বিশেষ প্রতিনিধি: চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে মধ্যরাতে পঞ্চাশোর্ধ এক নারীকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করার পর গাছের সঙ্গে বেঁধে বুলডেজার দিয়ে বসতঘর ভেঙে ট্রাক বোঝাই নিয়ে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টারের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় বসতঘরের মালিক পঞ্চাশোর্ধ বৃদ্ধা ছলিমা বেগমের (৫০) মারাত্মক জখম হন এবং তাঁর দুটো দাঁত পড়ে যায়। এছাড়া, বেড়াতে আসা তাঁর বোন বিবি হাজেরাকেও (৬০) মারধর করার হয়েছে।
অভিযোগ উঠেছে, নির্যাতিত নারী প্রথমে জোরারগঞ্জ থানাকে বিষয়টি জানালে তারা কোনো ব্যবস্থা নেননি। পরে জাতীয় জরুরি নম্বর ৯৯৯-এ ফোন করা হলে জোরারগঞ্জ থানা থেকে একটি ফোর্স পাঠানো হয়। কিন্তু ইউপি চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে অর্ধশতাধিকের বেশি সন্ত্রাসীবাহিনী উপস্থিত থাকায় পুলিশ তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেনি।
গত রবিবার (১৪ জানুয়ারি) রাত ১২টার সময় উপজেলার ৩ নং জোরারগঞ্জ ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড মধ্যম সোনাপাহাড় এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
জানতে চাইলে আহত ছলিমা বেগম সাংবাদিকদের জানান, ১৯৯৪ সালে ৩ লাখ টাকার বিনিময়ে স্থানীয় এক ব্যক্তির কাছ থেকে ১৬ কড়া জমি ক্রয় করে তার ওপর বসতঘর তৈরি করে গত ৩৫ বছর যাবত বসবাস করে আসছেন। অতীতে জমিটির তেমন মূল্য না থাকলেও ৫ বছর আগে নাহার এগ্রো নামে একটি পল্ট্রি শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করার কারণে জমিগুলোর দাম বহুগুণ বেড়ে যায়। ফলে জমির ওপর কু-নজর পড়ে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টারের।
জমি রেজিস্ট্রিতে ফাঁক থাকার বিষয়টি জানতে পেরে চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টার ভায়া দলিলের মাধ্যমে প্রথম মালিকের ওয়ারিশদের কাছ থেকে জমিটি ক্রয় করেন। জমি ক্রয় করার পর থেকে চেয়ারম্যান পরিবারটির আমাদের নানাভাবে নির্যাতন শুরু করতে থাকে। মামলা, হামলা ও হত্যার হুমকি দেখিয়ে জায়গা ছেড়ে দিতে চাপ প্রয়োগ করে। জোরারগঞ্জ থানায় একাধিক বৈঠক হলেও সমাধান হয়নি।
সর্বশেষ রবিবার রাত সাড়ে ১২টার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টারের নেতৃত্বে ৫০ থেকে ৬০ জনের একটি সন্ত্রাসী দল বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় আমার বসতঘর। ঘরবাড়ি ভেঙে দিয়ে ৩টি ট্রাক বোঝাই করে ঘরের আসবাবপত্রসহ সবকিছু নিয়ে যায়। এ সময় হাঁড়ি-পাতিল-খাট পালং আলমিরা কিছুই বাকি রাখেননি। ঘর মেরামতের জন্য রাখা ৫০ হাজার টাকাও নিয়ে যায়।
তিনি আরও জানান, আমি এবং আমার বোন বাধা দিতে গেলে তারা আমাদের দুজনকে কুপিয়ে রক্তাক্ত করে। তাদের লাঠির আঘাতে আমার দুটি দাঁত পড়ে যায়। আমরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে গেলে সেখানেও তার লোকজন আমাদের ঘিরে রাখে । হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের চাপে পড়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দিলেও চিকিৎসাপত্র সংগ্রহ করতে দেয়নি। আমি আমার দুটি দাঁত ফেরত চাই, আমার ঘর ফেরত চাই, সন্ত্রাসীদের বিচার চাই।
জোরারগঞ্জ থানা অফিসার ইনচার্জ আব্দুল্লাহ আল হারুন বলেন, ৯৯৯ থেকে কল পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। আহত নারীকে উদ্ধার করে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে পুলিশ সহায়তা করে। যতটুকু জানি, মহিলার পরিবারের কাছে জমি ক্রয়ের কোন প্রমাণ নেই। হামলা ও ঘর উচ্ছেদের ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ আসেনি। লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ঘটনার বিষয়ে অভিযুক্ত চেয়ারম্যান রেজাউল করিম মাস্টারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই প্রতিনিধিকে বলেন, আমি আমার ঘরে শুয়ে আছি। কোথায় কি হয়েছে আমি কিছুই জানি না। মহিলার অভিযোগ সত্য নয়।