ইসলামের দৃষ্টিতে সুন্দর আচরণ

0
183

সুন্দর ও কল্যাণকামী জীবন ব্যবস্থার নাম ইসলাম। ইসলামের প্রতিটি কাজই সুন্দর। এর প্রতিফল আরও বেশি সুন্দর। দুনিয়ার জমিনে সত্য ও কল্যাণের জীবন ব্যবস্থা হিসেবেই প্রতিষ্ঠিত ইসলাম। শুধু জীবন ব্যবস্থা হিসেবেই ইসলাম সুন্দর নয়; ইসলামের অনুসারীদের আচার-ব্যবহারও সুন্দর। এসব সুন্দর ও উত্তম আচরণ আল্লাহর কাছে ইবাদত হিসাবে গণ্য।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সত্তায় আল্লাহ তা‘আলা যাবতীয় উত্তম চরিত্র পূর্ণমাত্রায় সন্নিবেশিত করে দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাআলা একাধিক আয়াতে ঘোষণা করেন- আর নিশ্চয় তুমি মহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।

[সূরা আল ক্বামার আয়াত ৪]

মহান আল্লাহ বলেন

অবশ্যই তোমাদের জন্য রাসূলুল্লাহর মধ্যে রয়েছে উত্তম আদর্শ তাদের জন্য যারা আল্লাহ ও পরকাল প্রত্যাশা করে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে।

[সূরা আল আহযাব আয়াত ২১]

আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি দশটি বছর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কক্ষনো আমার প্রতি উঃ শব্দটি করেননি। এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এ কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না?

[সহীহ বুখারী ৬০৩৮]

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মু‘মিন ব্যক্তি সরল ও ভদ্র প্রকৃতির হয়ে থাকে, কিন্তু পাপীষ্ঠ ব্যক্তি ধোঁকাবাজ ও নির্লজ্জ হয়।

[সুনান আবূ দাউদ ৪৭৯০]

আব্দুল্লাহ ইবনু মুগাফফাল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ নম্র, তিনি নম্রতা পছন্দ করেন। তিনি নম্র স্বভাবের লোককে যা দান করেন তা কঠিন স্বভাবের লোককে দান করেন না।

[সুনান আবু দাউদ ৪৮০৭]

জারীর (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যাকে নম্রতা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে, তাকে সকল প্রকার কল্যাণ থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে।

[সুনান আবূ দাউদ ৪৮০৯]

আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, যে আল্লাহ্ এবং আখিরাতের ওপর বিশ্বাস রাখে, সে যেন আপন প্রতিবেশীকে কষ্ট না দেয়।

[সহীহ বুখারী ৫১৮৫]

হারিসাহ্ ইবনু ওয়াহ্ব (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ দুশ্চরিত্র, মন্দ স্বভাব ও কঠোর ভাষা ব্যবহারকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না।

[মিশকাত হাদিস ৫০৮০]

উত্তম আচরণ উন্নত ব্যক্তিত্বের পরিচায়ক : ইসলাম একটি পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের এমন কোন দিক নেই যা নিয়ে ইসলাম আলোচনা করেনি। ইসলামের সেই আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে মানুষের সাথে ভালো কথা বলা এবং সুন্দর আচরণ করা অন্যতম একটি। ভালো কথা, সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তির সার্বিক পরিচয় ফুটে ওঠে, তার উন্নত ব্যক্তিত্বের প্রমাণ মেলে। সুন্দর আচরণের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে সক্ষম হন।

আবূদ দারদা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছিঃ সচ্চরিত্র ও সদাচারই দাঁড়িপাল্লায় সবচাইতে ভারী হবে। সচ্চরিত্রবান ও সদাচারী ব্যক্তি তার সদাচার ও চরিত্র মাধুর্য দ্বারা অবশ্যই রোযাদার ও নামাজীর পর্যায়ে পৌঁছে যায়।

[সূনান আত তিরমিজী ২০০৩]

আবূ মূসা আশ‘আরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ক্ষুধার্তকে অন্ন দাও, রোগীর সেবা কর এবং কষ্টে পতিতকে উদ্ধার কর।

[সহীহ বুখারী ৫৬৪৯]

জারীর ইবনু ‘আবদুল্লাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ্ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি রহম করে না।

[সহীহ বুখারী ৭৩৭৬]

জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নিকট কোন কিছু চাইলে তিনি কখনো না বলতেন না।

[সহীহ শামায়েলে তিরমিজী ২৭০]

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় কোন প্রকার অশোভনীয় কথা বলতেন না। বাজারেও তিনি উচ্চস্বরে কথা বলতেন না। মন্দের প্রতিকার মন্দ দ্বারা করতেন না; বরং ক্ষমা করে দিতেন। অতঃপর কখনো তা আলোচনাও করতেন না।

[সহীহ শামায়েলে তিরমিজী ২৬৫]

মন্দের বিপরীতে ভালো করো, আল কুরআনে ইরশাদ হয়েছে,

মহান আল্লাহ বলেন, ভালো-মন্দ কখনো সমান হতে পারে না। মন্দ প্রতিহত করো ভালোর দ্বারা। ফলে তোমার সঙ্গে যার শত্রুতা আছে, সে অন্তরঙ্গ বন্ধু হয়ে যাবে।’আর এটি তারাই প্রাপ্ত হবে যারা ধৈর্যধারণ করবে, আর এর অধিকারী কেবল তারাই হয় যারা মহাভাগ্যবান।

[সুরা হা মিম সাজদা আয়াত:-৩৪-৩৫]

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

ten + 18 =