বদলী হজ: যদি কোনো ব্যক্তির ওপর হজ ফরয ও উমরা ওয়াজিব হয়; কিন্তু সে সশরীরে তা আদায় করতে সক্ষম না হয়, তাহলে তার পক্ষ থেকে দায়িত্ব নিয়ে অন্য কোনো ব্যক্তির হজ পালনকে বদলী হজ

0
467

 এবং উমরা আদায়কে বদলী উমরা বলা হয়। বেশ কিছু হাদীস দ্বারা বদলী হজ ও বদলী উমরার বিধান প্রমাণিত হয়। যেমন ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে, খাছআম গোত্রের জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে বললেন, «يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ فَرِيضَةَ اللَّهِ عَلَى عِبَادِهِ فِى الْحَجِّ أَدْرَكَتْ أَبِى شَيْخًا كَبِيرًا ، لاَ يَثْبُتُ عَلَى الرَّاحِلَةِ ، أَفَأَحُجُّ عَنْهُ قَالَ « نَعَمْ ». وَذَلِكَ فِى حَجَّةِ الْوَدَاعِ». “হে আল্লাহর রাসূল, আল্লাহ তার বান্দাদের ওপর যা হজের ব্যাপারে ফরয করেছেন তা আমার পিতাকে খুব বৃদ্ধ অবস্থায় পেয়েছে। তিনি বাহনের ওপর স্থির হয়ে বসতে পারেন না। তবে কি আমি তার পক্ষ থেকে হজ আদায় করে দিব? রাসূলুল্লাহ (সাঃ) উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’, ঘটনাটি ছিল বিদায় হজের সময়কার। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৫১৩; সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৩৩৪] আবূ রাযীন বর্ণিত হাদীসে উল্লিখিত হয়েছে, জনৈক ব্যক্তি বলল, «يَا رَسُولَ اللَّهِ إِنَّ أَبِي شَيْخٌ كَبِيرٌ لَا يَسْتَطِيعُ الْحَجَّ وَلَا الْعُمْرَةَ وَلَا الظَّعْنَ قَالَ حُجَّ عَنْ أَبِيكَ وَاعْتَمِرْ». “হে আল্লাহর রাসূল, আমার পিতা একেবারে বৃদ্ধ। তিনি হজ-উমরা করার শক্তি রাখেন না। সাওয়ারীর উপর উঠে চলতেও পারেন না। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, তোমার পিতার পক্ষ থেকে তুমি হজ ও উমরা করো। [তিরমিযী, হাদীস নং ৯৩০; আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১৮১০] যার ওপর হজ ফরয তিনি যদি হজ না করেই মারা যান, তাহলে তার রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে হজ আদায়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বের করতে হবে। ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বর্ণিত হাদীসে এসেছে, «أَمَرَتْ امْرَأَةٌ سِنَانَ بْنَ سَلَمَةَ الْجُهَنِيَّ أَنْ يَسْأَلَ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنَّ أُمَّهَا مَاتَتْ وَلَمْ تَحُجَّ أَفَيُجْزِئُ عَنْ أُمِّهَا أَنْ تَحُجَّ عَنْهَا قَالَ «نَعَمْ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّهَا دَيْنٌ فَقَضَتْهُ عَنْهَا أَلَمْ يَكُنْ يُجْزِئُ عَنْهَا فَلْتَحُجَّ عَنْ أُمِّهَا». “সিনান ইবন আবদুল্লাহ জুহানির স্ত্রী তাকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে জিজ্ঞেস করতে বললেন যে, তার মা মারা গেছেন অথচ তিনি হজ করতে পারেন নি। তার জন্য কি তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ করা যথেষ্ট হবে? তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, যদি তার মায়ের ওপর কোনো ঋণ থাকত, আর সে তার পক্ষ থেকে তা পরিশোধ করত, তাহলে তার পক্ষ থেকে কি তা পরিশোধ হত না? তাই সে যেন তার মায়ের পক্ষ থেকে হজ আদায় করে। [নাসাঈ, হাদীস নং ২৬৩৩] ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত অপর এক হাদীসে এসেছে, «أَنَّ امْرَأَةً مِنْ جُهَيْنَةَ جَاءَتْ إِلَى النَّبِىِّ صلى الله عليه وسلم فَقَالَتْ إِنَّ أُمِّى نَذَرَتْ أَنْ تَحُجَّ ، فَلَمْ تَحُجَّ حَتَّى مَاتَتْ أَفَأَحُجُّ عَنْهَا قَالَ «نَعَمْ». حُجِّى عَنْهَا ، أَرَأَيْتِ لَوْ كَانَ عَلَى أُمِّكِ دَيْنٌ أَكُنْتِ قَاضِيَةً اقْضُوا اللَّهَ ، فَاللَّهُ أَحَقُّ بِالْوَفَاءِ». “জুহাইনা বংশের জনৈক মহিলা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, ‘আমার মা হজের মানত করেছিলেন। তিনি সে হজ আদায়ের আগেই মারা গেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ করবো?’ তিনি বললেন, ‘হ্যাঁ, তুমি তার পক্ষ থেকে হজ করো। তোমার মায়ের যদি কোনো ঋণ থাকতো তুমি কি তা পরিশোধ করতে না? তুমি (তোমার মায়ের যিম্মায় থাকা) আল্লাহর হক পরিশোধ করো। কেননা আল্লাহর পাওনা অধিক পরিশোধযোগ্য। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং ১৮৫২] 🟠বদলী হজের পূর্বে হজ করা জরুরী কি না? বিশুদ্ধ মতানুসারে প্রতিনিধি হওয়ার আগে তার নিজের হজ করা জরুরী। (ইমাম আবূ হানীফা রহ.-এর মতে, বদলী হজ করার জন্য তার পূর্বে হজ করা জরুরী নয়। তবে যিনি পূর্বে হজ করেছেন তাকে দিয়ে বদলী হজ করানো উত্তম।) ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, أَنَّ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم سَمِعَ رَجُلًا يَقُولُ لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ قَالَ مَنْ شُبْرُمَةُ قَالَ أَخٌ لِي أَوْ قَرِيبٌ لِي قَالَ حَجَجْتَ عَنْ نَفْسِكَ قَالَ لَا قَالَ حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ. “রাসূলুল্লাহ (সাঃ) জনৈক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, শুবরুমার পক্ষ থেকে লাব্বাইক। তিনি বললেন, শুবরুমা কে? সে বলল, আমার ভাই, অথবা সে বলল আমার নিকটাত্মীয়। তিনি বললেন, তুমি কি নিজের হজ করেছ? সে বলল, না। তিনি বললেন, (আগে) নিজের হজ করো, তারপর শুবরুমার পক্ষ থেকে হজ করবে। [আবূ দাঊদ, হাদীস নং ১৮১১; ইবন মাজাহ, হাদীস নং ২৯০৩] 🟤বদলী হজ সম্পর্কে জ্ঞাতব্য: (১) বদলী হজে প্রেরণকারীর উচিৎ একজন সঠিক ও যোগ্য ব্যক্তিকে তার পক্ষে হজ করতে পাঠানো, যিনি হজ-উমরার নিয়ম-কানূন সম্পর্কে সম্যক জ্ঞাত এবং যার অন্তরে রয়েছে তাকওয়া বা আল্লাহর ভয়। (২) বদলী হজকারীর কর্তব্য আপন নিয়ত পরিশুদ্ধ করা এবং দুই উদ্দেশ্যের যে কোনো একটি সামনে রেখে বদলী হজ করতে যাওয়া। (ক) যে ব্যক্তি চায় মৃত ব্যক্তিকে তার হজের দায় থেকে মুক্ত করতে। আল্লাহর প্রাপ্য এই ঋণ পরিশোধের মাধ্যমে তার উপকার করতে। সে এটা করবে হয়তো মৃত ব্যক্তির সাথে তার আত্মীয়তার সূত্রে কিংবা একজন মুসলিম ভাই হিসেবে। অতএব, যতটুকু অর্থ খরচ হবে তাই গ্রহণ করবে। অবশিষ্টগুলো ফিরত দিবে। এটি একটি ইহসান বা সৎকর্ম আর আল্লাহ তা‘আলা সৎকর্মশীলকে ভালোবাসেন। (খ) যে ব্যক্তি হজ করতে এবং হজের নিদর্শনাবলি দেখতে ভালোবাসে অথচ সে হজের খরচ যোগাতে অক্ষম। অতএব, সে তার প্রয়োজন পরিমাণ অর্থ নিবে এবং তার ভাইয়ের পক্ষ থেকে হজের ফরয আদায় করবে। মোটকথা, বদলী হজকারী হজের জন্য টাকা নিবে। টাকার জন্য হজে যাবে না। আশা করা যায়, এ ব্যক্তি বিশাল নেকীর অধিকারী হবে এবং তাকে প্রেরণকারীর মতো সেও পূর্ণ হজের সাওয়াব পাবে ইনশাআল্লাহ।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

2 × 2 =