ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ দ্বীন (জীবন ব্যবস্থা)

0
194

৪৩। হাদীস ঃ একদা হযরত ওমর (রাঃ)-কে এক ইহুদী বলল, হে আমীরুল মো’মেনীন। আপনাদের কুরআনে এম একটি আয়াত রয়েছে, যা আপনারা সর্বদা তেলাওয়াত করছেন। যদি আমাদের ইহুদীদের সম্পর্কে এ ধরনের কোন আয়া অবতীর্ণ হত, তা হলে আমরা ঐ দিনটিকে ঈদ হিসেবে গ্রহণ করতাম। তখন ওমর (রাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন, সে কোন আয়াত? ইহুদী বলল, তা হল-م وَأَنْمَمْتُ عَلَيْكُمْ نِعْمَتِي طَ وَرَضِبْتُ لَكُمُ الْإِسْلَامَ دِينًا ليوم أكملت আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণতা প্রদান করেছি এবং আমার নেয়ামত তোমাদের উপর পূর্ণ করেছি এবং তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন মনোনীত করেছি। এতদশ্রবণে হযরত ওমর (রাঃ) বললেন, ঐ আয়াতটি কোন সময় কোথায় রাসূল (সঃ)-এর উপর অবতীর্ণ হয়েছে তা আমরা জানি। সে দিনটি হল, হুযুর (সঃ) যখন আরাফাতের ময়দানে দণ্ডায়মান ছিলেন। আর তা ছিল জুমআর দিন। (হযরত ওমর (রাঃ) এ বাক্য দ্বারা বুঝাতে ছেয়েছেন, অবশ্যই এদিনটি ঈদ থেকে বেশি উৎসব হিসেবে গণ্য করা হয়)।

যাকাত ইসলামের একটি রোকন সহীহ বোখারী শরীফ ৪৪। হাদীস ঃ হযরত তালহা দিন ওবায়দুল্লাহ (রাঃ) বলেন, একদা সজদের অধিবাসী মেমুখে ইবনে সাপারা হয় (স)। মাথার চুল ছিল এলোমেলে এসে বসলেন। অতঃপর কিন্তু কি বলছেন তা বুঝতে পারছি না। এমন একি তিনি হুযুর (সঃ)-এর একেবারে নিকটে এসে বসলেন। অতঃপর তিনি কর (সঃ)-কে ‘ইসলাম’ সম্পর্কে প্রশ্ন করলেন। উত্তরে তিনি বললেন, ইসলাম হল প্রতি দিন যাতে পানামা আদায় কর তারপর তিনি বললেন, এর অতিরিক্ত আমাদের উপর আর কোন নামায আছে? তখন রাসুল (সঃ) বললেন, মা। তবে যদি ধু নফল নামায আদায় কর (করতে পার)। তারপর রাসুল (সঃ) আরো বললেন, এবং রমযানের রোযা রাখা। তিনি বললেন হুযুর। এর অতিরিক্ত আর কোন প্রকার রোযা আছে কি? হুযুর (সঃ) বললেন, অতিরিক্ত কোন রোষা নেই। তবে যদি তু নফল হিসেবে আদায় কর (করতে পার)। রানী তালহা বলেন, অতঃপর হুযুর (সঃ) যাকাতের কথাও আলোচনা করে। তারপর তিনি বললেন, এর অতিরিক্ত আর কিন্তু আছে কি? হুযুর (সঃ) বললেন, না। তবে যদি তুমি অতিরিক্ত দান সঞ্চ করতে চাও করতে পার। অতঃপর লোকটি পেছনের দিকে চলে যেতে লাগল আর বলতে লাগল, আমি যা শুনেছি এর চাইচে। আর কিছু বাড়াব না কমাব না। তার কথা শুনে হুযুর (সঃ) বললেন, লোকটি যদি সত্য বলে থাকে, তা হলে সে অবশর। কামিয়াব হবে। অর্থাৎ তার কথিত আমল করলে সে অবশ্যই নাজাত লাভ করবে। ৪৫। হাদীস : রাসূলুল্লাহ (সঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমানের খাতিরে সওয়াবের আশায় কোন মুসলমায়ে জানাযার