সুরা: হামীম-আস-সাজদাহ

0
162

আয়াত নং :-30

টিকা নং:32, 33, 34, 35,

اِنَّ الَّذِیْنَ قَالُوْا رَبُّنَا اللّٰهُ ثُمَّ اسْتَقَامُوْا تَتَنَزَّلُ عَلَیْهِمُ الْمَلٰٓئِكَةُ اَلَّا تَخَافُوْا وَ لَا تَحْزَنُوْا وَ اَبْشِرُوْا بِالْجَنَّةِ الَّتِیْ كُنْتُمْ تُوْعَدُوْنَ

যারা৩২ ঘোষণা করেছে, আল্লাহ‌ আমাদের রব, অতঃপর তার ওপরে দৃঢ় ও স্থির থেকেছে৩৩ নিশ্চিত তাদের কাছে ফেরেশতারা আসে৩৪ এবং তাদের বলে, ভীত হয়ো না, দুঃখ করো না৩৫ এবং সেই জান্নাতের সুসংবাদ শুনে খুশি হও তোমাদেরকে যার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

তাফসীর :

টিকা:৩২) এ পর্যন্ত কাফেরদেরকে তাদের হঠকারিতা এবং ন্যায় ও সত্যের বিরোধিতার পরিণাম সম্পর্কে সাবধান করার পর এখন ঈমানদারদের ও নবী ﷺ কে সম্বোধন করা হচ্ছে।

টিকা:৩৩) অর্থাৎ হঠাৎ কখনো আল্লাহ‌কে রব বলে ঘোষণা করেই থেকে যায়নি এবং এ ভ্রান্তিতেও লিপ্ত হয়নি যে, আল্লাহ‌কে রব বলে ঘোষণাও করেছে এবং তাঁর সাথে অন্যদেরকেও রব হিসেবে গ্রহণ করেছে। বরং একবার এ আকীদা পোষণ করার পর সারা জীবন তার ওপর প্রতিষ্ঠিত থেকেছে, তার পরিপন্থী অন্য কোন আকীদা গ্রহণ করেনি কিংবা এর সাথে কোন বাতিল আকীদার সংমিশ্রণও ঘটায়নি এবং নিজের কর্মজীবনে তাওহীদের আকীদার দাবীসমূহও পূরণ করেছে।

তাওহীদের ওপর দৃঢ় থাকার অর্থ কি নবী ﷺ ও বড় বড় সাহাবা তার ব্যাখ্যা করেছেন এভাবেঃ

হযরত আনাস (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী ﷺ বলেছেনঃ قَدْ قَالَها النَّاسُ ثُمَّ كَفَرَ أَكْثَرُهُمْ فَمَنْ مَاتَ عَلَيْهَا فَهُوَ مِمَّنِ اسْتَقَامَ

বহু মানুষ আল্লাহ‌কে তাদের রব বলে ঘোষণা করেছে। কিন্তু তাদের অধিকাংশই আবার কাফের হয়ে গিয়েছে। দৃঢ় পদ সেই ব্যক্তি যে মৃত্যু পর্যন্ত এই আকীদা আঁকড়ে ধরে রয়েছে।” (ইবনে জারির, নাসায়ী, ইবনে আবী হাতেম)

হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদিয়াল্লাহু আনহু এর ব্যাখ্যা করেছেন এভাবেঃ لَمْ يُشْرِكُوا بِاللَّهِ شَيْئًالَمْ يَلْتَفِتُوا الى إِلَيْهِ غيره “এরপর আল্লাহ‌র সাথে আর কাউকে শরীক করেনি, তাঁকে ছাড়া আর কোন উপাস্যের প্রতি আকৃষ্টও হয়নি।” (ইবনে জারির)

একবার হযরত উমর (রাঃ) মিম্বরে উঠে এ আয়াত পাঠ করে বললেনঃ “আল্লাহ্‌র শপথ, নিজ আকীদায় দৃঢ় ও স্থির তারাই যারা দৃঢ়ভাবে আল্লাহ‌র আনুগত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, শিয়ালের মত এদিক থেকে সেদিকে এবং সেদিক থেকে এদিকে ছুটে বেড়ায়নি।” (ইবনে জারির)

হযরত উসমান (রাঃ) বলেনঃ “নিজের আমলকে আল্লাহ‌র জন্য নির্দিষ্ট করে নিয়েছে।” (কাশ্‌শাফ)

হযরত আলী (রাঃ) বলেনঃ “আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে বিধিবদ্ধ করা ফরযসমূহ আনুগত্যের সাথে আদায় করেছে।” (কাশ্‌শাফ)

