খিলগাঁও জুড়ে চলছে পুলিশ আর মাদক ব্যবসায়ি সিন্ডিকেটের যুগপদ হয়রানি ও নির্যাতন

0
1362

অপরাধী ও মাদক ব্যবসায়ীদের আখড়ায় পরিণত হয়েছে রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকা। এখানে অহরহ ঘটছে ছিনতাই, ডাকাতিসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকান্ড। মাদক ব্যবসার আধিপত্য নিয়ে, প্রায়শ হচ্ছে খুনাখুনি। স্থানীয়দের অভিযোগ, মূলত মাদক ব্যবসাকে ঘিরেই অন্যসব অপরাধের বিস্তার ঘটছে এখানে। আর এ মাদক ব্যবসা চলছে সমঝোতার ভিত্তিতে। পুলিশের সোর্স পরিচয়দানকারী অন্তত ২০ জন সরাসরি মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে আছেন। তারাই ম্যানেজ করছে থানা পুলিশ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা ও স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের। এদিকে দিন দিন নিরাপত্তাঝুঁকি বাড়ছে এলাকাবাসীর। রাজধানীর খিলগাঁও থানা এলাকার অধিকাংশ স্থানেই রয়েছে মাদক বিক্রির স্পট। স্থানীয়রা জানান, সোর্সরাই দৈনিক প্রায় অর্ধকোটি টাকার মাদক বাণিজ্য সচল রেখেছে। এদিকে মাদক ও জুয়ার স্পটগুলো থেকে সাপ্তাহিক ও মাসিক ভিত্তিতে মোটা চাঁদা পাচ্ছেন ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী, সংশ্লিস্ট থানার কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তা ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট জোনের কয়েকজন।
যা চলছে খিলগাঁও জুড়ে
রাজধানীর খিলগাঁওয়ের অলিতেগলিতে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশে চলছে অবাধ মাদক ব্যবসা। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সমাজ-বিরোধী মাদক ব্যবসায়ী অপততপরতা রুখতে গড়ে ওঠে জনমত। এলাকাবাসীর স্বতস্ফুর্ত সমর্থন ও অংশগ্রহণে গড়ে ওঠে মাদকবিরোধী সামাজিক আন্দোলন। এতে খিলগাঁওয়ে মাদক ব্যবসা ভাটা পড়ে, শংকিত হয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদকবিরোধী আন্দোলনের বিরুদ্ধে সংগঠিত হয় তারা মোটা অংকের চাঁদা প্রদানের মাধ্যমে গড়ে তুলেছে মোটা অংকের ফান্ড। সেই টাকা খরচ করে মাদকবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারীদের বিরুদ্ধে নিচ্ছে একের পর হয়রানিমূলক পদক্ষেপ। পরিস্থিতি এতোটাই গুরুতর হয়ে ওঠেছে যে, মাদক বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আন্দোলনকারীরাই এখন মাদক ব্যবসায়ীদের হুমকির মুখে বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়িরা কতিপয় পুলিশ নিয়ে আন্দোলনকারীদের বাড়ি বাড়ি চড়াও হচ্ছেন। তাদের হুমকি ধমকিতে হয়রানি-নির্যাতনের অজানা শঙ্কায় আছেন মাদক বিরোধীরা। এদিকে মাদক উচ্ছেদের আন্দোলন বন্ধ থাকায় ফের মাঠ দখল করে নিয়েছে মাদক ব্যবসায়িরা। খিলগাঁওয়ে আবার সচল হয়েছে মাদক কেনাবেচার খোলামেলা হাটবাজার।

