দিনেরবেলা চলাচল নিষিদ্ধ লরি-কাভার্ড ভ্যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছেনা ট্রাফিক পুলিশ

5
784

স্টাফ রিপোর্টারঃ রাজধানীর ভিতরে দিনেরবেলা চলাচল নিষিদ্ধ লরি-কাভার্ড ভ্যানের বিরুদ্ধে আইনানুগ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছেনা ট্রাফিক পুলিশ। বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পরে আরো বেশী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে লরি-কাভার্ড ভ্যানের দালাল সিন্ডিকেট চক্রটি। লরি-কাভার্ড ভ্যানের মালিকদের নিকট থেকে দালাল চক্রটি গাড়ি প্রতি মাসিক ২ হাজার টাকা করে নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের কনসটেবল থেকে শুরু করে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা পর্যন্ত ১৫শ টাকা ভাগবাটোয়ারা করে দিয়ে গাড়ি প্রতি ৫শ টাকা করে হাতিয়ে নিচ্ছে চক্রটি।

আর এই দালাল চক্রের মুলহোতা মাসুম তার নিয়ন্ত্রনে ৭০/৮০টি গাড়ির জন্য মাসিক অন্তত লাখ টাকার বিনিময়ে ট্রাফিক পূর্ব জোনের এডিসি নাজমা আক্তার সিন্ডিকেটের সাথে লিয়াজো করে দিনের বেলায় রাজধানীর ভিতরে চালাচ্ছে। এই নিয়ে কতিপয় ট্রাফিক সার্জেন্ট সহ সচেতন জনমনে চরম অসন্তোষ দেখা গেছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, রাজধানাীর ভিতরে সকাল ৬টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত ১৫শ কেজি ওজনের অতিরিক্ত কোন ভারী যান প্রবেশ সম্পূর্ন নিষেধ থাকলেও ২৫-৩০ টন ওজনের লরি-কাভার্ড ভ্যান খুব সহজেই দেশে বিভিন্ন প্রান্তরে আসা যাওয়া করছে। আর এজন্য মালিক পক্ষকে ট্রাফিক পুলিশের কনসটেবল থেকে শুরু করে জোনাল এডিসি পর্যন্ত দিতে হচ্ছে মোট অংকের মানতি বা মাসোয়ারা। গাড়ির মালিকরা এক শ্রেনীর দালালের মাধ্যমে ট্রাফিক কর্মকর্তাদের মাসিক চুক্তিভিত্তিক ম্যানেজ করায় তাদের গাড়িগুলোই কেবল দিনে বেলা রাজধানীর ভিতরে আসা যাওয়া করতে পারে। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে সার্জেন্টরা ট্রাফিক আইনে কোন মামলা করেনা।
সুত্র জানায়, ডেমরা জোনের টিআই সাইফুল ও মনজু, সার্জেন্ট ইমরুল ও তারেক, ওয়ারী জোনের টিআই জাকির, রামপুরা জোনের টিআই বিপ্লব, সবুজবাগ জোনের টিআই মাহবুবকে নিয়ন্ত্রন করে জোনাল এডিসি নাজমা আক্তার। একারনে লরি-কাভার্ড ভ্যানের দালাল মাসুম এডিসি নাজমা আক্তারের সাথে মাসিক গাড়ি প্রতি ১৫শ টাকা চুক্তিতে ৭০ থেকে ৮০ টি গাড়ি নিয়ন্ত্রন করে। তবে ১৫শ টাকার ভাগবাটোয়ারা ট্রাফিকের কনসটেবল থেকে নাজমা আক্তার পর্যন্ত হয়ে থাকে বলে একাধিক সুত্র জানায়। মাসুম নিজেকে কমলাপুর আইসিডি নেতা পরিচয় দিয়ে আইসিডি থেকে অন্তত ৮০ টি লরি-কাভার্ড ভ্যান দেশের বিভিন্ন প্রান্তরে পাঠায়। আর এই গাড়ি গুলো দিনের বেলায় উক্ত ৫টি জোন দিয়ে আসা যাওয়া করে। এডিসি নাজমা আক্তারের সাথে মাসুমের সরাসরি লিয়াজো থাকায় জোনাল টিআইরা এগুলোর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করে না। মাঝে মধ্যে কোন গাড়ির প্রতি ব্যবস্থা নিলে দালাল মাসুম তা সমাধান করে দেয়। এজন্য গাড়ির মালিকরা মাসুমের সাথে গাড়ি প্রতি ২ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়। যে সব গাড়ির মালিকরা মাসিক হারে টাকা দিতে রাজি থাকে তারাই কেবল মাসুমের সাথে লিয়াজো করে। মাসুম ঐ সব গাড়ির ড্রাইভারদেরকে টুকেন হিসেবে সার্জেন্ট ইমরুলের ভিজিটিং কার্ড দিয়ে থাকে। সুত্র জানায়, কোন একটি গাড়ি রাজধানীর কোন পয়েন্টে অন্য কোন সার্জেন্ট আটক করলে ঐ মুহুর্তে ড্রাইভাররা সার্জেন্টদেরকে সার্জেন্ট ইমরুলের ভিজিটিং কার্ড দেখালে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। তাদেরকে কোন ঝামেলায় পড়তে হয় না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাভার্ড ভ্যানের এক ড্রাইভার বলেন, আমার মালিকের ৬টি গাড়ি। এগুলো মাসুম ভাইয়ের মাধ্যমে মানতি করা আছে। গাড়ি প্রতি কত টাকা জানতে চাইলে সে বলে মাসে ২ হাজার টাকা সহ আরো ৫শ টাকা মতো খরচ করতে হয়। মাসুম ভাইয়ের সাথে এডিসি স্যারের মানতি করা আছে। মালিকরা সময় মতো টাকা দিয়ে দেয়।
দালাল মাসুমের নিকট জানতে চাইলে বলে, পত্রিকায় লিখলে কিছুই হবে না। আমি মানতি দিয়ে গাড়ি চালাই। আমার গাড়ি রেকার হবে না।
এব্যাপারে ট্রাফিক পূর্ব বিভাগের ডিসি কামরুজ্জামান বলেন, দিনের বেলা যেসব গাড়ি রাজধানীর ভিতরে প্রবেশ করে সেগুলোকে মামলা দেয়া হয়। আর যদি কেউ মামলা না দিয়ে টাকা পয়সা লেনদেন করে তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

16 − fifteen =