সুশৃঙ্খল জীবন গঠনে ধর্মীয় জ্ঞান

0
126

মহান আল্লাহ মানুষকে পার্থিব জীবন সুন্দরভাবে উপভোগের জন্য ইসলাম ধর্ম দান করেছেন। ইসলাম একটি যুক্তিবান্ধব, বাস্তব ও পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানবজীবনের প্রতিটি বিষয়ের বিধান ইসলামে অত্যন্ত চমৎকারভাবে বর্ণিত হয়েছে। মানবজাতির জন্য ওই বিধান মেনে চলা আবশ্যক।

ধর্মীয় অনুশাসন উপেক্ষা করে জীবন অতিবাহিত করলে পদে পদে অশান্তি, অনাচার ও লাঞ্ছনার সম্মুখীন হতে হবে। পরকালে হতে হবে ভয়াবহ শাস্তির উপযুক্ত।

মানবসভ্যতাকে অভিজাতরূপে টিকিয়ে রাখতে এবং মানবজাতির উৎকর্ষ সাধনে ইসলামি শরিয়তের বিধিবিধান মেনে চলা ছাড়া গত্যন্তর নেই। বিধিবিধান মেনে চলার জন্য সেগুলোর জ্ঞানার্জন শর্ত। জ্ঞানার্জন ব্যতীত কোনো বিষয় সঠিকভাবে পালন সম্ভব নয়। এ কারণেই ইসলামের প্রথম বাণী হলো ‘পড়ো’। জ্ঞানের বিপরীত নাম ‘মূর্খতা’। পৃথিবীর কোনো মানুষই নিজেকে মূর্খ বলে পরিচয় দিতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন না। ফলে সাধারণ দৃষ্টিকোণে জ্ঞানের যেমন প্রয়োজনীয়তা ফুটে উঠেছে, তেমনি ইসলামি দৃষ্টিকোণে ইলম বা জ্ঞানার্জন ফরজ ও অত্যাবশ্যকীয় বিষয়।

মহান আল্লাহ বলেন,

মুমিনদের জন্য সংগত নয় যে, তারা সকলে একসঙ্গে অভিযানে বের হবে। অতঃপর তাদের প্রতিটি দল থেকে কিছু লোক কেন বের হয় না, যাতে তারা দীনের গভীর জ্ঞান আহরণ করতে পারে এবং আপন সম্প্রদায় যখন তাদের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে, তখন তাদেরকে সতর্ক করতে পারে, যাতে তারা (গুনাহ থেকে) বেঁচে থাকে।

[সূরা আত-তাওবাহ আয়াত ১২২]

মহান আল্লাহ বলেন,

মুমিনগণ, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই অগ্নি থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও প্রস্তর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয়, কঠোরস্বভাব ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তা’আলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না। এবং যা করতে আদেশ করা হয়, তাই করে।

[সূরা আত-তাহরীম:-আয়াত ৬]

তোমরা ধর্মীয় জ্ঞানের মাধ্যমে পরিজনকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করো। কারণ হারাম কাজ করলে জাহান্নামে যেতে হবে। সুতরাং কোনটি হারাম, কোনটি নিষিদ্ধ সে বিষয়ে জ্ঞান থাকলে হারামে লিপ্ত হয়ে পড়ার আশঙ্কা নেই। জ্ঞানী ব্যক্তি সহজেই আদেশ-নিষেধ অনুযায়ী  জীবন পরিচালনা করতে পারেন।

আল্লাহ যার মঙ্গল চান, তাঁকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন।

হুমায়দ ইবনু ‘আবদুর রহমান (রহ.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ আমি মু‘আবিয়াহ (রাযি.)-কে খুৎবায় বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি, আল্লাহ্ যার মঙ্গল চান, তাকে দ্বীনের ‘ইল্ম দান করেন। আমি তো বিতরণকারী মাত্র, আল্লাহ্ই (জ্ঞান) দাতা। সর্বদাই এ উম্মাত কিয়ামাত পর্যন্ত আল্লাহর হুকুমের উপর কায়িম থাকবে, বিরোধিতাকারীরা তাদের কোন ক্ষতি করতে পারবে না।

[সহীহ বুখারী ৭১]

লোকজনকে উত্তম বিষয় শিক্ষাদাতার সাওয়াব।

ধর্মীয় শিক্ষার ফজিলত সম্পর্কে বহু হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

আবূ দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছিঃ নিশ্চয় আসমান ও যমীনের অধিবাসীগণ জ্ঞানীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি সমুদ্রের মাছরা পর্যন্ত।

[সুনান ইবনে মাজাহ ২৩৯]

মুআয ইবনু আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যাক্তি জ্ঞানের কথা শিক্ষা দেয়, সে তদনুসারে কর্মসম্পাদনকারীর সমান পুরস্কার পাবে, এতে কর্মসম্পাদনকারীর পুরস্কারে কোনরূপ ঘাটতি হবে না।