সাম্প্রতিক সময়ে খিলগাঁও এলাকায় স্থানীয় যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজের নেতৃত্বে মাদক বিরোধী আন্দোলন জোরদার হয়ে ওঠেছেল। মাদক বিরোধী প্রতিবাদ সভা, মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, থানা ঘেরাওসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছিলেন তারা। মাদক বিরোধী এ আন্দোলনে স্কুল-কলেজের শিার্থীরাসহ সর্বস্তরের লোকজন অংশ নেন। তাদের ধারাবাহিক আন্দোলনের মুখে মাদকের খোলামেলা বেচাকেনা অনেকটাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিলো। মাদক বিরোধী আন্দোলনকারীদের দমন করতে স্থানীয় খিলগাঁও থানার কয়েকজন দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার সহায়তায় পাল্টা ব্যবস্থা নেয়ার কৌশল নিয়েছে মাদক ব্যবসায়িরা। এরই অংশ হিসেবে চাঁদাবাজীর মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে মাদক বিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব যুবলীগ নেতা আব্দুল আজিজকে।
মাদক বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেওয়ায় খিলগাঁও এলাকার বেশ কয়েকজনকে নানারকম হুমকি-ধামকি দিচ্ছে মাদক ব্যবসায়ীরা। মাদক ব্যবসায়ি আর মাসোহারা খাওয়া পুলিশ কর্মকর্তারা মিলেমিশে সিন্ডিকেট গড়ে মাদক বিরোধী আন্দোলনকারীদের তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে। মাদক বিরোধী র‌্যালি ও মিছিলে অংশ নেয়াদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা মামলা দায়ের, হামলা চালয়ে আহত করা ও পুলিেেশর হুমকি ধমকি চলছে সমানতালে। এরমধ্যেই আন্দোলনের মূল নেতা আব্দুল আজিজকে পুলিশ আটক করে আরেক মাদক ব্যবসায়িকে বাদি সাজিয়ে মিথ্যা চাঁদাবাজির মামলায় জেলে পাঠিয়েছে সেই সাথে মিথ্যে কিছু পেইন্ডিং মামলা দেন। এবার ছড়িয়ে পড়েছে আতংক। ফলে মাদক বিরোধী আন্দোলনরত মানুষজন খিলগাঁও ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে সকল মাদক ব্যবসায়ি পুনরায় খিলগাঁও এলাকায় ঢুকে বুক ফুলিয়ে বিচরণ করছে এবং সেখানে আবারও মাদক বাণিজ্য চলছে রমরমাভাবে।