টিকা:৩৪) উপলব্ধি করা যায় এমন অবস্থায় ফেরেশতারা নাযিল হবে এবং ঈমানদারগণ চর্ম চোখে তাদের দেখবে কিংবা তাদের আওয়াজ কানে শুনতে পাবে এটা জরুরী নয়। যদিও মহান আল্লাহ‌ যার জন্য ইচ্ছা ফেরেশতাকে প্রকাশ্যে পাঠিয়ে দেন। কিন্তু সাধারণত ঈমানদারদের কাছে বিশেষতঃ যখন তারা ন্যায় ও সত্যের দুশমনদের হাতে নাজেহাল হতে থাকে সেই সময় তাদের অবতরণ অমনুভূত পন্থায় হয় এবং তাদের কথা কানের পর্দায় প্রতিধ্বনিত হওয়ার পরিবর্তে হৃদয়ের গভীরে প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি হয়ে প্রবেশ করে। কোন কোন তাফসীরকার ফেরেশতাদের এই আগমনকে মৃত্যুর সময় কিংবা কবরে অথবা হাশরের ময়দানের জন্য নির্দিষ্ট বলে মনে করেছেন।

কিন্তু যে পরিস্থিতিতে এ আয়াতগুলো নাযিল হয়েছে সে সম্পর্কে যদি গভীরভাবে চিন্তা-ভাবনা করা যায় তাহলে এই পার্থিব জীবনে ইসলামী জীবন ব্যবস্থাকে সমুন্নত করার জন্য যারা জীবনপাত করছে তাদের কাছে ফেরেশতাদের অবতরণের কথা বর্ণনা করাই যে এখানে মূল উদ্দেশ্য সে ব্যাপারে কোন সন্দেহ থাকে না। যাতে তারা প্রশান্তি লাভ করতে পারে, মনোবল ফিরে পায় এবং এই অনুভূতিতে তাদের হৃদয়-মন পরিতৃপ্ত হয় যে, তারা সহযোগী ও বন্ধুহীন নয়, বরং আল্লাহ‌র ফেরেশতারা তাদের সাথে আছে। যদিও মৃত্যুর সময়ও ফেরেশতারা ঈমানদারদের স্বাগত জানাতে আসে, কবরেও (আলমে বরযখ) তারা তাদের স্বাগত জানায় এবং যেদিন কিয়ামত হবে সেদিনও হাশরের শুরু থেকে জান্নাতে পৌঁছা পর্যন্ত সব সময় তারা তাদের সাথে থাকবে। তবে তাদের এই সাহচর্য সেই জগতের জন্য নির্দিষ্ট নয়, এ পৃথিবীতেও চলছে। কথার ধারাবাহিকতা বলছে, হক ও বাতিলের সংঘাতে বাতিলের

অনুসারীদের সাথে যেমন শয়তান ও অপরাধীরা থাকে তেমনি ঈমানদারদের সাথে ফেরেশতারাও থাকে। একদিকে বাতিলপন্থীদের কৃতকর্মসমূহকে তাদের সঙ্গী-সাথীরা সুদৃশ্য করে দেখায় এবং তাদেরকে এ মর্মে নিশ্চয়তা দেয় যে, হককে হেয় করার জন্য তোমরা যে জুলুম-অত্যাচার ও বে-ঈমানী করছো সেটিই তোমাদের সফলতার উপায় এবং এভাবে পৃথিবীতে তোমাদের নেতৃত্ব নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। অপরদিকে হকপন্থীদের কাছে আল্লাহ‌র ফেরেশতারা এসে সেই সুখবরটি পেশ করে যা পরবর্তী আয়াতাংশে বলা হচ্ছে।

টিকা:৩৫) এটা একটা ব্যাপক অর্থবোধক কথা যা দুনিয়া থেকে আখেরাত পর্যন্ত ঈমানদারদের জন্য প্রশান্তির একটি নতুন বিষয় বহন করে। পৃথিবীতে ফেরেশতাদের এই উপদেশের অর্থ হচ্ছে, বাতিল শক্তি যতই পরাক্রমশালী ও স্বৈরাচারী হোক না কেন তাদের দেখে কখনো ভীত হয়ো না এবং হকের অনুসারী হওয়ার কারণে যত দুঃখ-কষ্ট ও বঞ্চনাই সইতে হোক সেজন্য দূঃখ করবে না। কেননা, ভবিষ্যতে তোমাদের জন্য এমন কিছু আছে যার কাছে দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত তুচ্ছ। মৃত্যুর সময় ফেরেশতারা যখন এই কথাগুলো বলে তখন তার অর্থ দাঁড়ায়, তুমি সামনে যে গন্তব্যস্থলের দিকে অগ্রসর হচ্ছো সেখানে তোমার জন্য ভয়ের কোন কারণ নেই। কারণ, সেখানে জান্নাত তোমার জন্য অপেক্ষমান।

আর দুনিয়াতে তুমি যা কিছু ছেড়ে যাচ্ছো সেজন্য তোমার দুঃখ ভারাক্রান্ত হওয়ার প্রয়োজন নেই কেননা, এখানে আমি তোমাদের অভিভাবক ও বন্ধু। আলমে বরযখ ও হাশরের ময়দানে যখন ফেরেশতারা এ কথাগুলো বলবে তখন তার অর্থ হবে, এখানে তোমাদের জন্য কেবল শান্তি আর শান্তি। পার্থিব জীবনে তোমরা যে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছো সেজন্য দুঃখ করো না এবং আখেরাতে যা কিছু সামনে আসবে সেজন্য ভয় করবে না। কারণ, আমরা তোমাদেরকে সেই জান্নাতের সুসংবাদ জানাচ্ছি যার প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসা হচ্ছে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

five × 5 =