আমতলী খাদ্য গুদামে পাইপ দিয়ে বস্তা থেকে চাল চুরি।

0
441

আমতলীপ্রতিনিধিঃ বরগুনার আমতলী খাদ্য গুদামের বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস চাল চুরি করেছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় শুক্রবার রাতে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদ খাদ্য গুদাম পরিদর্শন শেষে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। তদন্ত কমিটি শনিবার তদন্ত কাজ শুরু করেছেন।


জানাগেছে, আমতলী খাদ্য গুদামে দুই হাজার তিন’শ এক মেট্র্কি টন ৬’শ ৮৪ কেজি চাল মজুদ রয়েছে। ওই চালের বস্তা থেকে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস তার ঘনিষ্ট সহযোগীদের সহায়তায় পাইপ দিয়ে চাল চুরি করে আসছিল। এভাবে প্রতি বস্তা থেকে তিন-চার কেজি চাল সরিয়ে ফেলা হতো এমন অভিযোগ গুদাম শ্রমিকদের। পাইপ দিয়ে চাল চুরির একটি ভিডিও ফুটেজ বৃহস্পতিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

এতে মানুষের মাঝে ব্যপক হইচই ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। এ ঘটনাটি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদের নজরে আসে। শুক্রবার রাতে তিনি খাদ্য গুদাম পরিদর্শনে আমতলী আসেন। এ সময় তার সাথে ছিলেন বরগুনা অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোঃ নুর হোসেন স্বজল, আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ ফারুক হোসেন, ইউএনও মোঃ আসাদুজ্জামান ও আমতলী উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মতিয়ার রহমান। গুদাম পরিদর্শন শেষে মহাপরিচালক পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ লিয়াকত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।

শনিবার তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করেছেন। তদন্ত কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন পটুয়াখালী সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিএম সফিকুল ইসলাম ও বরগুনা সদর খাদ্য নিয়ন্ত্রক দ্রুব মন্ডল। তদন্ত কমিটি আমতলীর চারটি খাদ্য গুদাম সিলগালা করে দিয়েছেন। এদিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পাইপ দিয়ে চাল চুরির ঘটনা ছড়িয়ে পরলে ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্মকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিবিশ্বাসতার লোকজন দিয়ে চুরি করা চালের বস্তায় চাল ভর্তি করেছেন বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।


নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য গুদামের কয়েকজন শ্রমিক বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা তার ঘনিষ্ট লোকজন দিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বস্তা থেকে পাইপ দিয়ে চাল সরিয়ে আসছিল। কেউ তার এমন কাজের প্রতিবাদ করলেই তিনি তাকে বিভিন্ন ধরনের ভয়ভীতি প্রদর্শন করে নিভৃত করার চেষ্টা করেন। তাতে সম্ভব না হলে তাকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করেছেন তিনি।


খাদ্য গুদামের উপ-খাদ্য পরিদর্শক মোঃ মোশারফ হোসেন বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্তকর্তা রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস প্রায়ই তার ঘনিষ্ট লোকজনের মাধ্যমে পাইপ দিয়ে বস্তা থেকে চাল চুরি করতেন। আমি এর প্রতিবাদ করলে আমাকে ভয়ভীতি দেখান তিনি। গত মাসের আমি এর জোড়ালো প্রতিবাদ করলে আমাকে ম্যানেজ করার জন্য পকেটে টাকা ভরে দেন।


আমতলী ভারপ্রাপ্ত খাদ্য গুদাম কর্তকর্তা (ওসিএলএসডি) রবীন্দ্রনাথ বিশ্বাস সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজ তার গুদামের না দাবী করে বলেন, আমাকে ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে ফাঁসানোর জন্য একটি গ্রুপ এ কাজটি করেছে। মহাপরিচালক ওই ফুটেজ মিলিয়ে দেখেছেন। তিনি আরো বলেন,
ওই ফুটেজ যদি আমার গুদামের হয়ে থাকে তাহলে আমাকে যে শাস্তি দেয়া হয় সেই শাস্তি মাথা পেতে নেব।
তদন্ত কমিটির প্রধান পটুয়াখালী জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মোঃ লিয়াকত হোসেন বলেন, তদন্ত কাজ শুরু করেছি। তদন্তের স্বার্থে আমতলীর চারটি খাদ্য গুদাম সিলগালা করা হয়েছে। দু’এক দিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।


আমতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, খাদ্য গুদামের ঘটনায় তদন্ত কমিটি কাজ করছে। ওই তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যব¯’া নেয়া হবে। তিনি আরো বলেন, আমি যতদিন আছি ততদিন খাদ্য গুদামে কোন অনিয়ম হতে দেয়া হবে না।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোঃ সারোয়ার মাহমুদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য বিভাগে সচ্ছতা ফিরিয়ে আনার জন্য নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।

তারই ধারাবাহিকতায় আমতলী খাদ্য গুদামে অনিয়মের খবর পেয়ে পরিদর্শনে এসেছি। অনিয়ম তদন্তে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে চাল চুরির ঘটনা প্রমানিত হলে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এতে বিন্দু পরিমান ছাড় দেয়া হবে না। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ খাদ্য বিভাগে সচ্ছতা ফিরিয়ে আনা হবে। খাদ্য বিভাগে কোন অনিয়ম চলবে না। যে কোন মুল্যে তার প্রতিহত করা হবে

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

four × 5 =