নূর মোহাম্মদের আখড়ায়
হরেক অপরাধ
রাজধানীর অলিগলিতে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে ওঠা মাদক নিরাময় কেন্দ্রগুলোর চিকিতসাব্যবস্থার ধরণ রীতিমতো শিউরে ওঠার মতো। সেগুলোতে মাদকাসক্তদের সুস্থ করার নামে চলে নানা অপচিকিতসা। নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানে চিকিতসা করাতে আসা রোগীরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন। অনেক কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রয়েছে মাদকাসক্তি নিরাময়ের নামে মাদকদ্রব্য বেচাকেনার অভিযোগ। বিধিমালা ভঙ্গ করে অধিকাংশ মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র কথিত চিকিতসার প্রয়োজনের কথা বলেও ব্যবহার করা হচ্ছে মাদক। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা মহানগরে অবৈধ প্রায় পাঁচ শতাধিক মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র আছে। রাজধানীর বাইরে আছে আরও প্রায় তিন গুণ। এগুলোকে সেবামূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে দেখিয়ে কেউ কেউ সমাজসেবা অধিদফতর বা ঢাকা সিটি করপোরেশন ও স্থানীয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কাছে সনদ নিয়ে কেন্দ্র পরিচালনা করছেন। এসব কেন্দ্রে চিকিতসা সুবিধা বলতে কিছু নেই, আছে অভিযোগ আর অভিযোগ। রোগীর ওপর শারীরিক নির্যাতন, মাদকের ব্যবসা পরিচালনা ও রোগীর স্বজনদের কাছ থেকে ইচ্ছামতো অর্থ আদায় করার অভিযোগ তো রয়েছেই। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেশ কয়েকটি অবৈধ কেন্দ্রের সন্ধান মেলে। আবাসিক বাড়ির একটি ফ্ল্যাট। ছোট ছোট কয়েকটি কক্ষ। নেই আলো-বাতাসের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা, ঘরের জানালা বলতে সামান্য ফোকর। তার মধ্যেই রান্না ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। চিকিতসক নেই, নেই চিকিতসা সরঞ্জাম। অবিশ্বাস্য হলেও এটি একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্র।
রাজধানীর খিলগাঁও থানার উত্তর গোড়ান সিপাহীবাগের ‘সৃষ্টি’ নামক কথিত মাদক নিরাময় কেন্দ্রটি রীতিমত অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। খিলগাঁও রেলগেট সংলগ্ন নির্বাণ, খিলগাঁও চৌরাস্তা আইডিয়াল কলেজ সংলগ্ন রূপান্তর, খিলগাঁও মেরাদিয়া ভূঁইয়াপাড়ায় প্রান্তি, দক্ষিণ গোড়ান শান্তিপুরে স্বপ্ন মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রসহ বিভিন্ন এলাকায় শতাধিক অবৈধ কেন্দ্র রয়েছে। এরমধ্যে বহু মামলার আসামি নূর মোহাম্মদের গড়ে তোলা নিরাময় কেন্দ্র সৃষ্টিতে হরদম চলে মাদক কেনাবেচা, সেবন আর রমরমা জুয়ার আসর। প্রতারণার বাণিজ্য ফেঁদে বসেছে নূর মোহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি। নিজেকে শ্রমিকলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে তিনি।
জানা যায়, এখানে মেঝেতে ঢালা বিছানায় ২০-৩০ জন ও কেবিনের মাধ্যমে নিয়মনীতি না মেনে চিকিৎসা দেয়া হয়। এ ব্যাপারে হাদীর কর্মকর্তা লিটন অনুমোদনের ব্যাপারে কোনো সদুত্তর দেননি। তার মতে, লাইসেন্সের দরকার নেই। এ বিষয়ে গোড়ান সিপাহীবাগের প্রশান্তির কো-অর্ডিনেটর ফারুক রহমান মিন্টু বলেন, সরকারকে নিয়মিত ট্যাক্স-ভ্যাট দিয়ে মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের চিকিতসা সেবা দিয়ে আসছি। বাণিজ্য নয়, আমাদের মূল লক্ষ্য সেবাদান। তবে সিপাহীবাগের সৃষ্টিসহ অন্যান্য মাদক নিরাময় কেন্দ্রের মালিকরা সাংবাদিক আগমনের খবর জেনেই নিরাময় কেন্দ্র ছেড়ে পালিয়ে যান। সৃষ্টির মালিক নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে কথিত মাদক নিরাময় কেন্দ্র’র নামে মাদকের পাইকারি বেচাকেনা ও রমরমা জুয়ার আসর পরিচালনার অভিযোগ আছে। তার নেতৃত্বেই মাদক ব্যবসায়িরা চাঁদা তোলে প্রায় ত্রিশ লাখ টাকার তহবিল বানিয়েছে। নূর মোহাম্মদ সে তহবিলের টাকা খরচ করেই মাদক বিরোধী আন্দোলনকারীদের নানাভাবে হয়রানি ও মামলার ফাঁদে ফেলছে। গত ৪-১১-২০১৭ ইং শনিবার, সামচুল আলম (এ.ডি) এর নেতৃত্বে নূর মোহাম্মদ এর সৃষ্টি মাদকা নিরাময় কেন্দ্রটি সিল গালা করে দেওয়া হয়। মাদক অধিদপ্তরের কর্মকর্ত মুকুল জ্যোতি চাকমার সাথে কথ বলে জানা যায় যে, সৃষ্টি নিরাময় কেন্দ্রে মাদক নিরাময় কেন্দ্রের কোন প্রকার নিয়মনিতি মেনে চলা হতনা এবং অস্থ্যকর ও নোংরা পরিবেশে চিকিতসার নামে সাধারন মানুষ কে প্রহষন করা হত। যা সম্পূর্ণ মানবধিকার পরিপন্থী।

 

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

12 + 7 =