মৃত্যু কি শেষ, মৃত্যু আসলে কি

0
62

জীবনের চিরসত্যের নাম মৃত্যু। চাইলেও মরতে হবে, না চাইলেও মৃত্যু আসবে।

মহান আল্লাহ বলেন,

প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; আর ভাল ও মন্দ দ্বারা আমি তোমাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি এবং আমার কাছেই তোমাদেরকে ফিরে আসতে হবে।

[সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ৩৫]

মহান আল্লাহ আরো বলেন,

প্রতিটি প্রাণ মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে, তারপর আমার কাছেই তোমরা প্রত্যাবর্তিত হবে।

[সূরা আল আনকাবূত আয়াত ৫৭]

জন্ম লাভ করেছি মানে মৃত্যু একদিন আসবেই। এই পৃথিবীতে কোনো প্রাণীই অমরত্ব লাভ করতে পারেনি।

মহান আল্লাহ বলেন,

আর (হে নবী) তোমার পূর্বে কোন মানুষকে আমি স্থায়ী জীবন দান করিনি; সুতরাং তোমার মৃত্যু হলে তারা কি অনন্ত জীবনসম্পন্ন হয়ে থাকবে ?

[সূরা আল আম্বিয়া আয়াত ৩৪]

মৃত্যু কি? মরে যাওয়া মানে কী শেষ হয়ে যাওয়া, নাকি নতুন কোনো কিছুর সূচনা? মরে যাওয়া মানে কি হারিয়ে যাওয়া, নাকি বেঁচে যাওয়া? প্রকৃত জীবনের সূচনা ঘটা?

মৃত্যু মানে ইহলৌকিক জীবনের ইতি টেনে পারলৌকিক জীবনে প্রবেশ করা। রুহ বা আত্মার জগতে স্থানান্তর। ক্ষণস্থায়ী জীবন থেকে চিরস্থায়ী জীবনে যাত্রা। মৃত্যু মানে জীবনের রূপান্তর। মৃত্যু হওয়া মানে হারিয়ে যাওয়া কিংবা শেষ হয়ে যাওয়া নয়; বেঁচে যাওয়া কিংবা চিরস্থায়ী জীবনে প্রবেশ করা।

মরতে যখন হবেই, তাহলে জন্ম কেন হলো? এই জীবনে কেন এলাম আমরা? ভিন্ন একটি জগতে কেনই বা আবার যেতে হবে আমাদের? একটি জগতের জন্যই মূলত এতগুলো জগতের সৃষ্টি। জন্ম লাভ করা, আবার মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া। যাত্রাটা অনেকটা এমন।

প্রতিটি মানুষের প্রকৃত গন্তব্য আখিরাত।

পরকালীন জীবনে আপনি কেমন থাকবেন না থাকবেন, তার প্রস্তুতিস্থল এই পৃথিবী। পৃথিবী একটি যাত্রাপথ। যেন সামান্যক্ষণের বাসযাত্রা বা উড়োজাহাজ ভ্রমণ। এর প্রকৃত উদ্দেশ্য পুনরুত্থিত হওয়া, ওপারের জীবনে সফল হতে পারা। পুনরুত্থিত হতেই হবে। এটাই চিরসত্য।

মহান আল্লাহ বলেন,

তিনিই তোমাদের জীবন দিয়েছেন, অতঃপর তিনিই তোমাদের মৃত্যু দেবেন, তারপর তিনিই তোমাদেরকে আবার জীবন দেবেন। নিশ্চয় মানুষ বড়ই অকৃতজ্ঞ।

[সূরা আল হজ্জ আয়াত ৬৬]

পৃথিবী হলো দারুল আমল, আমাদের কর্মক্ষেত্র। আখিরাত হলো দারুল জাজা, সেটি প্রতিদানের জগৎ। এই দুটির মাঝখানে মৃত্যু হলো ‘দারুল আমল’ থেকে ‘দারুল জাজা’য় যাওয়ার দরজা। কর্মের জগতে রয়েছে কর্ম; রয়েছে অকর্মের অবকাশ। কর্মজগতের কর্ম আর অকর্মের ভিত্তিতে সজ্জিত হবে প্রতিদানের জগৎ। সেখানে থাকবে শুধু প্রতিদান। থাকবে না কোনো কর্ম বা অকর্মের অবকাশ।

মহান আল্লাহ বলেন,

প্রতিটি প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। আর ‘অবশ্যই কিয়ামতের দিনে তাদের প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে। সুতরাং যাকে জাহান্নাম থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে সে-ই সফলতা পাবে। আর দুনিয়ার জীবন শুধু ধোঁকার সামগ্রী।

[সূরা আল ইমরান আয়াত ১৮৫]

গোটা মানবজীবনটাই একটি পরীক্ষাকেন্দ্র। সীমিত প্রশ্ন। সুনির্দিষ্ট উত্তর। পরীক্ষা শেষে অপেক্ষমাণ চূড়ান্ত সফলতার হাতছানি অথবা শাস্তি।

মহান আল্লাহ বলেন,

যিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন যাতে তিনি তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন যে, কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক থেকে উত্তম। আর তিনি মহাপরাক্রমশালী, অতিশয় ক্ষমাশীল।

[সূরা আল মুলক আয়াত ২]

