(১) কুরআন পড়তে হয় তারতিলের সাথে (স্পষ্ট উচ্চারণে, ধীরে ধীরে, থেমে থেমে)। . আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবিকে বলেন, ‘‘তুমি কুরআন তিলাওয়াত করো ধীরে ধীরে, সুন্দরভাবে।’’ [সুরা মুযযাম্মিল, আয়াত: ০৩] . হাশরের মাঠেও কুরআনের সাথীকে বলা হবে, ‘‘তুমি (কুরআন) পড়তে থাকো এবং উপরে (মর্যাদার আসনে) ওঠতে থাকো।
দুনিয়াতে যেভাবে স্পষ্ট করে ধীরে ধীরে পড়তে, সেভাবে স্পষ্ট করে ধীরে ধীরে পড়ো।’’ [ইমাম তিরমিযি, আস-সুনান: ২৯১৪; হাদিসটি হাসান সহিহ] . (২) সুন্দর সুরে কুরআন তিলাওয়াত উত্তম। . রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সুর দ্বারা কুরআনকে সৌন্দর্যময় করো।’’ [ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান: ১৪৬৮; হাদিসটি সহিহ] . (৩) আল্লাহর প্রতি বিনীত কণ্ঠে কুরআন পড়া: . রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘‘মানুষের মধ্যে কুরআন পাঠে সর্বোত্তম সেই ব্যক্তি, যার তিলাওয়াত শুনে তোমাদের ধারণা হয় যে, সে আল্লাহকে ভয় করে।’’ [ইমাম ইবনু মাজাহ, আস-সুনান: ১৩৩৯; শাওয়াহিদের ভিত্তিতে হাদিসটি সহিহ] . (৪) তিলাওয়াতে কণ্ঠস্বর নিচু রাখা উত্তম। .
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, “প্রকাশ্যে (সশব্দে) কুরআন পাঠকারী প্রকাশ্যে দানকারীর মতো এবং নিরবে কুরআন পাঠকারী নিরবে দানকারীর মতো।’’ [ইমাম নাসায়ি, আস-সুনান: ২৫৬১; হাদিসটি সহিহ] . ইমাম নববি (রাহ.) বলেন, নিরবে তিলাওয়াত করলে রিয়া (লৌকিকতা) থেকে মুক্ত থাকা যায়। তাই, যে ব্যক্তি রিয়ার আশঙ্কা করে, তার জন্য নিরবে তিলাওয়াত করাই উত্তম। আর যদি এমন আশঙ্কা না থাকে, তাহলে আওয়াজ করে তিলাওয়াত করা উত্তম। তবে, শর্ত হলো মুসল্লি, ঘুমন্ত ব্যক্তি অথবা অন্য কাউকে কষ্ট দেওয়া যাবে না।
অন্যথায় নিরবে পড়াই উত্তম। আর আওয়াজ করে তিলাওয়াত করা উত্তম হওয়ার কারণ হলো, এতে অন্যরাও উপকৃত হয় (শোনার মাধ্যমে ও উদ্বুদ্ধ হওয়ার মাধ্যমে)। তাছাড়া কুরআন শোনা, কুরআনের শিক্ষা, এর অনুসরণ—এগুলো দ্বীনের নিদর্শন। অধিকন্তু আওয়াজ করে কুরআন পড়ার মাধ্যমে তিলাওয়াতকারীর অন্তর জাগ্রত হয়, তার মনোযোগ কুরআনের প্রতি নিবদ্ধ হয়, কুরআনের দিকে তার কান প্রত্যাবর্তিত হয়, এর দ্বারা তার ঘুম দূর হয় এবং তার উদ্যমতা বৃদ্ধি পায়। পাশাপাশি, উদাসীন ব্যক্তি জাগ্রত হয়, সচেতন ও উৎসাহী হয়। তাই এসব নিয়তে শব্দ করে তিলাওয়াত করা উত্তম। [আল্লামা মুবারকপুরী, মির‘আত শারহু মিশকাত: ৭/২৮