পেছনে পেছনে চলে, তারপর জানাযার নামায আদায় ও দাফন করা পর্যন্ত সাথে থাকে, সে দু’স্ট্রীরাত সওয়াব অর্জ করে বাড়ী ফিরবে। প্রত্যেক বীরাত ওহুদ পাহাড় পরিমাণ হবে। যে ব্যক্তি কেবল জানাযার নামায আদায় শেষে চলে আসা। সে এক দ্বীরাতের সওয়াব নিয়ে বাড়ী ফিরবে। ‘ওসমানুল মুয়াজ্জেন’ও এরূপ বর্ণনা করেছেন। ৪৬। হাদীসঃ নবী করীম (সঃ) ইরশাদ করেন, মুসলমানকে গালিগালাজ ফেসক এবং পরস্পরকে হত্যার এই কুফরীর মধ্যে গণ্য। ৪৭। হাদীস ৪ একদা রাসূলুল্লাহ (সঃ) সাহাবীদেরকে শবে কদরের খবর দেয়ার জন্য বের হন। অতঃপর তিনি দেখছে পান, দু’জন মুসলমান পরস্পর ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছেন। তাদের এ অবস্থা দেখে হুযুর (সঃ) বললেন, আমি তোমাদেররে কদরের রাত সম্পর্কে খবর দেয়ার জন্য বের হয়ে দেখতে পেলাম, অমুক অমুক ঝগড়ায় লিপ্ত রয়েছে। তাদের অবস্থা দেখে কদরের রাতের সঠিক এলেম আমার বক্ষ থেকে উঠিয়ে নেয়া হয়েছে। হয়ত এটা তোমাদের জন্য ভালই হবে। তাই তোমর তা অনুসন্ধান কর ২৭,২৯ ও ২৫ তম রাতে।১ ৪৮। হাদীসঃ একদা নবী করীম (সঃ) সাহাবীদের উদ্দেশে মসজিদে নববীতে তাশরীফ রাখলেন। এমন সময় এক অপরিচিত ব্যক্তি হুযুর (সঃ)-এর সম্মুখে আগমন করে তাঁকে প্রশ্ন করলেন, ঈমান কি? তিনি বললেন, ঈমান হল, তুমি আল্লা, তাঁর ফেরেশতা, আখেরাতে তাঁর সাক্ষাত এবং তাঁর রাসূলের উপর এবং পুনরুত্থানের উপর ঈমান আনবে। তারপর তিনি এই করলেন, ইসলাম কি? হুযুর (সঃ) বললেন, ইসলাম হল, তুমি এক আল্লাহর ইবাদত করবে, তাঁর সাথে কাউকে শরীক করাা না। নামায কায়েম করবে, যাকাত প্রদান করবে এবং রমযানের রোযা রাখবে। তারপর আগন্তক জিজ্ঞেস করলেন, ইসেন কি? হুযুর (সঃ) বললেন, তুমি এ খেয়ালে আল্লাহর ইবাদত করবে যেন তুমি মহান আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। যদি তুমি আল্লাহকে দেখতে না পাও, তবে মনে রাখবে, স্বয়ং আল্লাহ তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন। টিকা ৪ ১. এ ঘটনা মসজিদে নববীতে হয়েছিল। কদর রাতের নির্ধারিত তারিখ হুযুর (সঃ)-এর দেল থেকে উঠিয়ে নেয়ায় তিনি সাহাবাসেরার রমযানের শেষ দশ দিনে ২১, ২৩, ২৫, ২৭, ও ২৯ তারিখের বিজোড় রাতে শবে কদর তালাশ করার আদেশ করেছেন। তবে সলফে সালেহীনে অধিকাংশের মতে ২৭ শে রমযানের রাতকেই কদরের রাত হিসেবে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।