সুতরাং প্রকৃত বুদ্ধিমান সেই ব্যক্তি, যে পরীক্ষার হলের সময়টুকুকে যথার্থ মূল্যায়ন করে এবং সঠিক উত্তর প্রদানের মাধ্যমে চূড়ান্ত সফলতা অর্জনে সচেষ্ট হয়।

পরীক্ষাকেন্দ্রে বা পরীক্ষার হলে কি কেউ সব সময় থেকে যায়? সেখানে কি থেকে যাওয়া যায়? যায় না। পরীক্ষার হল থেকে বেরিয়ে আসতে পারলে মনে হয়, বেঁচে গেলাম। এ জন্যই ইহজগৎকে কারাগারের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়া মুমিনের জন্য কারাগার আর কাফিরের জন্য জান্নাত।’ এর মানে কারাগারে যেমন মানুষ সব সময় থাকে না, থাকতে চায় না; দুনিয়াও মুমিনের সব সময় থাকার স্থান নয়। দুনিয়া হলো কেবলই আখিরাতের প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং প্রকৃত জীবনের পাথেয় তৈরিতে ব্যস্ত থাকা।

মহান আল্লাহ বলেন,

পাথেয় গ্রহণ কর। নিশ্চয় উত্তম পাথেয় তাকওয়া। আর হে বিবেক সম্পন্নগণ, তোমরা আমাকে ভয় কর।

[সূরা আল বাক্বারাহ আয়াত ১৯৭]

⚠️ মহান আল্লাহ উপুড় হয়ে শোয়া পছন্দ করেন না।

সুস্থ থাকতে ঘুমের কোন বিকল্প নেই। ঘুম হলো মহান আল্লাহর নিয়ামত। 

আমরা অনেকেই উপুড় হয়ে ঘুমাতে পছন্দ করি। এটি অভ্যাসে পরিণত হওয়ায় উপুড় হয়ে না ঘুমালে অনেকের ঘুমই আসে না। কিন্তু এই অভ্যাসটা কিন্তু মোটেই ভালো নয়। ঘুমের সমস্যা যাদের তারাই কেবল জানেন এটা কত মূল্যবান নিয়ামত। ইসলামে সবকিছুর সুনির্দিষ্ট বিধান রয়েছে।

আমরা  উপুড় হয়ে অনেকেই ঘুমাতে পছন্দ করি। কিন্তু এই অভ্যাসটা কিন্তু মোটেই ভালো নয়। উপুড় হয়ে ঘুমানো সাময়িক আরামদায়ক মনে হলেও এর কারণে মেরুদণ্ড, শ্বাসপ্রশ্বাস, শরীরের বিশ্রাম ও ঘুমের ওপরও প্রভাব পড়তে পারে।

উপুড় হয়ে শুতে আমাদের প্রিয় নবী রাসুল (সা.) নিষেধ করেছেন। এর কারণ হিসেবে হাদিস শরিফে দুটি বিষয়কে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক. মহান আল্লাহ এভাবে শোয়া পছন্দ করেন না। দুই. এটি জা*হা*ন্নামি*দের শোয়া। জা*হা*ন্নামি*দের উপুড় করেই জা/হা/ন্না/মে নিক্ষেপ করা হবে।

ইবনে তিখফা আল-গিফারি (রহ.) থেকে বর্ণিত, তার বাবা তাঁকে অবহিত করেন যে তিনি ছিলেন আসহাবে সুফফার সদস্য। তিনি বলেন, একদা শেষ রাতে আমি মসজিদে ঘুমন্ত অবস্থায় ছিলাম। আমি উপুড় হয়ে ঘুমে বিভোর অবস্থায় একজন আগন্তুক আমার নিকট এলেন। তিনি আমাকে তাঁর পায়ের সাহায্যে নাড়া দিয়ে বলেন, ওঠো! এই উপুড় হয়ে শুলে আল্লাহ অসন্তুষ্ট হন। আমি মাথা তুলে দেখি যে রাসুল(সা.) আমার শিয়রে দাঁড়িয়ে।

(আদবুল মুফরাদ, হাদিস : ১১৯৯)

অপর হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, আবু জর (রা.) বলেন, আমি উপুড় হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় নবী (সা.) আমার পাশ দিয়ে গেলেন। তিনি আমাকে তাঁর পা দ্বারা খোঁচা মেরে বলেন, হে জুনাইদিব! এটা তো জা*হা*ন্না/মের শয়ন।

(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৩৭২৪)

রাসুল (সা.)-এর বাণী—‘এটা তো জা/হা*ন্না*মের শয়ন’—এর পক্ষে পবিত্র কুরআনের আয়াতও পাওয়া যায়।

পবিত্র কুরআনে জা/হা/ন্না/মিদের প্রতি ইরশাদ হয়েছে, ‘যেদিন তাদের উপুড় করে টেনে নিয়ে যাওয়া হবে জাহা*ন্না*মের দিকে; সেদিন বলা হবে, জা/হা*ন্না*মের যন্ত্র*ণা আস্বাদন করো। ’

(সুরা : কমার, আয়াত : ৪৮)।

সুতরাং আমাদের উচিত, আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল যেভাবে শোয়া পছন্দ করেন না, সেভাবে শোয়া থেকে বিরত থাকা। ইনশাআল্লাহ, এতে আমাদের দুনিয়া-আখিরাত উভয় জাহানে কল্যাণ হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

5 × one =