নিফাক বা বিশ্বাসঘাতকতা একটি নিকৃষ্ট বৈশিষ্ট্য। ইসলামি পরিভাষায় মুনাফিক অর্থ হলো কথায় ও কাজে দ্বিমুখী আচরণকারী। মুখে এক কাজে আরেক। মুনাফিকরা মানুষের সামনে এক ধরনের এবং পেছনে আরেক ধরনের আচরণ করে থাকে। কিন্তু মুমিন পরিচ্ছন্ন ব্যক্তি। তাই শিরক, দ্বিমুখিতা, অনৈতিকতা, মিথ্যা, হিংসা, লোভ, শঠতা ইত্যাদি তার হৃদয়ে স্থান পেতে পারে না।
নিফাক বা দ্বিমুখী আচরণ ইমানদারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এটি মুমিনের অন্তর থেকে ইমানকে বের করে দেয়। এতে তার সব সৎ-আমল গুনাহে পরিবর্তিত হয়ে যায়। মুনাফিক কে? : ইসলামের পরিভাষায় মুনাফিকের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে সাইয়্যিদ মুফতি আমিনুল ইহসান বলেছেন, ‘মুনাফিক হলো এমন ব্যক্তি, যে ইসলামকে মুখে প্রকাশ করে এবং অন্তরে কুফরি লালন করে।’ আল্লাহতায়ালা সুরা বাকারার ৮ থেকে ২০ পর্যন্ত মোট ১৩টি আয়াত মুনাফিকদের চরিত্র প্রসঙ্গে অবতীর্ণ করেছেন।
তা ছাড়া বিভিন্ন সুরায় আরও ৩৮টি আয়াতে মুনাফিকদের আলোচনা করেছেন। তাদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য হলো দ্বিমুখী আচরণ : তারা দুমুখো আচরণ করে। বাহ্যিকভাবে নিজেদের বিশ্বাসী বলে পরিচয় দেয়; অথচ অন্তরে ইমান নেই। ইমান তিনটি জিনিসের সমন্বয়ের নাম ১. অন্তরের বিশ্বাস, ২. মৌখিক স্বীকৃতি, ৩.স্বীকৃতি অনুযায়ী আমল করা। মুনাফিক শুধু মৌখিকভাবে ইমানের স্বীকৃতি দান করে; কিন্তু অন্তরে মোটেও বিশ্বাস লালন করে না। আল্লাহতায়ালা এরশাদ করেন, ‘মানুষের মধ্যে এমন কতিপয় লোক আছে, যারা বলে আমরা আল্লাহ ও আখেরাতে ইমান এনেছি অথচ তারা মুমিন নয়।’ (সুরা বাকারা : ৮) প্রতারক ও ধোঁকাবাজ : তারা খুবই ধূর্ত প্রতারক ও ধোঁকাবাজ।
আল্লাহ ও মুমিনদের সঙ্গে তারা প্রতারণা করে। তারা মনে করে এতে তারা সফলকাম হচ্ছে অথচ প্রকারান্তরে তারাই প্রতারিত ও বঞ্চিত হচ্ছে। সত্য পথ থেকে দূরে গিয়ে পথভ্রষ্ট হচ্ছে। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আল্লাহ ও ইমানদারদের তারা ধোঁকা দিতে চায়, আসলে তারা অন্য কাউকে ধোঁকা দিচ্ছে না; বরং নিজেদেরই প্রতারিত করছে।
অথচ তাদের সে অনুভূতি নেই।’ (সুরা বাকারা : ৯) আল্লাহতায়ালা আরও বলেন, ‘অবশ্যই মুনাফিকরা আল্লাহর সঙ্গে প্রতারণা করছে। অথচ তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতারিত করে। আসলে তারা যখন নামাজে দাঁড়ায়, তখন লোকদেখানোর জন্য দাঁড়ায়। তারা আল্লাহকে অল্পই স্মরণ করে। এরা দোদুল্যমান অবস্থায় ঝুলন্ত; এদিকেও নয়, ওদিকেও নয়।’ (সুরা নিসা : ১৪৩-১৪৪)