তারপর আগন্তুক প্রশ্ন করলেন, কেয়ামত কবে হবে? হুযুর (সঃ) বললেন, প্রশ্নকৃত প্রশ্নকারী অপেক্ষা এ বিষয়ে বেশি জ্ঞাত নয়। তবে আমি তোমাকে, কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে খবর দিচ্ছি। তা হল, বান্দী যখন তার মালিককে জন্ম দিবে, যখন নিকৃষ্ট উষ্ট্রের মালিকগণ বড় বড় অট্টালিকা বানিয়ে গৌরব করবে। পাঁচটি বস্তু এমন রয়েছে যার সম্পর্কে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ জ্ঞাত নয়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সঃ) নিম্নোক্ত আয়াত তেলাওয়াত করেন- تكْسِبُ غَدًا علمُ السَّاعَةِ وَيُنزِلُ الْغَيْثَ وَيَعْلَمُ مَا فِي الْأَرْحَامِ ، وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَاذَا. بِأَيِّ أَرْضِ تَصُوْتِ إِنَّ اللَّهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ إِنَّ اللهَ عِنْدَه . – মহান আলাহর কাছেই রয়েছে কেয়ামতের এলেম, বৃষ্টি কখন অবতীর্ণ হবে, মায়েদের রেহেমে কি রয়েছে, তুমি আগামীকাল কি করবে, কোন স্থানে তোমার মৃত্যু হবে, নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ সব কিছু জানেন ও শুনেন। তারপর আগন্তুক পেছনের দিকে চলে গেলেন। অতঃপর হুযুর (সঃ) সাহাবীদেরকে বললেন, তাঁকে ডেকে আন। কিন্তু সাহাবীগণ তাঁকে পেলেন না। অবশেষে হযুর (সঃ) বললেন, ইনি হযরত জিব্রাঈল (আঃ)। তিনি এসেছিলেন মানুষদেরকে তাদের দ্বীন সম্পর্কে জ্ঞান দেয়ার জন্য। ৪৯। হাদীসঃ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (র) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আবু সুফিয়ান ইবনে হারম আমার কাছে বর্ণনা করেন যে, হিরাকল তাঁকে বলেছিল, আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম তারা (ঈমানদারগণ) সংখ্যায় বাড়ছে না কমছে? তুমি উত্তর দিয়েছিলে, তারা সংখ্যা বাড়ছে। প্রকৃতপক্ষে ঈমানের ব্যাপার এরূপই থাকে যতক্ষণ না তা পূর্ণতা লাভ করে। আর আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছিলাম, কেউ তাঁর দ্বীন গ্রহণ করার পর তা অপছন্দ করে মুরতাদ হয়ে যায় কি-না? তুমি জবাব দিয়েছ, না। প্রকৃত ঈমান এরূপই, ঈমানের স্বাদ অন্তরের সাথে মিশে গেলে কেউ তা অপছন্দ করে না। ৫০। হাদীসঃ হযরত নোমান বিন বশীর (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ)-কে বলতে শুনেছি, হালাল ও হারাম প্রকাশ্য। তবে এ দু’য়ের মধ্যে রয়েছে সন্দেহজনক কিছু বস্তু, যা অনেক লোকই জানে না। সুতরাং যে ব্যক্তি এসব সন্দেহযুক্ত বস্তু থেকে নিজেকে রক্ষা করবে, সে যেন স্বীয় দ্বীন ও ইজ্জত রক্ষা করল। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি ঐসব সন্দেহজনক বস্তুতে জড়িয়ে পড়বে, তার উদাহরণ ঐ রাখালের ন্যায়, যে কোন সরকারী চারণভূমির আশপাশে স্বীয় জানোয়ারগুলো চরায়। হতে পারে হঠাৎ করে তার জানোয়ারগুলো সরকারী চারণভূমিতে ঢুকেও পড়তে পারে। খবরদার! প্রত্যেক বাদশাহরই একটি চারণভূমি থাকে। তাই হে সাহাবীগণ, হুঁশিয়ার! সাবধান! এ দুনিয়াতে আল্লাহর চারণভূমি হল তাঁর হারামকৃত