দিন কাটাচ্ছে। এদের নামে দুর্নীতির মামলা হয়েছে ঠিকই, তবে এরা জনগনের কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া টাকা খরচ করে জেল-হাজতে বসেও রয়েছে মহা সুখে। বীরতারা সিটিও ঠিক একইভাবে জনগনকে নিঃস্ব বানাবে এতে কোন সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছে বীরতারা হাউজিংয়ে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা। তিনি বলেন, রাস্তার মোড়ে মোড়ে, পত্রপত্রিকায় বা টিভি চ্যানেলগুলো সহ ফেসবুক-ইউটিউবে বীরতারা সিটির চোখ ধাঁধানো বিজ্ঞাপনের ফাঁদে পড়ে যারা তাদের তিল তিল করে জমানো টাকা প্রতারক সাত্তারের হাতে তুলে দিচ্ছে, ভবিষ্যতে তাদের চোখে কান্না করার মতো পানিটুকু থাকবেনা। তাই সচেতন মহলের প্রতি হুশিয়ারী-বীরতারা সিটি এমন প্রতারনা থেকে সর্তক থাকুন।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

two × three =