[সুনান ইবনে মাজাহ ২৪০]

আবূ ক্বাতাদাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ মানুষ তার (মৃত্যুর) পরে যা কিছু রেখে যায়, তার মধ্যে তিনটি জিনিস কল্যাণকরঃ সৎকর্মপরায়ণ সন্তান, যে তার জন্য দুআ করে, সদাকায়ে জারিয়া যার সাওয়াব তার কাছে পৌঁছে এবং এমন জ্ঞান যা তার মৃত্যুর পরও কাজে লাগানো যায়।

[সুনান ইবনে মাজাহ ২৪১]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, অবশ্যই আলিমগণ নবীদের ওয়ারিস। আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে কোন দীনার বা দিরহাম রেখে যাননি, বরং তারা রেখে গেছেন মীরাস হিসেবে ইলম। সুতরাং যে ব্যক্তি ইলম লাভ করেছে, সে পূর্ণ অংশ লাভ করেছে।

[সূনান আত তিরমিজী ২৬৮২]

যেকোনো ব্যক্তির জন্য জান্নাতের রাস্তা সুগম হওয়া, প্রাণিকুল নাজাতের দোয়া, মৃত্যুর পরও সওয়াবের ধারাবাহিকতা চালু থাকা অত্যন্ত গৌরব ও কল্যাণের কথা। নবীগণের উত্তরাধিকার হওয়ার ঘোষণা তো মহাগৌরব ও সৌভাগ্যের ওয়াদা। এমন কপাল কজনের জোটে! ফলে দুনিয়া ও আখেরাতে সৌভাগ্যবানদের অন্তর্ভুক্ত হতে হলে আমাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষার প্রতি যত্নবান হতে হবে। নিদেনপক্ষে ফরজ পরিমাণ ধর্মীয় শিক্ষা অর্জন করতে হবে।

জ্ঞান সন্ধানের ফজিলত

আবূ হুরাইরাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে লোক জ্ঞানের খোঁজে কোন পথে চলবে, তার জন্য আল্লাহ তা’আলা জান্নাতের পথ সহজ করে দিবেন।

[সূনান আত তিরমিজী ২৬৪৬]

জ্ঞান উঠে যাওয়া প্রসঙ্গে

আবদুল্লাহ ইবনু আমর ইবনুল আস (রাযিঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ (শেষ যামানায়) আল্লাহ তা’আলা মানুষের নিকট হতে একটানে ইলম উঠিয়ে নিবেন না, বরং আলিমদেরকে উঠিয়ে নেয়ার মাধ্যমেই ইলম উঠিয়ে নিবেন। অবশেষে যখন তিনি কোন আলিমই অবশিষ্ট রাখবেন না, তখন মানুষেরা অজ্ঞ জাহিলদের নেতা হিসেবে গ্রহণ করবে। তারপর বিভিন্ন বিষয়ে তাদের নিকট প্রশ্ন করা হবে, আর তারা ইলম ছাড়াই ফাতাওয়া দিবে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যকেও পথভ্রষ্ট করবে।

[সুনান আত তিরমিজী ২৬৫২]

পথভ্রষ্ট মানেই গোমরাহী। আর যারা গোমরাহী তারা জাহান্নামের অধিবাসী।  দুনিয়াতে অধিকাংশ মানুষই ঈমান না আনার কারণে পথভ্রষ্ট। অন্যদিকে ঈমান আনার পরও অধিকাংশ মুসলমান পথভ্রষ্ট।

অর্থাৎ যারা নবী রাসূলগণের দেখানো আল্লাহর পথে না চলে নিজের মনগড়া পথে চলে দুনিয়াদারি করে, তাদেরকে বলা হয় পথভ্রষ্ট। যারা পথভ্রষ্ট তারা কখনোই আল্লাহর সন্তুষ্টি পায় না। আর আল্লাহর সন্তুষ্টি না পাওয়ার অর্থ হলো তাঁর শাস্তির মুখোমুখি হওয়া। আর আল্লাহর শাস্তি দুনিয়া এবং আখিরাত উভয় জায়গার জন্যই প্রযোজ্য।

সুতরাং পথভ্রষ্ট হলো তারা যারা আল্লাহর উপর ঈমান না আনার কারণে কিংবা আল্লাহর উপর ঈমান আনার পরও আল্লাহর নির্ধারিত পথে চলে না। এবং তারা রাসূলদের দেখানো পথে না চলে তাদের নিজস্ব ধ্যানধারণা অনুযায়ী চলে। যারাই পৃথিবীতে এইরূপ জীবনযাপন করে করবে তাদেরকে বলা হয় পথভ্রষ্ট।

Print Friendly, PDF & Email

মন্তব্য করুন

Please enter your comment!
Please enter your name here

8 + seven =