বস্তুসমূহ। খবরদার। মানুষের শরীরে এমন একটি গোশতের টুকরা রয়েছে, যা ভাল থাকলে পূর্ণ শরীরটাই ভাল থাকবে, আর যখন তা বিনষ্ট হবে তখন পূর্ণ শরীরটাই বিনষ্ট হয়ে যাবে। মনে রাখবে, তা মানুষের জ্বলব। (অর্থাৎ অন্যায়ে জড়িয়ে পড়া থেকে সর্বদা অন্তরকে দূরে রাখতে হবে)। ৫১। হাদীস: হযরত আবু হামযা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি এক সময় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ)-এর নিকট বসা ছিলাম, তিনি আমাকে তাঁর চৌখাটের উপর বসিয়েছিলেন। তিনি আমাকে বললেন, আপনি আমার কাছে কিছুদিন অপেক্ষা করুন, তা হলে আমি মালের কিছু অংশ আপনার জন্য নির্দিষ্ট করে দেব। সুতরাং আমি তাঁর কাছে দু’মাস পর্যন্ত অবস্থান করলাম। তখন তিনি আমাকে বললেন- আবদুল কায়েস গোত্রের দূতগণ যখন রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দরবারে আগমন করে, তখন তিনি তাদেরকে প্রশ্ন করলেন, তোমরা কোন গোত্র থেকে এসেছ, অথবা তোমরা কোন্ গোত্রের দূত? তারা বলল, আমরা রবিয়া গোত্রের। হুযুর (সঃ) বললেন, তোমাদের জন্য শুভ সংবাদ। এখানে তোমাদের লজ্জা শরমের কিছু নেই। অতঃপর দূতগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা ‘আশহুরে হারাম’ ছাড়া আপনার কাছে আসার কোন শক্তি নেই। যেহেতু আমাদের এবং আপনার মধ্যে রয়েছে মুযার গোত্রের কাফেরগণ। তো আপনি আমাদেরকে এমন কিছু কাজের নির্দেশ প্রদান করুন যা হক ও বাতিলের মধ্যে পার্থক্য করে দেবে। আমাদের পেছনে যারা রয়ে গেছে আমরা তাদেরকে সে সম্পর্কে অবহিত করব এবং সে কাজের দ্বারা আমরা বেহেশতে প্রবেশ করতে সক্ষম হব। তারা হুযুর (সঃ)-এর কাছে কিছু পানীয় বস্তু সম্পর্কেও জানতে চাইল। সুতরাং হুযুর (সঃ) তাদেরকে চারটি কাজের আদেশ এবং চারটি বস্তু থেকে নিষেধ করেন। তিনি তাদেরকে এক আল্লাহর উপর ঈমান আনার নির্দেশ দিয়ে বললেন, তোমরা কি জান এক আল্লাহর উপর ঈমান কি? তারা বলল, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সঃ)-ই এ সম্পর্কে ভাল জানেন। তখন হুযুর (সঃ) বললেন, আল্লাহর উপর ঈমান হল-আল্লাহ ছাড়া কোন মা’বদু নেই এবং মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর রাসূল-একথার সাক্ষ্য দেয়া এবং নামায কায়েম করা, যাকাত প্রদান করা ও রমযানের রোযা রাখা। আর তোমরা গনীমতের মালের এক-পঞ্চমাংশ প্রদান করবে। হুযুর (সঃ) তাদেরকে চারটি কাজ থেকে নিষেধ করেন। তা হল, সবুজ রংয়ের পানপাত্র, কদুর বাউস, কাঠের নির্মিত বউল এবং আলকাতরা মিশ্রিত পাত্র (এসকল পাত্রে ‘নবীয’ ইত্যাদি পান নিষেধ)। আর তিনি বললেন, তোমরা এ সকল আদেশ নিষেধ রক্ষা করবে এবং যারা দেশে রয়ে গেছে তাদেরকে অবহিত করবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine + 8 =