দোয়া মুমিনদের হাতিয়ার। দোয়ার মাধ্যমে অসম্ভব কেউ সম্ভব করা যায়। এমনকি দোয়ার ফলে ভাগ্যও ঘুরে যায়। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন— তোমরা আমার কাছে দোয়া করো। আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব। (সূরা মুমিন ৬০) আরবে দোয়া শব্দের অর্থ ডাকা, আহবান করা, প্রার্থনা করা, কোন কিছু
চাওয়া ইত্যাদি। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, দোয়া ছাড়া আর কিছুই আল্লাহর সিদ্ধান্তকে বদলাতে পারে না। (তিরমিজি ২১৩৯) দোয়া সব ইবাদতের মূল। এমন অনেক মানুষ রয়েছে যাদের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। ১. নিরাশ না হওয়া: দোয়ার পর আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে যে আল্লাহ আমার দোয়া কবুল করবেন নেতিবাচক কোন চিন্তা করা যাবে না অন্যথায় এ দোয়া কবুল না হতে পারে। হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমাদের প্রত্যেক ব্যক্তির দোয়া কবুল হয়ে থাকে। যদি সে তাড়াহুড়ো না করে আর বলে যে আমি দোয়া করলাম কিন্তু আমার দোয়া তো কবুল হলো না। সহীহ্ বোখারী ৮৯৬৯ ২. হারাম থেকে বেঁচে থাকা : দোয়া কবুল হওয়ার অন্যতম শর্ত হচ্ছে হারাম খাদ্য, বস্ত্র, পানীয়, ইত্যাদি পরিহার করা। হারাম উপারজনে নিজেকে সম্পৃক্ত করে যতই দোয়া করা হোক তা আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম, এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করেন, দীর্ঘ সফরের ক্লান্তিতে যার মাথার চুল বিক্ষিপ্ত অভীনস্ত ও পুরো শরীর ধুলোমলিন। সে আসমানের দিকে হাত প্রশস্ত করে বলে হে আমার প্রভু! হে আমার প্রতিপালক! অথচ তার খাদ্য ও পানীয় হারাম তার পোশাক হারাম তার জীবন জীবিকা ও হারাম। এমত অবস্থায় তার দোয়া কিভাবে কবুল হতে পারে? তিরমিজি শরীফ ৮৯৬৯ ৩. আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা একটি বড় ধরনের পাপ এই পাপের শাস্তি দুনিয়া ও আখেরাত উভয় জায়গাতেই ভোগ করতে হবে বলে সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে। হাদিসে এসেছে, কোন মুসলিম দোয়া করার সময় কোন গুনাহের অথবা আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নের দোয়া না করলে অবশ্যই আল্লাহ তাকে এই তিনটির কোন একটি দান করেন। ১. হয়তো তাকে তার কাঙ্খিত সুপারিশ দুনিয়ায় দান করেন ২. অথবা তার পরকালের জন্য জমা রাখেন। ৩. অথবা তার কোন অকল্যাণ বা বিপদদপদ তার থেকে দূর করে দেন। ৪. দোয়ায়ে পূর্ণ মনোযোগ না থাকা। দোয়ার সময় পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে দোয়া করতে আল্লাহ অবেচেতন মনের দোয়া গ্রহণ করেন না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা দোয়া কবুল হওয়ার পুর্নস্থানে আল্লাহর কাছে দোয়া করো। জেনে রেখো আল্লাহ অমনোযোগী ও অসাড় মনের দোয়া কবুল করেন না। তিরমিজি ৩৪৭৯ দোয়ার সুন্নত তরিকা হল। আল্লাহর প্রশংসা এবং রাসুল সাঃ এর উপর দুরুদ পড়ে দোয়া করা। বিনয়ী কাকুতি মিনতি করে দোয়া করা এবং দোয়া কবুলের ব্যাপারে তাড়াহুড়ো না করা। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেছেন, তোমরা নিজের প্রতিপালককে ডাকো কাকুতি মিনতি করে এবং সংগোপনে। তিনি সীমা অতিক্রমকারীদের পছন্দ করেন না। সূরা আরাফ আয়াত ৫৫ আশাও ভয়ভীতি নিয়ে দোয়া করা। এ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা বলেছেন, তাকে ডাকো ভয় ও আশা নিয়ে। সূরা আরাফ ৫৬ সম্ভব হলে অজু করে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা। নিজের গুনাহের কথা স্বীকার করে আল্লাহর নেয়ামতের স্বীকৃতি দেওয়া।